অজানা গুণে ভরা মৌরি-মৌরি খাওয়ার ২৭ উপকারিতা!

0
13594
মৌরির গুণ

মৌরি আমরা প্রায় সবাই চিনি। মৌরি মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর। মৌরিতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা নিজস্ব সুগন্ধের জোরে মুখ থেকে খাবারের গন্ধ (তা সে সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ যা-ই হোক না কেন) দূর করতে সক্ষম।

খাদ্য দ্রুত হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মৌরী অত্যন্ত সহায়ক। মৌরি চিবালে মুখ থেকে যে লালা ক্ষরিত হয় তা হজমে সাহায্য করে। পাশাপাশি ‌মৌরিতে যে ফাইবার থাকে তা যেমন খাদ্যকে পাচন তন্ত্র বেয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে তেমনই তা কোষ্ঠকাঠিন্যর ওষুধ হিসেবেও কার্যকর। আসলে মৌরির এই গুণের কথা জেনেই, খাওয়ার শেষে মৌরি মুখে দেওয়ার রীতি চালু হয়েছিল।

মৌরিতে যে পুষ্টিকর উপাদানগুলি থাকে তার একটি তালিকা নিচে প্রকাশ করা হলো ১০০ গ্রাম মৌরিকে একক হিসাবে ধরে ।

পুস্তিকারক উপাদান                                       সমষ্টি

আমিষ উপাদান                                               ১৮ গ্রাম

জল                                                             ৯.৫ গ্রাম

শ্বেতসার ও শর্করা                                            ১৪৫ গ্রাম

পথ্য সম্বন্ধীয় তন্তু                                             ১৫ গ্রাম

স্নেহ বা চর্বি                                                   ১৬ গ্রাম

ভিটামিন এ                                                  ৩১১ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি                                                  ২১ মিলিগ্রাম

ভিটামিন বি 6                                              ৬৫০ মিলিগ্রাম

ক্যালসিয়াম                                                ৬৪৬ মিলিগ্রাম

লোহা                                                       ৩৭ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেসিয়াম                                              ১৭০ মিলিগ্রাম

ফসফরাস                                                  ৪৪০মিলিগ্রাম

আরও পড়ুনঃ   ঔষধি গুণে ভরা পুদিনা পাতা

পটাসিয়াম                                                 ১.৪ গ্রাম

সোডিয়াম                                                 ১৬ মিলিগ্রাম

জিংক                                                     ৫.৩ মিলিগ্রাম

তামা                                                       ৯১০ মিলিগ্রাম

ম্যাঙ্গানিজ                                                ২.৩  মিলিগ্রাম

সেলেনিয়াম                                               ৫ মিলিগ্রাম

মৌরির এই কার্যকারিতা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও স্বীকৃত। যে কারণে এখনো পেট পরিষ্কার রাখার ওষুধ তৈরিতে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল মৌরি। হোটেল রেস্তোরাঁয় অবশ্য খাওয়ার শেষে মৌরি পরিবেশন করা হয় নিছক রীতি মেনে। কিন্তু এই রীতি অনুসরণের মাধ্যমেই রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ যে আমাদের সুস্থতার দিকে পরোক্ষে নজর রাখছেন এটা জেনে নিশ্চই আপনার ভালো লাগছে।

পানের সঙ্গে আবার অনেক হোটেলে খাবার শেষে ধনিয়ার সঙ্গে মৌরি দেওয়া হয়। খুব সামান্য একটি জিনিস মনে হলেও এটির রয়েছে অনেক পুষ্টি ও ওষধি গুণাগুণ। মৌরি খনিজ লবণসমৃদ্ধ একটি বীজ। এতে কপার, আয়রন, পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে আছে। এ ছাড়া আছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কয়েকটি বি ভিটামিন। মৌরি আঁশসমৃদ্ধ এবং এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভনয়েড। রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারী অজানা অনেক গুণ। জেনে নিতে পারেন বিস্তারিত।

১. মৌরী অন্যতম গুনের মধ্যে হলো দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করা। সোজা কথায় চোখের জ্যোতি বাড়াতে মৌরীর জুড়ি মেলা ভার। খাওয়ার পর নিয়মিত এক চা চামচ মৌরি খেলে হজম শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।  এতে থাকা ভিটামিন এ চোখের জন্য খুবই উপকারী। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। চোখে গ্লুকমার মত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে মৌরি সাহায্য করে।

২. মৌরী বায়ুরোগ নাশক। গ্যাস, অম্বলের সমস্যা এখনকার দিনে কোনও অবাক করে দেওয়া ঘটনা নয়। ভালোমন্দ কিছু খেলে এমনিই হজমের গোলমাল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। মৌরী সেটা দূর করে খাবার হজমে সাহায্য করে। গ্যাসের সমস্যা দূর করে।

