গত পর্বে ইসলামের আলোকে হস্তমৈথুন থেকে মুক্তি পাবার উপায় আলোচনা করেছি। এই পর্বে আমি মাত্র একটা পয়েন্ট আলোচনা করব বায়োলজিক্যাল সাইন্সের আলোকে । আর এই পয়েন্টটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই বিস্তারিত আলোচনা করছি।
হস্তমৈথুনের নেশা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আপনাকে টাইম ম্যানেজমেন্ট করা শিখতে হবে। আর কলকব্জার ঘড়ি দেখে টাইম ম্যানেজ করলে হবে না বরং টাইম ম্যানেজ করতে হবে আপনার বায়োলজিক্যাল কন্ডিশন অনুযায়ী । এই বিষয়েই আমি আলোচনা করব ।
Biological Body Clock ও টাইম ম্যানেজমেন্ট :
আমাদের শরীরে একটা বিল্ট-ইন ঘড়ি আছে যা আমাদের Physically , mentally এবং behaviorally প্রভাবিত করে। একে ‘Internal Biological time-keeping system ‘ বলে। আমাদের ব্রেনের হাইপোথ্যালামাসে Suprachiasmatic nucleus (SCN) নামক একটা অংশ আছে । এই অংশটিই মূলত আমাদের ইন্টারনাল ক্লককে নিয়ন্ত্রণ করে। [1]
যেমন- Body Clock অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টায় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয়, আবার ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন হয়ে যায় । এইভাবে Body Clock এর পুরো ২৪ ঘন্টার একটা চার্ট আছে যেখানে প্রতি ঘন্টায় আমাদের শরীরের রক্তচাপ কিরকম থাকে, ব্লাড প্রেসার কেমন থাকে, হরমোনাল ব্যালেন্স কেমন থাকে ইত্যাদি বর্ণনা করা থাকে।
তেমনিভাবে Body Clock অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সময় পুরুষের যৌন উত্তেজনা খুব বৃদ্ধি পায় । এই ঘটনাটা কখন ঘটে তা আপনার জানতে হবে এবং সেই সময় খুব সর্তক থাকতে হবে কারণ এই সময়টাতে হস্তমৈথুন করার পসিভিলিটি বেড়ে যায় । আর এই সময়টা হল সকাল ৮টা থেকে ৯ টা । কারণ এই সময় পুরুষের যৌন হরমোন Testosterone এর নিঃসরণ বেড়ে যায় ।[2]
স্পার্মের সংখ্যাও বেড়ে যায় এই সময় । এছাড়া রাতে বিশ্রাম নেওয়ার কারণে পুরুষাঙ্গে Blood Circulation বেড়ে যায় ফলে সকালের এই সময়টাতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ Sexually arouse হয় । [3]
সেক্স থেরাপিস্টরা সকালের এই সময়টাকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার সেরা সময় বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ হল এই সময়ই পুরুষ সবচেয়ে বেশি Horny হয়ে যায় অর্থাৎ পুরুষের Sexual Urge খুব পাওয়ারফুল হয়।
সেক্স থেরাপিস্ট Arlene Goldman এই সম্পর্কে বলেন —
” Many men are at their horniest first thing in the morning. ” [3]
আর এইজন্যই সকালে একজন পুরুষ একটা তীব্র চাপ অনুভব করে এবং তার শরীর তাকে Ejaculate (বীর্যপাত ) করতে তীব্র ভাবে Force করে অসতর্কতার কারণে যার ফলাফল হতে পারে হস্তমৈথুন।
সকালের এই ঘটনা কিন্তু সব বয়সের পুরুষদের হয় না। মূলত যারা মাত্র বালেগ হয়েছে বা যাদের বয়স ১৬ এর কম তারা এই চাপটা অনুভব করে না বা খুব কম করে । কারণ হল অল্প বয়সে Testosterone এর নিঃসরণ কম হয় । পুরষের দেহে Testosterone এর নিঃসরণের পরিমাণ বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এবং ৩০ বছর বয়সের পর প্রতি বছর ২% করে এই হরমোনের উৎপাদন কমতে থাকে। [4]
১৭-১৮ বছর হলেই একজন ছেলে Danger Zone এ প্রবেশ করে।
আর ছেলেরা যখন এই জোনে প্রবেশ করে তখন হঠাৎ এই চাপ অনুভব করে, ফলে অনেকেই ঝামেলায় পড়ে গিয়ে হস্তমৈথুনের পথটাকেই বেছে নেয় ।
