চিকেনপক্স সমস্যা

0
359
চিকেনপক্স সমস্যা,চিকেনপক্স,chicken pox

আগেকার দিনে মানুষের দেহে দুই প্রকার পক্স হতো। একটি হলো স্মলপক্স বা গুটিবসন্তু আর অন্যটি হলো চিকেনপক্স বা জলবসন্ত। দু’টি রোগই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। প্রথমটির ভাইরাসের নাম ভেরিওলা ভাইরাস আর দ্বিতীয়টির নাম ভেরিসেরা ভাইরাস। স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের অস্তিত্ব বর্তমানে পৃথিবীতে নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে এবং সহযোগিতায় বিশ্বব্যাপী একযোগে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে এ রোগ পৃথিবী থেকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ রোগটি পৃথিবী থেকে নির্মূল বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। গুটিবসন্তে আক্রান্ত রোগীর কষ্ট, মৃত্যুহার ও পরবর্তী জটিলতা ছিল জলবসন্ত অপেক্ষা অনেক বেশি। বিশেষ করে ত্বকে গর্ত গর্ত স্থায়ী দাগ রোগীকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হতো।

বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে যে বসন্তটি হচ্ছে­ সেটা জলবসন্ত। সাধারণত ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরাই এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। তবে, আগে হয়ে না থাকলে যেকোনো বয়সেই হতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, জলবসন্ত একবার হলে সারাজীবনের জন্য শরীরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে সাধারণত দ্বিতীয়বার আর হয় না। তবে, এর কিছু কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায় অর্থাৎ কারো কারো দ্বিতীয়বারো হয়ে থাকে। জলবসন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। বাড়ির যেকোনো একজন সদস্য আক্রান্ত হলেই বাকি সবারই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশি-থুথু-লালা ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ অন্যদের শরীরে সংক্রমিত হয়। শরীরে জীবাণু সংক্রমণের এক থেকে তিন সপ্তাহ পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করে। শুরুতে শরীরে সামান্য জ্বর, খাবারের অরুচি, ম্যাজমেজে ভাব ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। তারপর শুরু হয় শরীরের বিভিন্ন স্থানে দানা ওঠা। তালুতে, বুকে, পিঠে, হাতে, পায়ে, মুখে ইত্যাদি শরীরের সব স্থানেই অসংখ্য দানা ওঠে। দানার সংখ্যা কারো কারো ক্ষেত্রে কম আবার কারো কারো ক্ষেত্রে খুব বেশিও হতে পারে। মুখের ও গলার ভেতরে দানা উঠলে ঢোক গিলতে এবং খেতে কষ্ট হয়। মাথায় হলে চুল আঁচড়াতে অসুবিধা হয়। চোখের ভেতরে হলে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে সাথে সাথে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। দানাগুলো প্রথমে ঘামাচির মতো দেখা যায়, তারপর খুব দ্রুত বড় হয়ে পানিভর্তি ফোসকায় পরিণত হয়। আর এ জন্যই এটাকে জলবসন্ত বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ   ভয়াবহ কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জেনে নিন

পরে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশন হয়ে এই পানিভর্তি ফোসকা পুঁজভর্তি সাদা ফোসকায় পরিণত হতে পারে। এ অবস্থায় চুলকানির সাথে সাথে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা ও জ্বর হতে পারে। পুঁজ বা পানিভর্তি এ ফোকসাগুলো পরে শুকিয়ে ঝরে পড়ে যায়। প্রথম তিন মাসের মধ্যে সন্তানসম্ভবা মায়ের জলবসন্ত হলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বা শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।

জলবসন্ত ভাইরাসজনিত রোগ হওয়াতে এর কোনো সরাসরি চিকিৎসা নেই। ভাইরাস শরীরে সংক্রমিক হওয়ার পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে জলবসন্ত সৃষ্টি করে এবং তার পূর্ণ মেয়াদকাল শেষ করে আপনাআপনিই নিষ্ত্র্নিয় হয়ে যায়। এ সময় উপযুক্ত সুচিকিৎসার প্রয়োজন ভাইরাস হত্যার জন্য নয়, বরং রোগীর কষ্ট লাঘব ও রোগ-পরবর্তী জটিলতা এড়ানোর জন্য। জলবসন্তে মৃত্যুর ঝুঁকি কম, তবে পরে উল্লেখযোগ্য যেসব জটিলতা হতে পারে, তা হচ্ছে বুকের সমস্যা­ নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কের সমস্যা এনকেফালাইটিস, কিডনির সমস্যা গ্লোমেরুলোনে-ফরাইটিস, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির সমস্যা মায়োকার্ডাইটিস ইত্যাদি। এ ছাড়া এ রোগের আরেকটি ঝুঁকি হলো জলবসন্ত ভালো হওয়ার বহু দিন পরও শরীরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এ ভাইরাসটি আবার কষ্টদায়ক হারপিসজোস্টার নামক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। জলবসন্ত রোগীর খাবারে কোনো বাছবিচার নেই, সব কিছুই খাওয়া যায়। স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, প্রয়োজনীয় সেবা-যত্ন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করানোই হচ্ছে এ সময় রোগীর পরিবারের সদস্যদের জন্য করণীয়। তবে যেহেতু রোগটি ছোঁয়াচে তাই রোগীকে যতটা সম্ভব পৃথক ঘরে রাখা এবং ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা উচিত। সব শেষ কথা হলো­ জলবসন্ত কোনো মারাত্মক রোগ নয়। আক্রান্ত হয়ে গেলে ভয় না পেয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শমতো এটা মোকাবেলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ, আর ভুল করেও নখ দিয়ে ফোসকা খোঁটা উচিত নয়। এতে দাগ এবং ইনফেকশন বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত জলবসন্তের দাগ আগেকার দিনের গুটিবসন্তের মতো স্থায়ী হয় না। জলবসন্ত প্রতিরোধ করতে আগে কোনো টিকা ছিল না। সম্প্রতি এ রোগের একটি টিকা বেরিয়েছে। যাদের এখনো জলবসন্ত হয়নি, তারা এই টিকা নিয়ে সারাজীবন নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ   কেমন করে বুঝবেন আপনার যক্ষ্মা হলো কিনা?

*************************
ডাঃ ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লিঃ, ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা।

বসন্তকালের অসুখ-বিসুখ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 4 =