বাংলাদেশে প্রথম চালু হলো পার্কিনসন্স রোগের সার্জারি

0
206
পার্কিনসন্স রোগ,পার্কিনসন্স

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত নিউরো সার্জন ডা. টিপু জেড আজিজের সাক্ষাত্কার

বাংলাদেশে চিকিত্সা বিজ্ঞানে প্রথম সংযুক্ত হলো ‘পার্কিনসন্স’ রোগের সফল সার্জারি। গত ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর তিন দিনে তিন জনের সফল অপারেশনের মাধ্যমে আধুনিক চিকিত্সা বিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। রাজধানীর অত্যাধুনিক নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তাদের ব্রেনে সূক্ষ্ম অপারেশন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই সুস্থ রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এ অপারেশন পরিচালনা করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ। এই প্রতিনিধির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ পার্কিনসন্স রোগের লক্ষণ এবং এর সার্জারি চিকিত্সার সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাধারণত পার্কিনসন্স রোগ ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ২০০/২৫০ জন এই রোগে আক্রান্ত। রোগের উপসর্গ হলো হাত-পাসহ শরীর কাঁপতে থাকে। এতদিন ওষুধ সেবনের মাধ্যমে চিকিত্সা প্রদান করে আসছেন বাংলাদেশি চিকিত্সকরা। ওষুধ খেয়ে ৪/৫ বছর সুস্থ থাকলেও পরে আবার রোগটি দেখা দেয় এবং পূর্বের মতো কাঁপতে থাকেন রোগীরা। তবে পুরো শরীরে কাঁপুনি বেড়ে যায়। ওষুধে আর তেমন কাজ হয় না। এবার এ রোগের সত্যিকার চিকিত্সা শুরু হয়েছে। মাথায় ইমপ্ল্যান্ট (লিড) বসিয়ে চিকিত্সা করা হয়। অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ নাড়ির টানে নিজ দেশে এসে এ রোগের অপারেশন চিকিত্সা শুরু করলেন। আর অপারেশনের মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি ভাল হয়ে যায়। পেস-মেকার যেমন চামড়ার নিচে ঢুকিয়ে হার্টের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, তেমনি ব্রেনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে এর চিকিত্সা করানো হয়। মাথার মধ্যে থাকবে চিকন তার, বাইরে থাকবে ব্যাটারি। ব্যাটারি মাথার ভিতরে যেখানে সমস্যা সেখানে গরম করে রোগটি ভাল করে দিবে। এরপর আর হাত-পা কাঁপুনি থাকবে না। চামড়ার নিচে ব্যাটারি রাখা হয়। এটা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে করানো হয়। এটা রিপোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ লন্ডন থেকে বাংলাদেশের রোগীদের রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সব কিছু মনিটর করতে পারবেন। ব্যাটারির মেয়াদ থাকে ৫ বছর। ৫ বছর পর ব্যাটারি রিচার্জ দেওয়া যায়।

আরও পড়ুনঃ   ডায়াবেটিস সম্পর্কে ৪টি ভুল ধারণা

ইমপ্ল্যান্ট (লিড) বসানোর পর রোগীকে একদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। এরপর রোগী সুস্থ হয়ে চলে যেতে পারেন। অপারেশন করতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। ২৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে প্রথম অপারেশন হন মেজর (অব.) কায়কোবাদ। বাইরে একজন রোগীর চিকিত্সা হতে ৫০/৬০ লাখ টাকা খরচ হয়। বাংলাদেশে উল্লিখিত তিনটি রোগীকে সামান্য টাকায় অপারেশন করা হয়েছে। প্রতিটি ইমপ্ল্যান্ট (লিড)-এর মূল্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ জানান, প্রতি বছর তিনি বাংলাদেশে আসবেন এবং অপারেশন করবেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে জনবল তৈরি করে দিয়ে যাবেন। অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ বলেন, বাংলাদেশকে তিনি অনেক ভালবাসেন। নিজ উদ্যোগেই যন্ত্রপাতিসহ সবকিছু নিয়ে তিনি এদেশে এসেছেন।

উল্লিখিত তিন জনের পার্কিনসন্স অপারেশনের সময় অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজকে সহযোগিতায় বাংলাদেশের একদল চিকিত্সক ছিলেন। নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ, যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলমসহ বাংলাদেশের একটি তরুণ চিকিত্সক দল অপারেশনটি প্রত্যক্ষ করেন। অধ্যাপক ডা. টিপু জেড আজিজ বলেন, ভারতে এ অপারেশন আগেই শুরু হয়েছে। তবে বাংলাদেশে এই প্রথম। বাংলাদেশে সাধারণত ৬০ বছর বয়সের অধিকদের এই রোগ হয়। তবে ৬০ বছরের নিচের বয়সীদেরও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেটা হয় জন্মগত। তিনি বলেন, এ রোগ বেশি দেখা দেয় কৃষকদের মাঝে। যারা বেশি কীটনাশক ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে পার্কিনসন্স রোগের প্রকোপ বেশি।

নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে স্ট্রোকের পরের অবস্থান হলো পার্কিনসন্স রোগ। এতদিন ওষুধ দিয়ে এর চিকিত্সা করানো হয়েছে। এখন সংযুক্ত হলো সার্জারি। এটা চিকিত্সা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের একভাগ অগ্রগতি। এটা একটা স্মরণীয় দিন।

আবুল খায়ের

দেশেই সফল অস্ত্রোপচার মস্তিষ্কে বসল ইলেক্ট্রন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − twelve =