আপনি কি গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন ?

0
2161
গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি

আরও পড়ুনঃ অ্যাসিডিটি বেড়ে যাওয়ার ১০ কারণ

বর্তমান সময়ের মানুষের মধ্যে অ্যাসিডিটির সমস্যা বেশ প্রকট।আপনার অথবা আপনার আশে পাশের অনেকেই গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে অনেকেই অনেক খাবার এড়িয়ে চলেন। কিন্তু তারপরেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে বাঁচতে পারেন না। গ্যাস্ট্রিকের মূল কারণগুলো হলো এসিডিটি, হজমের সমস্যা, বুক জ্বালা পোড়া করা ইত্যাদি। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের ব্যাথার আরো কিছু কারণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ফুড পয়জনিং, কিডনিতে পাথর, আলসার ইত্যাদি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর প্রতিকার হিসাবে পাওয়া যায় অনেক নামি দামি ওষুধ যা ক্ষতিকর । কিন্তু আপনি কি জানেন, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য চমৎকার সব প্রাকৃতিক বিকল্প আছে? যাতে নেই ওষুধের মতো কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।অর্থাৎ আমাদের হাতের কাছের বিভিন্ন প্রকৃতিক জিনিস দিয়ে যদি করা যায় এর নিরাময়,তাহলে কেমন হয় ?আসুন জেনে নেয়া যাক গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায়।

দারুচিনিঃ জমের জন্য খুবই ভাল, এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা পেটের গ্যাস দূর করে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে দিনে ২/৩ বার এটা খেতে পারেন। এছাড়া চাইলে সুপ/সালাদে দিয়েও খেতে পারেন।
তুলসি /পুদিনা চা:
তুলসি পাতার ব্যবহার অ্যাসিডিটি নিরাময়ে অনেক জনপ্রিয়। যখনই অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেবে তখন চট করে বানিয়ে নিন তুলসি চা। ২ কাপ পানিতে ৫/৬ টি তুলসি পাতা ফুটতে দিন। পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণ হয়ে এলে তা নামিয়ে গরম গরম পান করুন যন্ত্রণার উপশম হবে। চাইলে তুলসি পাতা চিবিয়েও খেয়ে নিতে পারেন, এতেও ফল পাবেন।পুদিনা পাতা পাকস্থলীর বাড়তি অ্যাসিডের সমস্যা থেকে খুব দ্রুত মুক্তি দিতে পারে এবং পরিপাকে সহায়তা করে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয়। তুলসি পাতার মতোই পুদিনা পাতার চা তৈরি করে কিংবা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলেও অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া যায়।এককথায় বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক চা যেমন সবুজ চা, পুদিনা চা, তুলসী চা এগুলো হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধান করে।

রসুন:
কাঁচা রসুন খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা খুব দ্রুত এবং সহজে দূর হয়ে যায়।

তেঁতুল পাতা:
তেঁতুল পাতা মিহি করে বেটে নিন। এবার তেঁতুল পাতা বাটা এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে সহজেই।

আরও পড়ুনঃ   যে সময় পানি পান উচিত নয়

কলা:
কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা পাকস্থলীর গা থেকে মিউকাস নিঃসরণ করতে সহায়তা করে। এই মিউকাস অ্যাসিডিটির সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে দূর করতে বেশ কার্যকরী।

বোরহানী:
বোরহানি গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটি এবং বদহজম থেকে রক্ষা করে। বোরহানি টক দই, বীট লবণ ইত্যাদি এসিডিটি বিরোধী উপাদান দিয়ে তৈরী । প্রতিদিন খাবারের পর একগ্লাস বোরহানি খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে দূর হবে।

ঠাণ্ডা দুধ:
অ্যাসিডিটির সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে দূর করতে ঠাণ্ডা দুধের জুড়ি নেই। দুধের ক্যালসিয়াম পাকস্থলীতে পৌঁছে বাড়তি অ্যাসিড যা অ্যাসিডিটি তৈরি করে তা শোষণ করে নেয়। এবং বুক ও পেটের যন্ত্রণাদায়ক জ্বালা থেকে মুক্তি দেয়।রাতে একগ্লাস দুধ ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরদিন সকালে খালি পেটে ঠান্ডা দুধটুকু পান করে নিন। দেখবেন সারাদিন এসিডিটির সমস্যা হবে না। তবে যাদের দুধে অ্যালার্জি রয়েছে তারা এর থেকে দূরে থাকবেন।

মাঠা:
দুধ এবং মাখন দিয়ে তৈরী মাঠা একসময় আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় ছিল। এসিডিটি দূর করতে টনিকের মতো কাজ করে যদি এর সাথে সামান্য গোলমরিচ গুড়া যোগ করেন।

ডাবের পানি:
ডাবের পানি খেলে হজম ক্ষমতা বাড়ে এবং সব খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এছাড়াও গ্যাসের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত ডাবের পানি খেলে। তাই সম্ভব হলে প্রতিদিন ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

আলুর রস:
আলু বেটে কিংবা ব্লেন্ডারে ব্ল্রেন্ড করে চিপে রস বের করে নিন। এবার এই রস প্রতিবার খাওয়ার আগে খেয়ে নিন। এভাবে তিন বেলা খাওয়ার আগে আলুর রস খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

ভ্যানিলা আইসক্রিম:
আইসক্রিম খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। কিন্তু আপনি কি জানেন ভ্যানিলা আইসক্রিম শুধু আমাদের তৃপ্তিই যোগায় না, সাথে এসিডিটি দুর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে!

