মাংসপেশীর ব্যথা হলে

0
1267
মাংসপেশীর ব্যথা ,muscle pain

কখনো মাংসপেশীর ব্যথায় ভুগে কষ্ট পায়নি এ রকম মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার, মানুষের শরীরের প্রত্যেকটি জয়েন্ট বা অস্থি-সন্ধি নড়াচড়ার ক্ষেত্রে মাংসপেশীর ভূমিকাই প্রধান। প্রত্যেকটি মাংসপেশীরই নির্দিষ্ট ফাংশন বা কাজ রয়েছে। মাংসপেশী যতক্ষণ কর্মক্ষম সবল থাকে মানুষ ততক্ষণ সুস্থ স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। কিন্তু এই মাংসপেশীগুলো কর্মক্ষম থাকার জন্য প্রত্যেকবারই উচিত নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা, অন্যথায় মাংসপেশীগুলো দুর্বল হয়ে মানুষ বিভিন্নরকম ব্যথায় ভুগে। পেশীবহুল শক্তসমর্থ শরীর গঠনের ক্ষেত্রেও মাংসপেশীর ভূমিকাই প্রধান।

মানব দেহের প্রত্যেকটি মাসেল বা মাংসপেশীর নির্ধারিত ফাংশন বা কাজ রয়েছে, যেমন- শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য নির্ধারিত মাসেল, হাত-পায়ের বিভিন্ন জোড়া বা অস্থিসন্ধি নাড়ানোর জন্য নির্ধারিত মাসেল, পেটের মাসেল, ব্যালেন্স বা ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নির্ধারত মাসেল। চিকিৎসাবিদ্যার বইয়ে এরকম প্রত্যেকটি মাংসপেশীর নির্দিষ্ট নাম, নির্দিষ্ট কাজ এবং সুনির্দিষ্ট নার্ভ সাপ্লাই রয়েছে। কোন মাংসপেশী যদি তার নির্ধারিত কাজ করতে না পারে বা কম করে তবে বুঝতে হবে উক্ত মাসেল বা মাংসপেশীতে কোন সমস্যা রয়েছে। প্রত্যেকটি মাংসপেশীর শক্তি নিরূপণের জন্য রয়েছে এক ধরনের গ্রেডিং যার নাম ‘‘অক্সফোর্ড স্কেল”। এই স্কেলে ০ (শূন্য) থেকে ৫ (পাঁচ) পর্যন্ত গ্রেডিং রয়েছে। গ্রেডিং যদি পাঁচ হয়ে থাকে তবে মাংসপেশীতে শক্তি ঠিক রয়েছে। গ্রেডিং পাঁচ থেকে কম হলে অবস্থাভেদে মাংসপেশীর বিভিন্ন রকম সমস্যা রয়েছে বুঝতে হবে। আবার প্রত্যেকটি মাংসপেশীর নির্দিষ্ট শুরু এবং শেষ রয়েছে মানে নির্দিষ্ট একটি মাংসপেশী কোথা থেকে শুরু হলো এবং কোথায় গিয়ে শেষ হলো। সাধরণত প্রত্যেকটি মাংসপেশীই এক একটা হাড়ের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে শুরু হয় আবার একই হাড়ের অন্য নির্দিষ্ট জায়গায় বা অন্য কোন হাড়ে এসে শেষ হয়। মাংসপেশীর মধ্যে আবার ছোট-বড়ও রয়েছে। কিছু মাংসপেশী অনেক লম্বার আবার কিছু মাংসপেশী অনেক ছোট। বেশকিছু মাংসপেশী অনেক চ্যাপ্টা আকৃতির, আবার কিছু একদম সরু।

আরও পড়ুনঃ   বাতজ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!

মাংসপেশীর ব্যথাগুলোও বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে-

০ কোন কারণে মাংসপেশীর শক্তি কমে গেলে

০ অতিরিক্ত কাজ কিংবা অতিরিক্ত ট্রেনিং করলে এনডুরেন্স পাওয়ার কমে যাওয়ার কারণে ব্যথা হয়।

০ মাসেল ক্রাম্প বা কোন কারণে মাংসপেশীতে খিচুনী হলে

০ মাংসপেশীতে ব্রুইজিং বা থেতলে গেলে

০ মাংসপেশীতে টান পড়লে বা কোন আঘাতের কারণে যদি মাংসপেশী ছিঁড়ে যায় বা আংশিক ছিঁড়ে যায়

০ বিভিন্ন রকম বাতরোগের কারণেও মাংসপেশীতে ব্যথা হয় যেমন পলিমায়ালজিয়া রিউমাটিকা, মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রম

০ কিছু কিছু অসুখ হলে নির্দিষ্ট কিছু মাংসপেশীর নির্দিষ্ট পয়েন্টে ব্যথা হয় যেমন- ফাইবেমায়েলজিয়া সিনড্রম

