মানব দেহে নামাজের অবদান : হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

0
551
মানব দেহ, নামাজের অবদান

নামাজ কেবল ইবাদতই নয়; এটি একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা

সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না। কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত পরিলক্ষিত হয় না। যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে, এটি সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানুষের সমগ্র অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)

সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট  খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’

নামাজ একটি উত্তম ইসলামী ব্যায়াম, যা মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না। অন্যসব ধর্মের মধ্যে এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই যা আদায়ের সময় মানুষের সকল অঙ্গ নড়াচড়া ও শক্তিশালী হয়। নামাজীর জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব মানবের সকল অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং সামগ্রিক মানব অঙ্গগুলোতে নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য অটুট থাকে। তুরস্কের ডাক্তার হুলুক নূর বাকী নামাজের আত্মিক দিকের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনিও এর দৈহিক উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দেননি। এভাবে তিনি লিখেছেন—It today even materialists acknowledge that there can be no prescription other than prayer for the relief of joints.‘আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য আজ নামাজ ব্যতিত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।’

ক্যামিস্ট্রির ব্যবস্থাপত্র :নামাজের ব্যায়াম যেমন বাইরের অঙ্গ সুনিপুণ সৌন্দর্য ও বৃদ্ধির মাধ্যম, এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন-হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় করে ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে। নামাজের প্রচলন যদি হতো তাহলে :কিছু রোগ এরূপও আছে যেগুলো থেকে নামাজ চালু করার দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, কেননা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দেহে এসব রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

এর ধারাবাহিকতায় ডাক্তার হাসান গজনবীর এ বাক্যগুলো চিন্তার খোরাক জোগায়। তিনি লেখেন :“In addition to saving us from the sins and elevating us to the hights of spirituality prayers are great help in maintaining our physical health. The keep our body active, help digestion and save us from nuscase and joint diseaes through regular balanced exercise. They help the circulation of blood and also the bad effect of cholesterol. Prayers a vital role in acting as preventive measure against heart attack, Paralyes. diabetes mellitus etc. Hearts patients should offer the five obligatory prayers regularly as they get the permission from their doctor to leave bad. (Islamic Medicine. P. 68) . ‘আমাদেরকে পাপ থেকে রক্ষা করা এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করানোর সাথে সালাত আমাদের দৈহিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ধরনের সাহায্য করে। এটি আমাদের দেহকে সক্রিয় রাখে, হজমে সাহায্য করে, আমাদেরকে জড়তা ও জোড়ার রোগ থেকে নিয়মিত সুষম ব্যায়ামের দ্বারা রক্ষা করে। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনে এবং কলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, যেমনিভাবে তারা তাদের ডাক্তারদের নিকট খারাপ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনুমতি লাভ করে থাকেন’ (প্রাগুক্ত)। পশ্চিমারা আজ হরেক রকমের ব্যায়াম করছেন যাতে তাদের দেহের কলেস্টেরল গড়মাত্রা সীমাতিক্রম না করে। এছাড়াও এদের দেহ সব প্রভাবশীল পন্থায় কাজ করে। তারা এ সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ইসলামী নামাজ যা কোনোরূপ ব্যায়াম নয় অথচ তা নানারূপ ব্যায়ামের রূপ পরিগ্রহ করে। তা স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। যেমন জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ‘ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ করেছেন তার জবানীতে। তিনি লিখেছেন: যদি ইউরোপে ইসলামী নামাজের প্রচলন হতো তাহলে আমাদের দৈহিক ব্যায়ামের জন্য নতুন নতুন ব্যায়াম ও নড়াচড়া আবিষ্কার করার প্রয়োজন হতো না (আল মাসালিহুল আমলিয়াহ লিল আহকামিশ শরইয়াহ পৃ. ৪০৬)।