গুড়:
গুড় আপনার বুক জ্বালাপোড়া এবং এসিডিটি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে রেহাই দিতে পারে। যখন বুক জ্বালাপোড়া করবে সাথে সাথে একটুকরো গুড় মুখে নিয়ে রাখুন। যতক্ষণ না সম্পূর্ণ গলে যায় ততোক্ষণ মুখে রেখে দিন। তবে এই সমাধান অবশ্যই ডায়বেটিস রোগিদের জন্য নয়।

আরও পড়ুনঃ   হৃদরোগ এড়াতে ডাঃ দেবি শেঠির কিছু চমৎকার পরামর্শ

আমলকি:

প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে দেখতে লোভনীয় এ ফলটিতে। এ ছাড়া এতে রয়েছে খনিজ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। আমলকি নানাভাবে খাওয়া যায়। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। এ ছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারি। তবে অ্যাসিডিটির সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করে এটি। প্রতিদিন এক চা চামচ আমলকির গুঁড়ো দুইবার খেলে অম্লপিত্ত বা অ্যাসিডিটি থাকবে না।

মৌরি:

মৌরি বায়ু নিঃসারক খনিজ লবণসমৃদ্ধ একটি বীজ। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় মৌরিকে ওষুধ ও খাবার হিসেবে গ্রহণ করা হতো। পুষ্টি ও ওষধি গুণে সমৃদ্ধ এই বীজে রয়েছে অনেক গুনাগুন। এর মধ্যে হজমে সহযোগিতা অন্যতম। এ কারণে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার পর মৌরি দেওয়া হয়। খাবার পর নিয়মিত খেলে বীজটি আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেবে। এতে কপার, আয়রন, পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে আছে। ৪/৫ গ্রাম মৌরি চূর্ণ করে দিনে দু’বার খাবারের পর সেবন করলে অ্যাসিডিটি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

জিরা:

জিরা মুখের লালা উৎপাদনে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়া ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, পাকস্থলি কোন কারণে উদ্দিপ্ত হলে তা শীতল করতে সাহায্য করে এটি। এ ছাড়া পেটের আলসার দূর করতেও কাজ করে জিরা। আপনার পেটে যখনই বায়ুর উদ্রেক হবে তখনই কয়েকটি জিরা চিবিয়ে অথবা পানিতে সেদ্ধ করে পানিসহ খেয়ে ফেলুন- অ্যাসিডিটি থাকবে না।
লবঙ্গ:

ভারতীয় উপমহাদেশের খাবারে দীর্ঘদিন ধরে লবঙ্গ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। লবঙ্গ থেকে উৎপাদিত তেলের মূল উপাদান ইউজেনল” (Eugenol) নামের যৌগ। যৌগটি একটি অন্যতম বায়ুনাশকারী উপাদান। পাকস্থলীর রস-ক্রিয়ায় ভূমিকা রেখে খাদ্যনালীকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে এটি। খাবার হজমেও রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তবে অম্লপিত্ত বা অ্যাসিডিটিতে লবঙ্গ একটি ভাল উপাদান। খাওয়ার পর দুপুরে ও রাতে একটি করে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এলাচ:

সুগন্ধিযুক্ত এ মসলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে। পাকস্থলিতে এক ধরনের পিচ্ছিল আবরণ তৈরি করে অ্যাসিডিটির প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ছোট এলাচের দুইটি দানা গুঁড়ো করে পানিতে ফুটিয়ে তা ঠাণ্ডা হলে পান করুন, অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন।

আরও পড়ুনঃ   সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলার ১০টি উপকারিতা

আদা:

পেটে গ্যাসের সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া সমাধান হলো আদা খাওয়া।
হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে আদা অনেক প্রাচীনআমল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। আদা পাকস্থলীর গায়ে একধরণের প্রতিরক্ষা পর্দা তৈরি করে যার ফলে বাড়তি অ্যাসিডের কারণে অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যায়।প্রতিবার খাবার খাওয়ার আধ ঘন্টা আগে ছোট এক টুকরো আদা কাচা চিবিয়ে খান দেখবেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা একেকবারেই থাকবে না বা প্রতিবেলা খাবার খাওয়ার পর এক টুকরা আদা মুখে নিয়ে চিবিয়ে রস খান। তাহলে পেটে গ্যাস জমবে না এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার থেকে মুক্তি মিলবে। যারা আদা সরাসরি খেতে পারেন না তাঁরা রান্নায় বেশি করে আদা ব্যবহার করুন।

আরো কিছু টিপস –
-গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সাড়া দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খেলে পেটে এসিড হয় না এবং হজম শক্তি বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাহলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই।
– তেতো জাতীয় খাবার বেশি করে খান এবং খাওয়ার পর সম্ভব হলে পুদিনা পাতার চা পান করুন।
-প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির মধ্যে সামান্য গোল মরিচ গুঁড়ো ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে অ্যাসিডিটি দূর হবে।
– মৌরী, আমলকী এবং গোলাপফুল সমপরিমানে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে নিয়ে সকাল বিকাল খেলে উপকার পাবেন।
-নিয়মিত একই সময়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুনএ এবং খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
– অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও মসলাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন এবং যদি তেল মশলা জাতীয় খাবার খান তবে তার ৩০ মিনিট পরে অবশ্যই পানি খাবেন এক গ্লাস।
– অ্যালকোহল ও চুইংগামজাতীয় খাবার সম্পূর্ণ ত্যাগ করুন।

আল্লাহ আমাদের আরোগ্য করুন -আমীন

আরও পড়ুনঃ আপনি কি গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভুগছেন? এই খাদ্য উপাদানগুলো নিমিষেই সারাবে অ্যাসিডিটির কষ্ট

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − nine =