ভ্যাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জয়ী হলেও আন্দোলনরত মেডিকেল ভর্তিচ্ছুদের দাবি আদায় হয় নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে নতুন পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দাবি করে আসছে আন্দোলনকারীরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে কাউকে কাউকে আটক করা হয়েছে এবং আটকাবস্থায় ইউজিসির একজন অভিযুক্ত কর্মকর্তা মারা গেছেন। এই মৃত্যু নিয়েও রয়েছে অভিযোগ আর পাল্টা-অভিযোগ। ফলে মেডিকেলের ভর্তি নিয়ে তলে তলে যে অনেক কিছুই হয়েছে বা হচ্ছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় ন। এতে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটির সৃষ্টি হবে, তা হলো মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের বারোটা বেজে যাবে। নকল করে ভর্তি হয়ে তারা যে কি করবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। আর যারা ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নব্য-মেডিকেলে মোটা টাকা দিয়ে ভর্তি হচ্ছে, তারা পেশাগত জীবনে কসাইয়ের মতো আচরণ করে টাকাই কামাবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য কেবল আইন-শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণেই বিপণœ ও বিপদগ্রস্ত হবে না; বরং এমন লোকদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যারা জীবন বাঁচানোর শিক্ষা নিয়ে জীবনের বারোটা বাজাবে। বস্তুতপক্ষে, বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষত স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থার এমন শোচনীয় হাল অতীতের সকল রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে।
হবেই না কেন? যেখানে বেতন ও পদ-মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকদের অবমূল্যায়িত করা হয়, সেখানে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। এমন কি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি পর্যন্ত শিক্ষকদের মান-মর্যাদা বাঁচাতে যখন রাজপথে নামতে হয়, তখন শিক্ষাব্যবস্থার চিত্রটি সহজেই অনুমানযোগ্য। এতে স্বাস্থ্য শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষাসহ সকল ধরনের শিক্ষাই ব্যাহত হবে বা হচ্ছে। এবং পরিকল্পিতভাবে এটাই যেন করা হচ্ছে। চোখের সামনে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ ও অতিপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্র ও খাতসমূহ ধসে যাচ্ছে; অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে। যোগ্য ও মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে এবং বঞ্চিতরা প্রতিকার পাচ্ছে না। তাতে যেন কারোরই কোনো চিন্তা নেই। বরং সংশ্লিষ্টরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে এবং বেসরকারি মেডিকেলে লক্ষ লক্ষ টাকায় ভর্তির বাণিজ্য চালিয়েই চলেছেন। নকল করে ও টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেটধারীরা কতটুকু সুচিকিৎসা দিতে সক্ষম হবে, সেটা সবাই জানে। কর্তা ব্যক্তিগণ জানলেও লেনদেনের কারণে চুপ। ফলে ভবিষ্যতে অন্ধকার ও বিপদ নেমে আসারই জন্য কেবল অপেক্ষা করতে হচ্ছে; যে অন্ধকার ও বিপদের প্রধান শিকার হবে সাধারণ মানুষ, বিশেষত গরীব-দুখী জনতা। যাদের পক্ষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়, তারা।
অতএব, বলাই বাহুল্য, চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত দর্শন আর স্বাস্থ্য সেবার কাক্সিক্ষত সূচক ও মানদণ্ড বাংলাদেশের নিরিখে প্রচন্ডভাবে নিম্নগামী হয়ে গেছে। চিকিৎসার মূলমন্ত্র ও প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকথার সঙ্গে দেশের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যখাতের বিদ্যমান ক্ষয়িষ্ণু অবস্থাচিত্রের বিস্তর ফারাক তৈরি হয়েছে। বাস্তবে মিলছে না চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য চাহিদার প্রচলিত সেøাগানের সঙ্গে মানুষের বাস্তব প্রত্যাশা। দুর্নীতি, রাজনীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় স্বাস্থ্যখাত ও চিকিৎসাব্যবস্থা এখন সাধারণ মানুষের কাছে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। অর্থের লোভ আর বিত্তের চাহিদার সঙ্গে এই খাতে এসে মিশেছে সেবাহীন মনোবৃত্তি। অথচ শিক্ষাজীবনে মেডিকেলের ছাত্রদের গ্রিক দার্শনিক হিপোক্রেটিস নির্দেশিত শপথবাক্য পাঠ করতে হয়- ‘রোগীকে ভালোবেসে চিকিৎসা করব, অবহেলা বা অবজ্ঞা করব না। চিকিৎসার বিনিময়ে মুনাফা অর্জনের চেষ্টা থেকে বিরত থাকব।’ এইরূপ শপথ বাংলাদেশের নব্য-চিকিৎসকদের উচ্চারণ করেই সনদ পেতে হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শপথের কথাগুলো কতজন চিকিৎসক মনে রাখেন বা বিশ্বাস করেন বা পালন করেন?
