রক্তশূন্যতা বা রক্তাল্পতা বা রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) হল রক্তে রক্তকণিকা স্বল্পতা অথবা রক্তের পরিমাণ বা অক্সিজেনবাহী রক্তরঙ্গক হিমোগ্লোবিনেরঅভাব।রক্তশূন্যতা অন্য রোগের সঙ্গে একটি উপসর্গ হতে পারে (যেমন ক্রনিক রেনাল ফেইলিওর অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী বৃক্কীয় কার্যহীনতা), বা কখনো নিজেই একটি রোগ হতে পারে (যেমন অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া অর্থাৎ সমস্ত রক্তকণিকা তৈরি হবার অভাব) বা যার কারণে অন্য রোগ হতে পারে (যেমন হার্ট ফেইলিওর)।
আপনার কি খুব সহজেই ক্লান্ত লাগে, মাথা ঘোরায় কিংবা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে? তাহলে দেরি না করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করান। কারণ আপনার হতে পারে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা।
অর্থাৎ রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ লোহিত রক্তকণিকা বা হেমোগ্লোবিন না থাকাকে অ্যানিমিয়া বলে। লোহিত রক্ত কণিকার মূল উপাদান হল হেমোগ্লোবিন। কোনো কারণে এর ঘাটতি দেখা দিলে শরীরের কোষ যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পায় না।
অ্যানিমিয়া কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে অ্যানিমিয়া হতে পারে। তবে মূলত কোনো কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষয় হলে, লোহিত কণিকার উৎপাদন ব্যাহত হলে এবং লোহিত কণিকা ধ্বংস হলে অ্যানিমিয়া হয়।
লক্ষণ
অনেক সময় অ্যানিমিয়ার কোনো লক্ষণই চোখে পড়ে না। তবে অ্যানিমিয়ার কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
-
# সহ্জেই ক্লান্ত লাগা
# মাথা ঘোরানো বা ঝিমঝিম করা,
# দুর্বলতা
# শ্বাসকষ্ট হওয়া বিশেষ করে একটু বেশি কাজ করলে বা ব্যায়াম করলে
# হৃদপিণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া, বুক ধড়ফড় করা বিশেষ করে একটু বেশি কাজ করলে বা ব্যায়াম করলে
এই লক্ষণগুলো অন্য কোনো রোগের কারণেও হতে পারে। তবে এসব লক্ষণ চোখে পড়লে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
অ্যানিমিয়ার ঝুঁকি কাদের বেশি
শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রন এবং ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে অ্যানিমিয়া হয়। যাদের অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তারা হলেন:
# যেসব নারীদের ঋতুস্রাবের সময় রক্তপাত অনেক বেশি হয়
# গর্ভবতী নারীরা
# দীর্ঘদিন ধরে কিডনির রোগে ভুগছেন যারা
# যেকোন ধরণের ক্যানসারে, বিশেষ করে রক্তের কোন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা
# পেটে কৃমি হলে
# যারা অপুষ্টির শিকার
# নিরামিষাশী
# এইচআইভি কিংবা হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীরা
# বংশে কারো অ্যানিমিয়া থাকলেও হতে পারে।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
বিভিন্ন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে অ্যানিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে। এছাড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে কারণ এটি শরীরে আয়রন শোষণ করাতে সাহায্য করে।
অ্যানিমিয়ার ধরনের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধের মাধ্যমে কাজ হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হয়।সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করানোর পর নিশ্চিত হওয়া যায় অ্যানিমিয়া হয়েছে কী না। আপনি অ্যানিমিয়া আক্রান্ত হলে চিকিৎসক আপনাকে আয়রন, ফলিক এসিড কিংবা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ ঔষধ দেবেন। এটি নির্ভর করবে আপনার রোগের ধরণের ওপর। অনেক সময় রক্ত দেয়াও প্রয়োজন হতে পারে।
আপনি নিজে যা করতে পারেন
দেহ প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়া অ্যানিমিয়ার একটি অন্যতম মূল কারণ। এই অভাব দূর করতে চিকিৎসক আপনাকে ঔষধ দিতে পারেন। তবে কোনো ঔষধই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত নয়।
শরীরের এই অভাবগুলো আপনি পূরণ করতে পারেন প্রাকৃতিকভাবেই। আপনাকে খেতে হবে আয়রন, ফলিক এসিড এবং ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার। খেতে পারেন গরু বা খাসীর মাংস, লাল এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি (টমেটো, লালশাক, পালং শাক, মটরশুঁটি ইত্যাদি), দুধ, ডিম, মাছ, ঢেকি ছাঁটা চাল, লাল আটার রুটি, কিশমিশের মতো খাবারগুলো।
এছাড়া যা করবেন:
# প্রচুর পানি পান করুন
# ব্যায়ামের সময় নিজের ওপর খুব বেশি জোর দিবেন না
# শরীরের কোথাও কেটে গেলে কিংবা ঘা হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।