মানব জীবনে হারাম খাদ্য দ্রব‍্যের প্রভাব : চাই ইসলামী সচেতনতা

0
660
হারাম খাদ্য দ্রব‍্যের প্রভাব

ইংরেজীতে একটি কথা আছে “Health is wealth” অর্থাৎ স্বাস্থ‍্যই সম্পদ। সুতরাং এই স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রত‍্যেকেরই উচিত। ইসলামের দৃষ্টিতেও স্বাস্থ্যকে আমানতস্বরূপ মনে করা হয়। যার ক্ষয়ক্ষতি বা বিনষ্টিকরন যাতে না ঘটে তার সর্বাত্মক চেষ্টা আছে ইসলামী জীবন দর্শনে। আল্লাহ বলেন :

‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।’ ( সুরা নিসা : ৩২ )

‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে না।’  (সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৫)।

মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রতি লক্ষ করে খাওয়াদাওয়ার জিনিসকেও হালাল অথবা হারামে বিভক্ত করে দিয়েছে ইসলামী শরীয়ত। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য ভাল পবিত্র খাবার ও পানীয় হালাল করেছেন, পক্ষান্তরে অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন। রসূল (সঃ) কে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন :“তিনি তাদেরকে ভাল কাজের নির্দেশ দেন এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করেন এবং তাদের জন্য পবিত্র জিনিস হালাল করেছেন এবং অপবিত্র জিনিস তাদের উপর হারাম করেছেন।” [সূরা আ‘রাফ : ১৫৭]

আল্লাহ আরো বলেন – ‘হে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।’ (সূরা বাকারা : ১৬৮)

পানাহারযোগ্য দ্রব্যাদির মধ্যে শরীয়াত যেগুলোকে হালাল ও হারাম বলে দিয়েছে সেগুলোর হালাল ও হারাম হবার মূল ভিত্তি শুধু মাত্র তাদের ভেষজ উপকারিতা ও অনুপকারিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তাদের নৈতিক লাভ ও ক্ষতি এর একটি প্রয়োজনীয় ভিত্তি। জীব ও জড় পদার্থগুলোর মধ্যে কোনটি মানুষের দেহে সুখাদ্যের যোগান দিতে পারে এবং কোনটি খাদ্য হিসেবে তার জন্য ক্ষতিকর ও অনুপকারী বিজ্ঞানের কল‍্যানে মানুষ আজ তা উদ্ভাবন ও নির্ণয় করতে শিখেছে এবং ইসলামে নিষিদ্ধ খাদ‍্যবস্তুসমূহের ক্ষতিকর দিকগুলি এখন মানুষের সামনে পরিস্কার হয়ে গেছে। বরং নৈতিকতার দিক দিয়ে কোন খাবার বর্জন করা উচিত, মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধতার জন্য কোন্ খাদ্যটি কোন্ পর্যায়ভুক্ত এবং খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে কোন্ পদ্ধতিটি বিশ্বাস ও প্রকৃতিগত দিক দিয়ে ভুল বা নির্ভুল এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাবার সাধ্য মানুষের নেই এবং এ অনুসন্ধান চালাবার জন্য যে উপায় উপকরণের প্রয়োজন তাও মানুষের আয়ত্বের বাইরে, আর এ জন্য এসব ব্যাপারে মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল করে বসেছে, তাই শরীয়াত এসব বিষয়েও তাকে পথনির্দেশ দেয়। যেগুলোকে সে হারাম গণ্য করেছে, সেগুলোকে হারাম করার কারণ হচ্ছে এই যে, মানুষের নৈতিক বৃত্তির ওপর সেগুলোর খারাপ প্রভাব পড়ে বা সেগুলো তাহারাত ও পবিত্রতা বিরোধী অথবা কোন খারাপ আকীদার সাথে সেগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। পক্ষান্তরে যে জিনিসগুলোকে শরীয়াত হালাল গণ্য করেছে সেগুলোর হালাল হবার কারণ হচ্ছে এই যে, উপরোল্লিখিত দোষগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি দোষেও সেগুলো দুষ্ট নয়।

আল্লাহ বলেন : “তারা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে যে, তাদের জন্য কি হালাল করা হয়েছে? বলুন : সকল প্রকার ভাল পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।” [সূরা মায়েদা: ৪]

এখানে প্রশ্নকারীদের উদ্দেশ্য ছিল, সমস্ত হালাল জিনিসের বিস্তারিত বিবরণ তাদের জানিয়ে দিতে হবে, যাতে তারা সেগুলো ছাড়া অন্য সব জিনিসকে হারাম মনে করতে পারে। জবাবে কুরআন হারাম জিনিসগুলো বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছে এবং এরপর সমস্ত পাক পবিত্র জিনিস হালাল, এ সাধারণ নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। “আজ তোমাদের জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র বস্তু হালাল করে দেয়া হয়েছে। আহ্‌লি কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল ” (মায়েদা : ৫)। এভাবে পুরাতন ধর্মীয় মতাদর্শ সম্পূর্ণ রূপে উল্টে গেছে। পুরাতন মতাদর্শ অনুযায়ী সবকিছুই ছিল হারাম কেবলমাত্র যেগুলোকে হালাল গণ্য করা হয়েছিল সেগুলো ছাড়া। কুরআন এর বিপরীত পক্ষে এ নীতি নির্ধারণ করেছে যে, সবকিছুই হালাল কেবল মাত্র সেগুলো ছাড়া যেগুলোর হারাম হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। প্রথমে একটি গণ্ডীবদ্ধ ক্ষুদ্র পরিসরের কিছু জিনিস ছিল তার জন্য হালাল, বাকি সমস্ত দুনিয়া ছিল তার জন্য হারাম। আর এখন একটি গণ্ডিবদ্ধ পরিসরের কিছু জিনিস তার জন্য হারাম বাদবাকি সমস্ত দুনিয়াটাই তার জন্য হালাল হয়ে গেছে।

হালালের জন্য “পাক-পবিত্রতার” শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যাতে এ সাধারণ বৈধতার সুযোগে নাপাক জিনিসগুলোকে হালাল গণ্য করার চেষ্টা না করা হয়। এখন কোন জিনিসের “পাক-পবিত্র” হবার বিষয়টি কিভাবে নির্ধারিত হবে, এ প্রশ্নটি থেকে যায়। এর জবাব হচ্ছে, যেসব জিনিস শরীয়াতের মূলনীতিগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি মূলনীতির আওতায় নাপাক গণ্য হয় অথবা ভারসাম্যপূর্ণ রুচিশীলতা যেসব জিনিস অপছন্দ করে বা ভদ্র ও সংস্কৃতিবান মানুষ সাধারণত যেসব জিনিসকে নিজের পরিচ্ছন্নতার অনুভূতির বিরোধী মনে করে থাকে সেগুলো ছাড়া বাকি সবকিছুই পাক।

