টানা বসে থাকেন? আচমকা মৃত্যুও হতে পারে, পরামর্শ নিন ‘শেক ইট’-এর

0
277
বসে থাকা

শ্রীরূপা পত্রনবিশ:

আপনি কি জানেন, দীর্ঘক্ষণ একইভাবে আঁটোসাটো হয়ে বসে থাকলে বা পা ভাঁজ করে একভাবে শুয়ে থাকলে আচমকা মৃত্যুও হতে পারে?

শুধু তাই নয়, দীর্ঘ বিমানযাত্রাতেও আপাত সুস্থ শরীরেও থাবা বসাতে পারে চরম বিপদ! চমকে উঠছেন? হ্যাঁ, ঠিক তাই সম্ভব। চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম – “পালমুনারি ইমবলিজম”।

একটানা চেপে বসে থাকলে বা বেঁকে শুয়ে থাকলে পায়ের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে। পা ফুলে যায়। একে বলে – ‘ডিপ ভেইন থ্রমবসিস’। এরপর, নজর না দিলে সেই জমাট রক্ত শিরা বেয়ে হৃদযন্ত্রে পৌঁছিয়ে তা আচমকা বিকল করে দেয়।

ঠেকে শিখেছিলেন লন টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস থেকে অস্ট্রেলিয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন মার্ক ওয়াহ। তবে, দ্রুত চিহ্নিত হওয়া সে যাত্রায় বিপদ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল। তাই এই বিষয়ে সাধারণ মানুষ আর চিকিৎসকদের সজাগ করতে ময়দানে নেমেছেন মিসিসিপির নেসোবা কাউন্টি জেনারেল হাসপাতালের অস্থি শল্য চিকিৎসক সুনীল কুমার। তাঁর মতে, “দেরি করলে, মৃত্যুর হার চল্লিশ শতাংশ। দ্রুত চিনতে না পারলে মৃত্যু ঠেকানো কঠিন। যদিও, দ্রুত চিহ্নিত করলে এটা নিরাময়ের ওষুধ রয়েছে। এমনকি ঠেকানোও সম্ভব। প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। দরকার কিছু উপসর্গ নজরে রাখা। সময়ে সময়ে হাঁটাহাঁটি – নড়াচড়া করা।” আর সাধারণ মানুষকে মনে করাতে তৈরি করে ফেলেছেন “শেক ইট” নামে একটা বিনামূল্য অ্যাপ। সেটা গুগল প্লে স্টোরে গেলেই পাওয়া যাবে।

পরিসংখ্যান বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকের পর এই কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সেখানে প্রতি বছর ৬ লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের চিত্রটা এর থেকেও ভয়াবহ। জরুরি হচ্ছে চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা।

ঠিক এমনটাই হয়েছিল আশিস কুমার আর আবদুস সাত্তারের। বছর খানেক আগের ঘটনা। ট্রান্স আটলান্টিক ফ্লাইট শেষে নিউ ইয়র্কে বাড়ি পৌঁছনোর পর আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন মধ্য বয়স্ক আশিস কুমার। ফ্লাইটে বেশ আঁটোসাটো করে বসতে হয়েছিল। তখনই বেশ দম বন্ধ লাগছিল। সেদিন রাতেই মৃত্যুর কলে ঢলে পড়েন ওই আপাত সুস্থ ব্যক্তি।

আরও পড়ুনঃ   ধূমপানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস সারিয়ে তোলে আপেল-টমাটো: গবেষণা

মাস খানেক আগে একইভাবে মারা যান রাজ্য সরকারে কর্মী আবদুস সাত্তার। অডিট বিভাগের দক্ষ কর্মী আবদুস গত ডিসেম্বর মাসে নিজের টেবিলে বসে কাজ করতে করতে আচমকা অজ্ঞান হয়ে যান। চিকিৎসক শত চেষ্টা করে ও বাঁচাতে পারেনি।

হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষায় জানা গেল, তিনি হৃদযন্ত্রের ধমনীতে জমাট রক্তের টুকরো আটকে এই বিপত্তি। — পালমুনারি এএমবলিজম। কিন্তু যতক্ষণে তা চিহ্নিত হল, ততক্ষণে বিপদ গ্রাস করেছে পুরো হৃদযন্ত্রকে।

“ডিপ ভেইন থ্রমবসিস”-এর বিপদের প্রাথমিক উপসর্গ কী? এশিয়ান ভাস্কুলার সোসাইটির একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে – পায়ের নিচের অংশ ফুলে ওঠা। শ্বাস কষ্ট। বুকে আনচান ভাব। প্রেসার প্রবল ওঠানামা করা। সুনীল কুমারের মতে এর উপসর্গ অনেকটাই হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে মিলে যায় তাই বহু ক্ষেত্রে চিনতে ভুল হয়।

কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব?

১) নির্দিষ্ট সময় হাঁটা চলা করা।
২) নড়াচড়া করা।
৩) ওজন কমানো।
৪) ধুমপান বন্ধ করা।
৫) ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করা।

একই বিপদ অপারেশন হওয়া বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত শয্যাশায়ী রোগীদের। বিপদ ঠেকাতে ওই রোগীদের নিয়মিত নড়াচড়া-হাঁটাহাঁটি জরুরি। তবে সবই নিয়ম অনুযায়ী। “শেক ইট” এই কাজটাই করে। রোগী এবং চিকিৎসক। উভয়কেই সচেতন করে। সতর্ক করে। সঠিক পরামর্শ দেয়।

সূত্রঃ ইন্ডিয়া টাইমস

মেদহীন পেট চাইলে সকাল ৮টার আগে খালি পেটে খান একটা জিনিস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 − one =