জাফরানের অনেক গুণ

0
1540
Saffron Flower
জাফরান

পুরুষত্বহীনতা, অকাল বীর্যপাত ও লিঙ্গ উথান সমস্যা দূর করে সুস্থ যৌনজীবন দেয় জাফরান৷

শামিমা নাসরীন :আকারে ছোট হলেও তার সুগন্ধে মাতোয়ারা হয় মানুষ। শ্রী-ও তার কম নয়! ঝলমলে আলোকজ্জ্বল এ মসলা লিলি গোত্রের। সবার কাছে, বিশেষ করে ভোজন রসিকদের কাছে এটি খুবই পরিচিত নাম- জাফরান। খাবারের স্বাদ বাড়াতে ও সুগন্ধী করতে এটির ব্যবহার করে থাকেন রন্ধনশিল্পীরা।

জাফরান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত যত্ন সহকারে এসব বাছাই করা হয়। এরপর  পাঁপড়িগুলো কেটে একটি চালুনির ওপর রাখা হয়। এর সুগন্ধ ধরে রাখার জন্য তাপ থেকে দূরে রাখতে হয়। খুবই জটিল পদ্ধতি অবলম্বন করে জাফরান তৈরি হয়। আর এ কারণেই জাফরান পৃথিবীর সবচেয়ে দামী সুগন্ধী।

বর্তমানে ইরান, গ্রিস, মরক্কো, স্পেন, কাশ্মির ও ইটালিতে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ইরানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জাফরান উৎপাদন করা হয়। একইসঙ্গে এখানকার জাফরানের গুণগত মানও ভাল। জাফরানের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক হলো স্পেন।

সবচেয়ে মূল্যবান এ সুগন্ধী বিশ্বব্যাপী রান্নার উপকরণ হিসেবে খ্যাত। এর বাইরে জাফরানের কিছু ঔষধী গুণও রয়েছে। শরীরের মেদ কমানো, কামোদ্দীপক, পেট ফাঁপা নিরাময়, নারীদের মাসিক নিয়মিত করার কাজে ব্যবহার হয় জাফরান। এ ছাড়া জাফরানের আরো কয়েকটি গুণ তুলে ধরা হল।

ক্যান্সার থেকে রক্ষা : জাফরান গাঢ় কমলা রঙের হয়। ‘ক্রসিন’ নামে পানিতে দ্রবীভূত এক ধরনের ক্যারোটিন থাকে যে কারণে এর মধ্যে সোনালী আভা থাকে। মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারকোষ, লিউকোমিয়া (রক্তে শ্বেতকনিকার অভাবজনিত রোগ), ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, গলরসগ্রন্থি সংক্রান্ত রোগ ও সংযোজক কোষের মারাত্মক এক ধরনের টিউমারের চিকিৎসায় জাফরানের কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে। মেক্সিকোর এক গবেষক জানিয়েছেন, জাফরানের নির্যাস এবং এর কিুছ উপাদান মানবদেহের অনেক ক্ষতিকর কোষ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। এটা শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষ দমনই করে না বরং এটা স্বাভাবিক কনিকায় কোনো ধরনের প্রভাব ফেলে না। একইসঙ্গে এসব কোষের গঠনে উদ্দীপ্ত করে ও ক্যান্সার দমন করে এমন ইমিউন কোষ গঠনের সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ   প্রতিদিন পেঁয়াজ না খেলে কি হতে পারে জানেন?

জ্ঞান আহরণ ও স্মৃতিশক্তির স্থায়ীত্ব বাড়ানো : সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাফরানে বিদ্যমান ক্রসিন মানসিক বৈকল্য ও বার্ধক্যজনিত রোগ নিরাময়ে খুবই উপকারী। পারকিনসন রোগ, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ও জ্বালা-পোড়া বন্ধের ওষুধ তৈরি করতে এটি ব্যবহার হয়।

বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি : যেসব কিশোরীর ঋতুস্রাব দেরিতে হয় অথবা এ ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, তাদের মাসিক নিয়মিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জাফরান। এ ক্ষেত্রে এক চিমটি গুঁড়ো জাফরান এক টেবিল চামচ দুধে মিশিয়ে খেলে হরমোন সচল হয়। এবং কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়।