হারাম বস্তুগুলির বিবরণে ইসলাম জানাচ্ছে – “তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে মৃতজীব, রক্ত, শূকরের গোশ্ত, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহকৃত জীব এবং কণ্ঠরুদ্ধ হয়ে, আহত হয়ে, ওপর থেকে পড়ে গিয়ে বা ধাক্কা খেয়ে মরা অথবা কোন হিংস্র প্রাণী চিরে ফেলেছে এমন জীব, তোমরা জীবিত পেয়ে যাকে যবেহ করে দিয়েছো সেটি ছাড়া। আর যা কোন বেদীমূলে যবেহ করা হয়েছে (তাও তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে)। এছাড়াও শর নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়। এগুলো ফাসেকীর কাজ। আজ তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কাফেররা পুরোপুরি নিরাশ হয়ে পড়েছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, আমার নিয়ামত তোমাদের প্রতি সম্পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছি (কাজেই তোমাদের ওপর হালাল ও হারামের যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তা মেনে চলো। ) তবে যদি কোন ব্যক্তি ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ঐগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি জিনিস খেয়ে নেয় গুনাহের প্রতি কোন আকর্ষণ ছাড়াই, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী।” ( সুরা মায়েদা : ৩)

আল্লাহর এ বিধান কোন অযৌক্তিক বা বিবেকবুদ্ধি পরিপন্থী কোন বিধান নয়। তিনি অত্যন্ত যুক্তি সঙ্গত ভাবেই এক বিরাট জিনিসকে হালাল বা হারাম ঘোষণা করেছেন। সার্বিক ভাবে সমগ্র মানবতার মৌলিক কল্যাণ সাধনই এর মূল লক্ষ্য। এ কারণেই তিনি মানুষের জন্য কেবল পাক-পবিত্র, উত্তম-উৎকৃষ্ট জিনিসই হালাল করেছেন এবং হারাম করেছেন যাবতীয় নিকৃষ্ট,খারাপ, ক্ষতিকর দ্রব্যাদি।

মৃত জীবের কথায় ধরা যাক, বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, প্রাণীর শরীর হলো একটা দুর্গ। যতক্ষণ জীবন থাকে ততক্ষণ জীবনী শক্তি ক্ষুদ্র জীবানুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে এবং জীবানুর প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা এ ধরনের যে কোন শত্রুকে প্রতিহত করে পরাজিত করতে থাকে। তাই ভিতরে তার গোস্ত ভাল, তার রক্ত ভাল, সে ভাল অবস্থায় থাকে। কিন্তু যদি মারা যায়, শুধুমাত্র এ জীবন শেষ হওয়ার কারণে পাঁচ ছয় ঘন্টা পরই এই মৃত প্রাণীটির শরীর ক্ষুদ্র জীবানুর একটা গুদামে পরিণত হয়।

বলা হয় শরীরে অসংখ্য প্রাচীর রয়েছে, যা দেহকে সংরক্ষণ করে। প্রাণীর শরীরে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু জীবানু রয়েছে। বৃহৎ অন্ত্রনালী, এমন কি প্রাণী থেকে যে মল বের হয়ে আসে সেগুলোও এই ব্যাকটেরিয়া বা ক্ষুদ্র জীবানুর বড় গুদাম। প্রাণী হতে যে মল বের হয় তা যদি পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, এই মলগুলো ক্ষুদ্র জীবানু দিয়ে ভরপুর, যেন এগুলো ক্ষুদ্র জীবানুর এক একটা বড় গুদাম। অতএব এটা প্রতীয়মান হয়, এই মল যে স্থান হতে বের হয়ে এসেছে সেই স্থানেও এই সব ক্ষুদ্র জীবানু বিদ্যমান। কিস্তু এই সব জীবানু সেখানে থাকা সত্ত্বেও তারা এই পাকস্থলীর পর্দা ছেদ করে অতিক্রম করতে সক্ষম হয় না।

যখন কোন প্রাণী মারা যায়, তার আর জীবন থাকে না, তখন তার এই প্রাচীরের প্রতিরোধ শক্তি হারিয়ে যায়। ফলে এই ধংসাত্মক ক্ষুদ্র জীবানু শরীরের অভ্যন্তর থেকে সেই সব পর্দা ও প্রাচীর ভেদ করে শরীরের সর্বস্থলে প্রবেশ করে। রক্তের স্থানে মিলিত হয়, সব শরীর দখল করে। অসংখ্য জীবানুর জন্ম দেয় যা মানুষের স্বাস্থ্যের বড় ধরণের ক্ষতি করতে পারে। রক্তের মধ্য থেকে এধরণের জীবানু গোস্তে, মাংশপেশীতে প্রবেশ করতে বাধার সৃষ্টি করে এই ধরনের প্রাচীর। প্রাণী যখন মারা যায়, এই প্রাচীর ও দুর্গ ভেঙ্গে পড়ে এবং জীবানু সর্ব শরীর দখল করে ফেলে। এমনকি শরীরের যে ত্বক জীবানু প্রবেশে বাধা প্রদান করত, কিন্তু প্রাণী মারা যাওয়ার সাথে সাথে সেই পথ জীবানুর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এমনি ভাবে নাক, কান ও মুখ দিয়ে প্রবেশ করে মরা প্রাণী অসংখ্য জীবানুর আস্তাকূড়ে পরিণত হয়ে মানুয়ের স্বাস্থের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।

জনৈক ইউরোপীয় ডাক্তার জন হানফার লারসন বলেনঃ বর্তমানে আমাদের ইউরোপীয় আইনে সর্ব প্রকার মরা প্রাণীর গোস্ত খাওয়া নিষেধ, তাই কেউ খায় না। কখন তারা এটা জানতে পেরেছে? হ্যাঁ তারা জানতে পেরেছে তখনই, যখন এই জীবানুর পরিচয় লাভ করেছে।

এবার আসা যাক রক্ত প্রসঙ্গে। জবাইকৃত প্রাণীর গোস্ত খাওয়া বৈধ, আর রক্ত অবৈধ কেন? জবাইকৃত একই প্রাণী থেকে যদি একটু গোস্ত ও রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হবে যে, রক্তে অতি সহজে ও দ্রুত উৎপন্ন হতে পারে জীবানু। রক্ত হচ্ছে জীবানু উৎপাদনের উর্বর ক্ষেত্র। অল্প সময়ের ব্যাবধানে সম্পূর্ণ রক্ত দখল করে এই সব ক্ষুদ্র জীবানু মাত্র পাঁচ-ছয় ঘন্টার মধ্যে জীবানুর গুদামে পরিণত হয়। অপর দিকে গোস্তটি এমন হতে পারে না, কারণ কি?

