ফল নাকি ফলের রস: কোনটি বেশী উপকারী?

0
215
ফল

হুটহাট করে পাওয়া ক্ষুধাভাব মেটানোর জন্য সবচাইতে ভালো উপায় কী? কোন বিশেষজ্ঞকে এমন প্রশ্ন করা হলে বলবেন, এক বাটি ভর্তি ফল অথবা গ্লাস ভর্তি ফলের রস পান করতে। যা পেট ভরা রাখতে সাহায্য করবে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগাতেও সাহায্য করবে। ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ এবং মিনারেল সমূহ যা প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। ফলের মতো ফলের রসেও একই সকল গুণাগুণ বিদ্যমান। কারণ ফলের রস তো তৈরি করাই হয় ফল থেকে! বিভিন্ন ধরণের ফল থেকে ফলের রস তৈরি করা এখনকার সময়ে খুব সহজ হয়ে গিয়েছে বলে ফলের রস তৈরি করে পান করা হয়। এতে করে পুষ্টিগুণ গুলো শরীর দ্রুত শোষণ করে নিতে পারে। তবে ফলের রসের বেশ কিছু গুণাগুণ থাকা স্বত্বেও, ফলের রস পান ফল গ্রহণের মতো খুব একটা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়!

যারা খাওয়াদাওয়া নিয়ে বাছবিচার করেন বেশি, তারা সাধারণত ফলের রস পান করতে বেশি পছন্দ করেন। কারণ এতে করে বেশ কিছু ফল একসাথে মিশিয়ে নেওয়া যায়। এছাড়াও, ফলের সাথে পছন্দ ও অপছন্দনীয় সবজীও একসাথে মিশিয়ে নেওয়া যায়। সবজী তেতো স্বাদের জন্য যেটা খাওয়া কষ্টকর হতো, ফলের সাথে মিশিয়ে রস তৈরি করে পান করার ফলে সেটা আর কষ্টদায়ক হয় না। যে কারণে বেশীরভাগ মানুষ রস তৈরি করে পান করতেই পছন্দ করেন।

আস্ত ফল নাকি ফলের রস?

ফলের রস মানে তাজা ফল থেকে ঘরেই ফলের রস তৈরি করা। বাজারের প্যাকেটজাত ফলের জ্যুস নয়। অ্যাকশন ক্যান্সার হসপিটালের সিনিয়র ডায়েটিসিয়ান জানান, প্যাকেটজাত ফলের রস বহন করা সুবিধাজনক হলেও মনে রাখা জরুরি, মাত্র ২৫০ মিলিলিটার কমলালেবুর রসে রয়েছে ১৫০ ক্যালোরি। যা প্রায় তিনটি ছোট কমলালেবুর সমান। যার জন্য তাজা ফল সবসময় সরাসরি খাওয়া উচিৎ, প্যাকেটজাত ফলের রস নয়। প্যাকেটজাত ফলের রস, ফলের প্রাকৃতিক উপকারী দিক সমূহ বিনষ্ট করে দেয়। এই সকল রসে ফলের আঁশ থাকে না এবং উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে। প্যাকেটজাত ও বোতলে সংরক্ষিত ফলের রসে প্রিজার্ভেটিভ দেওয়া থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

আরও পড়ুনঃ   কেন রক্ত নেয়া হয় না মৃতদেহ থেকে

ফল থেকে তৈরি করা ফলের রসে থাকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ এবং অন্যান্য গুণাগুণ। এমনকি, ফলের রসের উপকারী উপাদান সমূহ শরীর দ্রুত গ্রহণ করে নেয়। তবে, ফলের রস তৈরির ফলে ফল ও ফলের খোসার আঁশ একেবারেই বাদ পড়ে যায়। আঁশ খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে থাকে, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল এর মাত্রা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। মোট কথা হলো, তাজা ফল খাওয়ার ফলে পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। যার ফলে ওজন কমানো সহজ হয়ে যায়।

জিভা আয়ুর্বেদ এর ডিরেক্টর আর্বেদিক চিকিৎসক ডা. প্রতাপ চৌহান বলেন, “মানের দিকে লক্ষ্য করতে গেলে ফল ও ফলের রস একেবারেই একই রকম। পার্থক্য শুধুমাত্র ফলের আঁশে। সুস্থ পরিপাকতন্ত্রের জন্য আঁশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে, যদি ফল ও ফলের রসের মধ্যে বেছে নিতে বলা হয় তবে ফলকেই বেছে নিতে। বাজারের ফলের রসে থাকে প্রিজার্ভেটিভ। যা যথাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। তবে ঘরে তৈরি ফলের রস খাওয়া যাবে।”

ফলের রসের আরেকটি নেতিবাচক দিক হলো- ফলের রস গ্রহণে শরীর খুব দ্রুত চিনি শোষণ করে ফেলে। কারণ ফলের রসে কোন আঁশ থাকে না। যার ফলে, ফলের রস পানে রক্তে চিনির মাত্রা হুট করে বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, ফলে অনেক বেশি আঁশ থাকায়, ফলে গ্রহণের ফলে শরীর খুব ধীরে চিনি শোষণ করে থাকে।

অবশেষে চূড়ান্ত রায়

ফলের রস দারুণ উপকারী। তবে ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীর জন্যে ফলের রস এড়িয়ে যাওয়া উত্তম। যেহেতু ফলের রসে কোন আঁশ একেবারেই থাকে। ফলের রস ও ফল দুটোই আদল বদল করে পছন্দমতো গ্রহণ করা যাবে। খাদ্য গ্রহণে সহজ উপায় চাইলে ফলের রস গ্রহণ দারুণ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি যারা শক্ত খাদ্য খেতে পারেন না, তাদের জন্য ফলের রস উত্তম। তবে প্যাকেটজাত ও বোতলজাত যে কোন ধরণের ফলের রস একেবারেই গ্রহণ করা যাবে না। সেটা ঘরেই তৈরি করে নিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ   যে খাবারগুলো কখনোই নষ্ট হবে না!

সূত্র: Smart Cooky  

কে এন দেয়া

জুস ভালো, না কি ফল?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + 18 =