জ্বরের ঘরোয়া সমাধান-ডা. ফাহিম আহমেদ রূপম

0
493
জ্বরের ঘরোয়া সমাধান
জ্বরের ঘরোয়া সমাধান

হঠাৎ বৃষ্টি ও ভ্যাপসা গরম- এই দুই মিলিয়ে এখন অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সংক্রমণজনিত অসুখ ভাইরাস জ্বর প্রধান সমস্যা। ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপও মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সাবধানতা অবলম্বন করলে জ্বর থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকা যায়। জ্বর কী কী কারণে হতে পারে প্রথমে চলুন তাই জেনে নিই-

আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন

স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডায় থাকা, একঘরে অনেক লোকের বসবাস থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে হঠাৎ জ্বর আসতে পারে। হাঁচি, কাশি, সর্দি ঝড়লে রুমাল বা টিস্যু পেপার ব্যবহার এবং পাশের ব্যক্তির থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংক্রমণ ঠেকানো যায়।

ঘাম থেকে জ্বর

গরমে ঘাম থেকে শুধু ঘামাচির বা ফাঙ্গাশ সংক্রমণই হয় না বুকে ঠাণ্ডা লেগে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ও নাকে সংক্রমণ থেকে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা সর্দি ঝরতে পারে। লেবু-আদা চা, বিশ্রামের মাধ্যমে ৪-৫ দিনে সাধারণত এ সমস্যা সেরে যায়।

জ্বরের লক্ষণ

বেশি মাত্রায় বা কাঁপিয়ে জ্বর আসার আগে শরীর ব্যথা বা ম্যাজম্যাজ করা, শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরানো, বমি ভাব, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া বা চুলকানি জ্বর আসার পূর্ব সংকেত।

জ্বর হলে কী করবেন

ভাইরাল ফ্লুর জন্য আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এটি সেলফ লিমিটিং ডিজিজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১ সপ্তাহের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে দুর্বলতা বা অবসন্নতা বেশ কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবেলট, সিরাপ বা সাপোজিটরি নির্দিষ্ট ডোজে দিলে রোগী ভালো থাকে। এন্টিহিস্টামিন বা সর্দি, কাশি, হাঁচি কমানোর ওষুধ লাগতে পারে। তবে জ্বর সাত দিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জ্বরের কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।

জ্বরে স্পঞ্জিং করার নিয়ম

পুরো শরীর ভেজা নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে একটানা কয়েকবার আলতোভাবে মুছে দিলে তাপমাত্রা কমে যায়। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করতে হবে। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আরও পড়ুনঃ   উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যা খাবেন

শিশুদের ক্ষেত্রে পানিতে শিশুকে বসিয়ে স্পঞ্জ করা সুবিধাজনক, তাই বড় গামলা ভর্তি করে পানি নেয়া উচিত। মাথায় অবিরাম পানি ঢালা উচিত, যতক্ষণ না দেহের তাপমাত্রা কমে। দেহের ভাঁজযুক্ত স্থানে তোয়ালে ভিজিয়ে রাখতে পারেন।

বিশ্রাম ও খাবার

জ্বর হলে বিশ্রাম নিলে রোগ সংক্রমণের আশংকা কমে এবং রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি লেবুর শরবত ও ফলের রস খাওয়া ভালো। এতে মুখে রুচি ফিরে আসে এবং ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা পূরণ হয়। মৌসুমি ফল যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস, ফ্রুটি খাওয়া যায়। ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার যেমন আইসক্রিম, ফ্রিজের পানি, সফট ড্রিংকস একেবারেই পরিহার করা উচিত। সঠিক পথ্য গ্রহণের মাধ্যমে জ্বর থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

আদা-চা বা গরম পানিতে লেবুর সঙ্গে আদা কুচি মিশিয়ে খেলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যায়।

চিকেন সুপ- এ পথ্য দেহে শক্তি জোগায়; জ্বর কমায়। আদা ও গোলমরিচ মিশিয়ে চিকেন সুপ খান।

হার্বস- ১ চামচ জিরা ও ৪-৬টা তুলসী পাতা এক গ্লাস পানিতে সিদ্ধ করে খেলে জ্বর দ্রুত কমবে।

মৌসুমি ফল- এতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। ফলে জ্বরের কারণে কোষ ক্ষয় হওয়া প্রতিরোধ হয়।

চালের সুজি- চালের সুজির সঙ্গে আদা কুচি ও সিদ্ধ করা সবজি এ সময়ের উপকারী খাবার।

কিশমিশ- এতে থাকে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

গোলমরিচ ও লবঙ্গ- নরম ভাত, খিঁচুড়ি ও সিদ্ধ আলুর সঙ্গে গোল মরিচ ও লবঙ্গ মিশিয়ে খেলে জ্বরে উপকার হয়।

টমেটো ও গাজরের সুপ- জ্বরে এটিও উপকারী খাবার।

আমাদের দেশে ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে লিভারের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস বা জন্ডিস এবং এন্টিরিক ফিভারও সচরাচর দেখা যায়। জন্ডিসে কোন ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে তা নির্ণয় করা প্রয়োজন। টাইফয়েড জ্বরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা লাগতে পারে।

আরও পড়ুনঃ   দাঁত ব্রাশ ছাড়াও টুথপেস্টের ১০ ব্যবহার

জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলের পরিবর্তে ডাইক্লোফেনাক, ইন্ডোমেথাসিনজাতীয় ওষুধ সেবন গ্রণযোগ্য নয়। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রোগীর মৃত্যুঝুঁকিও থাকে।

লেখক : মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 + fourteen =