আরও পড়ুনঃ   কালোজিরার গুণ-কালোজিরার অশেষ ঔষধি গুণ জেনে নিন

কারণ হল, গোস্তের উপর পর্দা রয়েছে। মাংসপেশীতেও পর্দা রয়েছে। এই পর্দাগুলি কঠিন ও শক্ত। সহজে জীবানু তা ভেদ করতে পারে না। অপর দিকে জীবানুগুলোর খাদ্য থাকে না বিধায় জীবানু বৃদ্ধি পায় না। অতএব “গোস্ত” স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতির কারণ নয়। কিন্তু রক্ত পান করা স্বাস্থের জন্য বিপদজনক, অথচ উক্ত রক্ত ও গোস্ত একই প্রাণীর। অতএব গোস্ত হালাল, আর রক্ত হারাম।

এরপর শুকরের গোশ্তকে হারাম সাব‍্যস্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা মানব জাতির জন্য শুকরের মাংস খাওয়াকে সম্পূর্ণ নিষেধ ঘোষণা করেছেন। শুধু মাত্র উপরোল্লিখিত আয়াতেই নয়, পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বহু জায়গায় অন‍্যান‍্য নির্দেশের সাথে শুকুরের মাংস খাওয়াকে হারাম ঘোষণা করেছেন :

“তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের মাংস।” ( সুরা বাকারা, ২ঃ ১৭৩ আয়াত)।

“মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস অপবিত্র।” (সুরা আনআম, ৬ঃ ১৪৫ আয়াত)।

“আল্লাহ যা কিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে, মৃতদেহ, রক্ত, শূয়োরের গোশত এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কারোর নাম নেয়া হয়েছে। তবে যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ না করে অথবা প্রয়োজনের সীমা না ছাড়িয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এসব খেয়ে নেয় তাহলে নিশ্চিতই আল্লাহ‌ ক্ষমাশীল ও করুণাময়।” ( সুরা নাহল ১৬ : ১১৫)

শুধু আলকোরান নয় খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলিতেও শূকরের গোশ্ত খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। বাইবেল তার ‘লেভীটিকাস্থ গ্রন্থে শুকুরের মাংস খেতে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছেঃ “ওগুলোর মাংস তুমি খাবে না এবং ওগুলোর মৃতদেরহ তুমি স্পর্শও করবে না, ওগুলো ‘অপবিত্র’ তোমার জন্য।”

বাইবেলের পঞ্চম গ্রন্থ ‘ডিউট্যারনমী’ তেও শুকর মাংস ‘অপবিত্র’ বলা হয়েছেঃ “আর শুকর- কারণ তার খুর দ্বিখন্ডিত, এমনকি চিবিয়ে খায়, যাবর কাটেনা, ওটা অপবিত্র তোমার জন্য তুমি ওগুলোর মাংস খাবে না, না ওগুলোর মৃতদেহ তুমি স্পর্শ করবে।” (ডিউট্যারনমীঃ ১৪:৮)

বাইবেলের ‘আইযায়াহ, গ্রন্থের ৬৫ অধ্যায় ২ থেকে ৫ স্তবকেও আছে একই নিষিদ্ধতা।

এবার আসা যাক মানবজীবনে এই হারাম খাদ‍্যবস্তু কি প্রভাব ফেলে সেই প্রসঙ্গে। শুকুর মাংস ভক্ষণ কমপক্ষে সত্তুরটি রোগের উদ্ভব ঘটাতে পারে। প্রথমতঃ আক্রান্ত হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্রিমির দ্বারা। যেমন বৃত্তাকার ক্রিমি, ক্ষুদ্র কাঁটাযুক্ত ক্রিমি এবং বক্র ক্রিমি। এর মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক হলো ‘টাইনিয়া সোলিয়াম’। সাধারণভাবে যেটাকে ফিতা ক্রিমি’ বা টেপ ওয়ার্ম বলা হয়। এটা পেটের মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং অনেক লম্বা হয়। এর ডিম রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে এবং দেহের প্রায় সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ঢুকে পড়তে পারে, যদি এটা মস্তিস্কে ঢোকে, তাহলে কারণ ঘটাতে পারে স্মৃতি ভ্রষ্ট হয়ে যাবার। হৃদ-যন্ত্রের মধ্যে ঢুকলে বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রক্রিয়া। চোখে ঢুকতে পারলে অন্ধত্বের কারণ , কলিজাতে ঢুকতে পারলে সেখানে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে অর্থাৎ এটা শরীরের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

এরপরও আছে আরো ভয়ঙ্কর ‘ত্রীচুরা টিচুরাসীস্থ। এ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা হলো ভালো করে রান্না করলে এর ডিম্ব মারা যায়। এর ওপরে আমেরিকায় গবেষণা চালানো হয়েছে। ফলাফল হল ভালো করে রান্না করার পরও প্রতি ২৪ জনের ২২ জন এই ‘ত্রীচুরাসীস্থ দ্বারা আক্রান্ত। প্রমাণিত হলো সাধারণ রান্নায় এ ডিম ধ্বংস হয় না।

এই বরাহ–মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে আরো যেসব রোগের বিস্তার ঘটে সেগুলো হলো–

অনাহুত রোগসমূহ :

(ক)   Ascariaf Lumbricoidef : এটি নিউমোনিয়া ও অন্ত্রে বাধার সৃষ্টি করে।

(খ) Ancyloftoma Duodenale : এটি রক্তস্বল্পতা ও রক্তশূন্যতা ইত্যাদি বিবিধ জীবনবিনাশী রোগ সৃষ্টি করে। বরাহ–মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে এ ধরনের প্রায় ত্রিশটি অনাহুত রোগ আছে যা মানব দেহে প্রবেশ করে শরীরের বিভিন্ন স্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগসমূহ :

যেমন যক্ষ্মা, কলেরা, টাইফয়েড, ব্যারা টাইফয়েড ও ম্যালেরিয়া জ্বর ইত্যাদি।

ভাইরাসবাহী রোগসমূহ :

যেমন মস্তিষ্কে প্রদাহ, হৃদযন্ত্রে ব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং মুখ ফাটার প্রদাহ ইত্যাদি।

জার্মবাহী রোগসমূহ :

যেমন Toxoplasma gonddi জার্ম। যার ফলে জ্বর হয়। দুর্বল ও শক্তিহীন হয় শরীর। প্লিহা (spleen) ও হার্নিয়া(hernia) অথবা যক্ষ্মা এবং বুকের ব্যথা বা ব্রঙ্কাইটিস (bronchitis) ও ঝিল্লির প্রদাহ(meningitis) সৃষ্টি হয়। উপরন্তু শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর রোগও সৃষ্টি হয়।

