মেহেদি, মেহেদী, মেহেন্দী, মেন্দি। ইংরেজিতে হেনা, যা আরবি হিন্না حِنَّاء থেকে এসেছে যা এক ধরনের সপুষ্পক উদ্ভিদ, যার পাতা প্রাচীনকাল থেকে ত্বক, চুল, নখ, পশুর চামড়া ও পশম রঙিন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের পাতার সাথে অন্যান্য দ্রব্য মিশিয়ে আধা-কৃত্রিম পদার্থ তৈরি করা হয়, সেটাও মেহেদি নামেই পরিচিত। মেহেদির নানা প্রকার ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে । যেমনঃ
মাউতওয়াশ
এই মেহেদি দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন, মাউতওয়াশ। মেহেদি পাতা গুঁড়ো পানিতে গুলিয়ে নিন। এবার এটি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের ঘা দ্রুত ভাল করে থাকে এবং মুখ জীবাণুমুক্ত করে তোলে।
পা ফাটার সমস্যা
শীতকালে তো পা হরদম ফাটে। তবে কারো কারো বারো মাস পা ফাটার সমস্যা থাকে। এছাড়া চামড়া ওঠার সমস্যাও থাকে অনেকের। মেহেদিপাতা বেটে ফাটা জায়গায় পুরু প্রলেপ দিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে পা ফাটা প্রতিরোধ হবে।
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে
কার না ঘন কালো চুল পেতে ইচ্ছা করে। কিন্ত কাজের ব্যাস্ততার কারনে চুলের যত্ন ঠিক মত নেওয়া হয়ে ওঠে না। তাই চুল কালো করার সহজ উপায় হিসাবে গ্রহন করুন মাহেদি পাতার রস। মাহেদি পাতার রস ব্যবহারে আপনি সহজে পেতে পারেন ঘন কালো চুল।
পায়ের জ্বালাপোড়া রোধ করে
তাজা মেহেদি পাতা ভিনেগারে ভিজিয়ে এক জোড়া মোজার ভিতরে রেখে দিন। এবার এই মোজাটি পায়ে সারারাত পরে থাকুন। এটি পায়ের জ্বলাপোড়া কমিয়ে দিবে অনেকখানি।
মাথাব্যথা কমায়
মেহেদি গাছের ফুল মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। মেহেদি গাছের ফুল পেস্ট করে এর সাথে ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এটি কপালে অথবা ব্যথার স্থানে লাগিয়ে রাখুন। এছাড়া আপনি মেহেদি পেস্টও ব্যবহার করতে পারেন।
পুরোনো ক্ষত
পুরোনো ক্ষত, যেগুলো বারবার ফিরে আসে, এসব ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে মেহেদি। মেহেদিপাতা বেটে এ রকম ক্ষতে লাগিয়ে রাখুন।
অনিদ্রায়: মেহেদি ফুলের বালিশ করে নবাব বাদশাদের ঘুম পাড়ানোর ব্যবস্থা করতেন ইউনানি চিকিৎসকগণ। এর ফুলে আছে লাইলাকের (আধুনিক এক প্রকার প্রসিদ্ধ গন্ধ) গন্ধ।
টাক পরা রোধ করে
সরিষার তেলের সাথে কয়েকটি মেহেদি পাতা দিয়ে জ্বাল দিন। এটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাথার তালুতে ব্যবহার করুন। এটি টাক পড়া প্রতিরোধ করবে।
খুশকি দূর করে
খুশকি চুলের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই খুশকি দূর করতে মেহেদি বেশ কার্যকরী। সরিষা তেল, মেথি, মেহেদি পাতা সিদ্ধ একসাথে যোগ করে এটি চুলে ব্যবহার করুন। একঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। এটি খুশকি দূর করে চুলকে করে তুলবে ঝলমলে সুন্দর।
লোলচর্মে: যাঁদের গায়ের বা মুখের চামড়া কুচকে ঢিলে হয়ে গিয়েছে বা ঝুলে গিয়েছে, তাঁরা এই পাতার রস দিয়ে তৈরী তেল মাখলে (মুখের ক্ষেত্রে ঘৃতও মাখা যায়। অনেকটা স্বাভাবিক হবে।
ঘামচির জ্বালাপোড়া রোধ করে
