আম পাতা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে থাকে। তবে আম পাতার চায়ে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা হয় কিনা তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আম পাতায় আম গাছের আঠা বা কষ আছে কিনা দেখে নিতে হবে, তা না হলে এই কষ শরীরে প্রবেশ করলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাছাড়া এই কষ ত্বকে লাগলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। আম পাতায় প্রচুর ভিটামিন, এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকে। আম পাতায় মেঞ্জিফিরিন নামক সক্রিয় উপাদান থাকে যার অপরিমেয় স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। কচি আমের পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি পান করা বা পাতা গুরু করে খাওয়া যায়। আম পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো সম্পর্কে জেনে নিই চলুন-
১। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ আমপাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগে। এতে ট্যানিনস নামক অ্যান্থোসায়ানিডিন থাকে, যা ডায়াবেটিস নিরাময়ে খুব কার্যকরী। আমপাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন। গরম পানিতে সেদ্ধ করে চায়ের মতো পান করতে পারেন অথবা তাজা পাতা পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে এ পানি ছেঁকে নিয়ে পান করুন। শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া কমাতে সাহায্য করে কচি আমপাতা।
২। উচ্চ রক্তচাপ দূর করেঃ আম পাতায় হাইপোট্যান্সিভ উপাদান আছে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে।
৩। শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ যারা ঠান্ডা, হাঁপানি ও অ্যাজমা ইত্যাদি রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য আমপাতা দারুণ উপকারী। আমপাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে মধু যুক্ত করে খেলে কাশি দূর হয়।
৪। স্ট্রেস কমায়ঃ যারা অস্থির ও উদ্বিগ্ন অনুভব করেন তারা এর থেকে মুক্তি পেতে পান করতে পারেন আম পাতার চা। ২/৩ কাপ আম পাতার চা পান করে দেখুন পার্থক্য বুঝতে পারবেন। এটি আপনার স্নায়ু তন্ত্রকে শিথিল হতে সাহায্য করবে এবং আপনি সতেজ অনুভব করবেন।
৫। আঁচিল দূর করেঃ আঁচিল নিরাময়ে পরিপক্ক আম পাতা পুড়িয়ে কালো করে গুঁড়া করে নিন। সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্টের মত তৈরি করে আঁচিলের উপরে লাগালে আঁচিল দূর হবে। আঘাত প্রাপ্ত স্থানে রক্ত বন্ধ করার জন্যও এই পেস্ট ব্যবহার করা যায়।
৬। কান ব্যথা কমায়
আপনি যদি কান ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আম পাতার রস ব্যবহার করা হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী প্রতিকার। আম পাতায় হালকা তাপ দিয়ে কানের ছিদ্রের উপর লাগান। এটি চমৎকারভাবে কাজ করবে।
৭। পোড়া সারাতে
আম পাতার সাহায্যে পোড়া নিরাময় হতে পারে খুব দ্রুত। আম পাতার ছাই ত্বকের পোড়া অংশকে নিরাময় হতে সাহায্য করে। কিছু আম পাতা পুড়িয়ে ছাই করে নিন এবং এই ছাই আলতো করে পোড়া স্থানে ঘষুন।
৮। ইউরিক এসিডের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে
গেঁটে বাত নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী আম পাতা। কিছু কচি আম পাতা পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে নিন পাতার বর্ণ হলুদ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত। উপকারিতা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন পান করুন এই পানীয়।
৯। কিডনির পাথর দূর করে
আম পাতা শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন এবং পানির সাথে মিশিয়ে সকালে পান করুন। এর ফলে কিডনি পাথর খুব সহজেই শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
১০। গলা ব্যথা দূর করে
গলার ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে আম পাতা। কিছু আম পাতা পুড়তে দিন এবং এর থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া শ্বাসের সাথে গ্রহণ করুন। এতে আপনার গলা ব্যথার সমস্যা কমবে।
১১। মৌখিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা
আম পাতার সাহায্যে আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যায় এবং অস্বাস্থ্যকর দাঁত ও মাড়ির সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে।
বিভিন্ন গবেষণায় আম পাতার ঔষধি গুণের কথা প্রমাণিত হয়েছে। উজ্জ্বল, মাংসল এবং সূক্ষ্ম প্রান্তের আম পাতা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। আম পাতায় প্রচুর ভিটামিন, এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান থাকে। আম পাতার ঔষধি গুনাগুণ পাওয়ার জন্য ফুটিয়ে বা গুঁড়ো করে খাওয়া যায়।