শূকরের গোশত ও চর্বির বায়োলজিক্যাল গঠন জনিত কারণে সৃষ্ট রোগসমূহ :

যেমন :রক্তে ফলিক অ্যাসিডের হার বৃদ্ধি। শতকরা মাত্র ২ ভাগ শূকর থেকে এই অ্যাসিড বের হতে পারে। বাকি আটানব্বই ভাগ এর গোশতের অংশে পরিণত হয়। তাই দেখা যায় যারা শূকরের গোশত খায় তারা শরীরের জোড়ায় ব্যথার অভিযোগ করে।

তাছাড়া শূকরের গোশতে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অধিক মাত্রায় চর্বির উপস্থিতি রয়েছে। শুকর মাংসে পেশী তৈরীর উপাদান অত্যন্ত নগণ্য পরিমাণ। পক্ষান্তরে চর্বি উৎপাদনের উপাদান প্রচুর। এ জাতীয় চর্বি বেশিরভাগ রক্ত নালীতে জমা হয়- যা কারণ ঘটায় হাইপার টেনশান এবং হার্ট এটাকের। এ জন্য এর ভক্ষণকারী তার দেহে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি লক্ষ্য করে এবং রক্তে কলেস্টোরলের মাত্রা বাড়তে দেখে। যার ফলে ধমনি (artery) শুকিয়ে যাওয়া, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি হঠাৎ মৃত্যু ডেকে আনে এমন সব রোগ সৃষ্টি হয়।

আবার শূকর–গোশত আহারকারী কোষ্ঠ–কাঠিন্যে (constipation) আক্রান্ত হয়। কারণ এটি আন্ত্রে প্রায় চারঘণ্টা পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। অন্যান্য প্রাণীর গোশত কিন্তু এতক্ষণ থাকে না। এর দ্বারা স্থূলতার রোগ সৃষ্টি হয় এবং স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা দেখা দেয়।

পৃথিবীর বুকে শুকর নোংরা ও পঙ্কিলতম প্রাণী। এ প্রাণীটি বসবাস করতে স্বাচ্ছ‍্যন্দ বোধ করে নিজেদের বিষ্ঠা, মানুষের মল ও ময়লাপূর্ণ জায়গায়। আল্লাহ তা‘আলা সমাজবদ্ধ সৃষ্টি কূলের ধাঙর, মেথর বা ময়লা পরিষ্কারক হিসাবেই বোধকরি এ প্রাণিটি সৃষ্টি করেছেন আজ থেকে পঞ্চাশ কি ষাট বছর আগেও যখন স‍্যানিটরী পায়খানা আবিষ্কৃত হয়নি তখন যে কোনো শহরের পায়খানার ধরন ছিল, পেছন থেকে মেথর এসে তা ট্যাঙ্কি ভরে নিয়ে যেত এবং শহরের উপকণ্ঠে কোথাও ফেলতো। যা ছিল শুকরদের পরম আনন্দ নিবাস এবং শেষ পর্যন্ত সেগুলোই সব বিষ্ঠার রুপান্তর ঘটতো।

শুকর নির্লজ্জতায় জঘন্য পশু। ভু-পৃষ্ঠের ওপরে শুকর অশ্লীলতায় নির্লজ্জতম প্রাণী। একমাত্র পশু যেটা তার স্ত্রী-সঙ্গীর সাথে সংগম করার জন্য অন্যান্য পুরুষ-সঙ্গীদের ডেকে নেয়। আমেরিকার ও ইউরোপের অধিকাংশ মানুষের প্রিয় খাদ্য শুকর মাংস। মনে হয়, এই দেশগুলো যৌন-স্বাধীন দেশে পরিণত হওয়ার একটি বড় কারণ এটি। খাদ্যভ্যাস আচরণে প্রকাশ পায়, বিজ্ঞানের এ সূত্রের জীবন্ত নমুনা ওরাই।

এ প্রসঙ্গে একটি ইতিহাসের গল্প বলি যাতে বোঝা যাবে খাদ‍্যাভ‍্যাস কিভাবে মানুষের আচরণে প্রকাশিত হয়। আরবের জাহিলিয়াত যুগে এমন লোক ছিল যারা পূর্ববর্তী ধর্মের অনুসরন করত। এক ব্যক্তির চারজন ছেলে ছিল। মৃত্যুর সময় চারজনকে ডেকে বললঃ আমি মারা যাওয়ার পর তোমাদের মাঝে যদি সম্পদ নিয়ে ঝগড়া সৃষ্টি হয় তাহলে নিজেদের মাঝে ঝগড়া না করে অমুক স্থানে জনৈক ধর্ম জাযক রয়েছে, তার কাছে গিয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী তোমরা কে কতটুকু পাবে তা জেনে নিবে। তাদের পিতার মৃত্যুর পর চারজন পরামর্শ করে সেই ধর্মজাযকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। পথিমধ্যে যখন রাত হল তখন তারা তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি যাপন করল। ভোরের দিকে কতকগুলি লোককে দৌড়ে আসতে দেখে তারা তাদেরকে জিজ্ঞেস করলঃ তোমাদের কি হয়েছে, তোমরা দৌড়াচ্ছ কেন? তারা বললঃ আমাদের একটি উট ছুটে গেছে, মনে হয় এই পথে চলে গেছে। তোমরা কি আমাদের উটটিকে দেখেছ? তাদের একজন বলল: না আমরা দেখিনি; আচ্ছা তোমাদের উটের কি একটি পায়ের খুর ভাঙ্গা ? তাদের উটটির একটি পায়ের খুর আসলেই ভাঙ্গা ছিল। তাই তারা ভাবল, এরাই উটটি নিয়েছে ও জবাই করে খেয়েছে।

তারা বললঃ হ্যাঁ, আমাদের সেই উটটির খুর ভাঙ্গা ছিল। তোমরাই জবাই করে খেয়েছ, তোমাদেরকে অবশ্যই জরিমানা দিতে হবে।

তাদের অন্য ভাই বললঃ আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের উট দেখিনি। আচ্ছা, তোমাদের উটের একটি চোখ কি কানা?

আসলেই তাদের উটের একটি চক্ষু কানা ছিল। এবার তাদের বিশ্বাস আরো বেড়ে গেল যে, এরাই উটটি জবাই করে খেয়েছে তা না হলে কি করে তারা জানতে পারল যে, তাদের উটের এক চোখ কানা।

তারা বললঃ হ্যাঁ, আমাদের উটের এক চোখ কানা। অতএব তোমরাই উটটিকে জবাই করে খেয়েছ তাতে কোন সন্দেহ নেই।

তাদের আর এক ভাই বলল – আল্লাহর কসম করে বলছি! আমরা তোমাদের উট জবাই করে খাইনি। এমন কি তা আমরা আমাদের চোখেও কোন দিন দেখিনি। আচ্ছা তোমাদের উটটির মনে হয় লেজ নেই তাই না?