মেহেদির পেস্ট পিঠ, ঘাড় এবং ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে লাগান। এটি ঘামচির চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করবে।
চোখ ওঠায়
অল্প কয়েকটা পাতা থেঁতো করে, গরম পানিতে ফেলে রেখে সেটা ছেকে সেই পানি চোখে ফোঁটা দিলে সেরে যায়। এমন কি যাঁদের চোখের কোণ থেকে পুজের মত পড়তে থাকে, এর দ্বারা সেটাও সেরে যাবে।
বাতের ব্যথা রোধ করে
বাত এবং বাতজনিত সবরকম ব্যথা দূর করতে মেহেদি তেল বেশ কার্যকর। ব্যথার স্থানে মেহেদি তেল ম্যাসাজ করুন। ভালো ফল পেতে এটি প্রতিদিন এক থেকে দুই মাস ব্যবহার করুন।
কানের পুজ
পাতার রস গরম করে ২ ফোঁটা করে কানে দিলে ৪। ৫ দিনে পূজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়; আবার অনেকে এই পাতার রস দিয়ে তৈরী তেলও ব্যবহার করতে দিয়ে থাকেন।
বলিরেখা দূর করতে
বলিরেখা দূর করতেও মেহেদির তুলনা নেই। ভাবছেন ত্বক লাল হয়ে যাবে কি না? মুখের ত্বকে মেহেদি ব্যবহারের নিয়মটি পুরো আলাদা। আপনার প্রতিদিনের ফেসপ্যাকে মিশিয়ে নিন কয়েক ফোঁটা মেহেদিপাতার রস। আর ফেসপ্যাক ১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না। নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা হবে বিলম্বিত।
সৌন্দর্য চর্চা/ নখকুনি দূর
সৌন্দর্য চর্চায় মেহেদি পাতার ব্যবহার আজ নতুন নয় । সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই এর ব্যবহার চলে এসেছে । হলুদ বাটো মেন্দি বাটো বাটো ফুলের মোও । বাঙ্গালী নারীর সৌন্দর্য চর্চায় অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান হল মেহেদি পাতা । মেহেদি ছাড়া মেয়েদের সাজনি পুরোটাই যেন বৃথা যায় । তারা হাতে মেহেদি দেওয়া ছাড়া তাদের রূপ চর্চা কল্পনা ও করতে পারে না ।সৌন্দর্য চর্চায় নখ ও হাত রাঙ্গাতে আবহমান কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে মেহেদি পাতা । আর বৈজ্ঞানিক ভাবে ও দেখা গেছে যে অনেকের নখকুনি হয় । তারা যদি দিনে দু বার নখে মেহেদি পাতা দেয় তাহলে নখকুনি দূর হয়ে যায় আর হাতে দিলে হাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি হাতের ত্বক ও মসৃন থাকে ।
কাধের ব্যথা
মেহেদি পাতার রস ও সরষের তেল মিশিয়ে ঘাড়ে মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়।
মুখে ও গলায় ক্ষত
পাতাসিদ্ধ পানি মুখে খানিকক্ষণ রাখতে হয়, যাকে বলে কবল ধারণ করা; এর দ্বারা এই দুটো সেরে যায়।
পানি পচা রোগ
পানি পচা রোগ সাধারণত নোংরা, জীবাণুযক্ত পানি লেগে এই রোগ হয়। আবার দীর্ঘক্ষণ পানিতে কাজ করলেও এ রোগ হতে পারে। এতে আঙুলের মাঝের অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতে মেহেদির প্রলেপ লাগিয়ে রাখলে ঘা ভালো হয়ে যায়।
শরীরের দুর্গন্ধে: গ্রীষ্মকালে যাঁদের ঘাম বেশি হয়ে গায়ে দুর্গন্ধ হয় তাঁরা বেণামূল (Vetiveria zizanioides) ও মেহেদি পাতা সিদ্ধ জলে স্নান করলে উপকার পাবেন।
শুক্র মেহ রোগে
মেহেদি পাতার রস এক চামচ দিনে দুইবার পানি বা দুধ এবং তার সঙ্গে একটু, চিনি মিশিয়ে খেলে ১ সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
শ্বেত প্রদর
উপরিউক্ত নিয়মে ব্যবহার করলেও উপশম হয়। এর দ্বারা যদি কোষ্ঠকাঠিন্য আসে তবে কোষ্ঠ পরিষ্কারক যেমন ঈসবগুলের ভূষি খাওয়া ভাল।