মেথি ঔষধী গুণে সমৃদ্ধ। এতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ,ভিটামিন সি ,আয়রণ ,পটাসিয়াম ,নিকোটিনিক অ্যাসিড ও লিকিথিন থাকে। আমাদের চুলের বহু সমস্যায় মেথির রয়েছে বিবিধ ব্যবহার। যেমন- কম বয়সে চুল পেকে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতে, চুলের বৃদ্ধিতে , খুশকি দূরীকরসহ আরো অনেক ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার হয়ে থাকে। আজ চুল পড়া বন্ধে আর চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধিতে, খুশকি দূরীকরণে মেথির ব্যবহার বিধি আপনাদের সামনে তুলে ধরব, যাতে আপনারা সবাই উপকৃত হতে পারেন।
চুলের যত্ন নিতে মেথি
মেথি যে শুধু খাবারকে উপাদেয় ও স্বাস্থ্যসম্মত করে তাই নয়, এটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। বিশেষ করে নিকোটিনিক অ্যাসিড ও লিথিনিক থাকার জন্য মেথি চুলের যে কোনো রকম সমস্যা, বিশেষ করে চুল পরা ,বা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়া বা চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সক্ষম। এছাড়া মেথি আমাদের ত্বকের নানা রকম সমস্যা যেমন, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো বা ত্বকের মসৃণতা বাড়ানো বা পোড়া দাগকে সরানো ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সাহায্য করে। তবে আজ জেনে নি চুলকে ভালো রাখার জন্য আমরা মেথি কে কি কি ভাবে ব্যবহার করতে পারি।
ঘন চুলের জন্য মেথি
লম্বা কালো ঘন চুল প্রায় সব মেয়েরই কাম্য। কিন্তু শরীরের নানা সমস্যা বা ঠিক মতো ঘুম না হওয়া বা অতিরিক্ত স্ট্রেস, এছাড়া খারাপ জল বা ধুলো বালি ইত্যাদি নানা কারণে আমাদের চুল পরে যায় ,বা চুল রুক্ষ হয়ে যায়। তাই আসুন জেনে নি মেথির কয়েকটি সহজ ঘরোয়া উপায় যা আমাদের চুলের নানা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
মেথি জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি সমেত জল মিক্সিতে পিষে পেস্ট মতো বানিয়ে নিন এবার কিছুটা লেবুর রস, অল্প জল ওই পেস্ট এ মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ভালো করে মাথায় ও পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রাখার পর ভালো করে উষ্ণ গরম জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। তবে মনে রাখবেন গরম জল দিয়ে ভালো করে মাথা ধোয়ার পরেই শ্যাম্পু করা কাম্য। এতে আপনার চুল পড়ার সমস্যাটি কম হবে, চুলের রুক্ষতা কম হবে। এছাড়া নারকেল তেলের সাথে মেথিগুঁড়ো মিশিয়ে মাথায় মাখলেও চুল পড়ার সমস্যা দূর হয়।
মেথি খুশকি দূর করতে
অনেক সময় আমাদের মাথার চামড়াতে খুশকি জমে,বা ময়লা জমে,বা চামড়া রুক্ষ হয়ে যায়,যার ফলে মাথা চুলকোয়। এটি ভদ্র সমাজে সকলের সামনে আপনাকে লজ্জায় ফেলে। বেশি চিন্তা করবেন না। মেথিতেই কাজ দেবে। সেই প্রাচীনকাল থেকেই খুস্কির সমস্যা দূর করতে মেথি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এর থেকে মুক্তি পেতে এককাপ মেথি সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মিক্সিতে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার একটি ডিম ফাটিয়ে ভালো করে ওতে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি মাথায় এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। প্রথমে জল দিয়ে ভালো করে আপনার চুল ও মাথা পরিস্কার করুন। পরে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন। এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে চুলকানির সমস্যাটি দূর হবে এবং চুল নরম ও মসৃন হবে।
অথবা রাতে পরিমাণমতো মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে মেথি ভালো করে বেটে নিন। সেই পেস্টটি চুলের গোড়ায় ও স্কাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন। আধঘণ্টা পর ভালো করে ধুয়ে নিন। খুস্কি আর থাকবে না। টক দইয়ের সঙ্গে মেথি পেস্ট মিশিয়ে লাগালে আরও ভালো কাজ হবে।
