হাঁপানি রোগীর খাবার-দাবার

0
474
হাঁপানি রোগীর খাবার,হাঁপানি রোগী,হাঁপানি রোগ

হাঁপানি রোগীর খাবার-দাবারে সতর্ক থাকতে হয়। সাধারণ পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহণ করতে হয়। হাঁপানির সাথে অ্যালার্জির সম্পর্ক থাকায় যেসব খাবারে রোগীর অ্যালার্জি আছে খাবার তালিকা থেকে সেগুলো বাদ দেয়া উচিত। কী কী খাবার থেকে অ্যালার্জি বা হাঁপানি হতে পারে তার তালিকা অনেক দীর্ঘ। যেমন; ডিম, চিংড়ি মাছ ও গরুর গোশত থেকে অ্যালার্জি হতে পারেÑ এ তথ্য বহুল প্রচলিত। এছাড়া যেসব খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে ইলিশ মাছ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, কলা, পুঁইশাক, ডাল, গমের তৈরি খাবার, চাল, কমলা লেবু, আপেল, আঙ্গুর, তরমুজ, শসা, কাজুবাদাম, চীনাবাদাম, সজিনাডাঁটা, মুলা, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, ওলকপি, চকোলেট, গুড়, মধু, দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি খাবার প্রভৃতি। এখানে মনে রাখা দরকার যে, সব খাদ্য থেকে সবার অ্যালার্জি নাও হতে পারে।

ব্যক্তি ভিন্নতায় বিভিন্ন খাদ্যে বিভিন্ন জনের অ্যালার্জি হতে পারে। একই ধরনের খাবারে যে সবারই অ্যালার্জি হবে এমন কোনো কথা নেই। যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার খেলেই হাঁপানি রোগীর কষ্ট বাড়ে। তাই হাঁপানি-আক্রান্ত রোগীরা সহজেই বুঝতে পারেন তার কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে। তাই যেসব খাবারে যার অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার এড়িয়ে চললে তার কষ্ট কম হবে। হাঁপানি রোগীর খাবার হবে পুষ্টিকর, সুষম এবং হাল্কা ধরনের। লাল-হলুদ ফল, শাকসবজি হাঁপানি রোগীর ভালো খাবার। কারণ এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন থাকে, যা ফুসফুসকে শক্তিশালী করে।

ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ সমৃদ্ধ খাবার খেলে ফুসফুস ভালো থাকে। এজন্য সবুজ ফল ও শাকসবজিতে যেমন ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়, তেমনি ভিটামিন ‘ই’ পাওয়া যাবে মারজারিন, সয়াবিন, অলিভ অয়েল ইত্যাদিতে। হাঁপানি রোগীদের অতিরিক্ত মসলা, ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার, কিংবা এসিডজাতীয় খাবার, যা দ্বারা তার কষ্ট বাড়ে তা পরিহার করা উচিত। শিশুদের, যাদের হাঁপানি রয়েছে, তাদের গরুর দুধ, গুঁড়ো দুধ না খাওয়ানোই ভালো। শিশুদের ক্যালোরির চাহিদা বেশি। তাই তাদের বেশি পরিমাণে শর্করা ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। এজন্য শিশুর খাবারের ব্যাপারে মাকেই বেশি যতœবান হতে হয়। শিশু যাতে বেশি রোগা হয়ে না যায় বা বেশি মোটা হয়ে না যায়, সে ব্যাপারে মাকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ঠিক সময় নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। রাতের খাবার পেটভরে না খাওয়াই ভালো। ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেতে হবে। রোগীরা রাতে পেটভরে খাওয়ার ফলে রাতে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। বিশেষভাবে আমরা যারা ভাত খেতে অভ্যস্ত, তাদের মনে রাখতে হবে যে, ভাতের শর্করা পাকস্থলীতে গ্যাসের সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট বাড়ে।

আরও পড়ুনঃ   কেমন করে বুঝবেন আপনার যক্ষ্মা হলো কিনা?

তাই রাতের খাবার হাল্কা হওয়া উচিত। একই কারণে রাতে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। হাঁপানি রোগীরা রাতে তেল ও ঘিয়ে ভাজা মুখরোচক খাবার খাবেন না। এছাড়া রাতে চর্বিযুক্ত গুরুপাক খাবারও বর্জন করতে হবে। খাবার গ্রহণে সংযত হলে হাঁপানি রোগীর কষ্ট অনেক কম হবে। হাঁপানি রোগীদের কঠিনভাবে ধূমপান বন্ধ করতে হবে এবং পরোক্ষ ধূমপানের পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। তাছাড়া তাকাম, জর্দা, গুটখা, খৈনি, পানমসলা ইত্যাদি খাবারও হাঁপানি রোগীদের জন্য নিষিদ্ধ। কৃত্রিম রঙ মেশানো খাবারও তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাছাড়া প্যাকেটজাত খাবার যাতে প্রিজারভেটিভ দেয়া থাকে, সেসব খাবারও পরিহার করতে হবে।

ওয়াইন, বিয়ার, হুইস্কি, জিনজাতীয় অ্যালকোহল, জ্যাম, জেলি, সস খাওয়া বাদ দিতে হবে। আচার ও চাটনি না খাওয়াই ভালো। কারণ এগুলো কাশি বাড়িয়ে দেয়। কোল্ড ড্রিঙ্কস, ফ্রিজে রাখা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চকোলেট, স্যালাত, পটেটো, চিপস, নোনতা বিস্কুট খাওয়া নিষেধ। মোল্ড ও ঈস্ট যেসব খাবারে ব্যবহার করা হয়; যেমন পাউরুটি, কেক, ভিনেগার ইত্যাদি খাবার হাঁপানি রোগীদের বর্জন করতে হয়। কারণ এগুলো খেলে অ্যালার্জি হতে পারে। অতিরিক্ত চা, কফি হাঁপানি রোগীদের না খাওয়াই ভালো। খাবার নিয়ন্ত্রণে হাঁপানি রোগীর হাঁপানি সেরে যাবে এমন নয়, বরং হাঁপানির কষ্ট কমানোর জন্য খাবার নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

লেখক : ডা. আবু আহনাফ

হোমিওপ্যাথিক অ্যাজমা বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × five =