ব্যথা যখন অণ্ডকোষে

0
1879
অণ্ডকোষ

অণ্ডকোষে ব্যথা হলে কিংবা অণ্ডথলির এক পাশে বা দু’পাশে ব্যথা হলে সেটাকে অবশ্যই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। যেকোনো বয়সের পুরুষদের, এমনকি নবজাতকেরও অণ্ডথলির ব্যথা করতে পারে। অণ্ডকোষ হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ। শরীরে দু’টি অণ্ডকোষ থাকে। এই অঙ্গ বা গ্রন্থিগুলো খুবই সংবেদনশীল। খুব সামান্য আঘাতেও ব্যথা হতে পারে। অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে যেকোনো ধরনের ব্যথা হলেই চিকিৎসাগত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

অণ্ডকোষ বা অণ্ডথলিতে ব্যথা হঠাৎ হতে পারে অথবা তীব্র হতে পারে। এ ব্যথা আঘাতের কারণে হতে পারে, ব্যথার সাথে অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। রোগীর বমি বমি ভাব কিংবা বমি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
অণ্ডথলিতে ব্যথার সাথে রোগীর অণ্ডথলিতে চাকা, জ্বর, অণ্ডথলির ত্বক লাল, প্রস্রাবে রক্ত, মূত্রনালি পথে অস্বাভাবিক নিঃসরণ, গলা ফুলে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ থাকলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে বন্ধ্যাত্ব ও পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। রোগীর তীব্র বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা থাকবে। অনেক সময় রোগীর অপারেশন করে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের ব্যথার উৎস অণ্ডকোষ নয়, ব্যথা শুরু হয় অণ্ডথলি এলাকায়।

অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ
অণ্ডকোষ কিংবা অণ্ডথলির ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
—সংক্রমণ বা প্রদাহ
অণ্ডকোষের প্রদাহ বা সংক্রমণের সাথে সবচেয়ে যে সাধারণ অবস্থাটি সম্পৃক্ত তা হলো এপিডি ডাইমাইটিস। এপিডি ডাইমাইটিস হলো একটি বা দু’টি এপিডি ডাইমিসের প্রদাহ। এপিডি ডাইমিসে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অণ্ডকোষে। এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে এবং হঠাৎ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয় তরুণ ও যুবকদের। এ সংক্রমণের প্রধান কারণ হলো যৌনবাহিত ব্যাকটেরিয়া। বিশেষ করে ক্ল্যামাইডিয়া ও গনোরিয়া।
—আঘাত
অণ্ডকোষের আঘাতজনিত ব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো স্পোর্টস ইনজুরি বা খেলাধুলাজনিত আঘাত। যদি আঘাত পাওয়ার পর ব্যথা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী থাকে, তাহলে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আঘাত পাওয়ার পরপরই একটা চাকা দেখা দিতে পারে, আবার নাও পারে। আঘাত পাওয়ার অবশ্যই অণ্ডকোষ পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
—অণ্ডকোষে টরসন বা প্যাঁচ খাওয়া
অণ্ডকোষে প্যাঁচ খাওয়া একটি জরুরি অবস্থা। এ ক্ষেত্রে অণ্ডকোষে রক্তসরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। অণ্ডকোষে প্যাঁচ খেলে অণ্ডথলিতে ব্যথা করে ও ফুলে যায়। যদি ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে আক্রান্ত অন্ডকোষের টিস্যু মরে যেতে পারে। যদিও এ সমস্যা নবজাতক এবং বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদের (১৮ বছরের নিচে) বেশি হয়, তবে এটা যেকোনো বয়সে হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   ভয়াবহ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

অন্য যেসব কারণে অণ্ডথলি একালায় ব্যথা হয় :
—অণ্ডকোষে টিউমার
অণ্ডকোষের টিউমারগুলো সাধারণত ব্যথা ঘটায় না, তবে এটা সম্ভব। যেহেতু অণ্ডকোষের ব্যথা অল্পবয়সী পুরুষদের (১৮ থেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে) বেশি হয়, তাই অণ্ডকোষে কোনো চাকা বা ফুলা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এটা খুবই জরুত্বপূর্ণ।
—ইনগুইনাল হার্নিয়া
এ ক্ষেত্রে অন্ত্রের কিছু অংশ কুঁচকির মাঝামাঝি এক-দুই ইঞ্চি উপরে চলে আসে। কুঁচকির উপরটা গোল হয়ে ফুলে ওঠে, মাঝে মাঝে শক্ত ও ব্যথা হয়। কিছু দিন পর গোলাকার ফোলাটি অণ্ডথলিতে নেমে আসে। হার্নিয়া চিকিৎসা করা না হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে হার্নিয়ার চিকিৎসা করা হয়।
—পুডেনডাল নার্ভের ক্ষতি
পুডেনডাল নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অসাড় অনুভূতি কিংবা ব্যথা হতে পারে। যারা অতিরিক্ত বাইসাইকেল চালান, চাপের কারণে তাদের পুডেনডাল নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুডেনডাল নার্ভ যৌনাঙ্গ, মূত্রনালি, মলদ্বার এবং অণ্ডথলি ও মলদ্বারের মধ্যবর্তী এলাকাতে অনুভূতি জোগায়। তাই এসবের যেকোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে।
—শল্য চিকিৎসা
তলপেটের যেকোনো অপারেশনের কারণে (যেমন হার্নিয়া রিপেয়ার ও ভ্যাসেকটমি) অণ্ডকোষে সাময়িক ব্যথা হতে পারে ও অণ্ডকোষ ফুলে যেতে পারে। অপারেশনের পরে এ ধরনের কোনো ব্যথা হলে সাথে সাথে চিকিৎসককে অবহিত করবেন। ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিংবা বারবার ব্যথা হলে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
—কিডনিতে পাথর
কিডনিতে পাথরের কারণে সাধারণত পেটে ব্যথা হয়, তবে ব্যথা অণ্ডকোষে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি অণ্ডথলিতে তীব্র ব্যথা হয় এবং হঠাৎ ব্যথা হয় তাহলে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে ব্যথার উৎস কিডনিতে পাথর কিনা।
—ফোলা ও অস্বস্তি
অণ্ডথলি এলাকায় বিভিন্ন কারণে ফোলা থেকে অস্বস্তি হতে পারে। এসব কারণের মধ্যে রয়েছে ভ্যারিকোসিল, হাইড্রোসিল এবং স্পারম্যাটোসিল। যদি হাইড্রোসিল (অণ্ডকোষের দুই আবরণের মধ্যে অস্বাভাবিক পানি জমা) সংক্রমিত হয়, তা হলে সেখান থেকে এপিডিডাইমিসের প্রদাহ হতে পারে এবং এর ফলে অণ্ডকোষে ব্যথা হতে পারে।
—পুরুষাঙ্গ শক্ত হওয়া
যদি পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু বীর্যপাত না ঘটে তাহলে কখনো কখনো অণ্ডকোষে ব্যথা হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   কিডনি ঠিক আছে তো?

ডা: মিজানুর রহমান কল্লোল

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২ ইংলিশ রোড, ঢাকা। 

প্রতি মাসে এভাবে পরীক্ষা করুন আপনার অণ্ডকোষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + seventeen =