চুল কালো করতে মেথি
অনেক সময় খুব অল্প বয়সেই অনেকের চুল সাদা হতে শুরু করে। চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে ব্যবহার করতে পারেন মেথি। মেথি জলে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর কয়েকটি কারিপাতা জলে সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিন। এবার মিক্সিতে মেথি এবং সেদ্ধ করা কারিপাতা ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট মতো বানিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা জল দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া একই পদ্ধতিতে মেথি এবং আমলকির পেস্টবানিয়ে মাথায় লাগালে তা চুলের অকালপক্কতা রোধ করে।
আমাদের সকলেরই কম বেশি খুশকির সমস্যায় ভুগতে হয়। যার ফলে আমাদের চুল রুক্ষ হয়ে যায় ও চুল ঝরে যেতে থাকে। মেথির পেস্ট বানিয়ে তাতে টক দই মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ভালো করে মাথায় লাগিয়ে নিন। মেথির মধ্যে লিকিথিন থাকে যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
উপরে অংশ না বুঝে থাকলে এ পর্যায়ে জনাব নীল লিখিত দুটি পদ্ধতি শেয়ার করা হল।
পদ্ধতি-১
প্রয়োজনীয় উপাদান
(১) মেথি দানা (২ টেবিল চামচ বা তার সমপরিমাণ)
(২) টক দই (এক কাপ বা তার সমপরিমাণ)
(৩) নারিকেল তেল/ আমন্ড অয়েল/ অলিভ অয়েল (ঐচ্ছিক)
প্রণালী
– প্রথমে ১/৪ কাপ মেথি দানা (অথবা ২ টেবিল চামচ) একটি পাত্রে নিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর সেই পাত্রে কিছু পরিমাণ পানিতে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন।
– আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা মেথি পাটায় নিয়ে খুব ভালোভাবে মিহি করে পেস্ট করে নিন। চাইলে ব্লেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
– পেস্ট করা মেথিতে এক কাপ টক দই নিয়ে খুব ভালো ভাবে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি কম পক্ষে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা রেখে দিন।
– চুলে তেল ম্যাসাজ করুন। এক্ষেত্রে নারিকেল তেল বা আপনার পছন্দনুযায়ী যে কোনো তেল নিতে পারেন। চুলে তেল দেয়ার আগে, তেলটা সামান্য গরম করে নিতে পারেন। আপনি চাইলে তেল ম্যাসাজ নাও করতে পারেন। তবে যাদের চুল অধিক শুষ্ক এবং চুলে গিট লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তার চুলে তেল দিয়ে নিন।
– এবার চুলে মেথি আর টক দইয়ের মাস্কটি আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত খুব ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।
– মাস্কটি ৪০ থেকে ৫০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। তারপর কন্ডিশনার লাগান।
এভাবে মাস্কটি মাসে দুইবার লাগাতে পারেন।
ফলাফল
নিয়মিত ব্যবহারে,
(১) চুল পড়া বন্ধ
(২) আগা ফাটা সমস্যা দূর
(৩) চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও
(৪) চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হবে।
সতর্কতা
(১) মাস্কটি পরিষ্কার চুলে লাগান,
(২) মেথিতে আপনার এলার্জি থাকলে, এই মাস্কটি ব্যবহার করবেন না।
পদ্ধতি-২
প্রয়োজনীয় উপাদান
(১) মেথি দানা,
(২) নারিকেল তেল।
প্রণালী
এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিন। তাতে দুই চা চামচ মেথি দানা (চাইলে মেথি গুঁড়ো দিতে পারেন) দিন। নারিকেল তেল ফুটাতে থাকুন যতক্ষন পর্যন্ত না মেথি দানা লালচে বাদামি রঙ ধারণ না করে। লালচে বাদামি হয়ে যাওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে নিন। মেথি তেল থেকে আলাদা করে নিন। তেল যখন হালকা গরম হবে তখন তা নিয়ে স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে আলতো করে লাগিয়ে নিন। সারা রাত রেখে পরেরদিন শ্যাম্পু করে, চুলে কন্ডিশনার দিন।
এভাবে সপ্তাহে দুই বার এই তেলটি ব্যবহার করুন।