আরও পড়ুনঃ   হিজামা -এক অনবদ্য চিকিৎসা ব্যবস্থা

সর্বোত্তম পর্যায়ের চিকিত্সা :এক পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ জামান উসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপির ওপর উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য গিয়েছেন। যখন সেখানে সম্পূর্ণ নামাজের ব্যায়াম পড়ালেন এবং বুঝালেন তখন তিনি এ ব্যায়াম দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন যে, আমরা এতদিন পর্যন্ত নামাজকে এক ধর্মীয় আবশ্যক বলেই জানতাম এবং পড়তে থাকতাম, অথচ এখানে তো আশ্চর্য ও অজানা জিনিসের আবিষ্কার হয় যে, নামাজের মাধ্যমে বড় বড় রোগ নিরাময় হয়ে যায়। ডাক্তার সাহেব তাকে একটি তালিকা প্রদান করেন যা নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিরাময় হয়— ১. মানসিক রোগ (Mental Diseases) ২. স্নায়ুবিক রোগ (Nerve Diseases) ৩. মনস্তত্ত্ব রোগ (Psychic Diseases) ৪. অস্থিরতা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা রোগ (Restlessness, Depression and Anxiety) ৫. হার্টের রোগ (Heart Diseases) ৬. জোড়ার রোগ (Arthritis) ৭. ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ (Diseases due to Uric Acid) ৮. পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer) ৯. চিনি রোগ (Diabetes Mellitus) ১০. চোখ এবং গলা ইত্যাদির রোগ (Eye and E.N.T. Dieases). মনস্তাত্তিক রোগ নামাজের মধ্যে মনস্তাত্তিক রোগ যেমন- গুনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদিরও চিকিত্সা রয়েছে। যার বর্ণনা পুস্তকের কলেবর দীর্ঘ হওয়ার ভয়ে বাদ দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে নামাজ দ্বারা পূর্বোক্ত উপকারিতা ছাড়াও দৈহিক ও মেধাগত উপকারিতাও হয়। আজ ইসলামি ইবাদতের বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলো সামনে আসছে। নামাজের প্রত্যেকটি রুকন কোনো না কোনো চিকিত্সাগত ও মনস্তাত্তিক উপকারের বাহক।

ব্যায়াম ও নামাজ :নামাজের রুকনগুলো এককভাবে ব্যাখ্যা করলে তার আলোকে দেখা যায় নামাজের প্রত্যেক রুকন আদায়ের মধ্যেই বিশেষ অঙ্গ ও জোড়ার আন্দোলন সৃষ্টি হয় এবং বিশেষ অঙ্গগুলোর ব্যায়াম হয়। শরীরতত্ত বিদ্যার (Physiology) একটি মূলনীতি এই যে, যখন মানুষ নড়াচড়ার ইচ্ছে করে তখন সংশ্লিষ্ট মস্তিষ্কের কেন্দ্র থেকে নড়াচড়া স্নায়ুর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পৌঁছায় এবং অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে উদ্দিষ্ট কাজ করে থাকে এবং যখন নামাজ আদায়ের শুরুতে বারবার নামাজের রুকনগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন এ আকার একটি ব্যায়ামের প্রকৃতি গ্রহণ করে যার দ্বারা অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়। এভাবে নামাজের সব রুকন আদায়ের মাধ্যমে মানবের সব অঙ্গের ব্যায়াম হয়ে যায়। যার দ্বারা মানব দেহের সতেজতা ও শক্তি বহাল থাকে এবং দৈহিক কার্যাবলি প্রাকৃতিক মাপকাঠির ওপর চলতে থাকে।  সামগ্রিক ইবাদত নামাজ একটি উত্তম ইসলামি ব্যায়াম, যা মানুষকে সর্বদা সতেজ রাখে। অলসতা ও অবসাদকে দেহের মধ্যে বাড়তে দেয় না কিন্তু অন্য কোনো ধর্মে এমন কোনো সামগ্রিক ইবাদত নেই যা আদায়ের মাধ্যমে মানুষের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ বৈশিষ্ট্য শুধু নামাজের মধ্যেই রয়েছে যে এটা সমগ্র ইসলামের সামগ্রিক ব্যায়াম যার প্রভাব সমগ্র মানব অঙ্গের ওপর সমভাবে পড়ে এবং দেহের সব অঙ্গের নড়াচড়া ও শক্তি সৃষ্টি হয় এবং স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে (ইসলামি স্বাস্থ্য বিধি, পৃ-৩৬)।

