ধূমপানের ক্ষতি কমাবেন যেভাবে!

0
556
ধূমপানের ক্ষতি

ধুমপান মৃত্যুর কারণ জানা সত্ত্বেও মানুষ ধুমপান করে এবং শত চেষ্টা করেও ধুমপায়ীরা এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারে না। এর ফলে একদিকে নিজের দেহের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশেও ক্ষতি সাধন হয়। ধূমপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেহাভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো (বিশেষ করে ফুসফুস) গ্রহণ করা খাবারের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। ধূমপায়ীরা খাবারের পুষ্টিগুণ এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সুফল থেকে বঞ্চিত। এই অবস্থা চলমান থাকলে তা একসময় গোটা শরীরকেই দুর্বল করে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যথা অনুভূত হয়।

ধূমপান ত্যাগের যাদের ক্ষেত্রে কোনোই বিকল্প নেই, তারা নির্দিষ্ট খাদ্যাভাসের মাধ্যমে ধূমপানের ফলে সৃষ্ট রোগের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই রেহাই পেতে পারেন।

জেনে নিন এমনই কিছু খাদ্যদ্রব্য, যেগুলো ধূমপানের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সরিষা পাতা : সরিষা ধূমপায়ীদের জন্য বিশেষ উপকারী একটি খাদ্যদ্রব্য। কারণ এটি ফুসফুসের প্রদাহ রোধে সহায়তা করে। পাশাপাশি ধূমপানের ইচ্ছারোধ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের দুর্বলতা রোধ করে।

কপি জাতীয় সবজি : প্রতিদিন অন্তত একটি কপি জাতীয় সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ধূমপানের ফলে সৃষ্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। কপি জাতীয় সবজির কিছু উদাহরণ হল- স্প্রাউট, ব্রকলি, ফুলকপি, কলমীদল শালুক, রঙিন আরুগুলা, মুলা এবং চীনা বাঁধাকপি।

তাছাড়া এই সবজিগুলো শরীরে ভিটামিন সি, ই এবং বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) এর চাহিদা মেটায়।

* ভিটামিন ‘বি ১২’ সমৃদ্ধ খাবার : ভিটামিন ‘বি ১২’-র অভাব একজন ধূমপায়ীর শরীরে বর্ণনাতীত ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। আসলে ধূমপায়ীরা ভিটামিন ‘বি গ্রুপ’ এর অভাবে ভুগে থাকেন। কারণ ধূমপানের ফলে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টিগ্রহণ করতে পারে না।

তাই একজন ধূমপায়ীর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ‘বি ১২’ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। ডিম, পনির, দই, ফর্টিফায়েড সিরিয়াল অথবা ফুড সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে ‘ভিটামিন ১২’-র চাহিদা পুরণ করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   যে ৬টি খাবারের কারণে আপনি দিন দিন অসুন্দর হয়ে যাচ্ছেন

সেই সঙ্গে প্রত্যেক ধূমপায়ীকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘বি৬’ এবং ‘বি৯’ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মাছ, মাংস, আলু এবং শস্যদানা ভিটামিন ‘বি৬’ এবং ফলমূল, সবুজ শাকসবজি, শুকনো শিমের বিচি, মসুর এবং ব্রকলি ভিটামিন ‘বি৯’ এ পরিপূর্ণ।

* ভিটামিন এ : অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন যে, সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ‘ক্যারসিনোজেন’ শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব সৃষ্টি করে। শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ভিটামিনের একটি প্রধানতম উৎস হচ্ছে, সরিষা। এছাড়া কুমড়া, ভুট্টা, লাল মরিচ, কমলালেবু এবং পিচফলেও প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকে।

পাশাপাশি কুমড়া এবং গাজরে থাকে ‘বেটাক্রিপ্টোজ্যানথিন’ নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

* ভিটামিন ‘সি’ : প্রত্যেক ধূমপায়ীর জন্য অত্যাবশকীয় একটি ভিটামিনের নাম ভিটামিন ‘সি’। কারণ এটি নিকোটিনের বিষক্রিয়া কমায় এবং পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।

ভিটামিন ‘সি’-এর বড় উৎসগুলো হচ্ছে: আমলকী, লেবুজাতীয় ফলমূল, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি।

ভিটামিন ‘ই’ : গবেষণায় দেখা গেছে যেসব ধূমপায়ীরা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাদ্যগ্রহণ করেন তাদের শরীরের নমনীয়তা এবং রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।

একজন ধূমপায়ীর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই বাদাম, ডিম এবং গমের তৈরি খাবার থাকা উচিত।

 ক্যাটচিন : ফাইটোকেমিক্যাল যৌগ ক্যাটচিন ধূমপানের ক্ষতি কমাতে বিশেষ সহায়ক হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ব্ল্যাক টি, আঙুর, কালোজাম এবং গাঢ় রঙয়ের চকলেট ক্যাটচিন এর ভালো উৎস।

মিথিওনিন : মিথিওনিন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডটি আমাদের ফুসফুসের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। বিভিন্ন ধরনের ফলের বীজ, শস্যদানা, মাছ এবং মাংসে মিথিওনিন থাকে।

ডালিম : বেদানা বা ডালিমে রয়েছে এলাগিক অ্যাসিড, এটি শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে ধূমপায়ীর শরীরের ক্ষতিকর মৌল দূর করে এবং ফুসফুসের কোষসহ শরীরের কোষের ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে।

পেঁয়াজ এবং রসুন : সালফার যৌগে পরিপূর্ণ পেঁয়াজ এবং রসুন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় উপকারী ভূমিকা পালন করে এবং ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখে। পেঁয়াজে আপেল এবং শিমের ন্যায় ‘কোয়েরসেটিন’ থাকে, যা ফুসফুসকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ   প্রতিদিনের সুস্থতায় কার্যকরী ১০ টি স্বাস্থ্য টিপস জেনে নিন

 জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’ : দীর্ঘদিন ধরে ধূমপানের ফলে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ধূমপায়ীদের জন্য এই জিনিসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

– জিংক (মাশরুম, ফলের বীজ এবং বাদাম)

– ম্যাগনেসিয়াম (ফলের বীজ, বাদামী রঙের চাল)

– ক্যালসিয়াম (দুগ্ধজাত খাবার, তিলের বীজ)

– ভিটামিন ‘ডি’ (সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকা এবং ফুড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা)

সেই সঙ্গে, প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে। কারণ ধূমপান শরীর থেকে পানি বের করে দেয় এবং পানি নিকোটিন দূর করতে সহায়তা করে।

ধূমপান স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে-এ আমরা সবাই জানি। তবে ধূমপানের কারণে ধূমপায়ীর আশপাশের মানুষজনও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। ধূমপান না করেও এর ফলে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রচুর ঝুঁকি থেকে যায়।

ধূমপানের অভ্যাস না থাকুক, আপনার আশপাশে ধূমপায়ী ব্যক্তি থাকলেও এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনি। একে আভিধানিকভাবে প্যাসিভ স্মোকিং বা পরোক্ষ ধূমপানও বলা হয়। তাই কেবল ধূমপায়ীরই ক্ষতি নয়, নিজের এবং যাঁরা ধূমপান করছেন না তাঁদের ক্ষতির কথা ভেবেও পাশের মানুষটিকে ধূমপান থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করুন।

 ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস সারিয়ে তোলে আপেল-টমাটো: গবেষণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − four =