একবার নজর ঘুরিয়ে দেখুন। তাহলেই বুঝেবন। আমদের চারিপাশে শুধু প্লাস্টিকই প্লাস্টিক। খাবার প্লেট থেকে ব্রাশ, জলের বোতল থেকে কাপ, কেনও কিছুই যেন আজকাল প্লাস্টিক ছাড়া তৈরি হচ্ছে না। এদিকে প্লাস্টিকের কারণে আমাদের আয়ু কমছে দ্রুত হারে। একেবারেই ঠিক শুনেছেন। একাধিক গবেষণা একথা প্রমাণ করেছে যে প্লাস্টিক আমাদের শরীরে অন্দরে খুব খারাপ কিছু পরিবর্তন করছে, ফলে নানাবিধ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কমছে আয়ু। কিন্তু কীভাবে এমনটা ঘটছে? আমাদের ব্যবহৃত প্রায় সব প্লাস্টিকের সামগ্রিতেই লুকিয়ে রয়েছে একটি বিষ। যার নাম এক্সেনোস্ট্রেজেন। এটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেওয়ার কারণে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
হরমোনের ভারসাম্য ঠিক থাকাটা জরুরি কেন?
শরীরকে সচল রাখতে হরমোনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কারণ চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ত্বকের সৌন্দর্যতা বাড়াতে, অনিদ্রা দূর করতে, মন ভাল রাখতে এবং ওজন স্বাভাবিক রাখতেও হরমোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, স্ট্রেস লেভেল কমাতে এবং নানাবিধ রোগের হাত থেকে বাঁচাতেও এই উপাদানটি আমাদের নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। এবার বুঝলেন তো সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য হরমোনর ঠিক মতো ক্ষরণ হওয়াটা কতটা জরুরি। প্রসঙ্গত, যখনই শরীরে কোনও হরমোনের ক্ষরণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় অথবা কমে যায়, তখন হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দেয়। এমনটা হলে একাধিক ক্রনিক ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি শরীরে ভাঙন ধরতে শুরু করে।
এক্সেনোস্ট্রেজেন এবং শরীর:
“বি পি এ” ফ্রি প্লাস্টিকের বাসন পত্র ব্যবহার করলেও শরীরে এই উপাদানটির মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সহজ কথায় প্লাস্টিকের বোতলে রাখা জলে এবং মাইক্রোওয়েভে গরম করা প্লাস্টিকের বাটিতে রাখা ভাতে এক্সেনোস্ট্রেজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে এমন জল বা ভাত দীর্ঘ দিন ধরে খেয়ে গেলে শরীরের অবনতি ঘটতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এনভারমেন্টাল হেল্থ প্রসপেকটিভ জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ধরনের প্লস্টিকের সামগ্রিতেই এই উপাদানটি উপস্থিত থাকে। এমনকী যেসব প্লাস্টিকের বাসন পত্রে “বি পি এ” ফ্রি লেখা থাকে সেগুলিতেও এক্সেনোস্ট্রেজেনের মাত্রা বিপদ সীমার উপরে থাকে। ফলে এমন জিনিস ব্যবহার করলে দেহের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে উপায়?
যতটা সম্ভব প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার করা কমান। না হলে কিন্তু বিপদ! বিশেষত ভাবী মা এবং ছোট বাচ্চাদের ভুলেও প্লাস্টিকের থালা-বাসনে খাবার বা গরম কিছু পরিবেশন করবেন না। প্রসঙ্গত, শরীরে ইস্ট্রোজেনার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রজেস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকবে। ফলে ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ, হাত-পা টান্ডা হয়ে যাওয়া, মন খারাপ, ক্লান্তি, বন্ধাত্ব, পিরিয়ডের সমস্যা, চিনি খাওয়া ইচ্ছা বেড়ে যাওয়া, মিসক্যারেজ, ত্বক এবং শরীরের বয়স বৃদ্ধি, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, চুল পড়া এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
প্লাস্টিক ছাড়াও আরও যেসবে এক্সেনোস্ট্রেজেন থাকে…
অনেকেই মনে করেন এই ক্ষতিকারক উপাদানটি কেবল মাত্র প্লাস্টিকেই থাকে। এই ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়, কারণ টিনজাত খাবার, ক্যান সোডা, প্রেস্টিসাইড, মাংস, বিউটি প্রডাক্টে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভে, এমনকী বাথ কন্ট্রোল পিলেও এই উপাদানটির উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। তাই সাবধান! এমন জিনিস কেনার আগে দেখে নেবেন তাতে এক্সেনোস্ট্রেজেন নেই তো!
সূত্রঃ বোল্ডস্কাই