অথচ হিপোক্রেটিস বিশ্বাস করতেন, সব ধরনের চিকিৎসাই নিঃস্বার্থ এবং মানবসেবার অন্তর্গত। তার এই দার্শনিকতা বোধকে সারা বিশ্ব মর্যাদা দিয়েছে। এবং চিকিৎসকদের মধ্যে গভীর মূল্যবোধ গড়ে তুলতে চেয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়ুয়া এবং পেশাদার চিকিৎসকেরা এই দর্শনকে, এই নৈতিকতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেবেন- এটাই একান্ত কাম্য। বিশ্বের এবং আমাদের দেশের মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের সামান্য অংশ আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। আবার এ রকম চিকিৎসক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান আকছার দেখা গেছে, যারা আর্থিক মুনাফাকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে পরিসেবা আর সেবাধর্মকে অবমাননা করছেন। এ প্রবণতা বিপজ্জনক। এতে রোগী, চিকিৎসক, চিকিৎসা ব্যবস্থার আন্তঃসম্পর্কের অবনতি ঘটে। ডাক্তারদের ব্যাপারে অপবাদ, অভিযোগ ও গুজবের রাস্তাও প্রশস্ত হয়। আর বাস্তবে যদি চিকিৎসকের কাছ থেকে অনৈতিক, অমানবিক, লোভী আচরণ পাওয়া যায় এবং কাক্সিক্ষত সেবার বদলে অবজ্ঞা ও অবহেলা পাওয়া যায়, তখন অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্যতা ও সত্যতা লাভ করে। এক-দুইজনের অবিমৃষ্যকারিতার জন্য একটি আস্ত পেশাগোষ্ঠীতে সামাজিকভাবে নিন্দিত ও আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বিরল নয়। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে যেন এমনটি না ঘটে, সেটা খোদ চিকিৎসকদেরদেরই স্বকর্মের সাফল্যের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। বাইরের লোকের বাহবায় কোনও পেশার মান যত না বৃদ্ধি পায়, তারচেয়ে বেশি বাড়ে সেই পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের আত্মসম্মান, মর্যাদা, পরহিত, ত্যাগ ও আদর্শবাদিতার দ্বারা। আজকে ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, চাকরিজীবী ইত্যাদি পেশা সম্পর্কে সমাজে ও মানুষের মধ্যে যে ধারণা ও মনোভাব রয়েছে, সেটা কিন্তু আকাশ থেকে আসে নি বা একদিনে তৈরি হয় নি। পেশাজীবীদের কর্ম ও আচরণের মাধ্যমেই রচিত হয় ভালো বা খারাপ ধারণা। একজন ঘুষখোর অফিসার বলতে আমরা যে বিকৃত প্রতিচ্ছবি দেখি, এটাও কিন্তু সেই নিন্দিত ব্যক্তির সম্পর্কে ঘৃণা ও নেতিবাচকতার মাধ্যমে সৃষ্ট একটি ইমেজ।
এটা ঠিক, অর্থ ছাড়া কারও সংসার চলে না। সে পেশাজীবী হোক বা ব্যবসাজীবীই হোক। ভব্যস্থ জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পরিহার্য। চিকিৎসকেরও টাকার প্রয়োজন। তাই বলে প্রয়োজনের সঙ্গে প্রলোভনকে, মোহকে, আত্মসর্বস্বতাকে, অহঙ্কারকে জড়িয়ে ফেলা উচিত নয়। অসুখ নিয়ে নিরুপায় হয়ে মানুষ আমাদের কাছে আসে। একজন সুচিকিৎসককে তখন তাদের প্রাথমিক পরীক্ষার পর যথাসম্ভব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করতে হয়, চিকিৎসকের প্রধান লক্ষ্য কী? অর্থ উপার্জন? রোগ নির্ণয়? রোগীর উপশম?’ একজন সুচিকিৎসককে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে যথাযথ চিকিৎসা আর নিরাময়ের মাধ্যমে। পাশাপাশি এ অব্যক্ত সঙ্কল্প পোষণ করতে হবে, রোগী যেন হাসতে হাসতে বাড়ি ফেরেন। এ সঙ্কল্পের সঙ্গে যে নৈতিকতা জড়িত, তার নাম চিকিৎসা দর্শন। যে কোনও সহজ বা দূরারোগ্য ব্যাধি সারাতে না পারা মানেই চিকিৎসকের পরাজয়। একজন চিকিৎসক যখন চিকিৎসা করেন, তখন তিনি একই সঙ্গে যোদ্ধা এবং শান্তির প্রবক্তা। তার যুদ্ধ রোগীর সঙ্গে বা অর্থ উপার্জনের সঙ্গে নয়। রোগের সঙ্গে। নিরাময়কে আয়ত্তে আনবার জন্য। চিকিৎসা একই সঙ্গে চিকিৎসক নিজের এবং রোগীর মুখে হাসি ফোটায়। চিকিৎসা দর্শন রোগী ও চিকিৎসকের মুখে হাসি দেখতে চায়। সাফল্য, বিজয়, আনন্দের হাসি।
