ছোটবেলা থেকেই এইটি প্রবাদ বাক্য মুখস্ত করে বড় হয়েছি আমরা সকলে। ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।‘ কথাটা তখন শুধুমাত্র জানার জন্যে জেনেছি অথবা পড়ার জন্যেই পড়েছি আমরা সকলে। কথাটার তাৎপর্য বোঝার সাধ্য ছিল না একেবারেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যত বেশী সময় এগোতে থাকে, তার সাথে বাড়তে থাকে কাজের পরিমাণ ও দায়িত্বের ভার। সকল কিছু সঠিকভাবে পালন করার তাগিদে শারীরিক সুস্থতা অনেক বেশী প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
শারীরিক সুস্থতা ও ইতিবাচক মনোভাবের মাধ্যমেই একজন মানুষ পরিপূর্ণভাবে তার জীবনের সকল দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন এবং দীর্ঘায়ু লাভ করেন। সকল বয়সের ও লিঙ্গের মানুষের জন্য প্রয়োজন সুস্থ শরীর এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যে কারণে সুস্থ শরীরে, নীরোগভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া।
শারীরিক অসুস্থতা ও দূর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় অনেক বেশী। সুস্থভাবে জীবনযাপন করার জন্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা। যার মাঝে পড়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা, নিয়মিত শরীরচর্চা করা, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা, ইয়োগা অথবা মেডিটেশন করা, অস্বাস্থ্যকর যেকোন অভ্যাস যেমন: ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা।
একটা কথা মনে রাখা জরুরি, ছোট-বড় যেকোন ধরনের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে বিভিন্ন কারণে। তবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবন ব্যবস্থা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলে বলে, রোগের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক ভাবে কম দেখা দেয়।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের সাথে বর্তমানে আরো দারুণ একটি ব্যাপার যোগ হতে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, সকালবেলার নাস্তায় কয়েকটি কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়।
যেহেতু আমরা সকলেই জানি স্বাস্থ্যকর ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাঝে থাকে শর্করা, বিভিন্ন প্রকারের খনিজ পদার্থ, স্নেহ জাতীয় খাদ্য, প্রোটিন, ভিটামিন সমূহ ইত্যাদি। এই সকল উপাদানের মাঝে কোন এক প্রকারের খাদ্য পরিমাণের তুলনায় কম গ্রহণ করা হলে শরীরে তার অভাব দেখা দেয়।
সারাদিনের মাঝে সবচাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো সকালের নাস্তা। যেটা একদম সঠিকভাবে পুষ্টিকর হওয়া প্রয়োজন। কারণ সকালের খাবারই সারাদিনের জন্য শরীরে শক্তি যুগিয়ে থাকে, মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সচল রাখতে সাহায্য করে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বেশীরভাগ মানুষের হৃদযন্ত্রের নানান স্ট্রোকসহ নানান ধরনের রোগ দেখা দেবার অন্যতম ও প্রধান কারণ হলো, রক্তে কোলেষ্টেরোলের মাত্রা অনেক বেশী বেড়ে যাওয়া।
ইউভার্সিটি অফ টরেন্টর একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, সকালে কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কমে যায়। কাঠবাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। যা রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে বের দিতে সাহায্য করে।
যে কারণে, প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ৪-৫ টি কাঠবাদাম খাবার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কোলেষ্টেরলের সমস্যা দেখা দেওয়া বন্ধ হবে এবং স্ট্রোক হবার সম্ভবনা কমার ফলে হৃদযন্ত্র একদম সুস্থ থাকবে। তাই শারীরিক সুস্থতা পেতে ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে প্রতিদিনের নাস্তায় কাঠবাদাম রাখা আবশ্যিক।
কাঠ বাদামের উপকারিতা:
১. হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ভেজানো আমন্ড। প্রয়োজনীয় এনজ়াইম নিঃসরণে সাহায্য করে।
২. ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমন্ডে উপস্থিত মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট খিদে কমায় ও পেট ভরিয়ে রাখে।
৩. হৃদয় ভালো রাখে আমন্ড। ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল (লো ডেন্সিটি লিপোপ্রোটিন) নিয়ন্ত্রণ করে।
৪. ভেজানো আমন্ডে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্ শরীরের ফোলাভাব কমায় ও অকালপক্কতা নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে ভোজানো আমন্ডে উপস্থিত ভিটামিন B17।
৬. এই বাদামে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরে টিউমার হতে দেয় না।
৭. রোজ সকালে খালি পেটে ভেজানো আমন্ড খেলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
৮. সন্তানসম্ভবাদের নিয়ম করে ভেজানো আমন্ড খেতে পরামর্শ দেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞরা। এতে উপস্থিত ফলিক অ্যাসিড জন্মের সময় শিশুর খুঁত দূর করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঠবাদাম। শরীরের ফোলাভাব কমায়। যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। বিশ্বাস হচ্ছে না? সত্যি বলছি, কাঠবাদামের অনেক উপকারিতা। ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে ভরপুর কাঠবাদাম রান্না করে খেলেও উপকার। ক্ষীর বা পায়েসের উপর গার্নিশ করেও খাওয়া যায়। উত্তর ভারতের খাদ্য তালিকায় বাদামি কোর্মা বলে একটি পদ খুব জনপ্রিয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে পদটি কাঠবাদাম দিয়ে তৈরি হয়।