গিটে বাত ও প্রতিকার

0
784
গিটে বাত,Arthritis

গিটে বাত বা ওসটিওআর্থ্রাইটিস শরীরের যে কোন জোড়ায় হতে পারে। তবে ওজন বহনকারী বড় জোড়ায় বেশি হয়। হাত ও পায়ের আঙুলের জোড়া, মেরুদণ্ডের জোড়া এবং হাঁটু ও কটির জোড়ায় গিটে বাত বেশি হয়। ওসটিওআর্থ্রাইটিস এমন একটি রোগ যেখানে জোড়ার তরুনাস্থি ও হাড়ের ক্ষয় হয় বেশি কিন্তু প্রদাহ হয় কিঞ্চিত। ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত শুধুমাত্র তরুনাস্থি ও হাড়ের ক্ষয় করে না এটি জোড়ার লাইনিং (সাইনোভিয়াম), জোড়ার আবরণ (ক্যাপসুল) ও জোড়ার পেশীকে আক্রান্ত করে। গিটে বাত হলে জোড়ায় মসৃণ ও লুব্রিকেন্ট থাকে না এবং তরুনাস্থি ও তরুনাস্থির নিচের হাড় ক্ষয় হতে থাকে। জোড়ার পেশীর খিচুঁনি হয় ও পেশী শুকিয়ে যায় এবং লিগামেন্ট লাক্সিটি হয়। ফলে জোড়া অস্থিতিশীল হয়। মধ্যবয়সী ও বয়স্কদের ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত হয়। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে এক-তৃতীয়াংশ লোক এবং ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে ৭০% লোক ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাতে ভুগে। ৫০ বছরের পূর্বে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা এবং ৫০ বছরের পরে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা গিটে বাত বা ওসটিওআর্থ্রাইটিসে বেশি ভুগে।
কারণসমূহ:
০ জেনেটিক (বংশগত)।
০ ওবেসিটি (অতিরিক্ত ওজন)।
০ গ্রন্থি সমস্যা- ডায়াবেটিস, এক্রোমেগালি এবং হাইপো ও থাইপারথাইরোডিজম।
০ আর্থ্রাইটিস- সেপটিক, রিউমাটয়েড ও গাউটি আর্থ্রাইটিস।
০ মেটাবোলিক (বিপাকীয়)- পেজেট্স ও উইলসন ডিজিজ।
০ জন্মগত বা অস্বাভাবিক হাড়ের বৃদ্ধি।
০ øায়ু রোগ।
০ আঘাতের কারণে জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট, হাড় ফ্র্যাক্সার, লিগামেন্ট ও তরুনাস্থি ও ইনজুরি হলে অল্প বয়সে গিটে বাত শুরু হয়।
লক্ষণসমূহ:
কটির জোড়া:
০ কটির জোড়ায় ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত হলে কুঁচকি, নিতম্ব, উরুর ভিতর পাশে এবং এমনকি হাঁটুতে ব্যথা হয়।
০ জোড়া জমে যাওয়ার জন্য পায়ে মোজা পরতে অসুবিধা হয়।
০ বিভিন্ন নড়াচড়া সীমিত হয়।
০ খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়।
০ রাতে এবং বিশ্রামে ব্যথা হলে বুঝতে হবে রোগ গুরুতর।
ঘাড় ও কোমর:
০ মেরুদণ্ডের মধ্যে ঘাড়ের নিচের দিকের এবং কোমড়ের হাড়ে (কশেরুকা) ওসটিওআর্থ্রাইটিস হয়।
০ ঘাড়, বাহু, হাত, কোমড়, লেগ ও পায়ে ব্যথা হয় এবং দুর্বলতা ও অবশ ভাব হতে পারে।
হাঁটু:
০ ফুলা ও ব্যথার জন্য হাঁটুর মুবমেন্ট করা যায় না।
০ মুবমেন্টের সময় ক্র্যাকিং (ক্রিপিটাস) শব্দ শুনত বা বুঝতে পারা যাবে।
০ রোগী বেশিক্ষণ বসলে হাঁটু সোজা করতে কষ্ট হয়।
০ অনেক সময় হাঁটু আটকিয়ে যায়, রোগী হাঁটুকে বিভিন্ন মুবমেন্ট করিয়ে সোজা করে।
০ হাঁটুর পেশী শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়।
০ উঁচু নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে উঠা নামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
০ হাঁটু ইনসিকউর বা আনস্ট্যাবল মনে হবে- দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে।
আঙুল:
০ হাতের আঙুলের শেষের (ডিসটাল) জোড়ায় ব্যথা হয়।
০ জোড়া জমে যায়।
০ নতুন হাড় (হেবেরডেন নোডস) হয়ে জোড়া ফুলে যায়।
ল্যাবরেটরী পরীক্ষা:
০ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা।
০ এক্স-রে: জয়েন্ট স্পেস কম, তরুনাস্থির নিচে হাঁড়ের মধ্যে মধ্যে সিস্ট ও ওসটিওফাইট (নতুন হাড়)।
০ এমআরআই।
চিকিৎসা বা প্রতিকার:
চিকিৎসার শুরুতেই ওসটিওআর্থ্রাইটিস বা গিটে বাত এর কারণ এবং রোগের তীব্রতা নির্ণয় করা একান্ত প্রয়োজন। এ রোগ একবার শুরু হলে প্রকৃতির নিয়মে বাড়তে থাকে। তবে দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা পরিবর্তন ও সুষ্ঠু কিছু নিয়মের মাধ্যমে ওসটিওআর্থ্রাইটিসের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ এবং উপসর্গ লাঘব করা যায়।
কনজারভেটিভ বা মেডিকেল ব্যবস্থা:
০ ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। ফল, শাকসবজি কম ক্যালোরী, কম কম সুগার ও কম চর্বিযুক্ত খাবার, সিম, মটরশুটি, চর্বিবিহীন মাংস, বাদাম ও অক্ষত খাদ্যশস্য ইত্যাদি খেতে হবে।
০ স্ট্রেসিং ও পেশী শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম জোড়ার মুবমেন্ট বজায় রাখে এবং জোড়া জমে যাওয়া লাঘব করে। ভুল ব্যায়াম জোড়ার ক্ষতি করে এবং রোগকে অতিরঞ্চিত করে। জোড়ার চারপাশের পেশী ও টিসু সংকুচিত হলে স্বাভাবিক মুবমেন্ট পুনঃরুদ্বার করা বড়ই কঠিন।
০ ওয়াকিং স্টিক, উঁচু চেয়ার, ব্রেচ বা হাঁটু সাপোর্ট ও কুশনযুক্ত জুতা ব্যবহার করলে কোমড়, কটি ও হাঁটুর ব্যথা কম হবে।
০ গরম ও ঠাণ্ডা সেক ব্যবহারে পেশীর সংকোচন কমবে, রক্ত চলাচল বাড়বে এবং ব্যথা কমবে।
০ বেদনানাশক ওষুধ সেবন।
০ কনড্রিওটিন সালফট/ক্লোরাইড সেবনে তরুনাস্থি ক্ষয় নিবারণ হবে।
০ ভিটামিন সি, ই ও ডি এবং ক্যালসিয়াম নিয়মিত সেবনে রোগের তীব্রতা কমে আসবে।
০ ফিজিকেল থেরাপি- এসডব্লিউডি, ইউএসটি ও টিইএনএস ব্যবহারে পেশীর সংকোচন, জমে যাওয়া ও ব্যথা উপশম হবে।
০ ইনজেকশন- স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক এসিড জয়েন্টে পুশ করলে রোগের উপসর্গ সাময়িক উপশম হবে। ইনজেকশন এক বছরে তিন বা চারের অধিকবার দেয়া নিষেধ।
সার্জিকেল পদ্ধতি: কনজারভেটিভ চিকিৎসায় ভালো না হলে সার্জিকেল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে-
০ আর্থ্রোস্কোপি ছোট ছিদ্রের সাহায্যে জোড়ায় প্রবেশ করিয়ে অতিরিক্ত হাড়, সাইনোভিয়াম, বিচ্ছিন্ন হাড় ও তরুনাস্থি বের করা হয় এবং হাড়ে মাইক্রো পাংচার করা হয়।
০ হাড় কেটে জোড়ার আকৃতি ঠিক করতে হবে।
০ প্রয়োজনে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট বা পুনঃস্থাপন করতে হবে।
আর্থ্রােস্কোপিক বা জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসায় রোগের উপসর্গ দ্রুত উপশম হবে।

আরও পড়ুনঃ   হাড়ের অসুখ অস্টিওপোরোসিস

ডাঃ জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
এমবিবিএস (ঢাকা), এমএস (অর্থো-সার্জারী), নিটোর, ঢাকা
ফেলো- ট্রমা ও স্পোর্টস সার্জারী- ভারত
ফেলো- আর্থ্রোস্কোপি ও জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট- ফ্রান্স
আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারীতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ- কোরিয়া ও থাইল্যান্ড
কনসালটেন্ট – হাড়, জোড়া, ট্রমা ও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারী
ডিজিল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস (ইনডোর স্টেডিয়ামের সামনে), মিরপুর, ঢাকা।
ইডেন মাল্টি কেয়ার হাসপাতাল, সাতমসজিদ রোড ধানমন্ডি, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × one =