অশ্বগন্ধার ব্যবহার-কীভাবে রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার করবেন? অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অশ্বগন্ধার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী?

0
526
অশ্বগন্ধার উপকারিতা
অশ্বগন্ধার উপকারিতা

এই অশ্বগন্ধা এক প্রকার ভেষজ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অশ্বগন্ধা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর ঔষধি গুণের জন্য একে “আয়ুর্বেদের রানী” বলা হয়। ইংরেজিতে একে উইথানিয়া সোমনিফেরা বা উইন্টার চেরি বলে। মূলত এর জন্মস্থান ছিল ভারত। তবে নেপাল, চীন ও ইয়েমেনে বাণিজ্যিকভাবেও এর চাষ হচ্ছে। একে এই উপমহাদেশের জিনসেং বলা হয়।এর আরেকটি নাম জিনসেং। এই জিনসেং হল একটি চাইনিজ ভেষজ যা আমাদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে। এই জিনসেং একটি ভেষজ যা সম্পূর্ণ বলকারক এবং পুরুষদের শক্তি বৃদ্ধি করে।

মূল বিষয়টি হচ্ছে এই গাছের শিকরে যা শক্তি আছে তা ঘোড়ার মতো দূরন্ত। আর এর পাতা নিয়ে হাতে একটু পিষলে ঘোড়ার শরীরের ন্যায় গন্ধ পাওয়া যায়। তাই একে অশ্বগন্ধা বলা হয়।

এবার, অশ্বগন্ধার অন্যান্য নাম দেখে নেওয়া যাক-
ল্যাটিন নাম – উইথানিয়া সোমনিফেরা
সংস্কৃত নাম – অশ্বগন্ধা, কামরুপিনী, বজিনী, বলদা, গান্ধপাত্রী
গুজরাঠি নাম – আসন্ধ, ঘোদা আকুন
তেলেগু নাম – দমমাদলু গাদ্দা, পেনেরু গাদ্দা
মারাঠি নাম – দোরাগঞ্জ, আসন্ধ
হিন্দি নাম – আসগন্ধ, আসগন্ধা
তামিল নাম – আস্কুলাং, আমুকুরা
মালায়ালাম নাম – আমুক্কুরা

অশ্বগন্ধার ব্যবহার

অশ্বগন্ধার ব্যবহার
অশ্বগন্ধার ব্যবহার

আমরা বর্তমানে অশ্বগন্ধা মূল বা শিকড়কে পাউডার হিসেবে ব্যবহার করছি। এর ফল ও পাতা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অশ্বগন্ধার পাতা নিয়মিত সেবন শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন হওয়া থেকে রক্ষা করে।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের এই অশ্বগন্ধার গুনের কথা বেশ জোরালো ভাবে বলা হয়েছে। প্রায় সকল রোগেরই সমাধান মিলে এই অশ্বগন্ধায়। বর্তমান সময়েও অশ্বগন্ধার ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। বিজ্ঞানের ক্যালনে আরও আধুনিভাবে অশ্বগন্ধার ব্যবহার বেড়েছে।

প্রাচীনকালে সে সময়ের নারী-পুরুষরা অশ্বগন্ধা মধু বা গরম দুধে মিশিয়ে খেতেন। এই অশ্বগন্ধার গুণের কথা আয়ুর্বেদে বেশ জোরালোভাবে বলা হয়েছে। এই অশ্বগন্ধা অনেক রোগের সমাধান। অশ্বগন্ধার ব্যবহারও বর্তমানে লক্ষণীয়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষে অশ্বগন্ধার ব্যবহার আরও আধুনিক হয়েছে।

রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, মুনী-ঋষিরা অশ্বগন্ধাকে এর ঔষধি গুণের কারণে প্রায় প্রতিটি অসুখের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বিভিন্ন ফেসপ্যাকের সঙ্গে অশ্বগন্ধার মূলের পাউডার ব্যবহার করা হতো। এই অশ্বগন্ধা চুলের যত্নেও খুবই কার্যকরী।

শুষ্ক ত্বকের প্রধান সমস্যা হল কোমলতা বা ময়েশ্চারাইজারের অভাব। অশ্বগন্ধা নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ। আয়ুর্বেদে, শুষ্ক, পোড়া এবং কাটা ত্বকের জন্য অশ্বগন্ধা পাউডার ব্যবহার করা হত। বর্তমানে আয়ুর্বেদিক প্রসাধনীতে, বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের যে কোন প্রসাধনীতে অশ্বগন্ধা ব্যবহার করা হয়। কারণ অশ্বগন্ধায় ত্বক সারিয়ে তুলতে প্রচুর শক্তি থাকে।