কঠিন বস্তু সচল করা : নামাজ আত্মা ও দেহ উভয়ের জন্য ব্যায়াম-এ জন্য এর মধ্যে দাঁড়ানো, বসা, রুকু, সিজদা এগুলোর বিভিন্ন ধরনের নড়াচড়া হয়ে থাকে এবং নামাজী এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। নামাজে দেহের অধিকাংশ জোড়া নড়াচড়া করতে থাকে এবং এর সাথে বেশির ভাগ অদৃশ্য অঙ্গগুলো পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসযন্ত্র, এবং খাদ্যের অঙ্গগুলো এসবের গঠনে নড়াচড়া এবং পরিবর্তন আসে। অত:পর এ অবস্থায় কোনো কথা নিষেধকারী যে এ সব নড়াচড়ার দ্বারা কিছু অঙ্গ শক্তি অর্জন করবে এবং অপ্রয়োজনীয় আবশ্যিক জিনিসগুলো সচল না হবে? (তিব্বে নববী, পৃ.-৩৯৯)।

রুকুর মধ্যে মগজ (Spinal Cord)-এর কাজ-কারবার বৃদ্ধি পায় এবং ঐ রুগি যার অঙ্গ অনুভূতিহীন হয়ে যায় তিনি এ রোগ থেকে খুব দ্রুত আরাম পেয়ে থাকেন। রুকু দ্বারা কোমর ব্যথার রুগি অথবা এমন রুগি যার মগজ ফুলে (Inflamation of spinal cord) গিয়েছে, তিনি খুব দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন। রুকুর দ্বারা মূত্রাশয়ের পাথর হওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয় এবং এর দ্বারা পায়ের নলার অবসাদগ্রস্ত রুগি চলাফেরা করতে সক্ষম হন। রুকুর দ্বারা মস্তিষ্ক ও চোখের প্রান্তে রক্ত পরিসঞ্চালন (Circulation of Blood)-এর কারণে মস্তিষ্ক ও চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

আরও পড়ুনঃ   হেপাটাইটিস এ -কারণ ,লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

নামাজের চিকিত্সাগত ও বৈজ্ঞানিক উপকারিতা এখন ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো:

