মাথা ঘোরানো মাথার সমস্যা নয়

0
6604
মাথা ঘোরানো ,মাথার সমস্যা

মাথা ঘোরা আসলে কী : যেসব সাধারণ উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, মাথা ঘোরা তার মধ্যে অন্যতম। এই মাথা ঘোরা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শরীরের ভারসাম্যহীনতা, পড়ে যাওয়া, মূর্ছা যাবে বলে মনে হওয়া, মস্তিষ্কে শূন্যতা, মাথায় ঘূর্ণির মতো হওয়া বা পারিপার্শ্বিক পটথিবী ঘুরছে মনে হওয়া। ইংরেজিতে এগুলোকে Dizziness বলে। কেউ যখন বলে যে, সে নিজে ঘুরছে বা পারিপার্শ্বিক পৃথিবীটা ঘুরছে সেটাকে Vertige বলে। আর এ ধরনের মাথা ঘোরা সাধারণত কান তথা অন্তঃকর্ণের জন্যই হয়ে থাকে।

কান সম্পর্কে দু’টি কথা

অন্তঃকর্ণ বা Labyrinth-এর দু’টি অংশ। সামনের অংশকে বলে ককলিয়া (Cochlea), যা শ্রবণশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেছনের অংশকে বলে ভেস্টিবিউল (Vestibule), যা মাথার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে।

লেবিরিনথের (অন্তঃকর্ণ) ঝিল্লির মধ্যে তরল পদার্থ ও অতি সূক্ষ্ম চুলসাদৃশ্য সংবেদনশীল অঙ্গ (Sensory organ) থাকে, যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে মাথার অবস্থান সম্পর্কে সংকেত (Signal) পাঠায়।

শরীর ও মাথার নিয়ন্ত্রণ

মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ যেমন- সেরিবেলাম, সেরিব্রাম, বেইনস্টেম, শরীর ও মাথার ভারসাম্যতা এবং অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করে। চামড়া, মাংসপেশী, হাড় জোড়া ও চক্ষু, শরীরের অবস্থান সম্পর্কে সংকেত পাঠায় মস্তিষ্কের ঠিকানায়। এগুলোর কোনটাতেই স্বাভাবিক কার্য প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলে বিভিন্ন তীব্রতায় মাথাঘোরা রোগ হয়ে থাকে।

উপসর্গ

মস্তিষ্ক, চামড়া, মাংসপেশী, হাড় জোড়া এবং চক্ষুর কোন রোগ হলে শরীরের ভারসাম্যহীনতা, মুস্তিষ্কে শূন্যতা, সংজ্ঞাহীনতা, হাল্কা ঘূর্ণি হয়ে থাকে সঙ্গে বমি ভাব, বমি, নিস্টেগমাস (Nystagmus) হয়ে থাকতে পারে।

অন্তঃকর্ণের (Vestibule) কোন রোগ হলে মূলত তীব্র ঘূর্ণি (Vertigo) হয়ে থাকে সঙ্গে বমি ভাব (Nausea), বমি (Vomiting), নিস্টেগমাস (Nystagmus) , ভারসাম্যহীনতা ও শ্রবণশক্তি কম হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।

কিছু অতি সাধারণ অন্তঃকর্ণের রোগ যা মাথাঘোরা বা (Vertigo) সৃষ্টি করে

বিনাইন প্যারঅক্সিস্মাল পজিশনাল ভারটাইগো (Benign Paroxysmal Vetigo) : এটি একটি অতি সাধারণ (Common) উপসর্গ। হঠাৎ করে মাথা কোন নির্দিষ্ট অবস্থানে নিলে মাথা ঘোরা শুরু হয়। সাধারণত শোবার সময় মাথা এদিক ওদিক করলে, নামাজ পড়লে বা মাথা হেলিয়ে কোন কাজ করলে এ জাতীয় মাথা ঘোরা শুরু হয়। বয়সজনিত কারণে, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্তঃকণের্র ঝিল্লির ভিতরের তরল পদার্থের কিছু পরিবর্তনে এ রোগ হয়। সুখের বিষয় এই যে, এ ধরনের vertigo বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না এবং ধীরে ধীরে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।

আরও পড়ুনঃ   ব্রেইন টিউমারের নীরব ৮ লক্ষণ

মিনিয়ার্স ডিজিজ (Menier’s Disease)

এ রোগে হঠাৎ করে মাথা ঘোরা শুরু হয়, সাথে বমি ভাব, বমি, ভারসাম্যহীনতা, শ্রবণশক্তি সাময়িক কমে যাওয়া, নিস্টেগমাস থাকতে পারে। এর স্থায়িত্ব হয় কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক দিন।

অন্তঃকর্ণের ঝিল্লির Membranous labyrinthine Hydrops কারণেই এ রোগ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। ভেস্টিবিউলার নিউরোনাইটিস (Vestibular Neuronitis) : ভাইরাসজনিত কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। নিকট অতীত অথবা বর্তমানে ফ্লু হয়ে থাকতে পারে। এ রোগের মাথা ঘোরার স্থায়িত্ব সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। পূর্ণ বিশ্রাম সাথে কিছু ওষুধ (Labyringhine Sedatives) এর একমাত্র চিকিৎসা।

ল্যাবিরিন থাইটিস (Labryrinthitis) : অন্তঃকর্ণে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়াজনিত প্রদাহ হলে এ রোগ হয়। কানে কম শুনতে পাওয়া, বমি, বমি ভাব, চোখের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, ভারসাম্যহীন থাকা স্বাভাবিক। অনেক সময় (Labyringth এর আশপাশে কোন প্রদাহ হলে মাথা ঘোরা হয়ে থাকে। একে সেরাস ল্যাবিরিনথাইটিস বলে।

একুইস্টিক নিউরোমা (Acoustic Neuroma) : কানের ভেতরের সুড়ঙ্গ পথে Canal বা Cp Angle এ এই ধরনের টিউমার হতে পারে। তবে এতে শুধু একদিকের শ্রবণশক্তি কমে যায়। কেবলমাত্র অস্ত্রোপচারের সাহায্যে এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

অন্যান্য (Others) : কানের আরও কিছু সাধারণ কারণে মাথা ঘোরা রোগ হয়। যেমন মধ্যকর্ণে প্রদাহ, ইউস্টাশিয়ান টিউবের বন্ধ থাকা বা প্লেনে ভ্রমণে বেরো ট্রমা হওয়া, কানে শক্ত খৈল, কানের পর্দায় চাপ প্রয়োগ করলে মাথা ঘোরা রোগ হতে পারে।

কান ছাড়া অন্য যেসব কারণে মাথা ঘোরা রোগ হতে পারে

০ মস্তিষ্কের বিশেষ জায়গায় রক্তের সঞ্চালন কম হওয়া, রক্তক্ষরণ হওয়া, মস্তিষ্কের টিউমার কিংবা মাল্টিপাল স্কেলরোসিস হলে।

০ রক্তস্বল্পতা, রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে।

০ ওপর থেকে নিচে তাকালে।

০ মাইগ্রেন হলে।

শেষ কথা : মাথা ঘোরা রোগ অনেক কারণেই হতে পারে। এ জন্য পরিপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন, বিশেষ করে তীব্র ঘূর্ণি বা Vertigo  হলে অবশ্যই কোন নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়।

আরও পড়ুনঃ   বালকদের ক্ষুদ্র পুরুষাঙ্গ নিয়ে কিছু পরামর্শ ও চিকিৎসা

-অধ্যাপক মেজর (অবঃ) এম মোতাহার হোসেন

নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − 13 =