প্রসঙ্গত, আরেকটি কথা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভালবাসা। চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব রোগীকে, মানুষকে ভালোবাসা। গভীর ও নিঃস্বার্থ ভালবাসা। এটা শুধু চিকিৎসার নয়, যে কোনও পরিসেবার প্রথম ও প্রাথমিক শর্ত। যদি কাউকে ভালবেসে চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে অনতিবিলম্বে ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সুন্দর ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যে রোগী ডাক্তারকে আপনজন ভাবার সুযোগ পায়, তার রোগের উপশম অপেক্ষাকৃত সহজ। কেননা আস্থা আর ভরসা রোগীর আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেয়। ওষুধ প্রয়োগে তার প্রাণশক্তি দ্রুত বেগে আরও বেড়ে যায়। মানসিক চিকিৎসায় আমাদের এসব ব্যাপার মমতার সঙ্গে লক্ষ্য রাখতে হয়।
বাংলাদেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে উপরের কথাগুলোকে মেলানো যায় না। তত্ত্বকথা আর বাস্তব মিলতে চায় না। নারী ও প্রসূতি স্বাস্থ্য, মানসিক ও মাদকাসক্তির চিকিৎসা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য চিকিৎসায় মায়া-মমতা কতটুকু দেখানো হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠছে। সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার আদর্শিক ও মানবিক দিকটিও উপেক্ষিত হচ্ছে। ঢাকা থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের দিকে তাকাতে শিউরে উঠতে হয়। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন ছাড়া হয় চিকিৎসাহীনতা ও অমানবিকতার শত ঘটনা। এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার বলে সকলেই মনে করলেও তা সহসায় হচ্ছে না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত তিন বছরে দুর্নীতি ও অনিয়মের জন্য ৪৮৬জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শাস্তির কারণ হিসাবে যেসব অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, সেগুলো হলো: ঔষধ পাচার, নিয়োগ-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, সরকারি জিনিসপত্র ক্রয়ে অর্থের বিনিময়ে নিম্নমানের দ্রব্য গছিয়ে দেওয়ার মতো অনৈতিক ব্যবস্থা। বিশেষ যে কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা হলো কর্মস্থলে অনুপস্থিতি। শাস্তি প্রাপ্তদের মধ্যে সিভিল সার্জন থেকে মেডিকেল অফিসার পর্যন্ত পদের চিকিৎসকগণ রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশের ৭৫% জন মানুষ গ্রামে বাস করে তথাপি তাদের ৮০% ভাগের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতো ব্যাপক চিকিৎসা-বঞ্চিত মানুষ আধুনিক বিশ্বের আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরের মধ্যে সামাজিক-অর্থনৈতিক ফারাকের মতো চিকিৎসা বঞ্চনাও তীব্রতর স্তরে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের নিবন্ধিত ৩৩,৩২৬ জন চিকিৎসকের বলতে গেলে কেউই গ্রামে যেতে চায় না। গেলেও সেখানে থাকতে ইচ্ছুক হয় না। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দেশের শহরগুলোতে চিকিৎসক ও জনসংখ্যার অনুপাত ১:১৫০০ হলেও গ্রামাঞ্চলে সেই অনুপাতই ১:১৫০০০।
