পোস্ট মেনোপজাল সিন্ড্রোম

0
345
পোস্ট মেনোপজাল সিন্ড্রোম

পোস্ট মেনোপজাল সিন্ড্রোম বা PMS আমাদের অনেকের কাছেই হয়ত অপরিচিত একটি টার্ম, যদিও এটি সকল নারীদের জীবনেরই একটি অবিচ্ছেদ্য এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। Post Menopause বা রজঃনিবৃত্তি বলতে সাধারাণত পিরিওড বা মাসিক বন্ধের পরবর্তী অবস্থা বোঝায়। আরও সূক্ষভাবে বললে সাধারণত এক বছর বা ততধিক সময় ধরে মাসিক বা রজঃচক্র না ঘটলে বোঝা যায় কোন নারী তার Post-Menopausal দশা অতিক্রম করছেন।

আর এই সময়ে একজন নারী যেসব সমস্যাবলীর মুখোমুখি হন সামগ্রিকভাবে তাকেই বলা হয় Post-Menopausal Syndromes। সাধারণত ৪৪ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে একজন নারীর রজঃনিবৃত্তি ঘটে। আর এই সময়টাতেই পি.এম.এস. দেখা দেয়। অবশ্য অস্ত্রপচারের মাধ্যমে অনেক কম বয়েসেই ঋতুচক্র বন্ধ করে রজঃনিবৃত্তি দশা লাভ করা যায়। রজঃনিবৃত্তির পর প্রত্যেক নারীই ভিন্নভাবে প্রভাবিত হন। এসময় নারীদের বিশেষভাবে স্তন ক্যানসার, চুল পড়া, ওজন বাড়া, চামড়ার বুড়িয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের অস্বাভাবিকতা, যৌন শীতলতা, হৃদরোগ, ফাইব্রয়েডস এবং অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি) এর মত রোগের অধিক ঝুকি দেখা দেয়।

এছাড়া মানসিকভাবেও অনেকে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যেহেতু এসময় Ovulation ঘটেনা, তাই নারীদেহের প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমান প্রায় শুন্যের কোঠায় চলে আসে। আর এর ফলে নারীরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েন। এছাড়া ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদনও ৪০ থেকে ৬০ ভাগ কমে আসে ঋতু চলাকালীন সময়ের চাইতে। যেহেতু নারী দেহকে সুস্থ রাখতে এই ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরণ হরমোনের একে অপরকে ব্যাল্যান্স করা প্রয়োজন, তাই এই ব্যালান্স না থাকার কারণেই রজঃনিবৃত্তিকালে নারীরা নানারকম শারীরিক সমস্যার শিকার হন। এই দুটি হরমোনের ব্যালান্স বজায় থাকলে একজন নারী চাঙ্গা, সতেজ, উৎফুল্ল এবং সর্বপোরী সুস্থ। রজঃনিবৃত্তির সময়ে যেসব শারীরিক অসুস্থতার সম্মুখীন হন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রোজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতি জনিত কারণে, ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির কারণে নয়।

পি.এম.এস-এর ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, সেগুলোর ভেতর যোনিপথে রক্তক্ষরণ একটি বেশ আশঙ্কাজনক ঘটনা। এ ঘটনা ঘটলে অবশ্যই একজন ভাল যৌনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। যদিও প্রায়শই এটি তেমন চিন্তার কোন বিষয় না, তবুও এটি একটি মারাত্মক স্বাস্থ ঝুঁকির সংকেত হতে পারে। হরমোনের মাত্রার ওঠানামার কারণেই এমনটা হয়। রজঃনিবৃত্তির পর ঘাম জ্বর সচরাচর হয় না, অধিকাংশ নারীদের ক্ষেত্রে রজঃনিবৃত্তির ২ মাস থেকে ২ বছর পর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটতে পারে। যোনিপথ হতে পাতলা, স্বচ্ছ তরলের নিঃসরণ ঘটতে পারে যা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে আসার কারণে হতে পারে। এক্ষেত্রে তরলের সাথে ঈষৎ রক্তবর্ণ যুক্ত হতে পারে। চেহারায় লোমের পরিমান বৃদ্ধিও পি.এম.এস-এর একটি লক্ষণ যা ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টস্টেরন হরমোন ক্ষরণের তারতম্যের কারণে ঘটে। টেস্টস্টেরন ছেলেদের হরমোন হলেও মেয়েদের শরীরেও সামান্য মাত্রায় নিঃসরিত হয় যা মুখমন্ডল, বগল, হাত-পা ও উরুসন্ধির লোম সৃষ্টির কারণ। এছাড়া মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা, খিট-খিটে মেজাজ ইত্যাদি উপসর্গও এ সময় নারীদের মাঝে দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ   মেয়েদের অর্গাজমের আসল রহস্য কি?

আপাতদৃষ্টিতে পি.এম.এস-এর কোন চিকিৎসা না থাকলেও নারীরা কিছু নিয়ম মেনে চললে এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নুন্যতম পর্যায়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। এসময় নারীদের যথেষ্ট পরিমান পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে এসময় বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। কম চর্বি, অধিক আঁশ যুক্ত খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। কফি ও মশলাদার খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। কিছু প্রশান্তিদায়ক ব্যায়াম আছে যা উদ্বেগের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ধূমপান অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে কেননা এটি অন্যান্য মারাত্মক স্বাস্থ ঝুঁকি যেমন উচ্চ মাত্রায় কলেস্টরল, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ এবং দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়াকে তরান্বিত করে।

ফরহান এহসান

লিউকোরিয়া বা সাদাস্রাবজনিত সমস্যা সমাধানের কয়েকটি ঘরোয়া উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + eighteen =