১. তাকবীরে তাহরীমা : যখন আমরা হাতগুলোকে কান পর্যন্ত উঠাই তখন বাহু, ঘাড়ের পিঠ এবং কানের পিঠের ব্যায়াম হয়ে যায়। হার্টের রুগিদের জন্য এরূপ ব্যায়াম বহু উপকারী। যখন এই ব্যায়াম নামাজীর দ্বারা নামাজ পড়ার মাধ্যমে একাকী হয়ে যায় এবং এই ব্যায়াম প্যারালাইসিসের মারাত্মক সমস্যা থেকে রক্ষা করে। নিয়ত বাঁধার সময় কনুইয়ের সামনের অঙ্গগুলো এবং কাঁধের জোড়ার অঙ্গগুলো ব্যবহূত হয় এবং এগুলোর ব্যায়াম হয়ে যায়। মস্তিষ্কে কোটি কোটি সেল/ কোষ কাজ করে এবং কোষগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ বেড়ে যায়। এ সব বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমে ধারণা, অনুভূতি এবং অনুভূতির অধীনে যা কিছু আছে তা সচল থাকে। মস্তিষ্কের মধ্যে কোটি কোটি কোষের মতো গর্তও হয়, মস্তিষ্কের একটি গর্ত এরূপ আছে যার মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ ছবি নিতে থাকে এবং বিভক্ত করতে থাকে। এই ছবি খুবই কালো হয় এবং খুবই চমকদার হয়। একটি গর্ত আছে যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা হয় এবং এসব গুরুত্বপূর্ণ কথার মধ্যে ঐসব কথাও হয়ে থাকে যেগুলোকে অনুভূতি দৃষ্টি ও অনুমান করতে পারে এবং যাকে আমরা আধ্যাত্মিক সংশোধন নাম দিয়ে থাকি। নামাজী যখন হাত উঠিয়ে উভয় কানের নিকট নেয় তখন এক বিশেষ বৈদ্যুতিক প্রবাহ খুবই সূক্ষ্ম তাপ নিজ কনডেন্সর (Condensor) বানিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কের মধ্যে এই গর্তের সেল/ কোষগুলোকে চার্জ করে দেয়। যাকে অনুভূতি দেখতে ও আন্দাজ করতে পারে। এই কোষগুলো চার্জ হয়ে মস্তিষ্কে আলোর ঝলকানি হয় এবং এ ঝলকানি দ্বারা সব স্নায়ু প্রভাবিত হয়ে এই গর্তের দিকে মনোযোগ দেয়, যার মধ্যে আধ্যাত্মিক সংশোধন নিহিত রয়েছে। সাথে-সাথে হাতের মধ্যে এক তেজী প্রবাহ মস্তিষ্ক থেকে স্থানান্তর হয়।

রুকু:হাঁটুর ওপর হাত রেখে কোমরকে ঝুঁকানোর অবস্থাকে রুকু বলা হয়। এ নড়াচড়ায় দেহের সকল পেশির ব্যায়াম হয়ে যায়। এর মধ্যে নিতম্বের জোড়া ঝুঁকানো (Flexion) হয়,কনুইগুলো সোজা টান (Extended) হয় এবং মাথাও সোজা হয় এ সময় সব পেশি শক্ত অবস্থায় থাকে, যেহেতু পেট কোমরের পেশি ঝোঁকে এবং সোজা হবার সময় কাজ করে। এভাবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যায়াম রুকুর মধ্যে হয়ে যায়। সম্মানিত ডাক্তারগণ রুকু এবং সিজদাকে টাখনু এবং কোমর ব্যথার রুগিদের চিকিত্সা দিয়ে থাকেন। রুকুর মধ্যে মগজ (Spinal Cord)-এর কাজ-কারবার বৃদ্ধি পায় এবং ঐ রুগি যার অঙ্গ অনুভূতিহীন হয়ে যায় তিনি এ রোগ থেকে খুব দ্রুত আরাম পেয়ে থাকেন। রুকু দ্বারা কোমর ব্যথার রুগি অথবা এমন রুগি যার মগজ ফুলে (Inflammation of spinal cord) গিয়েছে, তিনি খুব দ্রুত সুস্থতা লাভ করেন। রুকুর দ্বারা মূত্রাশয়ের পাথর হওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয় এবং এর দ্বারা পায়ের নলার অবসাদগ্রস্ত রুগি চলাফেরা করতে সক্ষম হন। রুকুর দ্বারা মস্তিষ্ক ও চোখের প্রান্তে রক্ত পরিসঞ্চালন (Circulation of Blood)-এর কারণে মস্তিষ্ক ও চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

