চুল পড়ার ঘরোয়া প্রতিষেধক

0
1500
চুল গজা,চুল পড়া

ক্যাস্টর অয়েলের রিসিনোলেইক এসিড নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত একদিন রাতে ক্যাস্টর অয়েলে একটি ভিটামিন ’ই’ ক্যাপসুলের তরলটুকু মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন, সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দুই মাস ব্যবহার করতে হবে। আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

তাছাড়া আরও কিছু টিপস নিচে দেয়া হলো –

১. খাবারে লবণ কম খাবেন। লবণ মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকতে সাহায্য করে। মাথার ত্বকের কোষে পানি জমে থাকলে চুলের গোড়া নরম হয়ে অধিক চুল পড়তে সাহায্য করে।

২. ওজন বা মেদ কমানোর জন্য অনেকে হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া, একেবারেই ছেড়ে দেয়। এই হঠাৎ খাওয়া কমানোতেও চুল পড়ে। এ ক্ষেত্রে নিউট্রশনিষ্ট কিংবা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।

৩. গরীব-মধ্যবিত্তের চুলের সহায়ক খাবার হচ্ছে সবুজ শাক-সবজি। সবুজ শাক-সবজির মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস বা পুষ্টি উপাদান চুলের জন্য খুব উপকারী। প্রচুর পরিমাণে আয়রণযুক্ত শাক যেমন, লাল শাক, কচুশাক খেতে হবে।তবে সামর্থবানরা আঙ্গুরের রস (গ্রেপ ফ্রুইট ককটেল), আলু, বাঁধাকপি,মিক্সড সালাদ, কলা, মুরগির মাংস, ডিম খেতে পারেন।

৪. প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি যেমন- নাশপাতি,বাদাম, গম, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সবজি, ডিম প্রভৃতি ও জলপাই তেল খাবেন।

৫. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু যে চুল শক্ত করে তা নয়, চুল গজাতেও সহায়তা করে। প্রেটিনের অভাবে চুলের রঙ প্রথমে নষ্ট হয়ে যায়। চুল লালচে বাদামি হতে থাকে। পরে চুল ঝরে যায় এবং চুলের আগা ফাটতে থাকে। কেরাটিনের অভাবে চুল ফেটে যায়। খাদ্য তালিকায় মাছ, গোশত,ডিম, দুধ, ডাল, দই, পনির ইত্যাদি থাকা জরুরি।

৬. অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- আইসক্রিম, পেস্ট্রি কেক, লবণ,ফাস্টফুড, জাংক ফুড, চিনি, পশুর চর্বি, বাটার, ক্রিম, অধিক চর্বিযুক্ত চিজ, হুয়াইট ব্রেড ও ময়দা, ভাজা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট এবং হোল মিল্ক, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি পরিহার করুন। অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না। চা বা কফিতে ক্যাফেইন থাকে যা সকল প্রকার চুল ও স্কিনের
সমস্যার জন্য দায়ী।

আরও পড়ুনঃ   চুল গজাতে সাহায্য করে পেয়ারা পাতা!

৭. ওমেগা- থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড চুল পড়া রোধে খুব কার্যকর। প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি (৩) ফ্যাটি অ্যাসিড তিসির তেলে পাওয়া যায়। প্রতিদিন ২ চা চামচ তিসির তেল সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে।

৮. নতুন চুল গজাতে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে অন্তত পাঁচ মিনিট ১০-১৫ মিনিট চুলের ম্যাসাজ করুন। কোকোনাট কিংবা এলমন্ড অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। তেল চুল গজাতে বা চুলে পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করে না। তবে তেল
ম্যাসাজ করলে স্ক্যালেন্ড রক্ত সঞ্চালন হয় এবং চুল বাহ্যিকভাবে চকচকে,মসৃণ হয়।

৯. চুলে অপ্রয়োজনীয় ঘষা-মাঝা, অতিরিক্ত আচরানো পরিহার করুন। অনেকে চুল খুব ঘন ঘন আঁচড়ান। এটা ঠিক নয়। খুব বেশি চুল আঁচড়ানোর ফলে সেবাশিয়াস গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে উঠলে চুল পড়ে। আবার চুল না আঁচড়ানোও ঠিক নয়।
নিন্মমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আঁচড়ানোর জন্যও চুল পড়ে।

