প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় তোকমা দানা রাখুন, অবিশ্বাস্য ফলাফল
তোকমা (ইংরেজি: pignut বা chan,) (বৈজ্ঞানিক নাম: Hyptis suaveolens) এক প্রকার গুল্ম জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। একে ‘বিলাতি তুলসি’, ‘গাঞ্জা তুলসি’ ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
যারা স্বাস্থ্যসচেতন তাদের কাছে তোকমা দানা বেশ পরিচিত। ফালুদা তৈরিতে এবং বিভিন্ন ফলের জুসে তোকমা দানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তোকমা দানা প্রচুর পুষ্টি ও মিনারেল সমৃদ্ধ। ছোট ডিম্বাকৃতির নরম বীজটি `সালভিয়া হিসপানিকা` নামেও পরিচিত। বাদামি, কালো, সাদা বিভিন্ন রঙয়ের হয়ে থাকে এই তোকমা।
এক কাপ পরিমাণ তোকমা দানা থেকে প্রতিদিন আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ম্যাংগানিজের ৩০%, ক্যালসিয়ামের ১৮% পাওয়া যায়। প্রতি একশ গ্রাম তোকমা দানায় ভিটামিন-বি, ফোলেইট, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, থিয়ামিন, দস্তা, ফসফরাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ এবং রিবোফ্ল্যাভিন রয়েছে।
চমৎকার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার তোকমা দানা। দীর্ঘক্ষণ নিজেকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে চাইলে বাদাম, শুকনো ফল আর এক মুঠো তোকমা দানা মিশিয়ে খেয়ে নিন। এটি অসময়ে ক্ষুধার যন্ত্রণা, ক্ষুধা দমন, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানান, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ তোকমা দানা রাখলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিপাক প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি করে থাকে।তোকমা দানায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম তোকমা দানায় ৪০ গ্রাম খাদ্য আঁশ পাওয়া যায়। আঁশ হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পেটের পীড়া উপশম, প্রদাহ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে তোকমা।
পেটের প্রদাহ, পীড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সহ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে এই তোকমা। শরীরের জন্য খুবই দরকারী একটি উপাদান ওমেগা-৩। আর তোকমা দানা হচ্ছে এই উদ্ভিদভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের সবচেয়ে ভালো উৎস।
তোকমা দানা শরীরে শক্তি উৎপন্ন করে। আর এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ, ক্যানসার কোষ প্রতিরোধ এবং বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে থাকে। তোকমা দানায় হাইড্রোফোলিক উপাদান থাকায় খুব সহজে পানি শোষণ করে। এটি ওজনের চেয়ে প্রায় বারোগুণ বেশি পানি শোষণ করতে সমর্থ।
সম্প্রতি কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, তোকমা দানা দেহের জন্য উপকারী কোলেস্টেরল উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও রক্তে চর্বির পরিমাণ কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট সুস্থ এবং হাড় গঠনে সাহায্য করে থাকে গুণে ভরা এই তোকমা।
যেভাবে পান করবেন তোকমার বীজঃ
১ টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমার বীজ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তোকমা অবশ্যই ৭/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফুলে উঠলে তারপর সেবন করুন। ঠিক মত ফুলে না উঠলে পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।-সকালে এই পানি ফুলে ওঠা তোকমা বীজ সহ পান করে নিন খালি পেটে। সাথে ১ চা চামচ খাঁটি মধু যোগ করতে পারেন।
তোকমার এই শরবত সারাদিন আপনার মেটাবোলিজম বা বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি রাখবে, ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হবে ও বাড়তি ক্যালোরি জমে থাকবে না। এছাড়াও অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করবে তোকমা। নিয়মিত তোকমার শরবত পান করার পাশাপাশি অতিরিক্ত মিষ্টি ও ভাজাভুজি খাবার অভ্যাস ত্যাগ করলে বিনা পরিশ্রমেই দেহ হবে ছিপছিপে। বিশেষ করে মেদ ভুঁড়ির সমস্যা একেবারেই চলে যাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যাও উপশম হবে।
ওজন কমানো ছাড়াও তোকমার শরবত হতে যে উপকারগুলো পাওয়া যাবে– গরম কালে তোকমার শরবত ভেতর থেকে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে।– তোকমা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।– নিয়মিত তোকমার শরবত সেবন করলে ঠাণ্ডা ও মৌসুমি জ্বরের সমস্যা হয় না।– তোকমা লিভারকে ভালো রাখে।
সতর্কতা-গর্ভবতী নারী ও শিশুরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত তোকমা সেবন করা উচিত নয়।
তথ্য সূত্র:ঔষধি গাছে জীবন বাঁচে- ডাঃ শেখর রায় (বিভাস প্রকাশন, মে ২০১৪)
ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে তোকমার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। পেটের সমস্যা সমাধানে তোকমার ব্যবহার খুবই কাযর্করি।