ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ একটি কৃমি জাতীয় রোগ যা ক্ষুদ্র পরজীবী জীবাণুর আক্রমণে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। এই পরজীবীর জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মশার কামড়ে। মূলত কিউলেক্স মশার কামড়ে এই জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তবে অ্যানোফেলিস ও এডিস মশার কামড়ে ও এই পরজীবীর জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আমরা জানি অ্যানোফেলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ও এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বর মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। এই দুই রোগের মত ফাইলেরিয়ার রোগও মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মশার কামড়ে। এই ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ একটি মারাত্মক রোগ। ফাইলেরিয়া একটি কৃমিজাতীয় রোগ কিন্তু এই রোগের পরজীবী আমাদের অন্ত্রে বাস করে না। ফাইলেরিয়া জীবাণু রোগীর লসিকানালীতে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ণবয়স্ক হয় এবং লসিকানালীতে প্রদাহের সৃষ্টি করে। কালক্রমে লসিকানালী ফুলে যায় ও বন্ধ হয়ে লসিকা প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের উত্তরাংশে এই রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
লক্ষণঃ পরজীবী শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে প্রায় ৩ মাস সময় লাগে। রোগীর শরীরে জ্বর হয়। শরীরে এলার্জীর মত চুলকানী দেখা দিতে পারে। লসিকা নালীর প্রদাহের ফলে লসিকানালীতে ব্যথা হয় ও লাল হয়ে ফুলে যায়। ধীরে ধীরে লসিকানালী বন্ধ হয়ে যায় ফলে রোগীর হাত, পা, অন্ডকোষ, যৌনাঙ্গ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তনের চামড়া ফুলে পুরু হয়ে খসখসে হয়ে উঠে। দেখতে হাতির চামড়ার মত মনে হয় বলে গোদ রোগের অন্য নাম এলিফ্যানটিয়াসিস।
চিকিৎসাঃ এই রোগের চিকিৎসায় ডাই-ইথাইল কার্বামাজিন ঔষধ সেবন করতে হয়, তবে ঔষধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিরোধ
১। মশা নিধন করতে হবে এবং ঘুমানোর পূর্বে মশারী ব্যবহার করতে হবে।
২। সরকারিভাবে বর্তমানে গোদ রোগ প্রতিরোধের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে অ্যালবেনডাজল ও ডাই ইথাইল কার্বামাজিন ঔষধ (ডিইসি) বিতরণ করা হচ্ছে। এই ঔষধগুলো নিয়ম অনুযায়ী সেবন করতে হবে। ২ বছরের কম শিশুদের ও গর্ভবতী মহিলাদের এই ঔষধ সেবন করা যাবে না।
**************************
ডাঃ মোঃ খায়রুল ইসলাম