১০. গরম পানি, ড্রায়ার বা এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যা চুলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। জেল, মুজ, হেয়ার ডাই­ এসব চুলের ক্ষতি করে। দীর্ঘ সময় হেলমেট, টুপি ইত্যাদি পড়ে থাকবেন না। মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার প্রয়োজন না হলে করবেন না।

১১. চুলের সঠিক যত্ন সম্পর্কে না জানার কারণেও অনেকের চুল পড়ে। প্রচলিত একটি ধারণা আছে, রাতে শোয়ার আগে টান টান করে বেণী বেঁধে ঘুমালে চুল তাড়াতাড়ি লম্বা হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। এতে চুল ঝরে পড়ে দ্রুত।ভেজা চুল কখনো আঁচড়াবেন না। তোয়ালে দিয়েও খুব ঘষে চুল মুছলে চুলের ক্ষতি হয়। ভিজা চুল কখনো বাঁধবেন না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বজ্রাসনে
বসে চুল আঁচড়াবেন। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং আপনি মানসিক চাপমুক্ত হয়ে ঘুমাতেও পারবেন।

১২. প্রতিদিন ১৬-২০ গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে আমরা সচেতন নই।

আরও পড়ুনঃ   জ্বর-সর্দি সারাবে আদা-রসুনের স্যুপ!

১৩. যারা প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হন তাদের এক-দুই দিন অন্তর চুল শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।বিজ্ঞাপনের চটকে ভুলে ভুল শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না।

১৪. হিন্দি শব্দ চ্যাম্পু থেকে শ্যাম্পু এসেছে। এর অর্থ মালিশ বা ম্যাসাজ। এর মানে বোঝা যায় শ্যাম্পু করার সময় আপনার মাথা ম্যাসাজ বা ঘষতে হবে। খুশকির জন্য এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। তবে দীর্ঘদিন এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়।

১৫. খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল ২% শ্যাম্পু বা ড্যানসেল শ্যম্পু হাতে ঢেলে নিন এবং দু’হাতে ঘষে নিয়ে তারপর পুরো মাথায় লাগান।ভালভাবে লাগিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। আঙুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করে শ্যাম্পু লাগান। এরপর চুল ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২ বার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহারে খুশকি কমে যাবে।

১৬. চুল পড়া রোধের জন্য বাজারে মিনোক্সিডিল নামের ওষুধ পাওয়া যায়। এটি যেখান থেকে চুল পড়ছে সেখানে লাগাতে হবে। এটি নারী ও পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করতে পারেন। এতে কাজ না হলে অন্য চিকিৎসা নিতে হবে। অন্য চিকিৎসার মধ্যে আছে লেজার থেরাপি এলএইচটি, হেয়ার ফলিকল রিপ্লেসমেন্ট,হেয়ার স্কাল্প রিপ্লেসমেন্ট ইত্যাদি।

১৭. এছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুমান এবং বিশ্রাম নিন, কেননা ঘুম ও বিশ্রাম নতুন চুল গজানো ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

১৮. ধুমপান ত্যাগ করুন। ধুমপানের কারণে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, রক্ত নালিকাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চুল পড়ে।

১৯. প্রতিদিন একটু করে ব্যায়ম করলে শরীর ফিট থাকার পাশাপাশি রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে। যার ফলে চুলও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় না।

২০. কিছু ব্যক্তিগত কারণ যেমন হরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য,বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা ঘুম না হওয়া। সুষম আহার, চুলের সঠিক পরিচর্যা এবং প্রয়োজনে কিছু ওষুধের ব্যবহারে চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   জেনে নিন দিনে মাত্র ১ টি পেয়ারা খাওয়ার ৭ টি অসাধারণ সুফল

অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করতে দারুণ কার্যকরী মাত্র ১ টি সমাধান !!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 + sixteen =