জরায়ু তো মেয়েদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একে আমরা ইউটেরাস বলি। একটি মেয়ে যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন প্রতিমাসে ঋতুস্রাব হয়। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পরে গিয়ে যখন স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকে, তখন জরায়ুর প্রধান কাজ হয়ে থাকে গর্ভধারণ। স্বাভাবিকভাবে এই নিয়মেই মানুষের জীবন চলে থাকে। এর বাইরে যখন জরায়ুতে নতুন করে কোনো কিছুর বৃদ্ধি হয়, নতুন কোনো একটি মাংস পিণ্ড তৈরি হওয়া—একেই বলি টিউমার। এই টিউমার সাধারণত ভালো ও খারাপ দুই ধরনের হয়। যখন ভালো হয়, একে আমরা বলি বিনাইন টিউমার। আর খারাপ টিউমারকে আমরা সাধারণত ক্যানসার বলে থাকি। জরায়ুতে যে টিউমারগুলো সাধারণত হয়ে থাকে, এর মধ্যে ফাইব্রয়েড, ইউটেরাস বা লিউমায়োমা হলো সবচেয়ে প্রচলিত। মেয়েদের এই রিপ্রোডাকটিভ জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি হয়ে থাকে, সেটি হলো ফাইব্রয়েড ইউটেরাস বা জরায়ুর টিউমার। তাই জরায়ুর টিউমারডা বিষয়ে. ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু লিখিত নিচের লেখাটি এ আমাদের আজকের প্রতিপাদ্য —
নারীদেহের ফাইব্রয়েড টিউমার কি ক্যানসার?
ফাইব্রয়েড হলো নারীদেহের সাধারণ একধরনের টিউমার। ২৫ শতাংশ নারীর দেহে ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের মধ্যে ফাইব্রয়েড আক্রান্তের হার বেশি। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হলো, এটি টিউমার হলেও কিন্তু ক্যানসার নয়। এটি শরীরে ক্যানসারের মতো কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। এই টিউমার থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা এক শতাংশের কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার না করেই এর চিকিৎসা করা সম্ভব।
কোথায় হয়?
মূলত মহিলাদের জরায়ুতে ফাইব্রয়েড হয়ে থাকে। জরায়ুর পেশিতে ও ভেতরের ত্বকে, ফেলোপিন টিউবের মুখে, ব্রডলিগামেন্ট ও ডিম্বাশয়ের পাশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হতে পারে। অনুমান করা হয়, যৌবনাবতীর দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণের সঙ্গে এই ফাইব্রয়েড সৃষ্টির কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ নারীদেহে যখন ইস্ট্রোজেন সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষরণ হয়, সেই সময় অর্থাৎ ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সে ফাইব্রয়েড তৈরি হয়।
আবার মেনোপোজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাইব্রয়েড বৃদ্ধি থেমে যায়। ফাইব্রয়েডের জন্য বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে অস্বস্তি অনুভব, অকাল গর্ভপাত, রজস্রাব সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তস্বল্পতা, স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব বা সাময়িক বন্ধ্যাত্বও হতে পারে এবং মূত্রথলিতে সংক্রমণ হতে পারে।
লক্ষণ
মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব, ১০-১৫ দিন পরপর হঠাৎ হঠাৎ রক্তস্রাব দেখা দেয়। তলপেট ভারী অনুভূত হওয়া। মাসিকের সময় পেটে অস্বাভাবিক ব্যথা হওয়া। ফাইব্রয়েড বড় হয়ে গেলে ক্ষুধামান্দ্য, ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া, কোমর ব্যথা ও পায়ে পানি জমার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসা
এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. সুমাইয়া বলেন, যদি ফাইব্রয়েডে কোনো ধরনের উপসর্গ না দেখা যায়, আকারে খুব বড় না হয় ও এটিতে ক্যানসার না হয় তাহলে অপারেশন করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ মেনোপজের পর এর বৃদ্ধি আপনাআপনি থেমে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীর ঋতুস্রাবের সমস্যার জন্য কিছু ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। হরমোন থেরাপি দিয়েও ফাইব্রয়েড শুকিয়ে দেওয়া সম্ভব।
জটিল পরিস্থিতিতে চিকিৎসা অপারেশন। রোগী যদি কম বয়স্ক হয় তবে শুধু টিউমারটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। বেশি বয়স্ক ও পরিবারে আর সন্তান না নিতে চাইলে জরায়ু কেটে ফেলে দেওয়া হয়। চিকিৎসক যদি মনে করেন, আপনার অপারেশন করা প্রয়োজন তবে দেরি না করে অপারেশন করা ভালো। কারণ, অপারেশন না করলে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফাইব্রয়েড থাকা অবস্থায় সন্তান ধারণ করলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সন্তান প্রসবের পর ফাইব্রয়েড সারিয়ে ফেলতে হবে। সিজারের সময় ফাইব্রয়েড অপসারণ করা হয়।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।