পায়ু পথে রক্ত পড়ার কারণ ও প্রতিকার

0
1957
পায়ু পথে রক্ত পড়া

পায়ুপথে রক্ত পড়া কখনোই স্বাভাবিক নয়। তবে পায়ুপথে রক্ত যাওয়া নিজে কোনো রোগ নয়, অন্য রোগের লক্ষণ মাত্র। যেহেতু পায়ুপথে রক্ত যাওয়া একটি অস্বাভাবিক ব্যাপার, তাই পায়ুপথে রক্ত গেলে তা যেকোনো বয়সেই হোক না কেন, অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে ব্যবস্থা নিতে হবে। রক্ত পড়ার কারণ সাধারণ রোগ থেকে শুরু করে মারাত্মক ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

পায়ুপথে রক্ত পড়ার সাধারণ কারণ:

  •  রেক্টাল পলিপ
  •  ইন্টাস সাসসেপশন
  • পাইলস বা হেমরয়োড়
  • এনালফিয়সার
  • ফিস্টুলা ইন এনো
  • পায়ুপথ, রেক্টাম বা কলোনে ক্যাপার
  • রেক্টাল আলসার
  •  আঘাতজনিত
  • ডাইভার্টিকুলার ডিজিজ
  • এনজিও ডিস্লাসিয়া
  • অন্যান্য- ক্রনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, বেসিলারি ডিসেন্ট্রি, অধিক রক্ত পড়ার প্রবণতা। যতগুলো কারণ দেয়া হলো, তার কিছু কারণ আমাদের দেশে বিরল আবার কিছু বয়সভেদে তারতম্য লেখা যেতে পারে।

লক্ষণগুলো:

আগেই বলা হয়েছে, পায়ুপথেরক্ত যাওয়া নিজে কোনো রোগ নয়, অন্য রোগের লক্ষণ মাত্র। তাই রোগীর পায়ুপথে রক্ত পড়ার সাথে ওই রোগের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

রেক্টাল পলিপ:

এ রোগ হলে পায়ুপথে টাটকা রক্ত যায়, মলদ্বার দিয়ে গেলে গোটার মতো বের হতে পারে, যা পায়খানার পরে এমনি এমনিই ভেতরে চলে যেতে পারে বা আঙুল দিয়ে ধাক্কা দেয়া লাগতে পারে। এ রোগ যেকোনো বয়সেই হতে পারে তবে সাধারণত শিশু বয়সেই বেশি।

ইন্টাস সাসসেপশান :

শিশুদের হয়। সাধারণত ৫-১০ মাস বয়সে এ রোগ দেখা যায়,যখন শিশুকে বুকের দুধের সাথে অন্য খাবার শুরু করা হয়। এ রোগে শিশু ব্যথায় কান্না করে। ব্যথা অনেকক্ষগ পর পর হয়। দুই ব্যথার মাঝে শিশু সুস্থ বোধ করে। শিশু রক্ত ও আমমিশ্রিত মলত্যাগ করে একে “রেড বরেন্ট জেলি” বলে। পরে শিশুর পেট ফোলা, বমি ইত্যাদি হতে পারে।

পাইলস বা হেমরয়েড :

 মধ্য বয়সে পায়ুপথে টাটকা রক্ত যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে পাইলস বা হেমরয়েভ অন্যতম। এ ক্ষেত্রে প্রথম নিকে পায়খানার পরে টাটক রক্ত ফোটায় ফোটায় বা ফিনকি দিয়ে পড়তে পারে, কিছুদিন পর মালদার দিয়ে গোল গোটা বা মাংসপিণ্ডের মতো বের হতে পারে, যা প্রথম দিকে পায়খানার পরে এমনি এমনিই ভেতরে চলে যেতে পারে বা আঙুল দিয়ে ধাক্কা দেয়া লাগতে পারে। উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে পরবর্তী সময়ে গোটা বা মাংসপিণ্ডগুলো ভেতরে ঢোকে না, তখন নানারকম জটিলতা দেখা দেয় এবং অপারেশন জরুরি হয়ে পড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলো বিনা অপারেশনেই চিকিৎসা সম্ভব হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   হেপাটাইটিস সি এর লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

এনাল ফিসার:

এসব ক্ষেত্রে রক্ত পড়া ছাড়াও মলত্যাগের সময় ও পরে ব্যথা হতে পারে।

 পায়ুপথ বা রেক্টামে ক্যান্সার:

