হলুদের গুণে সেরে উঠলেন ব্লাড ক্যান্সারের রোগী!

0
977
ব্লাড ক্যান্সারের রোগী

বছরের পর বছর ব্লাড ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে জীবনের হাল প্রায় ছেড়ে দিচ্ছিলেন ডিনেকে ফার্গুসন। অবশেষে সবার পরিচিত মশলা হলুদের সাহায্যে অবিশ্বাস্যভাবে তিনি থামিয়ে দিয়েছেন এই মারাত্মক রোগ।

ডাক্তাররা বলেন, অন্যান্য চিকিৎসা থামিয়ে শুধু হলুদের সাহায্যে ক্যান্সার থেকে সেরে ওঠার ঘটনা তারা এই প্রথম দেখছেন।

২০০৭ সালে ডিনেকে ফার্গুসনের ব্লাড ক্যান্সার মায়েলোমা ধরা পড়ে।  তিনবার কেমোথেরাপি এবং চারবার স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টের পরেও তার মায়েলোমার কোন উন্নতি হচ্ছিল না। তখন ৬৭ বছর বয়সী এই রোগী দিনে ৮গ্রাম কারকিউমিন (হলুদে থাকা একটি উপাদান) গ্রহণ শুরু করেন। এখনো তিনি এই ট্যাবলেট গ্রহণ করে যাচ্ছেন।

মায়েলোমা ধরা পড়ার পর সাধারণত মানুষের আর পাঁচ বছর আয়ু থাকতে দেখা যায়। ইতোমধ্যেই এই রোগ দ্বিতীয়বার ফিরে এসেছিল ডিনেকের শরীরে, প্রচন্ড পিঠ ব্যথা তৈরি করছিল। কোন চিকিৎসাতেই যেন কাজ হচ্ছিল না। কিন্তু নর্থ লন্ডনের বাসিন্দা এই নারী ২০১১ সালে ইন্টারনেটে হলুদের উপকারিতার কথা জানতে পারেন এবং চিন্তা করেন, তিনিও এটা ব্যবহার করবেন। একেবারেই শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি কারকিউমিন ট্যাবলেট গ্রহণ করেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে এটাই তার কাজে আসে।

মাত্র ১০ দিনের ট্যাবলেট কিনতে খরচ হয় ৫০ পাউন্ড। সাধারণ হলুদ গুঁড়োর সাথে এর পার্থক্য হলো, রান্নার হলুদের তুলনায় এতে অনেকগুণ বেশী কারকিউমিন থাকে ফলে তা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাকি সব ক্যান্সার ট্রিটমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে এখনো তিনি রোজ এই ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন। পাঁচ বছর খাবার পর তার শরীরে ক্যান্সার সেল এতই কমে এসেছে যে তাকে মোটামুটি অগ্রাহ্য করা যায়।

ব্রিটিশ মেডিকাল জার্নালে তার ডাক্তাররা মন্তব্য করেন, “আমাদের জানা মতে, এই প্রথমবার প্রচলিত চিকিৎসা বন্ধ করে দেবার পর কারকিউমিন ব্যবহারে এত স্পষ্ট ফলাফল দেখা গেল।” ডঃ আব্বাস জাইদির নেতৃত্বে থাকা এই বিশেষজ্ঞেরা জানান, অনেক মায়েলোমা রোগীরা প্রচলিত চিকিৎসার পাশাপাশি কারকিউমিনের মত কিছু ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট নিয়ে থাকেন, কিন্তু খুব কম মানুষই অন্য চিকিৎসা বাদ দিয়ে শুধু ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টের ওপর ভরসা করেন।

আরও পড়ুনঃ   চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন বাণিজ্য : প্রতারিত হচ্ছে রোগী ও অভিভাবক

কারকিউমিন নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে ইতোমধ্যেই। এটা হলো হলুদের সেই উপাদান যাতে এর রংটা আসে। Curcuma longa গাছের মূল হলো কাঁচা হলুদ। প্রাচ্যের চিকিৎসাবিদ্যায় তার কদর আছে, কিন্তু পাশ্চাত্যে তার ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। হলুদের অ্যাকটিভ ইনগ্রিডিয়েন্ট কারকিউমিনের আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ। অনেক রোগের ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে তা ব্যবহার হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় তা পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি ফুসফুসের রোগ, আলঝেইমার্স, হৃদরোগ, বিষণ্ণতা কমায় তা। কিছু কিছু ক্যান্সার রোধ করতেও তা উপকারী। সার্জারির পর সেরে উঠতে এবং আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় তা কাজে আসে।

ডিনেকের ডাক্তাররা জানান, কারকিউমিনের প্রভাবে বেশ কিছু টিউমারের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তবে একজন ডাক্তার, অধ্যাপক জেমি ক্যাভেনেই জানান, এটা মনে রাখতে হবে যে সব রোগীর জন্য এটা কাজ নাও করতে পারে। তার অনেক রোগী চিকিৎসার বিভিন্ন পর্যায়ে কারকিউমিন গ্রহণ করেন। তিনি এতে কোন বাঁধা দেন না। তবে ডিনেকের ক্ষেত্রে এটা সবচাইতে ভালো কাজ করেছে। আর অন্য সব চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়ে কারকিউমিন শুরু করার ফলে এর প্রভাবটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে। ডিনেকে আশা করেন, তার এই ঘটনা জানার পর আরো বেশী মানুষ কারকিউমিনের প্রতি আগ্রহী হবে। তবে এখনই ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে সবাইকে হলুদ ব্যবহারের পরামর্শ দিতে রাজি নন ডাক্তাররা।

সূত্র: Daily Mail

-কে এন দেয়া

দাঁত মাজার মতোই জরুরি নিয়মিত ফ্লসিং: ডা. জিনিয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 − fourteen =