রোগী গিয়েছে সিঙ্গাপুরে, মাথার খুলি ছিল ঢাকার অ্যাপোলোতে!

0
911
মাথার খুলি

জাকিয়া আহমেদ:  সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রধান ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৩ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও তার মাথার খুলি রয়ে গিয়েছিল ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। সিঙ্গাপুরের গ্লেনইগলস হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিষয়টি নজরে আনার পরে ১৩ দিন পর সেই খুলি আরেক রোগীর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, নিউরো সার্জারির রোগীর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথার খুলি বা খুলির অংশ অপসারণের প্রয়োজন হলে তা শরীরের সঙ্গেই সংযুক্ত রাখতে হয় বা হাসপাতালের ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তরের সময় তা রোগীর সঙ্গে দিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে খুলি পাঠানোর বিষয়টি হয়তো ভুলেই গিয়েছিল ঢাকার অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ!

দেশের প্রথমসারির এই বেসরকারি হাসপাতালটির কাছে এই অবহেলার বিষয়ে জানতে চেয়ে দফায় দফায় ফোন করলে প্রথমে কেউ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগামীকাল ২৯ জানুয়ারি রবিবার এ বিষয়ে জানাবেন তারা।

গত ১১ জানুয়ারি ঢাকার পান্থপথের কাছে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন ফটো সাংবাদিক জিয়া ইসলাম। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।সেখানেই তার মাথায় একটি জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয় এবং ব্রেনের সেই অপারেশনের কারণে খুলে রাখতে হয় তার মাথার খুলির বাম পাশটা। কিন্তু এরপরও অবস্থার উন্নতি না দেখে ১৩ জানুয়ারি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে জিয়াকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় সেখানকার গ্লিনইগলস হাসপাতালে।

জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি সেখানে জিয়া ইসলামের ফুসফুসে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেসময় সেখানকার চিকিৎসকরা অবগত হন যে ঢাকায়  জিয়ার মাথার খুলির বামপাশটা অপারেশনের সময় খুলে রাখা হলেও তা রোগীর সঙ্গে পাঠানো হয়নি। সিঙ্গাপুর থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালকে এ বিষয়ে বলার পর তারা জিয়ার মাথার খুলির একাংশ সিঙ্গাপুরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।পরে গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বকোণ সম্পাদক তসলিম চৌধুরীকে চিকিৎসার জন্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় জিয়ার মাথার খুলির ওই অংশটি তার সঙ্গে পাঠিয়ে দেয় অ্যাপেলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনঃ   খাগড়াছড়িতে ডাক্তারের অবহেলায় পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যু, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভাঙচুর

এদিকে মৃতদেহ আইসিইউতে রেখে টাকা আদায়, ওষুধ না দিয়ে ওষুধের দাম রাখা, এমনকি রোগী মারা গেলে সেই রোগীর মাথার খুলি পৃথক ভাবে তার স্বজনদের দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর এই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে।

অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে একইরকম আরেকটি অভিযোগ এনেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা। ফাতেমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই হাসপাতালে নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মা মারা গেলে তার খুলিও না জোড়া দিয়ে স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তারা রাজি না হওয়ায় পরে খুলি লাগিয়ে দিতে বাধ্য হয় তারা।

শুভ্রা জানান, ‘গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ আমার মাকে মাথায় ইনজুরি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অ্যাপোলোর চিকিৎসক ম্যাথিউ চেড্ডির অধীনে তার সার্জারি করা হয় ১৯ ডিসেম্বর। বেশ কয়েকদিন লাইফ সার্পোটে থাকার পর আমার মা গত ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাতে মারা যান। পরে ওখানকার একজন কর্মকর্তা আমাদের এসে বলেন, ‘আমার মায়ের মাথার খুলি উনারা আমাদের কাছে ‘হ্যান্ডওভার’ করবে। তখন আমরা রিঅ্যাক্ট করলে তারা খুলিটি মরদেহের মাথায় লাগিয়ে দেন।’

শুভ্রা বলেন, ‘আমাদের মা ফিরে আসবে না, কিন্তু অ্যাপোলোর এই বিষয়গুলো মানুষ জানুক, অ্যাপোলোতে চিকিৎসার বিষয়ে কয়েকবার ভেবে সিদ্ধান্ত নিক।’

এদিকে হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসার সময় আরও অনেক রকম অব্যবস্থাপনা দেখতে পান তারা। শুভ্রা বলেন, ‘নিউরো আইসিইউতে প্রতিদিন ভাড়া গুনতে হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে অথচ সেখানে রোগীর মাথার কাছে মাছি ঘোরে। আমার ভাই নিউরো আইসিইউতে মাছি কেন থাকবে প্রশ্ন  করলে হাসপাতালের অ্যাটেনডেন্ট ও কর্মীরা তাকে মাছি মারার  ব্যাট ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘এটা দিয়ে মাছি মারেন।’’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুভ্রা আরও বলেন, ‘স্যালাইন দেওয়া ছিল আমার মায়ের, কিন্তু স্যালাইন রোগীর শরীরে না গিয়ে নিচে পড়ছিল। আবার মৌখিকভাবে খিঁচুনির ওষুধ মাকে দেওয়ার কথা তারা বললেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগ পর্যন্ত তাকে সেটি দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে নেওয়া মেডিসিন লিস্টে তা দেখেছি। অথচ প্রতিদিন তারা আমাদেরকে বলে এসেছেন মাকে এই ওষুধটি দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুনঃ   টুথপেস্টের দিন শেষ!

শুভ্রা আরও অভিযোগ করেন, ‘সার্জারি করা চিকিৎসক কোনও পর্যবেক্ষণ না করেই ছুটিতে চলে গেছেন, সার্জারি করা চিকিৎসক দেখেন নাই যে তার রোগীর খিঁচুনি রয়েছে। পরে আরেক চিকিৎসকের কাছে জানতে পেরেছি, অপারেশনের পরে আমার মা খিঁচুনিতে মারা গেছেন।’

অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসা অভিজ্ঞতা বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে শেয়ার করেছেন আরও অনেকেই। খায়রুল বাসার মোহাম্মদ হক নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘অ্যাপোলো হাসপাতাল হাসপাতাল ও চিকিৎসা সেবার নামে ভন্ডামি করছে। কতিপয় ভারতীয় অখ্যাত ডাক্তার আর বাংলাদেশের মেরুদণ্ডহীন চিকিৎসকরা অ্যাপোলোর সহায়ক। তাদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার যথেষ্ট এভিডেন্স রয়েছে আর তা নিয়ে আদালতে যাবো।’

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + 12 =