এবার তাদের বিশ্বাস আরও একটু গাঢ় হলো যে, তারাই আসলে উটটি জবাই করে খেয়েছে। কিন্তু জরিমানার ভয়ে স্বীকার করছে না। কারণ না দেখে উটের এমন সূক্ষ্ম ত্রুটির কথা কি করে জানলো?

তারা বললঃ হ্যাঁ, আমাদের উটের লেজ নেই, আমরা তোমাদের কসম বুঝি না, এখন বাপু তোমরা আমাদের উট কোথায় লুকিয়ে রেখেছ, তাড়াতাড়ি বের করে দাও। নতুবা তোমাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।

আর না হয় অমুক জায়গায় একজন ধর্মগুরু রয়েছে, তার কাছে চলো। তিনি যা ফায়সালা করে দেন তাই হবে।

এবার সবাই সেই ধর্মগুরুর কাছে গিয়ে অভিযোগ করলো। আরবের মেহমানদারী প্রবণতা সেই যুগেও ছিল। তাই তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শোনার আগে তাদের জন্য মেহমানদারীর ব্যবস্থা করলেন। তাদের জন্য কিছু আঙ্গুর, দুধ, রুটির ব্যবস্থা করলো।

আরও পড়ুনঃ   সিঙ্গা লাগানো /হিজামা/ Cupping চিকিৎসা

তারা আঙ্গুর মুখে দিয়েই বললঃ আহ! এই আঙ্গুরগুলো যদি কবরস্থানের না হত, তাহলে কতই না ভাল হত!

রুটি খাওয়ার সময় তারা বললঃ রুটি কতই-না ভাল হত যদি সেগুলো হায়েজওয়ালী রমণী তৈরী না করত!

দুধ পান করে তারা বললঃ দুধের সম্পর্ক যদি কুকুরের সাথে না থাকত তাহলে কতই না সুস্বাদু হত! এদিকে ধর্মগুরু পার্শ্ব থেকে তাদের কথাগুলো শুনে তার চাকরকে গিয়ে গোপনে জিজ্ঞেস করলঃ তুমি কোথা থেকে, কোন গাছের আঙ্গুর এনেছ? সে বললঃ আমি বাগানের পার্শ্বে একটি আঙ্গুরের গাছ আছে যা একটি কবর থেকে উঠেছে, সেখান থেকে এনেছি।

এবার তিনি রাখালের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা তুমি কোন বকরীর দুধ মেহমানদেরকে দিয়েছ? সে বললঃ ঐ সেই বকরী যা জন্মের পর তার মা মারা যায়। তাই তাকে কুকুরের দুধ পান করিয়ে পালন করা হয়েছিল। এবার ধর্মগুরু আশ্চর্য হয়ে যে মহিলা রুটি বানিয়েছে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বর্তমানে মাসিক অবস্থায় আছ? সে উত্তর দিলোঃ হ্যাঁ, আমি হায়েজ অবস্থায় আছি। এগুলো জানার পর ধর্মগুরু মেহমানদের খাওয়া শেষ হলে অভিযোগকারীদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসলেন।

অভীযোগকারীরা তাদের সমস্ত ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বললঃ আমাদের উট যদি তারা না দেখে থাকে তাহলে কিভাবে তরা আমাদের উটের ত্রুটিগুলি জানতে পারলো?

ধর্মগুরু তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা যদি তাদের উট না দেখে থাক তাহলে কি করে বলেল যে, তাদের উটের ডান পায়ের একটি খুর ভাংগা? তাদের এক ভাই বললঃ জনাব! তারা যখন আমাদেরকে তাদের উটের কথা জিজ্ঞেস করছিল তখন আসে পাশে নজর করলাম। কোন উট এ পথে গেছে কিনা? আমি দেখতে পেলাম যে, একটি উট গমনের পায়ের চি‎হ্ন রয়েছে। তবে ডান পায়ের খুরটি ভাঙার চিহ্ন রয়েছে। তাই আমি জিজ্ঞেস করেছি যে, তাদের উটটির ডান পায়ের খুর ভাংগা কি না?

তিনি বললেনঃ এটা বুঝলাম, কিন্তু কিভাবে এটা বুঝতে পেরেছ যে, উটটি কানা?

তাদের একজন বললঃ আমি লক্ষ্য করলাম যে, সেখানে কিছু ঘাস রয়েছে। এক পাশে খেয়েছে আর অন্য পাশে খায়নি। তাই তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, তাদের উটটি কানা কিনা?

তিনি বললেনঃ এটাও না হয় বুঝলাম কিন্তু কিভাবে এটা জানতে পেরেছ যে, যে তাদের উটের লেজ নেই?

একজন বললঃ জনাব! উটের একটা স্বভাব আছে যে, মল ত্যাগ করার সময় লেজ নাড়াচাড়া করে। এর ফলে তার মল এক জায়গায় থাকে না। আমি দেখলাম যে, উটের মল এক জায়গায় রয়েছে। তাই তাদের বললাম, আমার মনে হয় তাদের উটের লেজ নেই।

এবার ধর্মযাজক অভিযোগকারীদের বললঃ আসলে তারা তোমাদের উট দেখেনি, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তারা এমন কথা বলেছে; তোমরা এখন চলে যেতে পার। অভিযোগকারী চলে যাবার পর ধর্মগুরু তাদেরকে প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি করে জানতে পারলে যে, রুটিগুলো হায়েজওয়ালী মহিলা তৈরী করেছে? আংগুরগুলো কবরস্থান থেকে আনা হয়েছে এবং দুধের সম্পর্ক কুকুরের সাথে রয়েছে? তারা বললঃ জনাব! মহিলারা যখন পবিত্র থাকে তখন তারা ঠিকভাবে বসতে পারে এবং তাদের কাজগুলো নিপুণতার সাথে করতে পারে। আর যদি মাসিক হয় তখন ভালভাবে বসতে পারে না এবং কাজে মনোনিবেশ ঠিকভাবে দিতে পারে না। তাই রুটির অবস্থা দেখে আমরা এ কথা বলেছি।

