নিউরোফাইব্রোমেটোসিস (Neurofibromatosis)

0
1786
নিউরোফাইব্রোমেটোসিস

নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস (Neurofibromatosis) একটি জেনেটিক ডিজঅর্ডার যা স্নায়ুতন্ত্রের কোষের বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এর কারণে স্নায়ু বা নার্ভ টিস্যুতে টিউমার সৃষ্টি হয়। এই টিউমার স্নায়ু তন্ত্রের যে কোন অংশ যেমন- মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড, নার্ভে দেখা দিতে পারে। শৈশবকাল অথবা সাবালক হওয়ার পূর্ববর্তী সময় এই রোগের লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়।

এই টিউমারগুলো থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই কারণ এগুলো বিনাইন টিউমার। কিন্তু কখনো কখনো এগুলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অথবা ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের শুধু মৃদু লক্ষণ প্রকাশ পায়। নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসের প্রভাবে কানে শুনতে না পাওয়া, কোন কিছু শিখতে অসুবিধা হওয়া, স্নায়ুতে টিউমারের কারণে যে চাপ সৃষ্টি হয় এর থেকে হৃৎপিণ্ড এবং রক্ত নালীতে (কার্ডিওভাস্কুলার) গুরুতর জটিলতা, দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলা এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

এই রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে শারীরিক বৃদ্ধি ও উন্নতি এবং দ্রুত জটিলতাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়। নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসের কারণে বড় আকারের টিউমার সৃষ্টি হলে অথবা টিউমারের কারণে স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন থেরাপী যেমন- স্টেরিওট্যাক্টিক রেডিওসার্জারী, ব্যথা উপশমকারী ঔষধ অথবা ফিজিক্যাল থেরাপীর মাধ্যমে অনেকে উপকারীতা পেয়ে থাকেন।

কারণ

এটা একটি জিন এবং বংশগত সমস্যা, বাবা মার কারও এই সমস্যা থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অথবা একজন মহিলা যখন গর্ভধারণ করে তখন এই সমস্যা শিশুর মধ্যে দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন রকম জিনের মিউটেশনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।

জেনেটিক ত্রুটিজনিত কারণে এই রোগে হতে পারে।

  • নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস ১ (NF1):

এই জিন ক্রমোসোম ১৭ তে অবস্থিত। সাধারণত এরা নিউরোফাব্রোমিন নামক প্রোটিন উৎপন্ন করে, যা স্নায়ু তন্ত্রের টিস্যুতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এবং কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। NF1 জিন এর মিউটেশনের কারণে এই প্রোটিন উৎপাদন কমে যায়, যার কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ   সিস্ট সারিয়ে তোলার ঘরোয়া প্রতিকার

 

  • নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস ২ (NF2)ঃ

NF2 তে ঐ একই সমস্যা দেখা যায়। এরা ক্রমোসোম ২২ এ অবস্থিত, যা মার্লিন নামক প্রোটিন উৎপন্ন করে। এই জিনের মিউটেশনের কারণে মার্লিন উৎপাদন কমে যায় ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কোষ বৃদ্ধি পায়।

  • সোয়ানোম্যাটসিসঃ

সোয়ানোম্যাটসিস হল ক্রমোসিস ২২ এ অবস্থিত SMARCB1 জিন মিউটেশনের সাথে সম্পর্কিত একটি জিন। অন্যান্য জিন মিউটেশন সোয়ানোম্যাটসিসের সাথে জড়িত। এটা বংশগত অথবা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হতে পারে, কিন্তু এগুলো সম্পর্কে এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

পরিবারের অন্য কারও এই সমস্যা থাকাটা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি। প্রায় অর্ধেকের মত NF1 এবং NF2 এর সমস্যা বংশগত। এছাড়া যখন কোন মহিলা যখন গর্ভধারণ করেন তখন জিনের তাৎক্ষণিক পরিবর্তন থেকে এই রোগ হতে পারে।

NF1 এবং NF2 উভয় অটোসোমাল ডমিন্যান্ট ডিসঅর্ডার। এর থেকে বুঝা যায় কোন বাবা মা এই রোগে আক্রান্ত হলে তাদের ছেলেমেয়েদের এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ৫০শতাংশ সম্ভাবনা থাকে।

সোয়ানোম্যাটোসিসের পিছনে বংশগত কারণ স্পষ্ট নয়। গবেষকগণ দেখিয়েছেন বাবা মার কারণে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ১৫ শতাংশ।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের এ রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্পানিক এবং অন্যান্য জাতিদের এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ যাদের টাইপ-১ নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস রয়েছে এবং অতটা গুরুতর অবস্থায় পৌঁছান নি তাদের অপেক্ষাকৃত সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব। কিন্তু যাদের অবস্থা চূড়ান্ত দশায় পৌঁছেছে তাদের হাড়ের বিকলাঙ্গতা এবং অনিয়ন্ত্রিত টিউমার দেখা দিতে পারে। নবজাতক অথবা অল্প বয়স্কদের এই রোগ তীব্র মাত্রায় পৌঁছালে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   রূপচর্চায় তেজপাতার অসাধারণ ৬টি গুণ

উত্তরঃ NF1 এবং NF2 দুটি ভিন্ন ভিন্ন ক্রোমোসোমে অবস্থিত দুটি ভিন্ন জিনের কারণে হয়ে থাকে। NF-1 সাধারণত একটু বেশি হতে দেখা যায়।

উত্তরঃ ঠিক তা নয়। এটা আসলে একটি নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ যা একটি নির্দিষ্ট জিনের কারণে হয়ে থাকে।

 

হেলথ টিপস্‌

এই রোগ প্রতিরোধে তেমন কোন পন্থা নেই। এই সমস্যা প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হল এর জেনেটিক মিউটেশনের অন্তর্নিহিত কারণ শনাক্ত করা। পারিবারিক সূত্রে যাদের এই রোগ রয়েছে তাদের পরিবার পরিকল্পনা করার সময় অবশ্যই জেনেটিক কাউন্সেলিং করা উচিৎ। NF এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ ও বছরে অন্তত একবার অপথ্যালমোলোজিস্টের শরণাপন্ন হয়ে চোখ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

সূত্রঃ আরএক্স ৭১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × three =