বহু গুণের ফল ডুমুর, জেনে নিন দারুণ সব উপকারিতা!

0
1856
ডুমুর

ডুমুর নরম ও মিষ্টি জাতীয় ফল।  গ্রাম গঞ্জে যেখানে সেখানে ডুমুর গাছ দেখা যায় কিন্তু শহরে পাওয়া যায় না। ডুমুর গাছ কেউ লাগায় না, আপনা আপনি হয়। তবে এটা ফুটতে সময় লাগে এং বাজারে কিনতে পাওয়া যায় না। ডুমুরের আবরণ খুবই পাতলা এবং অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। ডুমুরের পাতা খসখসে হয়।

ডুমুর খুবই উপকারী। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় ভক্ষণ করা যায়। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, ডুমুরের ভেতরের অংশ অখাদ্য। খেলে ক্ষতি হতে পারে। ডুমুরের বাইরের অংশ রান্না করে খাওয়া যায়। ডুমুরের বাহিরের অংশ কেটে নিয়ে রান্না করা হয়। গ্রামাঞ্চলে বিনা পয়সায় ডুমুর পাওয়া যায় কিন্ত ফেলনা ভেবে আমরা কদর করি না। তবে ডুমুরের উপকারিতা সম্পর্কে জানা থাকলে একে আমরা অবহেলা করতাম না। চলুন এবার দেখে নেই ডুমুরের অবিশ্বাস্য গুণ সম্পর্কে!

* ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডুমুরের রস খুবই উপকারী

* ৩-৫ টি ডুমুর প্রতিদিন খেলে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়

* মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তস্রাব হলে কচি ডুমুরের রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয় এবং রক্তপিত্ত সারে

* ডুমুর পিত্ত ও আমাশয় রোগে উপকারী

* এতে অধিক পরিমাণে লোহা আছে (অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে)

* রক্তপিত্ত, রক্তপড়া এবং রক্তহীনতা রোগে উপকারী

* জ্বরের পর ডুমুর রান্না করে খেলে এটি টনিকের কাজ করে

* দুধ ও চিনির সঙ্গে ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়

* আমাশয় হলে ৩ দিন কচি ডুমুরের পাতা আতপ চালের সাথে চিবিয়ে খেলে ভালো হয়

* সাদা ও রক্ত আমাশয় হলে ডুমুর গাছের ছালের ২ চামচ রস এবং মধু মিশিয়ে দুই বেলা খেলে উপকার হয়

* মাথা ঘোরা রোগে ডুমুর ভাজি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়

* অতিরিক্ত হেঁচকি উঠলে ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঐ পানি ছেঁকে এক চা চামচ করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়

আরও পড়ুনঃ   তেলাপিয়া মাছের ক্ষতিকর কিছু দিক জেনে নিন

* ডুমুর গাছের ছাল পানি সহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার হয়

* দুধের সাথে সিদ্ধ করে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকে

* ক্ষুধামন্দা রোগে ১ চা চামচ কাঁচা ডুমুরের রস খাওয়ার পর সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়

সতর্কতাঃ অতিরিক্ত ডুমুর খেলে  কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।

নুসরাত জাহান চম্পা বলেন –

ডুমুর এক ধরনের নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। এটি ‘আঞ্জির’ নামেই বেশি পরিচিত। ডুমুরের বেশ কয়েকটি প্রজাতির রয়েছে। বাংলাদেশে যেটি পাওয়া যায়, সেটি ‘কাকডুমুর’ নামে পরিচিত। ফল আকারে বেশ ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এটা মূলত পাখিরাই খেয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু অঞ্চলে এ ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। যে ডুমুর ফল হিসেবে খাওয়া হয় তা মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া যায়। এটি আকারে বেশ বড় এবং মিষ্টি। এটি ফল হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ডুমুর বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ডুমুর ফল হিসেবে অনন্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি, ভিটামিন এ, বি, শর্করা, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। ডুমুরের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। আসুন জেনে নিই ডুমুরের কিছু উপকারিতার কথা।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে :

ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। নিয়মিত ফল ও সবজি খাওয়ার অভ্যাস না থাকলেও আমরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে থাকি। ডায়েটে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হাইপারটেনশনের সমস্যা হতে পারে। তাই ডায়েটে রাখুন ডুমুর ফল। এর পটাশিয়াম হাইপারটেনশন প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে :

খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আপনার খাদ্যতালিকায় ডুমুর রাখুন। ডুমুর বিদ্যমান পেকটিন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :

সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, মেনোপজ পরবর্তী পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ডুমুর সাহায্য করে। আঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর খাদ্যতালিকায় রাখার ফলে ৩৪% মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ   লবণ কী মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তির ক্ষতি করে?

ডায়াবেটিসের সমস্যায় উপকারী :

ডায়াবেটিসে ডুমুর যেমন উপকারী, তেমনি ডুমুরের পাতাও উপকারী। ডায়াবেটিসে অনেক সময় রোগীকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হয়। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, নিয়মিত ডুমুর খেলে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে।

হাড় বৃদ্ধিতে সহায়ক :

ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। অতিরিক্ত হাই-সল্ট ডায়েট মেনে চললে ইউরিনের মধ্য দিয়ে অনেক ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যায়। এই ক্যালসিয়াম লস প্রতিরোধ করতে ডুমুরের পটাশিয়াম সাহায্য করে। এভাবে ডুমুর হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া ডুমুর হাড়ের ক্ষয়রোগও প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

হার্ট ভালো রাখে :

গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, ডুমুর ও ডুমুরের পাতা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হার্ট ভালো থাকে। এছাড়া ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাংগানিজ। যা বয়েসজনিত কারণের নানা অসুখ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই খাদ্যতালিকায় রাখুন ডুমুর।

পেটের সমস্যা দূর করে :

ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ। ফলে পেটের সমস্যার জন্য ডুমুর খুব ভালো কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 1 =