সেজদা: সেজদার মধ্যে নিতম্ব, হাঁটু, টাখনু ও কনুই-এর ওপর ঝোঁকানো (Flexion) হয়ে থাকে। যখন নলা এবং রানের পিছনের পেশি এবং কোমর ও উদরের পেশি চেপে যায় এবং কাঁধের জোড়ার পেশিগুলো এর বাইরের দিক থেকে টান লাগে। এর সাথে সাথে মাথার পিছনের অঙ্গগুলোও চেপে যায়। সেজদার মধ্যে নারীদের হাঁটুর সাথে বুক মিলানো উত্তম। এটা গর্ভাশয়ের পিছনের-এর উত্তম চিকিত্সা। সেজদার মধ্যে আরো অনেক শারীরিক উপকারিতা নিহিত রয়েছে। মস্তিষ্কের জন্য রক্তের খুব প্রয়োজন। কেননা সে সব অঙ্গের মূল। কিন্তু এর অবস্থানস্থল এরূপ যে, এ পর্যন্ত রক্ত পৌঁছানো কিছুটা মুশকিল, বিশেষত মস্তিষ্কের রক্তকে একত্রিত করার জন্য সেজদা খুবই ভারসাম্যপূর্ণ আমল। মস্তিষ্ক সাধারণ অবস্থার বেশির ভাগ সময় হার্ট থেকে উঁচু থাকে, এজন্য মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ যথেষ্ট হয় না, সেজদার দ্বারা মস্তিষ্কে হার্টের নিচে পড়ে এজন্য এ সময় এর রক্ত সহজে পৌঁছায়। সেজদা যত দীর্ঘ হবে ততই বেশি রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবে নবী করীম (স.) দীর্ঘ সেজদার ফজিলত বর্ণনা করেন। এর ওপর ভিত্তি করে যে ব্যক্তি নামাজে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তার জ্ঞান, বুঝ, স্মৃতি এবং মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত সুস্থ থাকে। যেকোন বয়সে মহান রবের দরবারে উপস্থিত হয়ে একনিষ্ঠ মনে কৃত লম্বা সেজদার দ্বারা আত্মিক, মস্তিষ্ক, মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্যের জন্য সহযোগী হয়। জার্মান প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডী পুলফের মতে ‘সেজদায় উভয় হাত এবং সব অঙ্গের এক মোহের সাথে প্রসারিত করা এবং সংকুচিত করা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জিনিসকে দূর করে’ (আল মানালিহুল আকলিয়াহ, লিল আহকামিন নকলিয়াহ পৃ-৪০৬)। নামাজি ব্যক্তির চেহারার ওপর সতেজতা থাকে। কেননা নামাজ এবং সেজদার কারণে এর সব শিরার মধ্যে রক্ত পৌঁছায়। যে নামাজ পড়ে না তার চেহারারওপর এক ধরনের কালচে রং ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনঃ   সুস্থতার জন্য ইসলামে স্বাস্থ্য নির্দেশনা

বৈঠক:দ’ু অথবা চার রাকআত পর আমরা আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসি, একে কা’দা বা বৈঠক বলে। আত্তাহিয়্যাতু পড়ার সময় যখন দেহ বসার অবস্থায় থাকে এবং হাঁটু ও নিতম্বের ওপর চাপ পড়ে, টাখনু ও পায়ের অংশগুলো পিছনে চাপ পড়া অবস্থায় থাকে, কোমর ও ঘাড়ের পেশিতে চাপ লাগে এজন্য এ সব অঙ্গে হালকা-পাতলা ব্যায়াম হয়ে যায়। ব্যায়ামের এ নিয়ম যে, কঠিন ব্যায়ামের পর কিছুক্ষণ চুপ থাকতে হবে এবং লম্বা শ্বাস নিতে হবে বা সংশ্লিষ্ট হালকা-পাতলা ব্যায়াম করতে হবে। নামাজে ও রুকু এবং সেজদার পরে বৈঠকে বসা এ নিয়মগুলোর উত্তম প্রকাশ।

