অশ্বগন্ধা ইংরেজি নাম Withania Somnifera (উইথানিয়া সোমনিফেরা)। আমাদের দেশে কয়েকটি ঔষধি গাছের মধ্যে বলা যায় সবচেয়ে জনপ্রিয় এটি। এমন অনেকেই আছেন অশ্বগন্ধা কখনো দেখেননি কিন্তু এর নাম শুনেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা প্রমানিত প্রোসেস ফুড বা কৃত্তিম খাবার সময়ের সাথে সাথে শরীরে নানাবিধ সমস্যা তৈরী করে প্রক্ষান্তরে সর্বদা প্রাকৃতিক খাবার একজন মানুষকে দীর্ঘদিন সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। ঔষধের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এজন্য প্রয়োজন কোন গাছ কোন রোগের জন্য এবং তার ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান। আমাদের আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করবো অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এবং এই অশ্বগন্ধা সঠিক নিয়মে আপনি কিভাবে খাবেন তা নিয়ে।

অশ্বগন্ধা কি?
অশ্বগন্ধা (Withania Somnifera-উইথানিয়া সোমনিফেরা)। অশ্বগন্ধা হচ্ছে চমৎকার ওষধি গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ। অশ্বগন্ধা (Ashwagandha) নামটি কোন বাংলা শব্দ থেকে আসেনি, এটি এসছে একটি সংস্কৃত শব্দ থেকে। অশ্বগন্ধার অর্থ হচ্ছে ঘোড়ার গন্ধ। অশ্বগন্ধার পাতা সেদ্ধ করলে এক ধরনের ঘোড়ার মূত্রের মতো গন্ধ বের হয়। প্রচলিত আছে এই কারনেই এর নাম অশ্বগন্ধা রাখা হয়েছে। প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার একটি সুপরিচিত নাম অশ্বগন্ধা। ভারতীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে একে অত্যাশ্চর্য ভেষজ বলেও ডাকা হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই অশ্বগন্ধার উপকারিতা অসীম। বহু বছর আগে থেকেই অশ্বগন্ধা একটি শক্তিবর্ধক গাছ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অশ্বগন্ধা মূলত নর্থ আমেরিকাতে ও আফ্রিকায় বেশি পরিমানে হয়ে থাকে।
আসল অশ্বগন্ধা গাছ চেনার সহজ উপায়ঃ
এটি সাধারনত এমন একটি গাছ যার মধ্যে হলুদ রঙ্গের ফুল হয়। অশ্বগন্ধা গাছ চেনার সুবিদার্থে অশ্বগন্ধা গাছের ছবি নিচে দিয়ে দেওয়া হলো। ভাল করে ছবিগুলো দেখলেই খুব সহজেই অশ্বগন্ধা চিনতে পারবেন।



এতে টমেটোর মত লাল রঙের ফল হয়। এটাকে অনেকে শীতকালীন চেরি ফলও বলে। ঘোড়ার মূত্রের গন্ধ যদি আপনার কাছে পরিচিত হয়ে থাকে এই গাছটির পাতা সেদ্ধ করার পর আপনি অবিকল একই গন্ধ পাবেন।
অশ্বগন্ধা কোন রোগ বা সমস্যা হলে খাবেনঃ
মানুষ যখন কোন ধরনের ছোট বা বড় সমস্যায় পরে ঠিক তখনই মানুষ এর সমাধান খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ঠিক একই ভাবে শারীরিক নানান সমস্যার সমাধানে অশ্বগন্ধাকে এক মহৌষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যদিও অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। ঠিক কোন ধরনের সমস্যায় বা রোগে আক্রান্ত হলে আমরা অশ্বগন্ধা খেতে পারি চলুন এখন তা জেনে নিই।

👉 যদি আপনি আপনার পেশীতে শক্তি বৃদ্ধি করতে চান, খেতে পারেন এই অশ্বগন্ধা।
👉 মনোবল বৃদ্ধি করতে অশ্বগন্ধা অনেক সহায়তা করে।
👉 অনিদ্রা থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকরী সমাধান হচ্ছে অশ্বগন্ধা।
👉 যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এক জাদুকরী ঔষধ অশ্বগন্ধা। আপনি যদি যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও তারুন্য ধরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়া অনেক জরুরী।
👉 মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে খেতে পারেন এই অশ্বগন্ধা।
👉 ডায়াবেটিক সমস্যায় বা ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে নিয়মিত খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
👉 থাইরয়েড থেকে প্রতিকারে বা শরীরে থাইরয়েডের প্রভাব কমাতে অবশ্যই অশ্বগন্ধা খান।
👉 হতাশা বা দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রান পেতে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়মিত অশ্বগন্ধা খেতে পারেন।
👉 শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা দূর করতে খেতে পারেন অশ্বগন্ধা।
👉 চুল ঝলমলে করতে এবং চুলের প্রোটিন হিসেবে অশ্বগন্ধা খেতে পারেন।
👉 শরীরে যদি কোন ক্ষত স্থান হয় তা দূর করতে অনেক বেশী সাহায্য করে অশ্বগন্ধা।
👉 ঠান্ডাজনিত সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে অশ্বগন্ধা খেতে পারেন।
👉 হার্টের সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে এবং হার্ট সুস্থ রাখতে অবশ্যই অশ্বগন্ধা খান।
অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম বা অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন?
শরীরের নানা ধরনের সমস্যার জন্য আমরা অশ্বগন্ধা খেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা সবাইকি সঠিকভাবে অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম জানি? বাজারে আমরা সাধারনত অশ্বগন্ধা পাউডার, ট্যাবলেট কিংবা মুল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেহেতু অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে সেহেতু অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম অবশ্যই জানা উচিৎ। নিম্নে অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন এখন জেনে নেয়া যাক অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেঃ

👉 যদি আপনি ট্যাবলেট খেতে পছন্দ করেন তাহলে আপনাকে প্রতিদিন রাতে শুধু একটি অশ্বগন্ধা ট্যাবলেট খেতে হবে। আর এতেই আপনি যথাযথ সমাধান পাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সমস্যার।
👉 যদি আপনি অশ্বগন্ধা পাউডার খেতে চান, সেক্ষেত্রে প্রতিরাতে এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে ৩-৪ চামুচ অশ্বগন্ধা পাউডার ভালভাবে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। চাইলে এই মিশ্রনের সাথে মধু মিক্স করতে পারেন। এতেও আপনি আপনার যথাযথ শারীরিক সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
👉 যদি আপনি অশ্বগন্ধার মূল খেতে চান তবে প্রথমে তা ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর তা ভালভাবে সিদ্ধ করে এর পানিটুকু ছেকে সেই পানিটুকু খেয়ে নিতে পারেন। এটি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। তবে রাতে খেলে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
অশ্বগন্ধার ক্ষতিকর দিক বা অশ্বগন্ধার অপকারিতাঃ
👉 অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই বিদ্যমান। অশ্বগন্ধার যেমন নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে পাশাপাশি এর কিছু অপরকারিতাও রয়েছে। সাধারনত অশ্বগন্ধা খাওয়ার কারনে শরীর বেশীরভাগ সময়ই উষ্ণ থাকে।
👉 যদি আপনি দীর্ঘদিন যাবত অশ্বগন্ধা ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে আপনার শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখে দিতে পারে। যেমন গ্যাস্ট্রিক, আলসার কিংবা বমি বমি ভাব হতে পারে।
👉 মাঝে মাঝে অশ্বগন্ধা শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পক্ষান্তরে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য কিছু কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা যেতে পারে।
👉 গর্ভবতীদের গর্ভপাত ঘটাতে অশ্বগন্ধা সাহায্য করে। তাই গর্ভবতীদের এটি ব্যবহার করার কারনে কিছু জটিলতা দেখা দেয়। আর এই জন্য গর্ভবতীদের অবশ্যই এটি গ্রহন থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
👉 অশ্বগন্ধা খাওয়ার কারনে রক্তে প্লাটিলাস কমে যায়। যারা এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা অবশ্যই এটি এড়িয়ে চলবেন। এছাড়াও নিয়মিত অধিক পরিমান অশ্বগন্ধা খাওয়ার কারনে ঘুমের পরিমান অনেক বেড়ে যায় যা আমাদের দৈনন্দির কাজ কর্মে কিছুটা বাধা বিঘ্ন ঘটায়।

👉 অশ্বগন্ধা নিয়মিত খাওয়ার কারনে খাবারে কিছুটা অরুচি হয় এবং সাথে বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
👉 মাঝে মাঝে দেখা যায় অশ্বগন্ধা নিয়মিত খাওয়ার কারনে শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে যায়। যদি কারো এমনটা হয়ে থাকে তার অবশ্যই অশ্বগন্ধা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
👉 অশ্বগন্ধা খাওয়ার কারনে রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস হয়। একই সাথে অশ্বগন্ধা রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে। যার কারনে নানান ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে।
আমাদের আজকের আয়োজন এইটুকুই। আশা করি অশ্বগন্ধা কি এবং অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন, অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম এবং অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা যথাযথভাবে ব্যক্ত করতে পেরেছি। যদি আপনারা ওষুধি গাছ নিয়ে আরও জানতে চান অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানান। পরবর্তিতে ওষুধি গাছ নিয়ে ধারাবাহিক পোষ্ট দেয়ার আশা রাখছি। আমাদের BD Health ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সেই সাথে আমাদের অন্যান্য পোষ্টগুলো ভিজিট করার বিশেষ অনুরোধ রইলো।
অশ্বগন্ধা নিয়ে আমাদের আরো পোষ্ট পড়ুনঃ
নিয়মিত অশ্বগন্ধা খাওয়া উচিত কেন জানেন?
অশ্বগন্ধার এই গুণগুলির কথা জানতেন?