পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন: নতুন বাবাদের জেনে রাখা জরুরী

0
314
পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন

দশ মাস সন্তান ধারণ এবং তার জন্মের পরের সময়টায় মায়ের মানসিক অবস্থায় পরিবর্তন আসে, এটা জানেন অনেকেই। অনেক নারীই এই সময়টায় “বেবি ব্লুজ” অথবা সন্তান জন্মদানের পর বিষণ্ণতার একটা পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যান। তীব্র হতাশা ও বিষণ্ণতার এই অবস্থা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন এর চাইতেও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী। ধরে নেওয়া হয় বাবা নয়, শুধুই মা’কে আক্রান্ত করে এই ডিপ্রেশন, আসলে কিন্তু তা ভুল!

পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্যকে বরাবরই এড়িয়ে যাওয়া হয়। ভাবা হয়, হতাশ ও বিষণ্ণ হতে পারবেন না তারা! এসব অনুভূতিকে মনে করা হয় দুর্বলতার লক্ষণ, আর তাই পুরুষরাও স্বীকার করতে চান না তারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন। কিন্তু এটা প্রমাণিত, যে সন্তান জন্মের পর পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনে পুরুষরাও ভোগেন।

চিকিৎসকেরা যা জানেন

গবেষণায় দেখা যায়, স্ত্রী সন্তান জন্ম দেবার পর স্বামীর শরীরে টেস্টোস্টেরন লেভেল কমে যাওয়া এবং পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের মাঝে যোগসূত্র আছে। প্রায় ১৪ শতাংশ পুরুষ এতে ভোগেন।

এছাড়াও, পিতা ও মাতার মাঝে আলাদা সময়ে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হতে দেখা যায়। সাধারণত গর্ভধারণের পর চার মাস পর্যন্ত নারীর মাঝে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন দেখা যায়। কিন্তু পুরুষের মাঝে তা দেখা যায় সন্তান জন্মের তিন থেকে ছয় মাস পর।

লক্ষণ

ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গ মেডিকেল সেন্টারের ডঃ পিয়ের আযাম জানান, পুরুষের মাঝে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের লক্ষণ হতে পারে ঘুমের ছন্দপতন, মনোযোগের অভাব এবং ক্ষুধামন্দা। তার আচরণের এই পরিবর্তন হয় ধীর। মূলত তাদেরকে উদাসীন মনে হয়, তারা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং নিজের ওপর বিরক্ত হতে থাকেন।

কারণ

সাধারণত পুরুষে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের পেছনে কারণ হিসেবে থাকে নবজাতকের কারণে ঘুমের অভাব। এছাড়া পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস থাকলেও তা হতে পারে। অপরিকল্পিত গর্ভধারণের কারণে, সন্তানের লিঙ্গের ব্যাপারে, অসুস্থ সন্তানের কারণে বা শুধুই পরিবারে নতুন সদস্য যোগ হবার স্ট্রেস থেকেও পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের উৎপত্তি হতে পারে। তবে হরমোনেরও ভূমিকা থাকে এর পেছনে।

আরও পড়ুনঃ   মানসিক স্বাস্থ্য বলতে কী বোঝায়?

আমরা ভাবি, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শুধু নারীরই শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। আসলে কিন্তু তা নয়। সন্তান জন্মের তিন থেকে ছয় মাস পর পিতার শরীরে টেস্টোস্টেরন লেভেল কমে যেতে পারে এবং ইস্ট্রোজেন বেড়ে যেতে পারে। হরমোনের এই পরিবর্তন এবং ঘুমের অভাবের মত কিছু ব্যাপার একসাথে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

অনেক সময়েই দেখা যায়, মায়ের পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন দেখা যাচ্ছে মানে বাবারও তা হতে পারে।

অনেকেই বলেন, সন্তান জন্মের পর কিছুটা অ্যাডজাস্ট করেই নিতে হবে। একটু ওলটপালট হওয়াটা স্বাভাবিক। তা ঠিক, কিন্তু যদি মেজাজের পরিবর্তন ছয় থেকে আট সপ্তাহ পরেও ঠিক না হয়, মেজাজ খিটখিটে থাকে বা বিষণ্ণতার অন্যান্য উপসর্গ বজায় থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।

গবেষণা চলছে

পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের ওপরে গবেষণা চলছে, তবে নারীর ব্যাপারে যত তথ্য জানা আছে, পুরুষের ব্যাপারে জানা আছে ততটাই কম। বেশিরভাগ সময়ে পুরুষরা নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মনযোগী হন না। এই বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কারো সাহায্য নিতেও চান না। এ কারণে এ বিষয়ে গবেষণার পাশাপাশি সচেতনতাও জরুরী।

সূত্র: Huffington Post

আর বি

বিষণ্ণতা প্রতিরোধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + eight =