চিকিৎসকের সঙ্কট, সংখ্যাল্পতা একদিকে যেমন বিপুল মানুষকে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার বাইরে রেখে দিয়েছে; তেমনি সেই মুষ্টিমেয় চিকিৎসকের মধ্যে দার্শনিক জ্ঞানের অভাব, সেবা না করার মনোভাব ও অর্থ উপার্জনের তীব্র নেশা ইত্যাদি কারণে মানুষ চিকিৎসার মানবিক রূপটির দেখা পাচ্ছে না। প্রায়ই যে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য মানুষের চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে, সেটাও কিন্তু এমনিতেই হচ্ছে না। যথার্থ কার্যকারণের জন্যই হচ্ছে। এই কারণের অবসান ঘটাতে না পারলে বহু মুদ্রা যেমন বিদেশে চলে যাবে, তেমনি চিকিৎসাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবাখাতের ব্যাপারে আস্থাহীনতার তৈরি হবে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, চিকিৎসক সমাজের জন্য তো নয়ই।
বিশ্বায়নের এই যুগে, একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানভিত্তিক সমাজে স্বাস্থ্যসেবাহীনতায় প্রসূতির মৃত্যু, গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু, বিভিন্ন ব্যাধিতে মানবমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে গেছে। উন্নত স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা পৌঁছে গেছে বিরাণ মরুভূমিতে, আফ্রিকার শ্বাপদসঙ্কুল জনপদে, মহাসাগরের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন-বিপণœ দ্বীপে। স্বাস্থ্যমান, জীবনমান ও গড়আয়ু বৃদ্ধির কারণে এখন দেশে দেশে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল-নিরোগ মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলনায় বাংলাদেশে ভেজাল ও নানা ফেরেববাজিতে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। নেশা ও যৌনাত্মক ঔষধের অতি-প্রয়োগে ক্ষয়ে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। ধর্ম ও নৈতিকতার অভাবে শহুরে ও শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা সংক্রামক ব্যাধিতে। অশিক্ষার কারণে গ্রামীণ তরুণ-তরুণীরাও আক্রান্ত হচ্ছে নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায়। এসব থেকে মানুষকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে প্রয়োজন মানবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবার। এই কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে চিকিৎসক সমাজকে। কিন্তু তারা নিজেরাই যদি দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রশ্ন দেখে পাশ করা বা প্রচুর অর্থে সার্টিফিকেট কেনা চিকিৎসক হন, তাহলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাগত বিপদ দূর করতে পারবে কি? নাকি তারাই নতুন নতুন বিপদ ডেকে আনবে?
এসব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর আছে। কিন্তু তারপরও ভালো-মন্দ খতিয়ে দেখে ভবিষ্যতকে ভয়মুক্ত করা হচ্ছে না কেন। কারণ নিজ নিজ সেক্টর বা খাত রেখে সবাই রাজনীতির ধ্বজা তুলে গোপনে ব্যক্তিগত আর্থিক ফায়দা হাসিল করলে ব্যক্তির লাভ হবে, জাতির কিছুই হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানেন, রাজনীতিটা ভালো মতে ধরতে পারলে রেলের কালো বিড়াল, ব্রাজিলের কালো গম, মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস ইত্যাদি সব কিছুই হজম করা সম্ভব। এখন রাজনীতির দাঁত দিয়ে সব কিছু হজম করার দিন চলছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদিকে রাজনীতির বাইরে সার্বজনীন পর্যায়ে স্থান দিতে না পারলে পরিস্থিতির অবনতিই হবে, উন্নতি হবে না।
নিম্নগামী স্বাস্থ্যশিক্ষা ও সেবা কার্যক্রম
নীরক্তকরবীর মালা ॥ কনক জ্যোতি