আরও পড়ুনঃ   ঘুমানোর আগে বালিশের নিচে শুধু এক কোয়া রসুন রাখুন

অশ্বগন্ধা স্কিন টোনার হিসেবে দারুণ কাজ করে। সামান্য লেবুর রস, শুকনো আদা পাউডার এবং অশ্বগন্ধা পাউডারের সংমিশ্রণ সহ এই দুর্দান্ত টোনারটি একটি অতি প্রাচীন রূপচর্চার পদ্ধতি যা এখনও বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া অশ্বগন্ধা ত্বককে হাইড্রেট করে। কারণ এতে থাকা হায়ালিওরনান (hyaluronan ত্বকের টিস্যুতে পানি সরবরাহ বাড়ায়। ফলে এটি ত্বককে অনেকক্ষণ সজীব রাখে। বর্তমানে আমরা ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে প্রায় সমস্যায় আছি। অশ্বগন্ধা সেই কাজটি সূক্ষ্মভাবে করে। কোলাজেন ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই কোলাজেনের পরিমাণ অশ্বগন্ধায় অনেক বেশি।

ত্বকের যত্নে অশ্বগন্ধা

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এর ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রোপার্টিজ রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাথে চেহারায় বয়সের ছাপ বা বলিরেখা দূর করে।

চুলের যত্নে অশ্বগন্ধা
চুলের যত্নে অশ্বগন্ধার একটি জাদুকরী ভূমিকা রয়েছে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের গোড়া/ ফলিকলকে শক্তিশালী করে। স্বাস্থ্যকর চুলের জন্য ফলিকল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা অশ্বগন্ধায় ভরপুর।

বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা চুল পড়া। অশ্বগন্ধা কিন্তু সুপার হেয়ার টনিক চুল পড়ার সমস্যা সমাধানে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং হরমোন ব্যালেন্সসিং সিস্টেম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এখনকার আয়ূর্বেদীক শ্যাম্পু বা তেলে এর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার দেখা যায়।
আরও একটি সমস্যা আমরা ভোগ করি চুলের ক্ষেএে,সেটা হলো মাঝখান থেকে চুল ভেঙে যাওয়া। এর মূল কারণ হচ্ছে অম্যানো এসিড ও আয়রণের অভাব। অশ্বগন্ধা আপনাকে এই সকল সমস্যা থেকে অনেকটায় নিস্তার দিবে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক কীভাবে ব্যবহার করবেন এই অশ্বগন্ধা পাউডার সে সম্পর্কে-

যা যা লাগবে: ৩ চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার, ২চামচ আমলকী পাউডার, সামান্য পানি।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার
রূপচর্চায় অশ্বগন্ধার ব্যবহার

অশ্বগন্ধা ও আমলকী পাউডার পানি দিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে ভালো করে লাগান। কিছুক্ষন পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন এটা ব্যবহার করুন। দেখবে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ফল পাবেন।

আরও পড়ুনঃ   ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় তরমুজের বিচির ব্যবহার

সুতরাং বলা যায়, অশ্বগন্ধার নিয়মিত ব্যবহার  সর্বোপরি শরীরের সাথে সাথে রূপচর্চাও অনেক ভূমিকা রাখে। অশ্বগন্ধা এমন একটি ভেষজ যা স্নায়ুতন্রের যত্ন নেয়, অশান্তি ও মানসিক চাপ কে দুর করে মনকে প্রফুল্ল রাখে। বর্তমানে অশ্বগন্ধা গাছের পাতা, শিকড়, বীজ এমনকি ফল বিভিন্ন ঔষধের সক্রিয় উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ের কাজে সাহায্য করছে। অশ্বগন্ধার উপকারিতা অনেক বেশি হলেও যারা দীর্ঘদিন যাবৎ অন্যান্য ঔষধ সেবন করে আসছেন তাদের কে অশ্বগন্ধার ঔষধ খাবার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

অশ্বগন্ধা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:
অশ্বগন্ধা এমন একটি bষধি যা বেশিরভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি বলেছিল, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলি খুঁজে পেতে আরও গবেষণা করা দরকার।

অশ্বগন্ধ কে নেবে না?
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলারা
আয়ুর্বেদিক চিকিত্সকের পরামর্শ না থাকলে হাশিমোটোর থাইরয়েডাইটিস, রিউম্যাটয়েড এবং লুপাসের মতো অটোইমিউন রোগ রয়েছে তাদের।