৩.  মৌরি দেহের ভেতর জোলাপ বা ল্যাক্সিটেভ তৈরিতে ব্যবহার হয়। পানিমিশ্রিত মৌরির রস পেট ফাঁপা এবং পেট ব্যথার জন্য উপকারী।

৪. খাওয়ার সঙ্গে হজমের গোলমালের ব্যাপারটা সবসময় জড়িয়ে থাকে। মৌরী সেটা হতে দেয় না। আর যদি তেমন কোনও ব্যাপার থেকেও থাকে, সেটাও দূর করে। মৌরি হজমের গোলযোগ এবং পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে থাকে। মৌরি প্রধাণত হজমে সাহায্যর জন্য খাওয়া হয়। ভারী খাবারের পর মৌরি চিবিয়ে খেলে তা আহার পরিপাকে সাহায্য করে ।

আরও পড়ুনঃ   বিয়ের আগে ছেলেদের যে কাজগুলো অবশ্যই করা উচিৎ

৫. মায়ের বুকের দুধ নবজাতক সন্তানের জন্য বলদায়ক এবং রোগপ্রতিরোধক। অনেক সময় প্রসূতি মায়ের শারীরিক সমস্যা থাকলে পর্যাপ্ত দুধ উত্‍পন্ন হয় না। মৌরী সে সমস্যাও দূর করে এবং বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।

 ৬. মৌরি মুখের প্রদাহ/মুখের ভেতরের ত্বকে জ্বালা সারায়। মুখে কোনও কারণে ঘা হয়ে থাকলে, কোনও খাবার খেলেই জ্বালা করে। মাঝেমধ্যে এরকম সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরা নিয়মতি মৌরী চিবিয়ে দেখতে পারেন। মৌরীর রস ওই সমস্যা একেবারে দূর করে।

৭. অতিরিক্ত গরমে মৌরির পানি খেলে শরীরে শান্তি আসে। শরীর ঠাণ্ডা থাকে। মৌরি শরীরের সাথে সাথে মনকেও শান্ত রাখতেও সাহায্য করে।

৮. যাঁরা কৃমির সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা মৌরি পাতা বেটে তার রসটাও খেতে পারেন। এটি কৃমির সমস্যা দূর করতে দারুন ভাবে সাহায্য করবে।

৯. মৌরীর গায়ে যে আঁশ রয়েছে, তাতে একটি বিশেষ উপদান রয়েছে। ওই উপাদান কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধক।

১০.  স্ট্রোক এবং হার্টের রোগ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ভোগেন মানুষ। মৌরী এসবের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনে। অর্থাৎ নিয়মিত মৌরি খেলে স্ট্রোক এবং হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

১১. রাতে ঘুমানোর আগে আধা চা চামচ মৌরি গুড়া কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যাবে।

বা চায়ে মৌরি দিয়ে খেলে হজমের সমস্যা যেমন কমে, তেমনই  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও বিশেষ উপযোগী। মৌরি কোষ্ঠ  কাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

১২. প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে মৌরি ভিজিয়ে সেই পানিটা খেলে অ্যাজমা বা ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা কমতে পারে। আবার সারাদিন পানিতে মৌরি ও মিছরি ভিজিয়ে রেখে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর ঘুমনোর আগে ভেজানো পানি খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং তাতে কোস্টকাঠিন্য, গ্যাস ও অম্বলের মতো সমস্যা কমে যায়।

বা মৌরির পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করে এর ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিলে অ্যাজমা এবং ব্রঙ্কাইটিস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১৩. ওজন কমাতে এবং শরীরের যে কোন রকম ব্যথা কমাতে মৌরি অব্যর্থ। অর্থাৎ মৌরি শরীরের ওজন কমাতে এবং শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মৌরির তেল মালিশ করলে হাড়ের জোড়ার ব্যথা কমে।

১৪. সমপরিমাণ ভাজা মৌরি এবং চিনি নিয়ে গুঁড়া করে দুই ঘণ্টা পর পর ঠাণ্ডা পানির সঙ্গে দুই চামচ পরিমাণ মিশিয়ে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।

১৫. যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁরা যদি দিনের মধ্যে নানা সময় একটু করে মৌরি চিবিয়ে নেন তবে তাদের নেশা করার ইচ্ছে অনেকক্ষেত্রে কমে যায়।বা সামান্য ঘি বা মাখন দিয়ে মৌরি ভেজে বোতলে ভরে রাখুন। যখন ধূমপানের ইচ্ছা জাগবে আধা চা চামচ চিবান, নেশা কমে যাবে।

১৬. মৌরিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্ল্যাভনয়েড যা ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। তাই নিয়মিত খাবার প্রস্তুতে মৌরি ব্যবহার করতে পারেন।

১৭.  মৌরিগুঁড়ো বা মৌরিবীজ নিঃসৃত তেল মানুষের শরীরের বিভিন্ন সমস্যায় সাহায্য করে যেমন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে টান বা খিঁচুনি, সর্দিকাশি, ব্যাথা যন্ত্রনা এবং স্নায়ুতন্ত্রজনিত সমস্যা ।

আরও পড়ুনঃ   ওষুধের কাজ করে কলা!