আর সাধারণ মাটি থেকে যে আংগুর হয় সেই আংগুর হয় মিষ্টি। কবর বা কবরস্থান থেকে যে গাছ হয় তার আংগুর হয় টক। আর দুধ খেয়ে আমাদের মধ্যে এমন ভাব সৃষ্টি হয়েছিল যে, আপনার আদর ও মেহমানদারী পেয়ে আপনাকে জিহ্বা দিয়ে চেটে তার বদলা দেই। এই অনুভূতি জাগার কারণে আমরা মনে করেছিলাম যে, এটাতো কুকুরের স্বভাব। হয়তো আমরা যে দুধ খেয়েছি সেই দুধের সম্পর্ক কোন কুকুরের সাথে রয়েছে। তাই জীব বিজ্ঞানীগণ বলেন, যে প্রণীর গোস্ত অথবা দুধ খাওয়া হয় সেই প্রাণীর স্বভাব কিছুটা তাদের উপর প্রতিফলিত হয়।

সম্প্রতি মেক্সিকোতে সোয়াইন ফ্লু নামে এক ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো, যেসব দেশে শূকরের গোশত খাওয়া হয় মূলত সেসব দেশেই এর বিস্তার ঘটছে। এতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বহু লোক মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছে।

সুতরাং দেখা যায় মানুষের শারীরিক ও স্বভাবগত উভয় প্রকার অকল‍্যাণের উৎস এই শূকরের মাংস। তাই ইসলাম একে হারাম খাদ্যবস্তুর তালিকাভুক্ত করেছে।

পশুপক্ষীদের বদস্বভাব মানুষের মধ্যে যাতে না প্রকাশ পায় সেকারণে বেশ কিছু পশু পাখি ভক্ষণ ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাল্লালার (যে প্রাণী নাপাক বস্তু খায়) গোশত খেতে ও তার দুধ পান করতে নিষেধ করেছেন।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক শিকারী দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু ও প্রত্যেক পাঞ্জাধারী শিকারী পাখী খেতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮০৩)

আল-মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাবধান! শিকারী দাঁতযুক্ত হিংস্র জন্তু, গৃহপালিত গাধা এবং চুক্তিবদ্ধ যিম্মীর হারানো মাল খাওয়া হারাম। তবে সে তা পরিত্যাগ করে থাকলে ভিন্ন কথা। কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের নিকট মেহমান হিসেবে উপস্থিত হওয়ার পর তারা তাকে আতিথ্য না করলে সে আতিথ্যের পরিমাণ মাল তাদের কাছ হতে আদায় করে নিতে পারে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮০৪)

এরপর উপরোক্ত সূরা মায়েদার তিন নং আয়াতে মুনখানিকা আহার করা হারাম বলা হয়েছে। মুনখানিকা ঐ প্রাণীকে বলা হয় যাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অথবা শ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা গেছে।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাওয়া প্রাণী মৃত প্রাণীর ন্যায়। এটা যেন একটা বিরাট জীবানু ভান্ডারে পরিণত হয়। কেননা শ্বাস রুদ্ধ অবস্থায় যখন মৃত্যু হয় তখন শরীরে রোগ জীবানু প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়, প্রতিরোধ শক্তি থাকে না। তাই রোগ জীবানুর সহায়ক হয় এবং শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গে প্রবেশ করে। পরিশেষে এ প্রাণীটি আহারকারীর জন্য মহা বিপদজনক হয়ে থাকে।

মাওকুদাহ ঐ জন্তুকে বলা হয়, যা লাঠি অথবা পাথরের প্রচন্ড আঘাতে নিহত হয়। এ ধরণের আঘাতজনিত মৃত প্রাণীর মাংস আহার করা ইসলামে হারাম করা হয়েছে।

এর কারণ হলঃ প্রচন্ড আঘাতে রগগুলি ফেটে যায়। রক্ত মাংসের সাথে মিশে বিষাক্ত বস্তুতে পরিণত হয়। এই বিষাক্ত বস্তু ফুলে যাওয়া স্থানে পাওয়া যায়। আমরা দেখতে পাই যে, শক্ত আঘাতের কারণেই ঐ স্থান ফুলে যায়। রগ ফেটে যাওয়ার ফলেই এই ব্যাথা মাংস রক্তের সাথে মিশে অবস্থার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে প্রকাশ পেয়েছে যে, শক্ত আঘাতজনিত কারণে প্রাণীর মৃত্যু ঘটলে জীবানু প্রতিরোধ শক্তি লোপ পায়, অপর দিকে তার শরীরে রক্তগুলি থেকে যায়। ফলে জীবানুর উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যায় এই শরীর এবং সর্ব শরীর দখল করে এই জীবানু।

মুতারাদ্দিয়া ঐ প্রাণীকে বলে যা কোন পাহাড়, টিলা, উচু স্থান অথবা কুপে পড়ে মরে যায়।

নাতীহা ঐ প্রাণীকে বলে যা কোন প্রাণীর শিং এর আঘাতে মরে যায়। উভয় প্রকার প্রাণী ইসলামে হারাম করেছে এ কারণে যে, দেহের ভিতরে রক্ত থাকার ফলে জীবানু প্রসারের উর্বর ভূমিতে পরিণত হয় এবং জীবানু সহজে সমস্ত দেহ দখল করায় এটি একটা জীবানুর ভান্ডারে পরিণত হয়, যা ভক্ষণে মানব স্বাস্থের চরম ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।

ইসলামে নিষিদ্ধ খাদ্য পানীয়ের একটি হল মদ। আল্লাহ বলেন : “ওহে যারা ঈমান এনেছ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক যাতে তোমরা সফলতা অর্জন করতে পার। শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্ধেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা এখনও কি নিবৃত হবে না? ” (সূরা মায়েদা, ৫ঃ ৯০ ও ৯১ আয়াত)।

হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রাযি.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মাদকাসক্ত ১০ ধরনের ব্যক্তির ওপর অভিশাপ করেছেন। যথা-

১. যে ব্যক্তি মদ জাতীয় বস্তুর নির্যাস বের করে,

২. যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুত করে,

৩. যে ব্যক্তি মদ পান করে,

৪. যে ব্যক্তি মদ পান করায়,

৫. যে ব্যক্তি মদ আমদানি করে,

৬. যার জন্য মদ আমদানি করা হয়,

৭. মদ বিক্রেতা,

৮. মদ ক্রেতা,

৯. অন্যকে সরবরাহকারী এবং

১০. মদের লাভের অংশ ভোগকারী।’

(ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, খ, ২, পৃষ্ঠা ১১২২, হাদিস নম্বর ৩৩৮১)

মদের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে প্রথমে জানতে হবে শরীরের কোন কোন অঙ্গের উপর এর কি প্রভাব রয়েছে।

