সন্তান চান? জেনে নিন শুক্রাণু বৃদ্ধির ৮টি উপায় এবং শুক্রাণুর সক্ষমতা বাড়ানোর ১০টি টিপস

0
15328
শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায়
শরীরের পুষ্টির জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য। পুষ্টিকর খাদ্য শুধুমাত্র আপনার শারীরিক স্বাস্হ্য সুস্হ বজায় রাখে তা নয় যৌন স্বাস্হ্যের ওপর এর প্রভাব পড়ে। আমরা এখানে এমন কিছু খাবারের কথা বলবো যা শরীরের শক্তি যোগানের সাথে শুক্রাণুও বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে।
আপনি কি নতুন অতিথি পেতে চান, যে আপনার ঘর আলো করে আসবে? যার হাসি-কান্নায় ভরে তুলবে আপনার মন, এক সময় বাবা-মা বলেও ডাকবে সে। আর আপনার অপূর্ণ জীবনকে করবে পূরণ।
যদি সেটাই চান, তাহলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। জেনে রাখুন সন্তান চাইলে শুধুমাত্র নারীদের খাবারের ওপরে বিশেষ নজর দিলেই চলে না, পুরুষদেরও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য ভালো খাবার খেতে হবে।
গর্ভধারণের সম্ভাবনা যদি উন্নত করতে চান, তাহলে উন্নত জীবনধারা বেছে নিতে হবে। সঠিক আহারই, উর্বরতা বৃদ্ধিতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুরুষদের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ শুক্রাণু সমস্যায় ভোগেন। কাজের চাপ, মানসিক চাপ, জীবনধারা এবং বিশেষত ভুল খাদ্যাভাস পুরুষদের অনুর্বরতার কারণ হতে পারে।
তবে এই ধরনের সমস্যা হ্রাস করা যেতে পারে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মাধ্যমে। এভাবে উর্বরতার উন্নতির পাশাপাশি ডিএনএ’র স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়, যা আপনার সন্তানের ওপর বর্তাবে।
এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাদ্য আপনার কামশক্তি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করতে পারে।
আসুন তাহলে জেনে নেয়া  যাক, কী কী খাবারে পুরুষের উর্বরতা বাড়বে। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল;
ঝিনুক: এটি দস্তা সমৃদ্ধ খাবার, তাই শুক্রাণু এবং টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বৃদ্ধিতে খুব কার্যকর। দস্তার অভাব অধিকাংশ লোকের বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ হয়ে থাকে।
পানি: পানি শুধু প্রাণ বাঁচায় না। এটা আপনার উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বেশি করে পানি খেলে আপনার বীর্যপাতের ভলিউম বৃদ্ধি হয়, যা স্বাস্থ্যসম্মত শুক্রাণুকে উৎসাহিত করে।
কুমড়ো বীজ: কুমড়ো বীজে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, যা যৌন অঙ্গে রক্ত প্রবাহ উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এগুলো কাঁচা খাওয়াই ভাল। কারণ রান্না বা প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি রোধ করে। এতেও প্রচুর পরিমাণে দস্তা আছে।
ডাল: ডাল প্রাকৃতিক ফলিক অ্যাসিডের অন্যতম উৎস, যা একটি সুস্থ শুক্রাণুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যে সব পুরুষের শরীরে কম ফোলেট থাকে তাদের শুক্রাণুর মধ্যে ক্রোমোসোমাল খুঁত (খুব কম বা খুব বেশি) হওয়ার আশংকা থাকে।
ডালিম: ডালিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা রক্তের প্রবাহ বাড়ায়। এ ফলটি শুক্রাণুর মান উন্নত করে। এটা আপনার কামশক্তিও উন্নত করবে।
ডার্ক চকলেট: এতে শুক্রাণুর গণনা এবং তার গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য দারুণ কাজ করে। এটি অ্যামিনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। মনে রাখবেন যত কড়া চকলেট হবে, তত ভাল ফল পাওয়া যাবে।
টাটকা ফল ও সবজি: এতে এ, বি, সি এবং ই ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলে এই ধরনের খাবার খেলে উর্বরতা বাড়ে।
আখরোট: প্রতিদিন এক মুঠো আখরোট খেলে শুক্রাণুর উন্নত হয়। সেই সঙ্গে এর সক্রিয়তাও বাড়ে।
শুক্রাণুর সক্ষমতা বাড়ানোর ১০ টিপস

