কখন গোসল করা উচিত- ঘুম থেকে উঠে নাকি রাতে ঘুমানোর আগে?

0
1851
গোসল,bath

কখন গোসল করবেন- সকালে না রাতে?

এই প্রশ্নে লোকজন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল বলবে সকালে আর অন্য দল বলবে রাতে।

যারা সকালের পক্ষে তাদের যুক্তি হলো- রাতের ঘাম-ক্লান্তি থেকে মুক্তি আর চনমনে ভাব নিয়ে দিন শুরুর জন্য সকালেই গোসল উত্তম।

রাতের পক্ষে লোকেরা বলবেন, দিনের নোংরা-আবর্জনা আর জীবাণুর হাত থেকে পরিচ্ছন্ন হয়ে বিছানায় যেতে রাতে গোসলই শ্রেয়।

আসলে কোন পক্ষ সঠিক?

চিকিৎসকরা বলছেন উভয়ের কথাতেই যুক্তি আছে। আপনি কখন গোসল করবেন তা নির্ভর করবে কিছু পরিস্থিতির ওপর।

আপনার ত্বকের ধরন, আপনার জীবনে দূষণের মাত্রা, আপনি কখন কাজ করেন তার ওপর নির্ভর করে আপনি কখন গোসল করবেন।

যারা সকালে গোসল করবেন

শেভ করার আগে: আপনি যদি সকালে শেভ করে ফ্রেশ লুক আনতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তবে আপনার সকালেই গোসল করা উচিত। গোসল করে শেভ করা ভালো। কারণ, তাতে শেভ আরো কোমল ও সহজ হয়।

রাতে কঠিন কাজ করলে: রাতে আপনি যদি এমন কাজ করেন যাতে আপনি ঘর্মাক্ত হন তবে সকালে গোসলই শ্রেয়।

জীবাণুর সাথে বসবাস: আপনি যদি রাতে এমন কাজ করেন যাতে জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে তবে সকালে গোসল করে নেয়াই ভালো।

সতেজতা অনুভব: আমরা সাধারণত সকালের গোসলটাকে বেশি প্রাধান্য দেই। ঘুম থেকে উঠে গোসল করলে ঘুম ঘুম ভাব চলে যায়। শরীর ও মনে সতেজতা অনুভব হয়। সারাদিনের কাজের জন্য একটি উদ্যম তৈরি হয়।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়: সকালের গোসল শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। অর্থাৎ সকালের গোসলের মাধ্যমে শরীরে রক্ত চলাচলের গতি বাড়ে এবং তাতে কাজ করার শক্তি উৎপন্ন হয়।

মাংসপেশির জড়তা কমায়: হালকা গরম পানি দিয়ে সকালে গোসল করলে মাংসপেশির জড়তা কমে যায়। রাতে অনেকক্ষণ ঘুমানোর পর সকালে উঠে কোনো কিছু করতে গেলে অনেক সময় মাংসপেশির ভেতরে ব্যথা অনুভব হয়। সকালের গোসল দিতে পারে এই মাংসপেশির ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে। তবে কোনো দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে গোসলের কোনো ভূমিকা নেই।

আরও পড়ুনঃ   হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে আমড়া!

তৈলাক্ত ত্বকের সমাধান: যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের জন্য সকালটা খুব একটা ভালো হয় না কারণ সকালে মুখে তেল তেলে ভাব সব থেকে বেশি থাকে। তাই সকালের গোসল আপনার মুখের তৈলাক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য নির্দিষ্ট সাবান বা ফেসওয়াস বা ফেসপ্যাক ব্যবহার করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।

যারা রাতে গোসল করবেন

ত্বক শুষ্ক হলে:  ত্বক শুষ্ক হলে রাতে গোসল করা ভালো।

দিনে কঠোর পরিশ্রম করলে: দিনে কঠোর পরিশ্রম করলে তাদের রাতে গোসল করা উচিত।

প্রসাধন ব্যবহারকারীরা: যারা প্রসাধন ব্যবহার করেন তারা ক্লিনজার দিয়ে রাতে গোসল করবেন। তাছাড়া গোসল প্রাকৃতিক ক্লিনজারের কাজ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানো: সন্ধ্যা বেলার গোসল আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। সারাদিনের ক্লান্তি ভরা কাজের পর সন্ধ্যার গোসল আবারো শরীরকে সতেজ করে তোলে। এতে মেজাজ খিটখিটে হওয়া থেকে রোধ হয়।

তাড়াতাড়ি ঘুম: সন্ধ্যার গোসল শরীরে এক ধরনের প্রশান্তি প্রদান করে যার ফলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের জন্যও সন্ধ্যার গোসল বেশ কার্যকর।

ধুলা ময়লা পরিষ্কার: সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে যখন আমরা বাড়ি ফিরি তখন আমাদের শরীর ধুলাবালি ময়লা পরিপূর্ণ থাকে। গোসল সেই সব কিছু থেকে আমাদের রক্ষা করে। এছাড়া বাইরে থেকে ফিরে গোসল করলে মুখে ব্রনের পরিমাণও কমে যায়, কারণ ব্রণ হয় ময়লা থেকে কিন্তু গোসলের মাধ্যমে শরীরের সব ময়লা বের হয়ে যায়।

কাজের পরিবেশ:  কাজের পরিবেশের ওপর নির্ভর করে আপনি রাতে গোসল করবেন কিনা। যেমন একজন চিকিৎসক সারাদিন জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কার মধ্যে কাজ করেন। তার উচিত বাসার গেটে পোশাক পরিবর্তন করে  দ্রুত গোসল করে নেয়া- যাতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ না হয়।

তবে মনে রাখতে হবে রাতে গোসলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ধরন বদলে যেতে পারে। এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এমন হলে ঘুমের কয়েক ঘণ্টা আগেই গোসল করা উচিত।

আরও পড়ুনঃ   খালি পেটে যে খাবার খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি

চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের গঠন ও জীবনযাত্রার ধরনের ওপর নির্ভর করে যে আপনি কখন গোসল করবেন-সকালে না রাতে।

তবে চিকিৎকসকরা বলছেন, বারবার গোসল ভালো নয়। কারণে তাতে শরীরের জন্য উপকারি ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে যেতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রাকৃতিকভাবে ত্বক রক্ষা করে কিংবা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। এগুলো ধুয়ে গেলে শরীরে ক্ষুদ্র দাগ পড়তে পারে কিংবা ত্বকে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।

যখন গোসল করা উচিত নয়

খাওয়ার পর:
খাওয়ার পর পরই অর্থাৎ ভরা পেটে গোসল করা ঠিক নয়। এতে খাবার হজমে সমস্যা দেখা দেয়।

ব্যায়ামের পর:
ব্যায়ামের পর শরীর ঘেমে যায়। আর সে কারণে ব্যায়ামের পর পরই গোসল করবেন না। এতে করে শরীর আরো দুর্বল লাগবে।

বাইরে থেকে ফিরে:
বাইরে থেকে বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গে গোসল করা ঠিক নয়। কারণ আপনি তখন ক্লান্ত থাকেন। অতিরিক্ত ক্লান্ত অবস্থায় গোসল করলে শরীর আরো ক্লান্ত লাগে। কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করুন।

রান্নার পর:
রান্না করতে গেলে আমরা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যায়। তাই রান্না করার পর পরই গোসল করা ঠিক নয়। অর্থাৎ ঘামানো অবস্থায় গোসল করা ঠিক নয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা ভারসাম্য বজায় থাকে না।

সূত্র: ইয়াহু

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × five =