প্রচণ্ড গরম চলছে সারা দেশেজুড়ে। কোন কিছুতেই যেন স্বস্তি নেই হোক সেটা পোশাক, সাজ-সজ্জা বা খাবার।
কিন্তু, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যেমন দরকার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। ঠিক তেমনিভাবেই সুস্থ, সাবলীল এবং রোগমুক্ত দেহের জন্য দরকার পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের। খাবার হতে আমরা আমাদের পুরো শরীর এনার্জি পায় এবং শরীর সচল থাকে। আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন এক্টিভিটি গুলোর জন্য দেহের যে পরিমান শক্তি দরকার হয় তা আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার থেকেই পায় ।

আমরা জানি গ্রীষ্মকালে সারা দেশে গরমের তীব্রতা স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি থাকে। আর এসময় অনিয়ন্ত্রিত খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের বিভিন্ন প্রকার রোগ বলায়ের মুখোমুখি হতে হয়। প্রচণ্ড রোদে, পানি শূন্যতার কারণে হিট স্ট্রোক,ডাইরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগে আমরা আক্রান্ত হয়, তাই এই গরমে সুস্থ থাকতে হলে আমাদের খাবার খেতে হবে পরিমিত ও রুটিনমাফিক।
আর এই প্রচণ্ড গরমে একটু সচেতন হয়ে প্রতিদিন খাবার-দাবার খেলে বিভিন্ন প্রকারের রোগ-বলায় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
বিশেষ করে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর যেমন তেলে ভাঁজা, অস্বাস্থ্যকর স্ট্রিট ফুড, ফাস্ট ফুড, চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করাই উচিৎ।
চলুন জেনে নেই এই গরমে যে সকল খাবার খাওয়া উচিৎ এবং বর্জন করা উচিৎ

বেশী পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা

শরীরে সকল অর্গানগুলোর সুস্থ ও সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
প্রাপ্তবয়স্ক ও কর্মক্ষম নারী-পুরুষের সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত দুই লিটার পানি খাওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেশির ভাগ চিকিৎসক।
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি করলে আমাদের পিপাসা মেটানোর সাথেসাথে শরীরের পানিশূন্যতাও দূর হয়। যার ফলে ক্লান্তি দূর হয় এবং আমরা এনার্জিটিক থাকি।
বেশী করে ফলমূল খাওয়া

আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ, পুষ্টি সাধন এবং দেহকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফলমূল অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য।
শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শাক-সবজি ও ফলমূল দিনে পাঁচবার খাওয়া উচিতব বলে বিভিন্ন পুষ্টিবিদরা মত দিয়েছেন ।
যেমন তিনবেলা শাক-সবজি খেলে, দু’বার ফল খেলে শরীর ব্যালেন্স থাকে।
এই গরমে ডাব, শসা, আম, তরমুজ , মাল্টা খাবেন এবং এ ছাড়া পানিজাতীয় সবজি যেমন পটোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, লাউ, এসব খাবার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করে নিন।
শরবত ও ফলের জুস খাওয়া

পৃথিবীতে অনেক রকমের ফল পাওয়া যায়। দেশভেদে ভিন্ন রকম ফলের স্বাদেও ভিন্নতা দেখা যায়।
ফলে শর্করার পরিমান বেশী থাকে ও ক্যালরিও পাওয়া যায় । ফল শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি আরো অনেক উপকার করে । অনেকেই ফল খেতে চাইনা তারা বিভিন্ন ফলকে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ঘরে বিভিন্ন ফলকে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেমন তরমুজ, পুদিনা, মাল্টা, পেপে আনারস। লেবু বা বেল কে শরবত বানিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
দই চিড়া

এই গরমে যখন আমাদের খিদে পায় আমরা কি খাবো দ্বিধায় পরে যায়। কারণ তখন ভালো কিছু ও আমাদের ভালো লাগে না।
চিড়া অনেক উপকারী একটি খাদ্য। চিড়ার রয়েছে অনেক গুনাগুন।
গরমের দিনে চিড়ার সাথে একটু দই মিশিয়ে খেলে অনেক শান্তি লাগে এবং শরীর ঠাণ্ডা ও সুস্থ থাকে ।
যে সকল খাবার গুলো বর্জন করা উচিৎ
গরমে যা খাবেন না

তীব্র গরমে আমরা একটু সচেতন হয়ে খাবার খেলে অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ফুটপাতে বিক্রি করা পানি, শরবত, আখের রস খাওয়া খাওয়া একদমই বাদ দিয়ে দিন। রাস্থাঘাটের এই সকল পানীয়গুলো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো হয় । যার ফলে এইসকল পানীয় গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া, আমাশয় এর মতো রোগে হয় পাশাপাশি আরো বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। ঘরের তৈরি জুস বা শরবত পান করুন।
অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার না খাওয়া

অতিরিক্ত মসলাজাতীয় উপকরণ আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গরমের সময় এমিনিতেই আবাহায়া এবং পরিবেশের কারনে শরীরের তাপমাত্রা বেশী থাকে, তাই আমাদের মসলাজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।
ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা

অতিরিক্ত তেলযুক্ত সকল খাবার এমনিতেই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর বিশেষ করে গরমকালে এইসকল খাবার একদম না খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো। অতিরিক্ত তেলে ভাজা ফাস্টফুড বা অস্বাস্থ্যকর এই খাবারগুলো আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
এইসকল খাবার আমাদের পাকস্থলীতে যন্ত্রণা তৈরি করতে পারে এবং বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বেশী পরিমাণে চা কিংবা কফি পান না করা

গরমে বেশী পরিমাণে চা কিংবা কফি পান করা মোটেও উচিৎ নয় । গরমে চা-কফি ক্ষুধাহীনতা ও হজম পরিপাকে সমস্যা তৈরি করে সুতরাং চা বা কফি পান করার অভ্যাস থাকেলও নিজের শরীরের সুস্থতার কথা চিন্তা করে কমিয়ে ফেলা উচিৎ।
ঠাণ্ডা পানী না খাওয়া

তীব্র রোদ থেকে এসে সাথেসাথে ঠাণ্ডা কোনো পানীয় বা ফ্রিজের খাবার খাওয়া উচিত নয়। আমরা যখন বাহির থেকে বাসায় আসি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা তখন বেশী থাকে সুতরাং এসেই সাথে সাথে ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খেলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
ধিরে সুস্থে একটু রেস্ট নিয়ে ঠাণ্ডা পানীর সাথে নরমাল পানি মিশিয়ে হাল্কা ঠাণ্ডা পানি পান করুন।
সুস্থতা আসলে আমাদের লাইফস্টাইল এবং খাবারের উপরেই সুতরাং নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি সুস্থ থাকে চান নাকি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে চান।
উত্তর আপনার কাছেই……।