সম্মানিত পাঠক,
আসসালামু আলাইকুম। একটি শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে উৎকৃষ্ট কোন খাবার হতে পারে না। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি বায়োটিক যা শিশুর শরীরে ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মায়ের দুধের কোনো বিকল্প হতে পারে না। তাই শিশুর আশানুরূপ বৃদ্ধির জন্য শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
মায়ের বুকের দুধে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শিশুর শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এর মানে এই নয় যে সমস্ত শিশু পর্যাপ্ত দুধ পেয়ে থাকবে।
কিছু কিছু মায়েদের স্তনে দুধ কম থাকে বা তারা ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না, তাদের বাচ্চারা ফর্মুলা দুধ খেয়ে বড় হতে থাকে। এই ফর্মুলা দুধ কখনই মায়ের দুধের সমান হতে পারে না। এসব দুধ খেলে শিশুর সঠিক বিকাশ হয় না। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়না।
আবার, কিছু কিছু মা দুধ বাড়ানোর ট্যাবলেট খেয়ে থাকে যাতে তাদের শিশু পর্যাপ্ত দুধ পায়। কিন্তু এসব ট্যাবলেট মা ও শিশু উভয়েরই ক্ষতি করে। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে দুধ বাড়ানোর কিছু উপায় নিম্নে প্রদত্ত হল:
১. গরম মশলা
গরম মসলা স্বাদে ও গন্ধে একটি চমৎকার মসলা। এতে রয়েছে নানা ধরনের মশলার সমাহার। এই মশলা বুকের দুধের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। গরম মশলা কিছুটা শরীরের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতো কাজ করে। ফলস্বরূপ, এই মশলার মিশ্রণ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
২. তুলসী
তুলসীতে রয়েছে ভিটামিন কে যা মায়ের বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি এর গুণাগুণ বাড়ায়। এটি মায়ের ক্ষুধা বা খাবার রুচি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। তাই চা কিংবা স্যুপের সাথে তুলসী পাতা খেতে পারেন। তুলসীর অন্নান্য উপকার জানতে ভিজিট করুন——
তুলসী পাতার অসাধারণ কিছু উপকারিতা
তুলসীর ১০ ঔষধি গুণাগুণ, কমাবে বসন্তও!
তুলসীর অজানা রহস্য!
প্রতিদিন সকালে মধু-তুলসী খেলে কী হয়? ৭ উপকারিতা জেনে নিন
একটিমাত্র তুলসী পাতা দূর করে দেবে ৭ স্বাস্থ্য সমস্যা
৩. পর্যাপ্ত পানি পান

বুকের দুধ বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা। আর এর জন্য প্রচুর পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন 8 থেকে 12 গ্লাস পানি পান করুন। এতে স্বাভাবিকভাবেই বুকের দুধ বাড়বে।
আরও পড়ুনঃ যে সময় পানি পান উচিত নয়
৪. মৌরি

মৌরি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এতে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির সমস্ত উপাদান রয়েছে। তাই সালাদে কাঁচা মৌরি বা অন্যান্য সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন। এতে দুধের উৎপাদন বাড়বে। মৌরির আরো উপকারিতা জানতে নিচের পোস্ট ২টি পড়ুন:
অজানা গুণে ভরা মৌরি-মৌরি খাওয়ার ২৭ উপকারিতা!
মৌরির ২২ টি দারুণ ব্যবহার জেনে নিন
৫. মেথি

