ভুঁড়ি কমানো বেশ কষ্টসাধ্য কাজ। শুধু যে মোটা হলেই ভুঁড়ি বাড়ে তা নয়, শরীরের অন্য কোথাও বিশেষ মেদ না জমলেও অনেকেই ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। আর ভুঁড়ি হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক বলে মনে করেন চিকিত্সকরা। আবার অনেক রকম রোগেরও লক্ষণ ভুঁড়ি। তাই ভুঁড়ি বাড়তে দেখলেই অবিলম্বে কমিয়ে ফেলতে হবে। আরও ভাল ভুঁড়ি হতে না দেওয়া। জেনে নিন যে প্রধান কারণগুলোর জন্য ভুঁড়ি বাড়ে।
ফ্যাটি অ্যাসিড মেটাবলিজম না হওয়া
ফ্যাট কখনই আমাদের মোটা করে না, যদি তা এনার্জির উত্স হিসেবে শরীরে যথাযথ ব্যবহৃত হয়। তা না হলে ফ্যাটকে সঞ্চিত করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না শরীরের। ফ্যাটি অ্যাসিড পুড়িয়ে এনার্জি উত্পন্ন করার জন্য শরীরে প্রয়োজন কার্নিটিন ভিটামিন বি২। আমাদের শরীরের কোষে এই দুই উপাদানের অভাব হলে ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে এনার্জি উত্পন্ন হয় না। যদি ফ্যাটি মেটাবলিজম ঠিক মতো না হওয়াই আপনার ভুঁড়ি হওয়ার কারণ হয়ে থাকে, তা হলে দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এক, চিকিত্সকের কাছে গিয়ে ফ্যাট ঠিকমতো ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব কিনা তা পরীক্ষা করাতে হবে। দুই, ফ্যাট খাওয়ার ধরন বদলাতে হবে। ভাল বা উপকারী ফ্যাট থেকে কখনই প্রদাহ হয় না। সামুদ্রিক মাছ, নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, ঘি-তে থাকা ফ্যাট শরীরে মেদ সঞ্চয় করে না।
ক্ষুদ্রান্ত্রে ব্যাক্টেরিয়া
যারা ভুঁড়ির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অনেকেরই ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়েরিয়া, অ্যাসিডিটির সমস্যা হয়। এগুলোর বেশির ভাগেরই কারণ ক্ষুদ্রান্ত্রে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ। মানুষের পৌষ্টিকনালিতে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া থাকে, যা মুখ ও বৃহদন্ত্রের জন্য জরুরি। সেই ব্যাক্টেরিয়াই যদি পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে তা হলে এই সমস্যাগুলো হতে পারে। সাধারণত, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও পাকস্থলীর অ্যাসিডের ঘাটতির জন্য এমনটা হয়ে থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকাকালীন এই ব্যাক্টেরিয়া খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ শুষে নেয়। ফলে রক্তে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছয় না। যদি আপনি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরও ভুঁড়ি কমাতে না পারেন, তা হলে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিন ব্যাক্টেরিয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা।
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া
হরমোনে ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সমস্যা সারা বিশ্বেই দেখা যায়। কখনও অ্যাড্রিনালিন, কখনও সেক্স হরমোন, কখনও বা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। যে কারণে ডায়াবেটিস, থাইরেয়ড, বন্ধ্যাত্ব, পলিসিস্টিক ওভারি বা অ্যাড্রিনাল ফেটিগের কারণে ভুঁড়ি বাড়ার সমস্যা দেখা যায়। হরমোন আমাদের শরীরের কোষের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া, কোষের কর্মক্ষমতা, এনার্জি উত্পন্ন করা, ফ্যাট সঞ্চয়ের সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। যে হেতু কোনও হরমোন কখনই একা কাজ করে না, একটার সঙ্গে আর একটা গভীর সম্পর্কযুক্ত, তাই কোনও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে অন্যগুলোরও কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে ওজনের সমস্যা হবেই। ডায়াবেটিস, ওবেসিটি, থাইরেয়ড ডিসফাংশন, যে কোনও ক্ষেত্রেই ভুঁড়ি কমানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।
হাই সুগার ও কার্ব ডায়েট
প্রসেসড ফুডের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণ রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট ও সুগার থাকে যা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সুগার যদি রক্তে চলে আসে এবং এনার্জি উত্পাদনের জন্য ব্যবহৃত না হয় তা হলে তা শরীরে ফ্যাট রূপে সঞ্চিত হবেই।
সূত্রঃ আনন্দ বাজার