একসময় সন্তান না হলে তার জন্য দায়ী করা হতো নারীকে। কিন্তু এখন জানা গেছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ বন্ধ্যাত্বের শিকার। এর মধ্যে ৩০-৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী পুরুষরাই। সন্তান জন্মাতে হলে যে শুক্রাণুর দরকার হয় তারও গুণমান ভালো হওয়া চাই। শুক্রাণুর গুণগত মানের হ্রাস ও শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া সারা বিশ্বজুড়েই এখন বিজ্ঞানীরদের চিন্তার বিষয়। শুক্রাণু নিয়ে সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উপায় আবিষ্কার করছেন প্রতিনিয়ত। এমনই কিছু উপায় নিচে দেয়া হলো।

আরও পড়ুনঃ   সহজ পরিক্ষায় জেনে নিন সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে? জেনে রাখুন কাজে লাগবে!

১. `লাল` সব্জী ভক্ষণ: গত মাসে ওহিও ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী খাদ্যে লাইকোপেনের উপস্থিতি ৭০% অবধি স্পার্ম কাউন্ট বাড়িয়ে তুলতে পাড়ে। শুক্রাণুর গতি এবং ঘনত্ব বাড়িয়ে তোলে। লাইকোপেন লাল সব্জী যেমন টম্যাটো, স্টবেরি, গাজর, চেরি ও লাল ক্যাপসিকমের মধ্যে পাওয়া যায়।

২. কোলে ল্যাপটপ রেখে কাজ না করা: দীর্ঘক্ষণ ধরে কোলে ল্যাপটপ রেখে কাজ করলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। কমে যায় শুক্রাণুর গতি। শুক্রাণুর ডিএনএ-তে পরিবর্তন দেখা যায়। ল্যাপটপের সঙ্গে যদি WiFi কানেকশন থাকে তাহলে এই সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

৩. কম সময় ধরে সাইক্লিং করা: সাইকেল চালানো একটি উন্নত মানের ব্যায়াম হলেও দীর্ঘক্ষণ ধরে সাইকেলে বসে থাকলে শুক্রাণুর উপর তার ক্ষতিকারক প্রভাব পরে। ২০০৯ সালে স্পেনের একটি স্পোর্টস মেডিসিন সংস্থার প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ সাইকেলে বসে থাকলে স্পার্মাটোজোয়ার সাধারণ আকার নষ্ট হয়। গড়ে ৩৩ বছর বয়সী স্পেনের ১৫ জন ট্রায়াটলিথসের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যাঁরা সপ্তাহে ৩০০ কিলোমিটার সাইক্লিং করেন তাঁদের ফার্টিলিটি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

৪. বেশি গরমের মধ্যে না থাকা: ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস শুক্রাণু তৈরি হওয়ার আদর্শ উষ্ণতা। এই উষ্ণতা দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতার থেকে কিছু কম। ক্যালিফোরনিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় টানা তিন বছর গবেষণা করে দেখেছে যে সমস্ত পুরুষরা হট বাথ নেওয়া বন্ধ করেছেন তাঁদের স্পার্ম কাউন্ট গড়ে ৫০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

৫. কফি খান, কিন্তু অল্প: ২০০৩ সালে ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৭৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন কফি স্পার্মের মোবিলিটি বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, দিনে তিন বা ততোধিকবার কফি খেলে স্পার্মের জেনেটিক মিউটেশন ঘটে। ফলে শুক্রাণুর ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

