খাবারে ব্যবহার করা ছাড়াও লবণের বেশ কয়েকটা ব্যবহার আছে যা আমরা অনেকেই জানি না। লবণ ছাড়া রান্না হলে আপনি সবচেয়ে পছন্দের খাবারটিও খেতে চাইবেন না। প্রধানত খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য লবণ ব্যবহার হলেও আসলে অনেক ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদানের বিকল্প হিসেবেও এর ব্যবহার দেখা যায়। আসুন একবার দেখে নেই লবণের এমনই ১২টি বিকল্প ব্যবহার।
১. পেঁয়াজে বা রসুনের গন্ধ তাড়ায়
রান্নার কাজে প্রতিদিনই পেঁয়াজ কাটাকাটি করতে হয় অনেককেই। কিন্তু এর কাঁচা গন্ধ অনেকেই সহ্য করতে পারেন না, যা দীর্ঘক্ষণ হাতে লেগে থাকে। এর সমাধান পেতে সামান্য লবণ হাতে নিন। পানি দিয়ে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। রসুনের গন্ধ হাত থেকে দূর করতে আঙুলে অল্প লবণ লাগিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন।
২. ব্রণের চিকিৎসায়
ব্রণের তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় লবণের পানি ব্যবহার করুন। লবণে থাকা উপাদান ব্রণ দ্রুত সঙ্কুচিত করে ফেলে। মুখের ছোটখাটো ক্ষত সারাতেও লবণ কাজ করে।
৩. জুতার গন্ধ তাড়ায়
জুতার গন্ধ সবসমই বিব্রতকর। অনেকসময় পায়ে অতিরিক্ত ঘাম হলে জুতা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এটা দূর করতে রাতে শুতে যাওয়ার আগে সুতির কাপড়ে অল্প একটু লবণ বেঁধে তা জুতার মধ্যে রেখে দিন। সকালে উঠে দেখবেন জুতা থেকে আর কোনরকম গন্ধ বেরুচ্ছে না। তাড়াহুড়ো থাকলে জুতার মধ্যে সরাসরি লবণ দিয়ে দিন। ভালো করে ঝাঁকিয়ে লবণ ফেলে দিন। দেখবেন গন্ধ চলে গেছে।
৪. কাটা ফল তাজা রাখে
কিছু কিছু ফল কেটে রাখলে তা খানিকক্ষণের মধ্যে কালো হয়ে যায়। এটা যাতে না হয় তার জন্য ফল বা সবজি কেটে লবণ-পানিতে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। কোনো রকম দাগ তো হবেই না, বরং ফল ও সবজি দীর্ঘসময়ের জন্য তাজা থাকবে।
৫. প্রাকৃতিক এয়ার ফ্রেশনার
এককাপ লবণের সঙ্গে কয়েকটি গোলাপের পাপড়ি যোগ করুন। অথবা কয়েক ফোঁটা সুগন্ধি তেল যোগ করতে পারেন। তারপর দেখুন কেমন সুগন্ধী হয় তা।
৬. বেসিন পরিষ্কার করতে
বাসার বেসিন বা সিঙ্ক পরিষ্কার করতে ব্যয়বহুল কোনো ক্লিনার কেনার প্রয়োজন নেই। লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে এতে মুছুন। আর দেখুন ম্যাজিক।
৭. অগ্নিনির্বাপণে
হ্যাঁ, সত্যিই লবণ রান্নার সময় অগ্নিনির্বাপক হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাবার রান্নার সময় আগুন লেগে গেলে তা ওপর লবণ ছিটিয়ে দিন।
৮. মশার কামড়ের দাগ দূর করে
