প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস মধু পানির ১৫ টি দারুণ উপকারিতা

0
436
মধু পানি

প্রাচীন কাল থেকেই ঔষধ হিসেবে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। নানা রোগের নিরাময় এবং কাটাছেঁড়া দ্রুত সারিয়ে তোলার কাজেও ব্যবহার হতো মধু। তাই প্রতিদিন খানিকটা মধু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি কাজ। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন সকালে উঠে এক গ্লাস পানিতে এক বা দু চামচ মধু মিশিয়ে যদি খাওয়া যায়,তাহলে এটি আপনার দিনটিকে মধুরতা দিয়ে শুরু করবে। শুধু তাই নয়। এই একগ্লাস মধু পানি আপনার শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর ফেলবে দারুণ চমৎকার প্রভাব। ফলে শরীরকে নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকে না। কারণ এমনটা করলে শরীরের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। ফলে আয়ু বৃদ্ধি পায় চোখে পড়ার মতো। তবে এখানেই শেষ নয়, নিয়মিত এই পানীয়টি খেলে মেলে আরও অনেক উপকার। এমনটিই জানিয়েছে জীবনশৈলী বিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই ও অন্যান্যরা । জানতে চান সেই অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে:
মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক এন্টি-অক্সিজেন যা লুকিয়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা দূর করতে সাহায্য করে এবং এটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রোটেকশন যা আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
এটি শরীরের জন্য উপকারী। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি যা শরীরের চিনির মাত্রা ঠিক রাখে। এটি কোলেস্টারলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।

বদ-হজমের সমস্যা দূর হয়
প্রতিদিন সকালে উঠে হলকা গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে স্টমাকের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বদ-হজম বা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা মাথা তোলার সুযোগই পায় না। সেই সঙ্গে মধুতে উপস্থিত একাধিক পুষ্টিকর উপাদান অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই হোস্টেলের খাবার মুখে তুলতে না পেরে যদি রাস্তার দোকানের খাবার খেয়ে আপনাকে ক্ষিদে মেটাতে হয়ে, তাহলে আজ থেকেই পানি এবং মধুকে সঙ্গী বানান। দেখবেন কোনও ধরনের পেটের রোগ আপনাকে ছুঁতেও পারবে না।

শরীরে থেকে সব বিষ বেরিয়ে যায়
খাবারের সঙ্গে তো বটেই, আরও নানাভাবে একাধিক ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরে এবং রক্তে প্রতিনিয়ত মিশে চলেছে। এই সব টক্সিক উপাদানগুলিকে যদি শরীর থেকে বার না করা যায়, তাহলেই কিন্তু বিপদ! আর এক্ষেত্রে আপনাকে দারুনভাবে সাহায্য করতে পারে পানি এবং মধু। কিভাব? এই পানীয়টি খাওয়ার পর পরই প্রস্রাবের হার বেড়ে যাবে। ফলে কিডনি, প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে শরীরে উপস্থিত এইসব টক্সিক উপাদানদের বের করে দিতে পারবে। ফলে কমবে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।

আরও পড়ুনঃ   ওজন কমানোর সেরা অস্ত্র ‘কালোজিরা আর মধু’ জেনে নিন কিভাবে খাবেন

ওজন কমাতে সাহায্য করে

সরকারি এবং বেসরকারি পরিসংখ্যানের দিকে নজর ফেরালে বুঝে যাবেন অতিরিক্ত ওজনের কারণে কীভাবে নানাবিধ মারণ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে এদেশে। তাই তো ভাই-বোন-বন্ধু, আপনার ওজন যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে থাকে, তাহলে প্রতিদিন সকালে উঠে কুসুম গরম পানিতে কয়েক চামচ মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে খেতে ভুলবেন না যেন! মধু পানি জমে থাকা চর্বি দূর করতে সহায়তা করে থাকে। আসলে এমনটা করলে ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, ফলে অতিরিক্তি মেদ ঝরে যেতে সময় লাগে না। মধু হচ্ছে প্রাকৃতিক চিনি যা আমাদের দেহে এনার্জির সরবরাহ করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এতে করে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় কম থাকে।

অ্যাসিডিটির হাত থেকে রক্ষা করে

প্রতিদিন ১ গ্লাস মধু পানি পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মধুর অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ পাকস্থলীর মিউকাসের নিঃসরণ ঘটায় যা জ্বালাপোড়া মুক্ত করে। এছাড়াও মধু পানি আমাদের কোলন ও ইনফিউসকে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:

