সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি লুকিয়ে লবণ পানিতে!

0
428
লবণ পানি

শরীরকে সুস্থ রাখতে আমরা অ্যালোপ্যাথি থেকে হোমিওপ্যাথি, সব পদ্ধতিরই সাহায্য নিয়ে থাকি। কিন্তু শরীরে উপকারে লাগে এমন সহজ কিছু ঘরোয়া উপায়কে একেবারে গুরুত্ব দিতে চাই না। কারণ বিলিতি শিক্ষার চেটে কাহিল আমাদের যুবসমাজ প্যাকেজিং-এ বিশ্বাস করে। তাই তো ঘরোয়া পদ্ধতিগুলির কদর তাদের কাছে বড়ই কম। যেমন নুন জলের কথাই ধরুন না। এই সাধারণ পানীয়টি মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্মক্ষমতা বাড়াতে কাজে আসে। কিন্তু গেঁয়ো যোগীর মত লবণ পানিকেও কেউ গুরুত্ব দিতে চান না। তাই তো আজ এই প্রবন্ধটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
নুনের মধ্যে থাকা “পজেটিভ আইকন”, জলে থাকা নেগেটিভ আইকনের সঙ্গে মিশে গিয়ে ইলেকট্রিকাল চার্জেসের মাত্রা বাড়িয়ে দয়ে। ফলে এই পানীয়টি পান করা মাত্র শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কোষেদের মধ্যে ইলেকট্রিকাল সিগনালের আদান প্রদান বেড়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে শরীরের অন্দরে লুকিয়ে থাকা একাধিক রোগের প্রকোপও কমে যেতে শুরু করে। যেমন…

১. শরীরের পানির ঘাটতি দূর হয়:

গাছে জল দেওয়ার সময় কী হয় দেখেছেন? বেশিরভাগ জলটাই মাটিতে মিশে যাওয়ার পরিবর্তে গড়িয়ে পরে যায়। খুব অল্প পরিমাণই গাছের কাজে লগে। জল তেষ্টার সময় আমরা যে লিটার লিটার পানি খেয়ে থাকি, সেক্ষেত্রেও কিন্তু একই ঘটনা ঘটে।পানিতে থাকা একাধিক উপকারি উপদান শরীরে কাজে লাগার আগেই দেহে থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে কোনও কাজেই আসে না। এখন যদি জলে অল্প করে নুন মিশিয়ে দেন, তাহলে কিন্তু একেবারে অন্য ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে নুন অনেক বেশি সময় ধরে পানিকে শরীরের অন্দরে আটকে রাখে। ফলে শরীর খুব সহজেই পানির মধ্যে থাকা উপকারি উপাদানদের শোষণ করে নিতে পারে।

২. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

লবণ পানি  আমাদের স্যালিভার গ্যাল্ডকে মারাত্মক অ্যাকটিভ করে দেয়। ফলে বেশি মাত্রায় স্যালাইভা উৎপাদন হওয়ার কারণে খাবার হজম হতে কোনও সমস্যাই হয় না। অপরদিকে নুনের প্রভাবে পাকস্থালীতে হাইড্রোক্লরিক অ্যাসিড এবং বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণও বেড়ে যায়। এই দুটি উপাদান দ্রুত খাবারকে ভেঙে ফেলে। ফলে খাবার হজমের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। সেই সঙ্গে বদ হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

আরও পড়ুনঃ   হারবাল উপায়ে রূপ চর্চা সম্পর্কে জেনে নিন

৩. হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে:

একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে লবণের ঘাটতি থাকলে নানাবিধ ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যেমন- মেটাবলিক ডিজঅর্ডার, হার্ট ডিজজ, কগনিশান লস প্রভৃতি। আসলে প্রতিদিন আমাদের শরীরের কম-বেশি ৮ গ্রাম লবণের প্রয়োজন পরে। এই পরিমাণ নুন যদি শরীরে প্রবেশ না করে তাহলে দেহ “ক্রাইসিস মডে” চলে যায়। বেশিদিন যদি শরীর এমন ক্রাইসিস মোডে থাকে তাহলে রেনিন নামে এক ধরনের এনজাইম এবং অ্যালডোস্টেরন নামে এক ধরনের হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই দুটি উপাদানের মাত্রা শরীরে যত বাড়তে থাকে তত শরীরে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘাটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনফ্লেমেটরি এজেন্টের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে সারা শরীরে মারাত্মক যন্ত্রণা সহ একাধিক জটিলতা প্রকাশ পায়। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন প্রতিদিন নুন জল খাওযার পরামর্শ কেন দেওয়া হয়ে থাকে।

৪. ঘুম ভাল হয়:

জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে ঘুম ঠিক মতো না হওয়ার পিছনে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্ট্রেস দায়ী থাকে। তাই কোনওভাবে যদি মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে আসতে পারেন তাহলেই কেল্লাফতে! আর এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে নুন জল। প্রতিদিন ঘুমতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম জলে অল্প করে প্রাকৃতিক নুন মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ঘুম আসতে কোনও সমস্যাই হবে না। কারণ নুন আমাদের শরীরে অক্সিটসিন নামে একটি হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ট্রেস লেভেল কমিয়ে ফেলার পাশাপাশি অ্যাংজাইটি দূর করতেও বিশেষ কাজে আসে।

৫. শরীরকে বিষমুক্ত করে: অনেকেই ঠিক মতো খাবার হজম করতে পারেন না। ফলে তাদের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্রাক্টে হজম না হওয়া খাবার জমতে শুরু করে। এই জমতে থাকা বর্জ্য এক সময় পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত এবং কোলোনে ছড়িয়ে পরার কারণে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের বিশেষ কিছু অংশে টক্সিনের মাত্রাও বেড়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে শরীর ভাঙতে শুরু করে। এক্ষেত্রে গরম জলে নুন মিশিয়ে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। আসলে এই পানীয়টি শরীরে জমে থাকা টক্সিন এবং বর্জ্য় পদার্থকে বার করে দেয়। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা কমে।

আরও পড়ুনঃ   হোমিওপ্যাথি ।। মুখের ঘা অ্যাপথাস আলসার নিরাময়ে

৬. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:

প্রাকৃতিক নুনে এমন কিছু উপাদান থাকে যা ভিতর থেকে স্কিনকে সুন্দর করে তোলে। সেই সঙ্গে ব্রণ এবং ত্বকের সংক্রমণের প্রকোপ কমাতেও দারুন কাজে আসে। এখানেই শেষ নয়, প্রতিদিন নুন জল পান করলে একজিমা, ড্রাই স্কাল্প এবং ফুসকুড়ির মতো রোগও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

সূত্র: বোল্ডস্কাই

লবণ পানি এত কাজের!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 5 =