এখানে আরেকটা বিষয় বলা দরকার যে, অনেকে আবার সকালের এই সময়টাতে প্রেসার অনুভব করে না কারণ তাদের বডি ক্লক ন্যাচারালি কাজ করে না। যেমন ধরুন কেউ যদি সারা রাত জাগে তাহলে সকালে তার ব্রেন খুব ক্লান্ত হবে , তখন ব্রেনের প্রধান কাজ হবে শরীরকে বিশ্রাম দেয়া । রাত জাগার কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয় , ফলে সকালে সে এই প্রেসারটা পায় না আর এইসব কারণে রাত জাগাও ঠিক না । কিন্তু অন্য একটা সময় এই প্রেসারটা ঠিকই উঠে আর সে সময়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় রাতে।
সকালবেলার এই সময়টা (অথবা যে সময়টাতে আপনি নিয়মিত প্রেসার অনুভব করেন সেই সময়টা )
একা কাটাবেন না
এই সময়টা ভাল বন্ধুদের সাথে কাটাতে পারেন,
খেলাধুলা করতে পারেন ,
আর যদি একাই থাকতে হয় তাহলে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, ইসলামিক লেকচার শুনতে পারেন কিংবা বই পড়তে পারেন । কিন্তু এই সময়টাতে একাকী থেকে অন্য কিছুতে মনোযোগ দিতে পারবেন না কারণ আপনার ব্রেন আপনাকে Ejaculate করতে ফোর্স করবে । কিন্তু বন্ধুদের সাথে থাকলে ব্রেনকে অন্যান্য কাজে মনোযোগ দিতে হবে ফলে Ejaculation এর দিকে ব্রেনের ফোকাসিং কমে যাবে আর আপনি প্রেসারটা টেরই পাবেন না!
সকালের সময়টা এইভাবে কাটিয়ে দেবার পর দুপুরে আর এই প্রেসার ফিল করবেন না, এরপর যুহরের স্বলাত পড়বেন ।এর কয়েক ঘন্টা পর আসরের স্বলাত ,আসরের স্বলাতের ১ ঘন্টা পর মাগরিবের স্বলাত , মাগরিবের দেড় ঘন্টা পর এশার স্বলাত । এতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পুরোপুরি ঠিক থাকবেন ,কোন ইন্টারনাল ফোর্স অনুভব করবেন।
এশারের পর সাধারণত প্রেসার আসে না কিন্তু যদি আপনি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হন ,কোন বিষয় নিয়ে যদি Depression এ থাকেন তাহলে আপনি হয়তো হস্তমৈথুন করতে উদ্যত হতে পারেন।এছাড়ারাতে ঘুমানোর সময় পুরুষদের যৌনাঙ্গ কয়েকবার erected হয়। একে বলা হয় ‘Nocturnal Penile Tumescence’ । এই erection এর কারণেও অনেকে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং হস্তমৈথুন করে। তাই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াই ভাল হবে আপনার জন্য।
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, এশার ও ফজরের ওয়াক্তের মাঝে সময়ের পার্থক্য খুব বেশি -প্রায় ১০ ঘন্টা, তেমনি ফজরের ও যুহরের ওয়াক্তের মাঝে সময়ের পার্থক্যটাও বেশি– প্রায় ৬ ঘন্টা । তাই এই দুইটা সময়ে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে সবচেয়ে বেশি কারণ শয়তান এই দুই সময়ে আপনাকে বেশি বেশি কুমন্ত্রণা দেয়ার যথেষ্ট সময় পাবে এবং আপনাকে অশ্লীলতার পথে পরিচালিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করবে ।
একটা কথা মনে রাখবেন , যেভাবেই হোক ৮টা থেকে ১০টা -এই সময়টাতে নিজেকে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত রাখবেন ।
গত পর্বে ইসলামের আলোকে যেসব উপায় বলা হয়েছে সেসব উপায়ের সাথে যদি এই পয়েন্টটাকে আপনি Combine করে ফলো করতে পারেন তাহলে হস্তমৈথুন থেকে মুক্তি পাওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর আপনি যদি ইসলামিক উপায়গুলো বাদ দিয়ে শুধু এটা ফলো করেন তাহলে কখনোই আপনি সফল হতে পারবেন না।
আল্লাহ্ তাআলা আমাদের হস্তমৈথুনের ফিতনা থেকে হিফাজত করুন । আমীন ।
[ শেষ পর্বে একটা খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করেছি যে তালিকা মেনে চললে আপনি খুব উপকৃত হবেন । এছাড়া ছোট ছোট কিছু বিষয় আলোচনা করা , ইনশা’আল্লাহ্ ]
হস্তমৈথুন থেকে মুক্তি লাভের উপায় : পর্ব-০১
তথ্যসূত্র :-
[1] How it works: Amazing answers to curious questions , vol-01 , page-16
[2] Timing is everything: What our body clock tells us
[3] His Favorite Time to Have Sex
[4] Hitting Your Peak: Physical Health
এছাড়া পড়তে পারেন–
হস্তমৈথুনের অপকারিতা