৬. ধুমপান হতে বিরত থাকুন: এখনাকার সময় সবাই যানে ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে ধুমপান শুধুমাত্র মোটের উপর স্বস্থ্যের জন্য ঝুকিপুর্ন নয়, এটি আপনার সন্তান জন্মদান ক্ষমতাও ধ্বংস করতে পারে। এক স্টাডিতে দেখা গেছে, যেসকল পুরুষ ধুমপান করেন তাদের বীর্যে শুক্রানুর পরিমান যারা ধুমপান করেননা তাদের তুলনায় ১৭% কম।
৭. মদ কিংবা অন্য মাদক পরিহার করুন: অতিরিক্ত মদ্যপান অথবা মাদকের ব্যবহার উর্বরতা নষ্ট করতে পারে। যেসকল পুরুষ দিনে ৪ গ্লাসের বেশি মদ্যপান করে থাকেন তাদের শুধুমাত্র সন্তান জন্মদান ক্ষমতা নয় – মোটের উপর যৌনক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। পাশাপাশি অধিক মাদক গ্রহন পুরুষের লিঙ্গের দৃঢ়তা ধরে রাখা ব্যহত করে যা স্থায়ী যৌন অক্ষমতায় রূপ নিতে পারে।
৮. নিয়মিত যৌনমিলন করুন: আপনি হয়তো মনে করছেন যৌনমিলন করা সন্তান প্রত্যশি যুগলের জন্য ভাল জিনিস, কিন্তু অনেক যগলের ভুল ধারনা আছে যে মাত্রতিরিক্ত শাররীক মিলন করলে বীর্যে শুক্রানুর পরিমান কমে যায়। তথ্যটি একসময় সত্য ছিল – কিন্তু বর্তমানে সুঠাম স্বাস্থ্যবান (মোটা নয়) পুরুষের ক্ষেত্রে এটি ভুল ধারনা বলে প্রমানিত হয়েছে। একসময় ডাক্তার এমন পরামর্শ দিতেন যে, যেসকল পুরুষের শুক্রানু সংখ্যা কম তারা কিছুদিন শাররীক মিলনে বিরতি দিয়ে শুক্রানু জমা করে শাররীক মিলন করতে পারেন। যদিও অনিয়মিত যৌনমিলন হয়তো সংখ্যায় কোনক্রমে উন্নত হয়, একই সাথে শুক্রানুর গুনগত মানে এর নেগেটিভ ইফেক্ট আছে। যখন একজন পুরুষ নিয়মিত যৌনমিলন করে তখন প্রতিবার বীর্যস্থলনের সময় সে তার ক্রুটিপুর্ন শুক্রানুর একটা অংশ নিষ্কৃত করে।
৯. সকালে যৌন মিলন করুন: সকালবেলা যৌনমিলন করলেও লাভবান হবার সম্ভাবনা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে সকালবেলা প্রাকৃতিক ভাবেই বীর্যে শুক্রানু সংখ্যা সর্বোচ্চ পরিমানে থাকে।
১০. এক মুঠো আখরোট: প্রতিদিনের ডায়েটে একমুঠো আখরোট খেলে বাড়বে আপনার শুক্রাণুর সংখ্যা। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েন্ডি রবিন্সের দাবি, পুরুষের উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে আখরোট। অধ্যাপক ওয়েন্ডির নেতৃত্বে ২০১২ সাল থেকে এক দল গবেষক দাওয়াই হিসেবে আখরোট নিয়ে শুরু করেন তাঁদের গবেষণা। তাঁদের দাবি, প্রতিদিন যদি অন্তত ৭৫ গ্রাম করে আখরোট খাওয়া যায় তবে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কমবে। কারণ আখরোট বাড়িয়ে দেবে স্পার্ম কাউন্ট বা শুক্রাণুর সংখ্যা। শুধু শুক্রাণুর সংখ্যাই নয় তার কার্যকারীতা, সক্রিয়তাও বাড়িয়ে দেয় আখরোট। তবে এর জন্য আখরোট খেয়ে যেতে হবে টানা তিন মাস।

আরও পড়ুনঃ শুক্রাণু বৃদ্ধির উপায়? যে দম্পতিরা সন্তান নিতে চাইছেন তারা রোজ খান এই ১৫টি খাবার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 4 =