মশা কামড়ালে সেই জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে যায় এবং চুলকায়। অনেক সময় বেশি চুলকানোর ফলে সেই জায়গায় রক্ত বেরিয়ে যায় বা ঘা হয়ে যায়। এটা আটকাতে মশা কামড়ালে সেই জায়গায় অল্প লবণ মেশানো জল লাগিয়ে দিন। মুহূর্তের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
৯. পা ও ত্বকের যত্নে
লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানিতে পা চুবিয়ে রাখুন। পা পরিষ্কার করতে এরচেয়ে ভালো কিছু হয় না। গোসলের আগে শরীর ও মুখে লবণ ঘষতে পারেন। চামড়ার মরা কোষ উঠে ও ত্বক উজ্জ্বল হবে।
১০.কফি মগ পরিস্কারে
১১. তামা বা পিতল পরিষ্কার করতে
বাড়িতে অনেক সময় তামার বাসন বা গয়না থাকে। যা সময়ের সঙ্গে কালো হয়ে যায়। তামার জিনিস আবার ঝকঝকে করে তুলতে লবণের জুড়ি নেই। লবণ আর ভিনিগার একসঙ্গে মিশিয়ে তা খানিকক্ষণ পিতলের বাসন বা গয়নার গায়ে লাগিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ভালো করে মেজে নিন। ভিনিগারের বদলে লেবুর রস ও ব্যবহার করতে পারেন।
১২. তেল ছিটকাবে না
গরম তেলে অল্প একটু লবণ মিশিয়ে নিন। এর ফলে মাছ বা সবজি কড়াইতে দিলে তেল ছিটকাবে না।
১৩.মোমবতি
মোমবতি জ্বালানোর আগে কয়েক ঘন্টা তা লবণাক্ত জলে ভিজিয়ে রাখুন। এর পর মোমবাতি ভালো করে শুকিয়ে নিন। এটা করলে মোমবাতির গা বেয়ে মোম গলে পড়বে না।
১৪. পিঁপড়া তাড়ানো
পিঁপড়া তাড়ানোর জন্যেও লবণের জুড়ি নেই। আধা মগ পানিতে দু‘চামচ লবণ মিশিয়ে তা ঘরের চারিদিকে স্প্রে করে দিন। দেখবেন ঘরের আশেপাশে পিঁপড়া ঘেঁষবে না।অনেক সময় বই বা কাপড়ের তাকে পিঁপড়ার উপদ্রব দেখা যায়। তাকে লবণ ছিটিয়ে রাখুন। পিঁপড়ার উপদ্রব থাকবে না। অবশ্য শুধু পিঁপড়া নয় অন্য পোকামাকড়ও তাড়াতে পারেন এইভাবে।
১৫. রুম ফ্রেশনার তৈরি
নিজের রুম ফ্রেশনার নিজেই তৈরি করে নিন। এর জন্য একটা বাটিতে খানিকটা লবণ আর আপনার পছন্দের এসেনসিয়াল অয়েল কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে কমলা লেবুর খোসা কিছুটা থেঁতলে মেশাতে পারেন।
১৬.ইস্ত্রি পরিষ্কার
ইস্ত্রি পরিষ্কার করতে ইস্ত্রি ভালো করে গরম করে তাতে লবণ লাগিয়ে ব্রাউন পেপার বা মোটা কাপড়ে ঘষে নিন।
১৭.সিঙ্ক পরিষ্কার
রান্নাঘরের সিঙ্ক পরিষ্কার করতে লেবুর রস আর লবণ দিয়ে একটা পেস্ট বানান। এরপর এই পেস্ট সিঙ্কে লাগিয়ে রাখুন‚ খানিকক্ষণ পর ভালো করে ঘষে নিন। স্টেনলেস স্টিলের যে কোন জিনিস লেবু আর লবণেরর পেস্ট দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন।
১৮. জানলার আর্দ্রতা
শীতকালে জানলা যাতে জমে না হয় তার জন্য জানলা লবণ পানি দিয়ে মুছে নিন। জানলায় কোনরকম আর্দ্রতা জমবে না। এটা গাড়ির কাঁচের জন্যেও করতে পারেন।