প্রতিদিন ১ গ্লাস মধু পানি খাওয়ার অভ্যাস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মধুর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহকে ভেতর থেকে সবল করে তোলে এবং যেকোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে দেহকে তৈরি করে। অর্থাৎ সুস্থ থাকতে দেহের ইমিউন সিস্টেমকে চাঙ্গা রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আর এই কাজটি করবেন কিভাবে? খুব সহজ! প্রতিদিন মধু এবং কুসুম গরম পানি খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন রোগের ভোগান্তি আর পোয়াতে হবে না। আসলে মধুতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরের ভেতরে খারাপ ব্যাকটেরিয়ার বাঁচতে দেয় না। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে অন্যান্য ক্ষতিকর জীবনুও শরীরের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, জেনারেল মাইক্রোবায়োলজিস স্পিং কনফারেন্সে মধুর কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা চালাকালীন চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন মধুতে উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের খতম করে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ   রসুন ও মধু একসাথে খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি ?

অ্যালার্জির প্রকোপ কমে
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এক কুসুম গ্লাস গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেরানো পলেন বা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারি উপাদানগুলি সেভাবে আমাদের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যালার্জির প্রভাব কমতে শুরু করে।

পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে

গ্যাসের সমস্যা হলে একধরণের অস্বস্তি কাজ করতে থাকে যা দূর করতে পারে মধু পানি এক নিমেষেই। গ্যাসের সমস্যা শুরু হলে ১ চামচ মধু ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করে ফেলুন। এটি পেট ঠাণ্ডা করবে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করবে।

দুর্বলতা কাটিয়ে দেহে তাৎক্ষণিক এনার্জি সরবরাহ করে

সারাক্ষণই কি ক্লান্ত লাগে? শরীরে চিনির মাত্রা কমে গেলে দুর্বলতা অনুভব হয়। মধু পানি শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রেখে শরীরের এনার্জি বৃদ্ধি করে। তাই পানি-মধুর যুগলবন্দীকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন! কারণ এই পানীয়টি একদিকে যেমন দেহের ভেতরে পানির ঘাটতি দূর করে শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে, তেমনি অন্যদিকে মধু, দেহে কার্বোহাইড্রেটের যোগান ঠিক রাখার মধ্যে দিয়ে এনার্জির ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং যদি দুর্বলতা অনুভব করে থাকেন তাহলে অনেক সময় তা দেহে সুগারের মাত্রা কমে গেলে অনুভূত হয়। অনেকে এই সময় এনার্জি ড্রিংক নামক বিষ পান করে থাকেন। এর পরিবর্তে যদি ১ গ্লাস মধু পানি পান করে ফেলেন তবে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে এনার্জি পাবেন, দুর্বলতা কেটে যাবে এবং দেহ থাকবে সুস্থ।

হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এক গ্লাস পানিতে অল্প পরিমাণে মধু এবং দারুচিনি মিশিয়ে খাওয়া শুরু করলে একদিকে যেমন খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে থাকে, তেমনি আর্টারির ক্ষমতাও বাড়ে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্যের এত মাত্রায় উন্নতি ঘটে যে কোন ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

আরও পড়ুনঃ   মধু সেবনের আশ্চর্য উপকারিতা

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে

এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে এটি দেহে ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।

সর্দির প্রকোপ কমে
হঠাৎ ঠান্ডা লেগে যাওয়ার কারণে গলায় ব্যথা। সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশিকে ভুগছেন নাকি? চিন্তা নয়। এক গ্লাস গরম পানিতে কয়েক চামচ মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। প্রসঙ্গত, বুকে সর্দি জমে থাকার মতো সমস্যা কমাতেও মধু এবং পানির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

কোষ্টকাঠিন্য প্রতিরোধে

শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি সকালে খালি পেটে একবার এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবার পান করুন। এটি আপনার কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

মধুতে এনজাইম আছে যা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। যদি আপনার হজমে সমস্যা থাকে তবে খাওয়ার পর এক গ্লাস কুসুম গরম মধু পানি পান করুন, দেখবেন হজমের সমস্যা দূর হয়ে গেছে।

তাই তো এবার থেকে কলেজ বা অফিস যাওয়ার আগে ল্যাথারজিক লাগলে কী করতে হবে, তা নিশ্চয়ই জেনে গেলে বন্ধুরা!

বিঃ দ্রঃ গুরুত্বপূর্ণ হেলথ নিউজ ,টিপস ,তথ্য এবং মজার মজার রেসিপি নিয়মিত আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে লাইক দিন আমাদের ফ্যান পেজ বিডি হেলথ নিউজ এ ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 4 =