যৌনশক্তি বাড়ানো : রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটি জাফরান মিশিয়ে খেলে যৌনশক্তি বাড়বে।

টাক মাথায় চুল গজানো : টাক মাথায় চুল গজানোর ক্ষেত্রে জাফরান খুবই কার্যকরী একটি ওষুধ। যষ্টিমধু ও দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে টাক মাথায় চুল গজায়।

ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা : ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেতে ও শরীর গরম করতে এবং জ্বর ভালো করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে কপালে লাগালে খুব দ্রুত ঠাণ্ডা দূর হয়।

খাবার মুখরোচক করা : খাবারকে সুগন্ধী ও মুখরোচক করতে জাফরানের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া খাবার আকর্ষণীয় ও রঙিন করার কাজটিও করে জাফরান। জাফরানের ঝলমলে রং মানুষকে খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করে। বিভিন্ন ধরনের কেক ও বিস্কুট তৈরি, মাছ মেরিনেট করতে, পোলাও ও বিরিয়ানি রান্না করতে জাফরান ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া কফি, বিভিন্ন ধরনের ফলের শরবত, দই, লাচ্ছি তৈরি করতেও এটি কাজে লাগে।

সতর্কতা : অনেক গুণসম্পন্ন এ জাফরান অতিমাত্রায় খাওয়া যাবে না। নারীদের ক্ষেত্রে অন্তঃস্বত্বা অবস্থায় এটি কোনো খাবারে ব্যবহার করা যাবে না। এ ছাড়া এক বা দুই চামচের বেশি খেলে যেকোনো মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

অবশেষে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে হতাশা দূর করতে, যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও জাফরান ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনঃ   তেজপাতা ত্বক ও চুলের জন্য কতটা কার্যকর?

তাছাড়া হজমের সমস্যা দূর করতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, গ্যাসের সমস্যা এবং মেনোপজের কারণে হওয়া নানান সমস্যা কমাতে জাফরান বেশ উপকারী।

শারীরিক দিক থেকে অনুন্নত মেয়েদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী। প্রত্যেকদিন এক চিমটে জাফরান দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হরমোন উদ্দীপিত হয়। নিয়মিত দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে খেলে তার ফল আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।

জাফরানের গুণ সম্পর্কে আরো কিছু কথা –

যে কোনও খাবারে জাফরান ব্যবহার করলে, সেই খাবারের স্বাদ এবং রং অনেক বেড়ে যায়। কেশর বা জাফরান শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ এবং রং-ই বাড়ায় না। এর আরও অনেক গুণাগুণ রয়েছে। জেনে নিন সেগুলি কী কী-

১. জাফরানে ঘণ কমলা রঙের জলে মিশে যায় এমন একধরণের ক্যারোটিন থাকে, যাকে ক্রোসিন বলা হয়। এই ক্রোসিনের জন্যই খাবারে জাফরান ব্যবহার করলে একটা উজ্জ্বল সোনালি রং হয় খাবারে। এই ক্রোসিন শুধুমাত্র খাবারে সোনালি রং-ই আনে না, আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরণের ক্যানসার কোষ, যেমন লিউকেমিয়া, ওভারিয়ান কারসিনোমা, কোলন অ্যাডেনোকারসিনোমা প্রভৃতি ধ্বংস করতেও সাহায্য করে।

২. সম্প্রতি গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। জাপানে পারকিনসন এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন অসুখে জাফরান ব্যবহার করা হয়।

৩. শারীরিক দিক থেকে অনুন্নত মেয়েদের জন্য জাফরান খুবই উপকারী। প্রত্যেকদিন এক চিমটে জাফরান দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হরমোন উদ্দীপিত হয়। নিয়মিত দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে খেলে তার ফল আপনি নিজেই দেখতে পাবেন।

৪. প্রত্যেকদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে খেলে আপনার ভাইটালিটি বাড়বে।

৫. ঠান্ডা লাগা, জ্বরের হাত থেকে বাঁচায় জাফরান।

0Shares

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − 1 =