মানুষকে রক্ত প্রদানে উৎসাহিত না করা

0
345
মানুষকে রক্ত প্রদান

রসুল সল্লাল্ল-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মেরাজে গিয়েছিলেন, একাধিক স্থানে তাঁকে ফেরেশতা-গণ একটি পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলো, “আপনার উম্মতকে বলবেন, তারা যেন তাদের শরীরের শিরা সমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত করে, আর রক্তই তাদের বিনাশের একমাত্র কারণ”। রসুল সল্লাল্ল-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা চান্দ্র মাসের ১৫, ১৭ অথবা ১৯ তারিখে তোমাদের শরীরের শিরা সমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর”। তিনি আরও বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি চান্দ্র মাসের ১৭ তারিখ মঙ্গলবার শরীরের শিরা সমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত করবে, সে ব্যক্তি সারা বৎসর রোগমুক্ত থাকবে”। আমার প্রশ্ন হল এই পর্যন্ত কি কেউ শুনেছেন যে, কোন বক্তা রক্ত দান সম্বন্ধে হাদিসের সমর্থনে কোন বক্তৃতা দিয়েছেন?  এই প্রশ্নের উত্তর “না’ হওয়ার পিছনে কারণ একটাই, তাহলো যদি সে মাওলানাকেই প্রশ্ন করা হয় যে, তিনি কতবার রক্ত দিয়েছেন; তাহলে তিনি তার কোন সংখ্যা বাচক উত্তর দিতে পারবেন না। এর পিছনে কারণ হল তিনি একবারও রক্ত দেননি। আমি এই পর্যন্ত কোন আলেমকে কখনও রক্ত দিতে দেখিনি, (যদিও আমি বলছি না যে, কোন আলেমই কখনই রক্ত দেন না, ) যার কারণে এই সংক্রান্ত হাদিসও কাউকে বলতে চান না।

সাহাবিদের সময়ে শিঙ্গা লাগিয়ে বিষ রক্ত বের করতে হত; যদিও তা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। শিঙ্গা সংক্রান্ত একটি হাদিসে আছে যে, “রোজা রাখা অবস্থায় কেউ যদি শিঙ্গা লাগিয়ে দুর্বল হবার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না”। বর্তমানে ২০১১ সনের সময়ে বাংলাদেশে ৩, ৫০, ০০০ মানুষের থ্যলাসিমা রোগ রয়েছে, তাছাড়া ৭, ০০০ শিশু জন্মের সময়ই থ্যলাসিমা রোগ নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। গবেষণায় আরও প্রমাণিত হয়েছে যে, আগামী শতকের মহা বিপর্যয়কর রোগ হবে থ্যালাসিমা। থ্যলাসিমা রোগের সব থেকে প্রথম প্রয়োজনটাই হল রক্তের। কাজেই ইমাম সাহেব-গন যদি রক্ত দেয়ার বিষয়টি মানুষকে গুরুত্ব সহকারে হাদিসের তথ্যানুসারে বুঝায়, তাহলে নিঃসন্দেহে ধর্মীয় আদেশ হবার কারণে অনেক মানুষ রক্ত দানে অভ্যস্ত হয়ে পরবে। আমি মনে করি রক্ত দানের মত এমন মহৎ দান আর পৃথিবীতে হতে পারে না। গভীর রাতে যখন হটাত কোন অপরিচিত লোকের ফোন পাই যে, “আমাকে আপনি চিনবেন না, আপনি একজন নিয়মিত রক্ত দাতা হিসাবে আপনার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেছি। আমার সন্তানের জন্য রক্তের অতি প্রয়োজন, যদি আপনি আমার সন্তানের জন্য রক্ত দেন, তাহলে তার জীবনের জন্য অসীম উপকার হত”! তখন আমি বুঝতে পারি যে, একজন মানুষ কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অপরের কাছে ধর্না দেয়, আর সে মুহূর্তে এটা কত বেশি উপকারী দান। তবে এখানে আরও একটি বিষয় কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তাহলো রক্ত দিয়ে তার বিনিময়ে কোন টাকা গ্রহণ করা যাবে না। সেই সাথে রক্ত বিক্রি করাও হারাম। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে নিয়ম আছে যে, রক্ত প্রদান করলে তার বিনিময়ে কিছু টাকা দেয়া হয়, এটা মোটেও জায়েজ নেই।