১৮. মৌরিতে যে খনিজ পদার্থগুলি থাকে (লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি) তা আমাদের শরীরের রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে সাহায্য করে ।

১৯. মৌরিবীজে উল্লিখিত খনিজ পদার্থগুলির মধ্যে তামার পরিমান বেশি থাকে যা পরিপাকে সহায়তা করে এবং মানুষের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে ।

২০. মৌরিবীজ নিঃসৃত তেলে নিদ্রাকারক এবং বেদনানাশক গুণাবলী আছে যা রক্তচাপ এবং স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সন্ন্যাস(ক্যানসার) রোগ বা মূর্চ্ছাজনিত  রোগের সময় আমাদের স্নায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ।

২১. মৌরিবীজ থেকে নিঃসৃত তেলের অন্যতম গুণাবলী হল, পচন এবং সংক্রমণ প্রতিরোধী । ব্যাথা বেদনা উপশমেও বেশ উপকার দেয় ।

২২. পরজীবী বা ভাইরাস সংক্রমণ এবং মুখের দুর্গন্ধ বা সংক্রমণ প্রতিরোধে মৌরি অদ্বিতীয় ।

২৩.  মানসিক উদ্বেগ, স্নায়ুচাপজনিত সমস্যা এবং বিনিদ্রাজনিত সমস্যা কমাতে মৌরি খুব সাহায্য করে ।

২৪. মৌরী পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খাওয়ার কথা তো শুনেছেন। অনেকেই খেয়েওছেন। মৌরীর রস পেট ফাঁপা ভাব দূর করে। এক সপ্তাহ যদি খেতে পারেন, রোজ সকালবেলা নিয়ম করে, তাহলে ভীষণ উপকার পাবেন। পেড় কামড়ালেও তত্‍ক্ষণাত্‍ উপকার দেয় মৌরী ভেজা মিছরি পানি।
২৫. সর্দি-কাশিতে ভোগা ব্যাপারটা এখনও প্রায় সহনীয় হয়ে গিয়েছে। হাল্কা সর্দি সবারই কম-বেশি থাকে দূষণ বেড়ে যাওয়ার কারণে। যদি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে নিয়ম করে মৌরী মুখে ফেলুন। দেখবেন উপকার পাবেন।

২৬.যাঁদের হাঁপানি এবং ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য উপকারী মৌরীর পাতা। এই গাছের পাতা গরম জলে সেদ্ধ করে সেই ধোঁয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে নিলে উপকারে লাগে।
২৭. গ্যাস অম্বলের প্রধান কারণ কোষ্ঠ-কাঠিন্য। মৌরী মলত্যাগের সমস্যাকে দূর করে, পেটে ময়লা জমতে দেয় না। আর পেটে ময়লা না জমলে গ্যাস, অম্বল ইত্যাদির সমস্যাও থাকে না।

আজকালকার দিনে বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত, তার মধ্যে হাঁপানি, সর্দিকাশি এবং ব্যাথা যন্ত্রনা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী । মৌরি থেকে এইসমস্ত অসুখের ঔষধ তৈরি করা হয় । তাছাড়া মৌরিবীজ থেকে যে তেল তৈরী করা হয় তা মাতৃদুগ্ধ প্রস্তুতে সাহায্য করে, নবজাতক শিশুর একমাত্র আহাৰ্য্য । এছাড়াও বিভিন্ন রন্ধন প্রণালীতে সুগন্ধি মসলা হিসাবে মৌরির ব্যবহার অনস্বীকার্য । এই সুস্বাদু মসলাটি সূপ, সস, কেক, বিস্কুট, পাউরুটি এবং বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

মৌরি ঠিকমতো বায়ুনিরোধক পাত্রে রেখে মুখবন্ধ করে সূর্যালোক থেকে দূরে রাখলে তা ১২ মাস ব্যবহার করা যায়, তবে সংগ্রহ করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যবহার করলে এর উপকারিতা পুরো মাত্রায় পাওয়া যায়।

রাসুল সাঃ বলেছেন – অবশ্যই তোমাদের সোনা/সিনা (Sanna) ও শুলফা ব্যবহার করা উচিত। এ দুটোতে মৃত্যু ছাড়া সকল রোগের নিরাময় রয়েছে। ইবনে মাজাহ, চিকিৎসা অধ্যায়, হাদিস নাম্বারঃ ৩৪৫৭ ,। শুলফা হচ্ছে মৌরিজাতীয় সুগন্ধি লতা।

 আরও পড়ুনঃ মৌরির ২২ টি দারুণ ব্যবহার জেনে নিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − one =