এ রোগ সাধারণত ৪০ বছর বা তার পরে বেশি দেখা গেলেও আগেও হতে পারে। এ রোগ পায়ুপথে রক্ত যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেক ক্ষেত্রে পাইলস মনে করে ঝাড়ফুঁক ও অন্যান্য টোটকা চিকিৎসা নিয়ে রোগ জটিল করে ফেলে। পায়ুপথ বা রেক্টামে ক্যান্সার হলে পায়ুপথে টাটকা রক্ত, আম যাওয়া ছাড়াও মলত্যাগের পর আরো মলত্যাগের ইচ্ছা থেকে যায়। মাঝে মাঝে ডায়রিয়া ও মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সঠিক সময়ে  চিকিৎসা না করালে পরবর্তী সময়ে মলদ্বারে ব্যথা, মল এলে ধরে রাখতে না পারা, পায়ুপথ বা রেক্টাম বন্ধ হয়ে পেট ফোলা, বমি ইত্যাদি হতে পারে। এছাড়া রোগী অত্যধিক দুর্বল বোধ করতে পারে। অনেক সময় রেক্টামে ক্যান্সারের কারণে পাইলস হতে পারে। তাই পায়ুপথে রক্ত গেলে বা পাইলাস মনে হলে কখনোই একে হালকাভাবে নেয়া ঠিক হবে না।

অন্নান্য:

উপরি উক্ত কারণ ছাড়াও ক্রনেস ডিজিজ, আলসারেটিভ কলাইটিস, ডাইভারটিকুলাইটিস ইত্যাদি রোগ, যদিও আমাদের দেশে কম। তবুও পায়ুপথে রক্ত পড়ার ক্ষেত্রে এসব রোগের কথা মাথায় রাখতে হবে।

রোগ নির্ণয় :

রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন সময় নিয়ে রোগী বা রোগীর নিকটাত্মীয়দের থেকে রোগের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ শোনা, যেমন- রোগীর বয়স, রক্ত পড়ার কারণ, রক্ত পড়ার ধরন অর্থাৎ মলত্যাগের আগে না পরে ফোঁটায় ফোঁটায় না মলের সাথে মিশে অথবা মলত্যাগের সময় বা পরে ব্যথা হয় কি না, মালদ্বার দিয়ে এক বা একাধিক গোলপিন্ডের মতো বের হয় কি না, মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়েছে কি না যেমন মাঝে মাঝে ডায়রিয়া ও মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য, মলত্যাগের পরে আরো মলত্যাগের ইচ্ছা থেকে যায় ইত্যাদি।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা:

(উপযুক্ত স্থানে, অন্যদের থেকে আড়াল করে, মহিলাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিসটার বা মহিলার উপস্থিতিতে) মলদ্বার ও মলদ্বারের চার পাশ দেখতে হবে। পায়ুপথে (গ্লাভস পরা) আঙুল ঢুকিয়ে (ডিআরই) পরীক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া মলম্বাগের ভেতর ও রেক্টাম দেখার জন্য

আরও পড়ুনঃ   মূত্রনালির সংক্রমণ, কারণ ও প্রতিকার

প্রলোস্কপি ও সিগময়াভোস্কপি করা লাগতে পারে।এ ছারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কলোনোস্কপি বা বেরিয়াম এনেমা এক্স-রে করা প্রয়োজন হয়।

চিকিৎসা:

  •  চিকিৎসার ব্যাপারে প্রথমেই চিকিৎসা শুরুতে হবে কারণ বা কারণগুলোর
  •  কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরামর্শ ও ওষুধই যথেষ্ট, যেমন- প্ৰাথমিক পর্যায়ের পাইলস, ডাইভার্টিকুলার ডিজিজ, অ্যাকিউট এনাল ফিসার ইত্যাদি।
  •  কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন লাগার সম্ভাবনাই বেশি, যেমন- ইন্টাস সাসসেপশন, তৃতীয় ডিগ্নি হেমরয়েড ইত্যাদি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপারেশন ছাড়া বিকল্প নেই যেমন- রেক্টাল পলিপ, ফিস্টুলা ইন এনো, চতুর্থ ডিগ্রি-হেমরয়েড পায়ুপথ, রেক্টাম বা কলোনে ক্যান্সার ইত্যাদি।

উপসংহার

দেখা যায় পায়ুপথে রক্ত পড়ার অনেক কারণ, যা সাধারণ সমস্যা থেকে শুরু করে জটিল দুরারোগ্য ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শ ও ওষুধই চিকিৎসার জনা যথেষ্ট। তবে চিকিৎসার ধরন ও ফলাফল

নির্ভর করে রোগীর রোগের কারণ বা কোন পর্যায়ে আছে তার ওপরে। রোগ যত তাড়াতাড়ি বা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যাবে, তার চিকিৎসা তত সহজ হবে এবং ফলাফলও হবে ততটাই ভালো। মনে রাখতে হবে, অপারেশনের ক্ষেত্রেও অপারেশন রোগের যত প্রাথমিক পর্যায়ে করা যাবে তার সফলতা ততটাই বেশি। তাই পায়ুপথে রক্ত দেখা গেলে অযথা অবৈজ্ঞানিক ও ভুল চিকিৎসা করে সময় নষ্ট না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি বিশেষত্ব সার্জনের  শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

লেখক: ডা. এস এম নজরুল ইমলাম।

এম বি বি এস (ঢাকা), এফ সি পি এস (সার্জারি)।

মলের সঙ্গে রক্ত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve + ten =