আরও পড়ুনঃ   ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধিকারী খাদ্য-পানীয়

আমাদের দেখার অভিজ্ঞতানুসারে এতটুকু বুঝতে পাড়ি যে, যদি দুনিয়াবি বা আর্থিক দানের জন্য বেহেশত নির্ধারিত থাকত, তাহলে শতকরা ৯৫% খৃষ্টানের নাম প্রথম সারিতে থেকে তার পরে মুসলমানদের নাম আসত। অথচ আমাদের ওয়ায়েজিন-গন সাধারণ জনগণ কর্তৃক ভিক্ষার টাকা তাদের ওয়াজের জন্য কন্ট্রাক বিনিময় হিসাবে গ্রহণ করছে। কাজেই তাঁদের কর্তৃক হাদিস-কুর’আনের মধ্য থেকে মানুষের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বলার সময় কোথায়?  তারা বিভিন্ন হাসি- কান্নার গল্প শুনিয়েই রাত্রি গভীর করেন। অপর পক্ষে খৃষ্টান পাদ্রীরা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সমাজের তথা মানবীয় উন্নয়নের সাথে জড়িত থাকে। সুতরাং বেহেস্ত ও তাদের কার্যক্রমের মধ্যে সবথেকে বড় বাধাই হল তারা ঘোষিত মুশরিক। তারা নিজেদের সম্পদের প্রায় অংশই দরিদ্রতা নিরসন বা সেবার জন্য দান করে আর আমাদের বেশীর ভাগ আলেম সভায় বক্তৃতা দেয়ার নাম করে সাধারণ জনগণ কর্তৃক ভিক্ষার টাকা গ্রহণ করে। কাজেই জনগণের জন্য কখন কোন বিষয় দরকার, সে বিষয়ে বলবে কিভাবে।

আমি সামরিক চাকুরী কালে সুদীর্ঘ সময় আমার পায়ের একপ্রকার ব্যথায় ভুগেছি। সামরিক হাসপাতালে অনেক চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু অস্থায়ী ফল ছাড়া কোন স্থায়ী ফল হয়নি। অবসর গ্রহণের পর যখন নিয়মিত রক্ত দেয়া শুরু করলাম, তার পর থেকে আর আমি সে ব্যথার সমস্যায় ভুগছি না। আমি উপরোল্লিখিত হাদিসের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করত: রক্ত দেয়া শুরু করার পর থেকে হয়তো মহান আল্লহ রব্বুল আলামীন আমাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। সাহাবী (রাঃ) দের জমানায় রক্ত ফেলে দেয়া হত, অথচ বর্তমানে রক্ত অপরের শরীরে কাজে লাগানো যায়। তাই আমি সকল মুসলিম ভাইদেরকে বলব, ’আপনারা রক্ত দান করুন, মানুষের প্রয়োজনে এই গিয়ে আসুন এবং জীবনে সুস্থ থাকার জন্য রক্ত প্রদানে অভ্যস্ত হওন’। যদিও উত্তম বিষয়টি মহান আল্লহ রব্বুল আলামীনই ভাল জানেন, তারপরও এ বিষয়ে আরও অধিক জানার জন্য ইন্টারনেট মাধ্যমে নীচের ওয়েব সাইট ভিজিট করুন:

আরও পড়ুনঃ   রাসূল (সাঃ) যেসব খাবার পছন্দ করতেন

http://www.islam-qa.com/en/ref/2320/blood

http://www.islam-qa.com/en/ref/6700/blood

জয়নুল আবেদীন

ইসলামে যৌনশক্তি বৃদ্ধি সহায়ক খাদ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 3 =