প্রথমেই লক্ষ্য করা যাক স্নায়ু যন্ত্রটির প্রতি। স্নায়ু যন্ত্রটি মানব জাতির জন্য আল্লাহর নিয়ামতের মধ্যে একটি বড় মূল্যবান নিয়ামত যার দ্বারা মানুষ চিন্তা গবেষণা করে দেখে ও শ্রবণ করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গের উপর শাসন করে। এই যন্ত্রটির রয়েছে ১৩০০ কোটি কন্ট্রোল রুম এবং সেই কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে গোটা দেহের কোটি কোটি সেনা ও প্রহরীকে নিয়ন্ত্রণ করে।

পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কম্পিউটারের চেয়ে হাজার কোটি গুন জটিল এই ছোট্ট মেশিনটি। এর প্রতিটি কর্মতৎপর সেলের নাম হচ্ছে নিউরণ। প্রতি সেকেন্ডে শত শত নিউরণ এসে ব্রেইনের প্রাথমিক স্তরে জমা হতে থাকে। এগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে, যাকে বলা হয় যোগাযোগ মন্ত্রনালয়। মূল নিয়ন্ত্রকের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে হাজার কোটি সেলে ছড়িয়ে দেয়। আর মদের প্রভাব সর্ব প্রথম এই যন্ত্রের স্নায়ু কোষের উপর পতিত হয়ে থাকে। স্নায়ু কোষের সংখা হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মিলিয়ন। এই স্নায়ুকোষগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর ঠিক হয় না বা নতুন করে তৈরী হয় না, যার ফলে মানুষ অতীতের ঘটনা স্মরণ রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং কোন কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। মদ ব্রেনের টিসু সেলগুলির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে বিধায় মদ্যপায়ী ব্যক্তির বুদ্ধিবৃত্তি, হিতাহিত জ্ঞান পর্যায়ক্রমে লোপ পেতে দেখা যায়।

আরও পড়ুনঃ   সিয়াম হতে পারে ক্যান্সার প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায়!

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারোলিনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডঃ মালকিন কিন্সলী এবং তার সহকর্মী প্রমাণ করেছেন যে, এক গ্লাস এ্যালকোহল মগজের কিছু কোষ ধ্বংস করে বা মেরে ফেলে। মানুষ যতবার এই এ্যালকোহল পান করে ততবারই এই সর্বনাশ ও ক্ষতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।

আমেরিকার ইন্ডিয়ানা পুলিশের সংবাদ সংস্থা ইন্ডিয়ানা ইউনির্ভাসিটি মেডিকেল প্রফেসর ডাক্তার লোহর জয়ের একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে যে, মদের নেশার প্রভাব সবচেয়ে বেশী ব্রেনের উপর পড়ে। উহা পান করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তের সাথে মিশে মস্তিস্ক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পরিমাণে অল্প সেবন করলেও এ কু-প্রভাব থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় শক্তি উৎপাদন যন্ত্র যার নাম কালব বা হার্ট। মানব দেহের বাম পাশে সামনের দিকে পেটের একটু উপরে এই ছোট্ট অংশটি হচ্ছে মানব দেহের সর্বাধিক জরুরী অংশ।

আর মদ ঐ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। ডাঃ মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেনঃ মদ পানের ফলে হৃদপিন্ড সর্বশেষ মুল্যবান অনুভূতি যন্ত্রের মিলিত (valance) হওয়ার স্থানে ছাকনির কাজ দেয়। কিন্তু শরাব বা এ্যালকোহল এ নাজুক কাজটিকেও ব্যাহত করে। মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মাদকাশক্তির ফলে মারাত্বক স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় দেখা দেয়। নেশার মাত্রার তারতম্য হলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরও প্রকাশ, যে মদ পান করে তার পাকস্থলীতে ধ্বংসাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। এমন কি তার পাকস্থলী প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার। শরীর থেকে টক্সিন জাতীয় পদার্থ দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে লিভার। মদ‍্যপানের ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ব‍্যাহত হয়।

পাকস্থলী ও লিভারের গন্ডগোলের ফলে তার ক্ষুধা লাগে অত্যন্ত কম। সে জন্য তাকে অল্প আহারে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তাই দিন দিন পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হয়। শরীর শুকিয়ে যায়, ওযন কমে যায়, যক্ষ্মা রোগের সৃষ্টি হয়। কিডনীর মারাত্মক ক্ষতি হয়। বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে, যৌনশক্তি লোপ পাওয়াসহ যত ধরনের দূরারোগ্য ব্যাধি আছে তা মদের কারণে হয়ে থাকে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বর্তমান বিশ্বে শুধু মুসলিম দেশগুলি নয়, বরং অমুসলিম দেশগুলিও এই নেশাগ্রস্থ ধ্বংসাত্মক বস্তুর বিরুদ্ধে ভবিষ্যত বংশধরদেরকে বাঁচানোর লক্ষ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করছে। আমরা মুসলিম জাতি। আল্লাহর নির্দেশে দেশ ও দেশবাসীকে নেশার বিষপান থেকে বিরত রেখে ভয়াবহ রোগসমূহ থেকে রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

ইসলামে সকল বিষাক্ত জিনিস ভক্ষন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অনন্তকাল তাই চাটতে থাকবে। সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে।” (সহিহ মুসলিম)

বিজ্ঞান বলছে ধূমপানের মত ক্ষতিকর জিনিস আর হয় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামীদের খাদ্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, “এটা তাদের পুষ্টিও যোগাবেনা ক্ষুধাও নিবারণ করবে না৷” (সূরা আল-গাশিয়াহ :৭)

ধুমপানের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যই রয়েছে যে তা পানকারীর পুষ্টির যোগান দেয় না, ক্ষুধাও নেভায় না৷ ধুমপানের তুলনা জাহান্নামী খাবারের সাথেই করা যায়৷

রাসুল (সঃ) বলেছেন,  “তোমার প্রতি তোমার শরীরের অধিকার আছে।” সুতরাং শরীর বিনষ্টকারী সকল প্রকার হারাম খাদ্য থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।

ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য রিজিক হালাল হওয়া খুবই জরুরি। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র। পবিত্র বস্ত্ত ভিন্ন তিনি কবুল করেন না। আর আল্লাহ মুমিনদের সেই নির্দেশ দিয়েছেন, যে নির্দেশ তিনি রাসূলগণকে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি পাঠ করেন আল্লাহর বাণী, ‘হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করুন এবং সৎকর্ম সম্পাদন করুন। (মনে রাখবেন) আপনারা যা কিছু করেন, সকল বিষয়ে আমি সম্যক অবহিত’ (মুমিনূন ২৩/৫১)। অতঃপর মুমিনদের উদ্দেশ্যে তিনি একই কথা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ তোমাদেরকে আমরা যে পবিত্র রূযী দান করেছি, সেখান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একজন ব্যক্তির উদাহরণ দিয়ে বললেন, “যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-মলিন চেহারায় দু’হাত আকাশের দিকে তুলে আল্লাহকে ডাকে, হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় ও পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং সে হারাম খাদ্য দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে। ফলে কিভাবে তার দো‘আ কবুল হবে?”[মুসলিম, মিশকাত হা/২৭৬০ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, বঙ্গানুবাদ হা/২৬৪০]