০ বিভিন্ন রকম ট্রমা বা আঘাত ইত্যাদি কারণে হাড় বা জয়েন্ট ডিসলোকেশন বা সাবলাক্সেল হলেও নির্দিষ্ট মাসেলে ব্যথা হয়

০ স্ট্রোক বা বিভিন্ন রকম নিউরোলজিক্যাল কারণে নার্ভের সাপ্লাই না পেলে মাংসপেশী অবশ হয়ে দুর্বল হয়ে যায়।

মাংসপেশীর ব্যথার চিকিৎসার জন্য অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। যে সমস্ত চিকিৎসক প্রত্যেকটা মাংসপেশীর অবস্থান, কাজ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো অবগত শুধুমাত্র তাদের কাছেই মাংসপেশীর ব্যথার চিকিৎসা করা উচিত। মাংসপেশীর ব্যথায় চিকিৎসায় সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো। ব্যথানাশক ওষুধ সাময়িকভাবে ব্যথা কমালেও যে সমস্ত কারণে মাংসপেশীর ব্যথা হয় তা দূর না হওয়ার কারণে মাংসপেশীর ব্যথা কখনো সারে না। ব্যথানাশক ওষুধ মূলত কাজ করে প্রোস্টাগস্নান্ডিন তৈরিতে বাধাদানের মাধ্যমে। প্রেস্টাগস্ন্যান্ডিল শরীর ফোলা ও ব্যথার জন্য দায়ী। ব্যথার ওষুধ শরীরে সাইক্লো অক্সিজেন থেকে প্রোস্টাগস্নান্ডিল তৈরি হতে দেয় না। ফলে ব্যথার অনুভূতি হয় না। ব্যথার ওষুধ শুধুমাত্র ব্যথার অনুভূতি কমিয়ে সাময়িকভাবে মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে পারে কিন্তু যে সমস্ত কারণে মাংসপেশীর ব্যথা হয় যেমন মাংসপেশীর খিচুনি, শক্তি কমে যাওয়া, মাংসপেশী আংশিক বা পুরোপুরি ছিঁড়ে যাওয়া তা কখনো দূর হয় না। তাই মাংসপেশীর ব্যথায় সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি কোন কাজে আসে না।

আরও পড়ুনঃ   বাতজ্বর নিয়ে যত বিভ্রান্তি

মাংসপেশীর ব্যথার চিকিৎসার জন্য তাই বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ একমাত্র ফিজিওথেরাপিস্টরাই প্রত্যেকটি মাংসপেশীর সঠিক অবস্থান এবং তাতে কোন ত্রম্নটি রয়েছে কিনা ত্রম্নটি থাকলে তা কোন ধরনের তা নির্ণয় করতে পারেন। মাংসপেশীর শক্তি কমে গেলে শক্তি বাড়ানোর জন্য স্ট্রেংফেনিং টেকনিক খিচুনি হলে বিভিন্নরকম স্ট্রেচিং এক্সারসাই, মাংসপেশীর টেনডন যদি আংশিক ছিঁড়ে যায় তবে ডিটিএফ এবং আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি মাংসপেশীর ব্যথার কারণ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপী চিকিৎসা প্রদান করা হয়।

মাংসপেশীর ব্যথার মেয়াদ অনুযায়ী এবং কারণ অনুযায়ী চিকিৎসাও ভিন্ন ভিন্ন। মাংসপেশীর যে কোনরকম ব্যথার জন্য রোগীরা ঘরে বসে বসেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। মাংসপেশীর ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপী চিকিৎসা পদ্ধতি হলো RICE R= জবংঃ বা বিশ্রাম, রোগীকে স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ রেখে বিশ্রামে থাকতে হবে, I= ICE ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে বরফের টুকরো বা বরফকুচি দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসেজ করবেন। C= Comession বা চাপ আক্রান্ত মাংসপেশী কোন কিছু দিয়ে টাইট করে চাপ দিয়ে বেঁধে রাখবেন। E= Elevation বা উঁচু করে রাখা, আক্রান্ত স্থান হার্ট লেভেলের চেয়ে একটু উঁচু রাখবেন। তাই মাংসপেশীর যে কোন ব্যথায় জওঈঊ টেকনিক অবলম্বন করবেন। RICE টেকনিক ৭ থেকে ১০ দিন ব্যবহার করলেও যদি ব্যথা না কমে তবে অবশ্যই মাংসপেশীর ব্যথার জন্য একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপীতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন।

**************************
ডাঃ নিসর্গ দাশ (অন্তু)
ফিজিওথেরাপী চিকিৎসক
নর্থ-ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
দক্ষিণ সুরমা, সিলেট-৩১০০।

হাত-পায়ের কালচে ভাব দূর করতে ২ টি উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + 18 =