সালাম ফিরানো: মুলতানের ডাক্তার কাজী আব্দুল ওয়াহেদ-এর মতানুযায়ী নামাজে সালাম ফিরানোর জন্য মাথা ডানে-বাঁয়ে ফিরানোর প্রয়োজন হয় এবং এক নামাজে এরূপ কয়েকবার (ফরজ সুন্নাত মিলে) করার প্রয়োজন হয়। এরূপকারীর হার্টের রোগ (Heart Diseases) এবং এর মধ্যকার জটিলতা থেকে সর্বদা বেঁচে থাকে এবং খুব কমই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সালাম ফিরানোর সময় ঘাড়ের ডান-বাম দিকের পেশি সক্রিয় থাকে। এটা ঘারের উত্তম ব্যায়াম যা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণরূপে হয়ে থাকে।

নামাজের সময় এবং আধুনিক বিজ্ঞান: আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে চলনশীল দেহ প্রদান করেছেন। এজন্য তার স্বাস্থ্য দেহের চলার (অর্থাত্ ব্যায়াম ইত্যাদি) ওপর টিকে থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানুষকে সচল রাখে। থেমে থেমে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন হয় জামায়াতে পড়ার জন্য এটা এক উচ্চমানের ব্যায়াম হিসেবে মানা হয়। ফজরের সময়:যখন রাত শেষ হয়ে আসে, তখন ফজর উদয় হওয়ার সাথে সাথে ফজরের নামাজ ফরজ করা হয়েছে। যা হালকা এবং যখন প্রকৃতির ওপর চাপ নেই। সারারাত আরাম করার পর যখন পাকস্থলীও খালি হয়ে যায়, কঠিন শ্রম ও ব্যায়াম ক্ষতিকর সাব্যস্ত হয় এবং এরূপ করায় ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এজন্য এ সময় হালকা ও সংক্ষিপ্ত নামাজ নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে মানুষের ক্ষতি না হয়। বরং কোনো নামাজি যেন এই চার রাকআত নামাজ পড়ে উপকারিতা গ্রহণ করতে পারে। ফজর নামাজ পড়ে লোকেরা নিজ অবসাদগ্রস্ত দেহকে পুনরায় সক্রিয় ও চলমান করে। এরপর সারাদিন যাবত্ নিজ রিজিক ও জীবিকা অর্জন করার জন্য কাজকর্মে মনোযোগ দেয় এবং মস্তিষ্ক পুনরায় চিন্তা-ভাবনার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। সুবহে সাদিক সতেজ প্রকৃতি এবং আলোতে মানুষ নামাজের জন্য বাইরে বের হয় এবং পায়ে হেঁটে মসজিদে যায়, এতে সতেজ পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত পরিবেশ থেকে সূক্ষ্ম অনুভূতি নেয় যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।

জোহরের সময়:দিন শুরুর সাথে সাথে মানুষ জীবিকা অর্জনের মধ্যে লেগে যায়। ধুলা-ময়লা তার গায়ে লাগে। কিন্তু কেমিক্যাল হাত-পায়ে লাগার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা মানুষ জীবাণুযুক্ত বায়ুর মধ্যে থাকে। তখন তার দেহের ওপর জীবাণু আক্রমণ করে থাকে। এছাড়াও দুপুর পর্যন্ত কাজ করতে করতে শ্রান্তিও অনুভূত হতে থাকে। এ কারণে একজন নামাজি জোহর নামাজের জন্য অজু করে যাতে স্বীয় হাত, মুখ, পা ইত্যাদি ধৌত করে যাতে রোগের কোনো আশঙ্কা না থাকে। ক্লান্ত দেহে জোহরের নামাজ পড়ে আরাম ও প্রশান্তিও অনুভব করে এবং পুনরায় উজ্জীবিত হয়, যার দ্বারা শ্রান্তি দূর হয়ে যায়। এ সব উপকারিতা একজন নামাজির জোহরের নামাজের সময় অর্জিত হয়।-(চলবে)

ডা.জাকির নায়েক

গ্রন্থনা- জাকির হোসাইন আজাদী,ইত্তেফাক

ই-মেইল :mzhazadi @ yahoo.Com

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − thirteen =