উক্ত হাদীছ প্রমাণ করে যে, হারাম খাদ্যে পরিপুষ্ট ব্যক্তির দো‘আ কবুল হয় না এবং ঐ ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যাবে না। যেমন অন্য হাদীছে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ঐ দেহ জান্নাতে যাবে না, যা হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে’। [বায়হাক্বী-শু‘আব, মিশকাত হা/২৭৮৭, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১ ‘হালাল উপার্জন’ অনুচ্ছেদ-১; ছহীহাহ হা/২৬০৯ ]

হালাল রিজিকের প্রভাব শুধু নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্যের জন্যই যে জরুরি তা নয়, নিজের সন্তানের ওপরও এর প্রভাব থাকে। রুজি-রোজগারের মধ্যে খুব সামান্য ও এমনকি বিন্দু পরিমাণ হারাম এবং সুদের প্রভাব সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়। এ সংক্রান্ত অনেক ঘটনা ধর্মীয় সাহিত্যে স্থান পেয়েছে।

একবার প্রাচীন যুগের একজন বিশ্বখ্যাত আলেম তার শিশু পুত্র সন্তানকে মসজিদে নিয়ে আসেন। ওই শিশুকে অজুখানার কাছে বসিয়ে তিনি নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। ফিরে এসে দেখেন যে তার শিশু-পুত্র মুসল্লিদের ওজুর পানি তোলার পাত্রটি পেরেক জাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ফুটো করে দিয়েছে। ওই আলেম দুঃখিত ও বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগলেন কেনো এমন হল? ঘরে ফিরে স্ত্রীকে এই ঘটনা জানালে তিনি জানান, আমি বুঝতে পেরেছি যে কেনো এই মন্দ কাজটি আমাদের পুত্র করেছে। এ জন্য আসলে আমিই দায়ী। ও যখন আমার গর্ভে ছিল তখন আমি অনুমতি না নিয়ে এক ব্যক্তির বাগানের একটি ডালিমের মধ্যে সুঁই দিয়ে খোঁচা দিয়েছিলাম এবং সুঁইয়ে লেগে-থাকা ডালিমের রস জিভে লাগিয়েছিলাম!

সুতরাং হালাল হারাম বুঝে আমাদের লাইফ স্টাইল পরিচালনার মধ্যেই যাবতীয় কল‍্যাণ নিহিত আছে। আল্লাহ পাক আমাদের জন‍্য এই জীবন পথকে অত‍্যন্ত সোজা করে দিয়েছেন। অনেক ছাড় দিয়েছেন। রসূল (সঃ) বলেন – “আল্লাহ তোমাদের ওপর কিছু কাজ ফরয করে দিয়েছেন, সেগুলো ত্যাগ করো না। কিছু জিনিস হারাম করে দিয়েছেন, সেগুলোর ধারে কাছে ঘেঁষো না। কিছু সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলো লংঘন করো না। আবার কিছু জিনিসের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করেছেন কিন্তু তা ভুলে যাননি, কাজেই সেগুলোর অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়ো না।” (হাদীস)

অতএব আমাদের উচিত, আমরা বুঝি বা না বুঝি, মহা প্রজ্ঞাময় আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশ পালনে সচেষ্ট হওয়া। এতেই রয়েছে মানব সম্প্রদায়ের জাগতিক কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর নির্দেশসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।

লিখেছেনঃ আনসারুল ইসলাম

দুটি গঠনমূলক মন্তব্য :
Golam Sarwar বলেছেন…
লেখাটিতে জবেহ করার ফলে মৃত আর এমনি মৃত প্রাণীর পার্থক্যটা পরিষ্কার আলাদা দেখালে ভালো হত। না হলে, ‘মৃত’ শব্দটা একটা সাধারণ শব্দ, তাই জবেহর ফলে মৃত প্রাণীর ক্ষেত্র যে আলাদা সেটা ঠিক স্পষ্ট হল না। ‘এমনি মৃত’ প্রাণী যে কারণে ক্ষতিকারক সেই একই কারণে ‘জবেহর ফলে মৃত’ প্রাণী যে ক্ষতিকারক নয় সেটা বলার ঘাটতি থেকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। মাছের ব্যাপারটা উল্লেখ করলে ভালো হত, কেন মাছের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত বা উচিত না সেটা বলে। প্রাণী হত্যার নীতি গত দিক ও চর্চার ধ্রনের প্রভাবটাও একটা মানদণ্ড সেটার বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষে গুরুত্ব আলোচনা থাকলে আরও বলিষ্ঠ হত। খাওয়ার ফলে প্রাণীর স্বভাবের প্রভাব মানুষের স্বভাবের উপর পড়া ব্যাপারটা বিতর্কিত, সহজে বোধগম্য নয় তাই প্রমান সাপেক্ষ, কিন্তু প্রাণীগুলো পালনের সময় সহবস্থানে দেখাদেখির ফলে স্বভাবে প্রভাব আর রোগজীবানু গত আদান প্রদান অবশ্য স্বাভাবিক।
Ansarul Islam বলেছেন…
উপরোক্ত প্রবন্ধটি হারাম খাদ‍্যবস্তূসমূহের উপর হওয়ার কারণে হালাল বিষয় সমূহের উপর বিশেষ দৃকপাত করা হয়নি। যবেহকৃত পশু হালাল বিধায় এর উপর জোর দেওয়া হয়নি। মৃত জীব যে কারণে হারাম তার সঙ্গে যবেহ করার কারণে মৃত হওয়ার বিষয় তুলনীয় নয়। কারণ জীবন্ত পশু যবেহ করলে হালাল, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এর শরীরে রক্ত প্রবহমাণ থাকে। মৃত পশু যবেহ করলেও হালাল হবেনা।
রাসূল(সঃ) বলেন,’আমাদের জন্য দু’প্রকার মৃত প্রাণী ও দু’প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে :
(ক) মৃত প্রাণী : যেমন, মাছ ও পঙ্গপাল বা টিড্ডি।(খ) রক্ত : যেমন, কলিজা ও প্লীহা।’

(আহমদ:৫৭২৩,সিলসিলা সহিহা:১১১৮,ইবনে মাজা:৩২১৮)
এগুলি হালাল বলে এ প্রবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। মাছের ও স্তন‍্যপায়ী পশুর রক্তের বিভিন্নতা পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

অল্প বয়সে চুল পাকলে করণীয়•• পাকা চুলে কলপ ব্যবহারের বিধান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

six − 1 =