প্রাকৃতির সকল জীবই শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে বেঁচে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাসই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। আমরা কিভাবে শ্বাস নেই এবং কীভাবে প্রশ্বাস ফেলি স্বাস্থ্যের ওপর তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
মিনিটে প্রায় ১৮ বার, ঘণ্টায় ১ হাজার ৮০ বার এবং দিনে ২৫ হাজার ৯২০ বার আমরা শ্বাস নিই। কিন্তু একবার শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে বা একবার নিঃশ্বাসের হেরফের হলেই আমরা সেটা টের পাই বা বুঝতে পারি আমাদের জন্য এটা কতটা দরকার। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঠিক পদ্ধতি জেনে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে টিএনএন অবলম্বনে নাকে কিংবা মুখে শ্বাস-প্রশ্বাসের গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো-
নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকার। সাধারণত আমাদের শারীরিক গঠন অনুসারে নাক দিয়েই শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ করে থাকি। কিন্তু অনেক সময় এর বিপরীতও হয়। নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। সেগুলো হলঃ
১. মস্তিষ্কের সক্রিয় করে
যখন নাক দিয়ে শ্বাস নেই তখন আমাদের মস্তিষ্কে সরাসরি অক্সিজেনের সরবরাহ হয় যার কারণে মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বাড়ে।
২. রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে নাক। আর নাক দিয়ে শ্বাস নিলে রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। আমাদের রোগমুক্ত রাখে।
৩. প্রতিরক্ষা সৈনিক
কেননা, নাক আমাদের শারীরিক প্রতিরক্ষা সৈনিক হিসেবে কাজ করে। ঘ্রাণ থেকেও যেমন আমরা সতর্ক হই, তেমনি নাক অনেক দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করে।
৪. ফিল্টার করে
নাক ধুলা, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অনেক কিছুই ফিল্টার করে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। নাকের ছিদ্রপথ দিয়ে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাসের বায়ু আর্দ্র ও উষ্ণ হয় এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লীর আর্দ্র পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। এতে বায়ুর ধূলিকণার বেশ বড় অংশ এখানেই রয়ে যায় যা পরবর্তিতে প্রশ্বাসের সাথে বের হয়ে আসে। নাক এখানে ফিল্টারের বা ছাঁকুনির কাজ করে।
৫. ফুসফুস সুরক্ষায়
যে সব জীবাণু নাক দিয়ে ঢোকে এবং ধূলিকণার সাথে বের হয়ে যায় না সেগুলো নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লীর সংস্পর্শে এসে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং মারা যায়। আর ফুসফুসে যে বাতাস সরবরাহ হয় তা অনেক পরিষ্কার থাকে। এভাবে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ করে ফুসফুসকে ভালো রাখতে সাহায্য করে নাক।
৬. মুখের চেয়ে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া মুল কারণ-
বেঁচে থাকার জন্য আমরা যেমন অক্সিজেনের সরবরাহের ওপর নির্ভর করি তেমনি কার্বন ডাই অক্সাইডও গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে আমাদের ফুসফুস ও রক্তে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কতটা থাকে সেটা বিবেচনা করা জরুরি।
কেননা এই কার্বন-ডাই-অক্সাইডে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকে যা রক্ত থেকে আমাদের টিস্যু ও মস্তিষ্কে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেতে সমস্যা হয়। আর নাক দিয়ে শ্বাস নিলেই আমরা ফুসফুসে ও রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারি।
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে যে ক্ষতি হয়
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিছু ব্যাঘাত ঘটে। ফলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা ঘটাতে পারে। কিন্তু কখনো কখনো মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়াটাই আবার প্রাকৃতিকভাবেই প্রয়োজনীয় ও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। ভারি কাজ করার সময় ও কিছু ব্যায়াম করার সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়াটাই ঠিক।
১. জিবে কামড়
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে অনেক সময় বেখেয়ালে দাঁতে-জিবে কামড় লাগে যেতে পারে।
২. ফুসফুসের ক্ষতি
মুখ দিয়ে শ্বাস নিলেও বাতাসে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস সহ বেশি পরিমাণে দূষিত বায়ু সরাসরি ফুসফুসে চলে যায় বলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে ওঠে।
৩. বিরক্তিকর সমস্যার তৈরি
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হওয়া, নাক ডাকা, ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব করা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই। আপনি কি দিনে প্রায় ২৬ হাজার বার আরও প্রশান্তির সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য আরও যত্নবান হবেন নাকি চাপের মধ্যে থেকে অস্বাস্থ্যকর শ্বাস-প্রশ্বাসে থাকবেন সেটা আপনাকেই ঠিক করে নিতে হবে। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!