কোন রোগ বা সমস্যায় অশ্বগন্ধা খাবেন
আমরা যখন কোন ধরনের সমস্যায় পরে থাকি তখনি সেই সমস্যা সমাধান খুঁজে থাকি। ঠিক তেমনি নানান ধরণের শারীরিক জটিলতায় আমরা পথ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকি অশ্বগন্ধাকে। কিন্তু ঠিক কোন ধরণের রোগ কিংবা সমস্যায় আক্রান্ত হলে আমরা অশ্বগন্ধা খেয়ে থাকি চলুন তাহলে জেনে নেই।

শক্তি বৃদ্ধি করতে: আপনি যদি আপনার পেশী শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তাহলে, খেতে পারেন অশ্বগন্ধা। এছাড়া, মনোবল বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে অশ্বগন্ধা।

অনিদ্র দূর করতে: আপনি যদি অনিদ্রায় ভুগে থাকেন এবং সেটা থেকে পরিত্রাণ পেতে কোন কার্যকরী সমাধান খুঁজে থাকেন, তাহলে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।

যৌনশক্তি ও তারুণ্য ধরে রাখতে: যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ উপকারী অশ্বগন্ধা। এছাড়া, আপনি যদি আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে চান তাহলে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।[2]

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে, খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।[3]

বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি: যারা ডায়াবেটিক এর সমস্যায় আক্রান্ত রয়েছেন তারা নিয়মিত খেতে পারেন অশ্বগন্ধা। আপনি যদি শরীরে থাইরয়েড এর প্রভাব কমাতে চান কিংবা প্রতিকার পেতে চান তাহলে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা। এছাড়া, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।

আরও পড়ুনঃ   নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়া উচিত কেন জানেন?

মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে: আপনি যখন বেশ হতাশা কিংবা দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন তাহলে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা। আপনি যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে চান তাহলে নিয়মিত খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।[4]

নিচে আরও কিছু অশ্বগন্ধার আরও কিছু উপকারিতা দেয়া হলো:

-আপনি যদি আপনার চুলকে ঝলমলে করে তুলতে চান তাহলে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
-শরীরে ব্যথা দূর করতে চান তাহলে, খেয়ে নিতে পারেন অশ্বগন্ধা।
-শরীরে কোন স্থানের ক্ষত দূর করতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে।
-হার্টকে সুস্থ রাখতে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
-সাপের বিষ ছাড়াতে, বেশ উপকারি অশ্বগন্ধা।

আমাদের মানবদেহে যেকোনো ধরণের ব্যথার উপশমে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে অশ্বগন্ধা।
যেকোনো ধরণের শারীরিক কিংবা মানসিক শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে অশ্বগন্ধা
আর্থেসিস এবং রিউমেটাডয়েক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে, খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে, খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন?
নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্যে আমরা খেয়ে থাকি অশ্বগন্ধা। কিন্তু আমরা কি জানি সঠিক উপায়ের অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে? চলুন তাহলে আপনাদের সুবিধার্থে জেনে নেই, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে:

আজকাল প্রায়শই নানান ধরণের শারীরিক সমস্যায় আমরা ব্যবহার করে থাকা অশ্বগন্ধা। বাজারে আমরা অশ্বগন্ধাকে সাধারণ ট্যাবলেট, পাউডার কিংবা মূল হিসেবে কিনে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কিভাবে খাবেন চলুন জেনে নেয়া যাক :

আপনি যদি অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট খেতে চান তাহলে, সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রতি রাতে একটি করে ট্যাবলেট খেতে হবে। এতে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত সমস্যায় উপকার পাবেন।

আপনি যদি অশ্বগন্ধা পাউডার হিসেবে খেতে চান তাহলে, প্রতি রাতে এক ক্লাস গরম দুধের সাথে আপনি তিন থেকে ৪ চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে খাবেন। আপনি চাইলে এই মিশ্রণটির সাথে চিনি কিংবা মধু মিশিয়েও খেয়ে নিতে পারেন। এভাবে আপনি আপনার বিদ্যমান সমস্যার সমাধান পাবেন।

এছাড়াও, আপনি যদি অশ্বগন্ধার মূল খেতে চান সেক্ষেত্রে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সিদ্ধ করা পানি ছেঁকে নিয়ে আপনি খেয়ে নিবেন এবং এতে আপনার সমস্যাটির খুব দ্রুত সমাধান পেয়ে যাবেন।

মনে রাখবেন, অশ্বগন্ধার আসল উপকারিতা হল এর শিকড়ে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − two =