বুকের দুধ বাড়াতে মেথি বেশ কার্যকর একটি খাদ্য উপাদান। এক গ্লাস পানিতে মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে এটি পান করুন। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম যা বুকের দুধ বাড়ায়। মেথির অন্নান্য উপকার জানতে ভিজিট করুন——
মেথি শাক: মেথি শাকের পুষ্টিগুণ/মেথি শাকের উপকারিতা
মেথির উপকারিতা: যৌনশক্তির মহৌষধ মেথি!
বিস্ময়কর ক্ষমতা মেথির!
মেথি তারুণ্য দীর্ঘস্থায়ী ও যৌনশক্তি বৃদ্ধি করে
চুলের যত্নে মেথির ব্যবহার
সকালে খালি পেটে এক গ্লাস মেথির পানি
রূপচর্চায় মেথি-মেথি ত্বকের জন্য ভালো?
মেথি খাবেন যে ১২ কারণে
৬. খাওয়ানোর সময় নির্দিষ্ট করা
দুধ খাওয়ানোর সময় নির্দিষ্ট করবেন না। পর্যাপ্ত দুধ থাকলেই শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য উভয় স্তন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে দুই স্তনে দুধ বাড়বে।
৭. গরম দুধের সাথে জিরা গুঁড়ার মিশ্রণ
এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা চামচ জিরার গুঁড়া মিশিয়ে নিন। এটি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন। এটি বুকের দুধ বাড়ায় এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করে।
৮. শিশুকে ঘন ঘন দুধ দিন
দিনে তিন ঘণ্টা অন্তর এবং রাতে চার ঘণ্টা অন্তর শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, যত বেশি দুধ খাওয়ানো হয়, তত বেশি দুধ উৎপন্ন হয়।
৯. গরম দুধের সাথে দারুচিনি গুঁড়ার মিশ্রণ
এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। স্বাদ বাড়াতে এতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রতিদিন এটি পান করুন। এটি আপনার বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করবে।
১০. লাউ
লাউতে/ কুমড়াতে রয়েছে ভিটামিন এবং মিনারেল যা দুধের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পেটকে ঠাণ্ডা করে এবং অ্যাসিডিটি কমায়। তাই খাবারে নিয়মিত কুমড়া রাখুন।
১১. রসুন
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুনের ৩টি কোয়া খেতে পারেন। এটি আপনার বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। কাঁচা রসুন খেতে না পারলে রান্নায় রসুন ব্যবহার করুন। এছাড়া এক কাপ পানিতে রসুনের ৩টি কোয়া দিয়ে ফুটতে দিন। পানি অর্ধেক কমে এলে এক কাপ দুধ দিন। ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ করে দিন। স্বাদ বাড়াতে মধু যোগ করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এটি পান করুন।
১২. পার্শ্ব পরিবর্তন
যখন একটি স্তনের দুধ সম্পূর্ণরূপে সেবন করা হয়, তখন অন্য স্তনের দুধ খেতে দিন। খুব ঘন ঘন স্তন পরিবর্তন করবেন না। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুকে একটু ওপরের দিকে তুলে ধরে শরীর থেকে কিছুটা দূরে রেখে দুধ পান করান। এভাবে বাচ্চা বেশি দুধ পাবে।
অবশেষে, পর্যাপ্ত ঘুমও বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু পরিমাণ বাদাম রাখতে পারেন। চিন্তা না করে নিয়মিত আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন বাচ্চা পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।
১৩. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন করুন। প্রতিদিন সবুজ শাক, ডিম, দুধ, রসুন, আঙুরের রস, ফলের রস এবং মুরগির মাংস খাওয়ার চেষ্টা করুন। এই খাবারগুলো বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করে।
১৪. ভেষজ চা
ভেষজ চা পান করলে বিভিন্ন রোগ নিরাময় হয়। কিছু ভেষজ চা শরীরে দুধ উৎপাদন এবং শক্তির মাত্রা বাড়াতে পারে। তাই প্রায় হারবাল চা পান করার চেষ্টা করুন। বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে নেটেল টি বা বিছুটি চা নামে একটি ভেষজ চা আছে। এতে উচ্চ মাত্রায় আয়রন রয়েছে। যা মায়ের ক্লান্তি দূর করতেও সাহায্য করে। তাই এই চা পান করে মায়েরা বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লান্তি অনুভব করা থেকেও বাঁচতে পারবেন।
১৫. দুধ
খাঁটি গরুর দুধে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি যা শুধুমাত্র মায়ের দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে না, দুধকে আপনার শিশুর জন্য সুষম ও পুষ্টিকর করে তোলে। বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আপনার দিনে দুবার এক গ্লাস দুধ পান করা উচিত।
আরও পড়ুন: মহিলাদের দুধ বৃদ্ধির উপায়- ডাক্তার নাফিসা আবেদীন
আপনি যেহেতু মহিলাদের দুধ বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে জানতে চান সেহেতু আমাদের আজকের পোস্টটি পড়ে জানতে পেরেছেন বুকের দুধ বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়সমূহ এবং বুকের দুধ বৃদ্ধির প্রাকৃতিক খাবারসমূহ সম্পর্কে। BD Health ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ এবং আমাদের অন্যান্য উপকারী পোস্ট পড়ে দেখার অনুরোধ রইলো।
ধন্যবাদ