বিয়ের আগে বর-কনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন জরুরি? (পর্ব-১)

0
342
বর-কনে

আধুনিক এই যুগে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে সবকিছু। এর সঙ্গে বাড়ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের যত বেশি উন্নতি ঘটছে, মানুষ কুসংস্কার থেকে তত দ্রুত বেরিয়ে আসছে। বিয়ে সমাজের বন্ধনকে টিকিয়ে রাখার অন্যতম একটি মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমেই গড়ে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আর এই প্রজন্মকে ঠিক রাখতে বা ধরে রাখতে প্রয়োজন বিয়ের আগেই বর-কনের স্বাস্থ্য পরিক্ষা। একটা সময় মনে করা হতো কোনো দম্পতির সন্তান না হলে বা বিকলাঙ্গ হলে এর জন্য স্ত্রীই দায়ী। আবার কারো যদি পুত্র সন্তান না হয় সে জন্যও দায়ী করা হতো স্ত্রীকে। এর জন্য সইতে হতো অনেক অপমান বা অকথ্য নির্যাতন। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। বিজ্ঞানের এ যুগে এর জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করার আর সুযোগ নেই। সন্তান জন্মদানে সমস্যার ক্ষেত্রে শুধু নারী নয় এর জন্য পুরুষও দায়ী।

বর্তমানে মানুষের রোগের কোনো শেষ নেই। নারী পুরুষের শারীরিক সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্বসহ নানা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। কখনো দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী যে কোনো একজনের সমস্যার কারণে এর প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। আবার অনেক সময় দেখা যায় বছরের পর বছর সন্তান হচ্ছে না। কারো কারো সন্তানের জন্ম হচ্ছে বিকলাঙ্গ অবস্থায়। এতসব সমস্যা থেকে এখন কিন্তু খুব সহজে বের হয়ে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষ স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারে কার মধ্যে কি ধরণের সমস্যা রয়েছে। তাই বিয়ের আগে বর-কনে পরিবারের পক্ষ থেকে যদি স্বাস্থ্য পরিক্ষার মাধ্যমে যাছাই-বাছাই করে বিয়ের আয়োজন করে তাহলে একটি সুস্থ ও সুন্দর পরিবার গঠন করা সম্ভব হবে। জন্ম নিবে না আর কোনো বিকলাঙ্গ শিশু বা হবে না ভয়াবহ কোনো জটিল সমস্যা। সুস্থ সবল সুন্দর শিশুর জন্মের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে সুখি পরিবার। মুক্ত থাকবে নানা রোগ বালাই থেকে।

আরও পড়ুনঃ   আজ থেকেই ঈদের প্রস্তুতি শুরু করুন

এ প্রসঙ্গে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এর সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আমিনুর রশিদ বলেন, বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরিক্ষা করাটা খুব জরুরি। রক্তের গ্রুপ ভিন্নতার কারণে নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ স্বামী যদি পজেটিভ হয় আর স্ত্রী নেগেটিভ থাকে তাহলে প্রথম সন্তান জন্মের সময় নানা জটিলতা তৈরি হয়। এবং প্রথম সন্তান জন্মের সময় পজেটিভ ভ্রুণের রক্ত গর্ভফুল ভেদ করে মায়ের শরীরে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় সন্তান জন্ম নেওয়ার সময় তৈরি হয় জটিলতা। এ ক্ষেত্রে মৃত সন্তান জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বা ভূমিষ্ট হলেও নানা জটিলতা দেখা দেবে। তবে মা বাবা যদি নেগেটিভ হয় তাহলে কোনো সমস্যা নেই।

ডা. মো. আমিনুর রশিদ বলেন, আমাদের সমাজ এখনো বিয়ের আগে  স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য তৈরি হয়নি। আমি মনে করি আরও একটি কারণে পরীক্ষা করাটা জরুরি সেটা হলো বর্তমান সময়ে নারী পুরুষের অবাদ মেলা মেশাটা একটু বেশি। এ ক্ষেত্রে কারো মধ্যে যদি কোনো ধরণের জীবাণু থাকে বিয়ের পর সেটা সন্তানের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্যও পরিক্ষাটা জরুরি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার।

গ্রুপ ভিন্নতার কারণে যেমন জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে আবার আরও কিছু রোগ রয়েছে সেগুলোর কারণেও বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে একটি সুন্দর পরিবার। থ্যালাসেমিয়া, হেপাটাইটিস, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস, অ্যানিমিয়া টেস্ট, মানসিক স্বাস্থ্য, সেক্সুয়াল হেলথ, গাইনোকলজিক্যাল, থাইরয়েড ও এইডস এই রোগগুলো ক্ষতিকারক। এগুলো শরীরে বাসা বেঁধেছে কিনা বিয়ের আগে প্রত্যেকেরই জানা জরুরি। এ ধরণের সমস্যা শরীরে বহন করে বিয়ে করতে গেলে পরবর্তী প্রজন্মগুলো ক্ষতির সম্মুখিন হবে। তাই বিয়ে করতে ইচ্ছুক সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিৎ। বিয়ের আগেই নিজেরা নিজেদের পরিক্ষাগুলো করিয়ে নিলে সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা রাখবে। আগামী প্রজন্মও তৈরি হবে সুস্থ সবলতা নিয়ে।

আরও পড়ুনঃ   পরিবার : ভালোবাসাই যার অস্তিত্বের মূল

সূত্রঃ ইটিভি

আরও পড়ুনঃ বিয়ের আগে যে পাঁচটি রোগের পরীক্ষা করা জরুরি (পর্ব-২)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 + 5 =