দুলাল হোসেন: বাংলাদেশে এই প্রথম মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী রোগ পারকিনসন্সের সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে গত সোমবার ও মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার দুটি হয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ডা. টিপু আজিজের নেতৃত্বাধীন অস্ত্রোপচার টিমে অংশ নেন বাংলাদেশি কয়েকজন চিকিৎসক। ডিপ ব্রেইন স্টিমুলেশন পদ্ধতিতে গত সোমবার প্রথম অস্ত্রোপচার হয় মেজর (অব.) কায়কোবাদের এবং মঙ্গলবার বাবুল হোসাইন নামে এক রোগীর। দুজনেই ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ রুমি বলেন, পারকিনসন্স রোগের কারণে কায়কোবাদের হাত খুবই কাঁপত। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ব্রেনে একটি ইলেক্ট্রন এবং বুকের চামড়ার নিচে ব্যাটারি বসিয়ে তাতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর গত মঙ্গলবার বাবুল হোসাইন নামে যে রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে তার ঘাড় ছিল বাঁকা। তার ব্রেনেও দুটি ইলেক্ট্রন বসানো হয়েছে। এরপর বুকের চামড়ার নিচে একটি ব্যাটারি বসিয়ে তা সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে ইলেক্ট্রনের সঙ্গে। দুটি অস্ত্রোপচারই সফল। এগুলো করেছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডা. টিপু আজিজ। তিনি এই অস্ত্রোপচারের জন্য বিশ্বের মধ্যে এক নম্বর।
অস্ত্রোচার সফল হওয়ায় আনন্দিত রোগী ও তাদের স্বজনরা। জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর কায়কোবাদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আমি অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদের পরামর্শ মতে ওষুধ খেয়ে আসছি। তার পরামর্শেই অস্ত্রোপচারটি করতে রাজি হই। আমি এখন অনেকটা সুস্থ। যারা আমাকে অস্ত্রোপচার করেছেন তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। তার ছেলে মেজর খাইরুল বলেন, বাবার ব্রেনে একটা ইলেক্ট্রন বসানো হয়েছে। এটি সচল করলে তার কাঁপনি থাকে না।ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এইমস ল্যাবের পরিচালক ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মানুষের মস্তিক এক বিস্ময়ের আধার। আমাদের কাছে এখনো মস্তিষ্ক সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। ছোট ছোট সমস্যাও বিরাট হয়ে প্রভাব ফেলে শরীরে। তাই মস্তিষ্কের রোগ নিয়ে গবেষণা চলছে অবিরাম। স্ট্রোক, মাইগ্রেন, ব্রেন টিউমারের মতোই মরণঘাতী রোগ পারকিনসন্স। এক কোটি মানুষ বিশ্বজুড়ে এই রোগে ভুগছেন। তবে রোগটি কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলীর হওয়ায় বেশ পরিচিতি পায়।মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে পারকিনসন্স রয়েছে দুই নম্বর স্থানে। আক্রান্ত রোগীর চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ কমে যায় ধীরে ধীরে। যার কোনো নিরাময় নেই, কেবল লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পদ্ধতি ওষুধ। কিন্তু সবচেয়ে জনপ্রিয় ওষুধ লেপাডোভা থেরাপির রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই নিউরোসার্জনরা ঝুঁকেছেন সার্জারির দিকেই। পারকিনসন্সে আক্রান্ত রোগীর জন্য সার্জারির প্রক্রিয়া দুইটিÑ প্রথমটি হলো লিজিয়ন থেরাপি আর দ্বিতীয়টি ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন।আর এ চিকিৎসায় বিশ্বসেরা বাংলাদেশি বংশদ্ভূত ব্রিটিশ চিকিৎসক প্রফেসর টিপু আজিজ। মা জাহেদা আজিজের হাত ধরে ইংল্যান্ডে তার অভিবাসন। বাংলাদেশে কাজ করার আগ্রহ থাকলেও হয়ে ওঠেনি এতদিন। এখন তিনি কাজ করবেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের স্বনামধন্য প্রফেসর ও গবেষকদের নিয়ে। লিজিয়ন থেরাপি অ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: ]থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: ]থএড়ইধপশার ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশনের ওপর যার রয়েছে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা। নিউরোপ্যাথিক ব্যথার ওপরও কাজ করছেন। স্ট্রোক রোগীর প্রচ- ব্যথা লাঘবে মস্তিষ্কের মধ্যে পেসমেকার বসিয়ে সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের এই গর্ব। একইভাবে দুর্ঘটনার শিকার রোগীর অঙ্গহানির যে ব্যথা হয়, সেটা নিরসনেও কাজ করে তিনি সফল। তবে বিষয়গুলো নিয়ে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।অধ্যাপক ডা. টিপু আজিজ বলেন, মস্তিষ্কের প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে পারকিনসন্স রোগটি রয়েছে দুই নম্বর স্থানে। ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন সার্জারির মাধ্যমে এটি নিরাময় করা সম্ভব। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশে এই অত্যাধুনিক পদ্ধতির প্রয়োগ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কারণ এর জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষতা আর বিশেষায়িত জ্ঞান। যারা সামর্থ্যবান তারা হয়তো সিঙ্গাপুর, ভারত বা উন্নত দেশে গিয়ে এ চিকিৎসা পান। কিন্তু তা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।ড. খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বাংলাদেশে বছরে পারকিনসন্সে মারা যায় এক হাজার ৬০০ জন। এই হার ক্রমবর্ধমান। তাই উন্নত ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন পদ্ধতি এখন সময়ের দাবি। ইন্টারন্যাশনাল ব্রেন রিসার্চ অর্গানাইজেশন এবং ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এই সমন্বিত উদ্যোগ আমাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেবে।
বাংলাদেশে প্রথম চালু হলো পার্কিনসন্স রোগের সার্জারি