ফলাফল
নিয়মিত ব্যবহারে
(১) চুল পড়া বন্ধ হয়
(২) চুলের গোড়া মজবুত হয়
(৩) অকালে চুল পাকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়
(৪) আগের তুলনায় চুলের রুক্ষতা কমে, তাতে কোমলতা ফিরে আসে ও
(৫) স্ক্যাল্পের চুলকানি কমে ও খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সতর্কতা
(১) মেথিতে আপনার অ্যালার্জি থাকলে, এই তেলটি আপনার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে।
চুল পড়া কমাতে মেথি
সারা রাত এক চামচ মেথি গ্লাসে ভিজিয়ে রাখলে রেখে খালি পেটে ৩ মাস পর্যন্ত খেয়ে দেখুন চুল পড়ার সমস্যা আর থাকবে না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেথি বীজে রয়েছে একাদিক উপকারী উপাদান যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ করতে সহযোগিতা করে। মেথি রোগজীবাণু ধ্বংস করে, কৃমি, রক্তের চিনির মাত্রা, রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমায়। বার্ধক্যকে দূরে ঠেলে দিয়ে তারুণ্য ধরে রাখে মেথি।
নারী-পুরুষ সবারই কমবেশি চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে।অনেক কিছু করেও চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তারা খেয়ে দেখতে পারেন মেথি।মেথি আপনার চুল পড়া কমাবে। তবে মেথি খাওয়া ও ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে।
(আরেকটি পদ্ধতি) চুল পড়া বন্ধ করে
যাঁদের গোছা গোছা চুল উঠে যাচ্ছে, মেথি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। নারকেল তেলের সঙ্গে মেথিদানা ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে, তা ঠান্ডা করে, চুলের গোড়ায় ভালো করে মালিশ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই চুল পড়া বন্ধ হবে।
বা এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিন। তাতে দুই চা চামচ মেথি দানা দিন। নারিকেল তেল ফুটাতে থাকুন যতক্ষন পর্যন্ত না মেথি দানা লালচে বাদামি রঙ ধারণ না করে। লালচে বাদামি হয়ে যাওয়ার পর চুলা থেকে নামিয়ে নিন। মেথি তেল থেকে আলাদা করে নিন। তেল যখন হালকা গরম হবে তখন তা নিয়ে স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে আলতো করে লাগিয়ে নিন। সারা রাত রেখে পরেরদিন শ্যাম্পু করে, চুলে কন্ডিশনার দিন।
সপ্তাহে দুই বার এই তেলটি ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করলে নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং অকালে চুল পাকা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চুলের রুক্ষতা কমিয়ে কোমলতা ফিরিয়ে আনে। স্ক্যাল্পের চুলকানি কমে ও খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
দুই পদ্ধতি পদ্ধতি এক সাথে ফলো করলে ফলাফল আরও ভালো হতে পারে।
চুলে মেথির ব্যবহার
মেথি বেটে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগাতে পারেন। কিছু সময় রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া মেহেদির সঙ্গে মিলিয়ে মেথি চুলে লাগাতে পারেন।
মেথি জবা ফুল
৬টি জবা ফুল, এক টেবিল চামচ মেথি গুঁড়া পেস্ট করে নিয়ে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুলে ময়েশচারাইজার বজায় থাকবে।
মেথি আমলকি
এক কাপ আমলকি, এক কাপ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে চুলে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে চুলের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধি পাবে।
আরও কিছু কথাঃ
-মেথি নারকেল তেলের বোতলে রেখে দিন। মেথি ভেজা এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুলের গোড়া হয় শক্ত ও মজবুত।
-মেথি গুঁড়ো টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল হয় কোমল ও ঝরঝরে।
-মেথি ভিজিয়ে তা বেটে মেহেদি ও ডিমের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল পড়া রোধ হবে।
ডায়াবেটিসে মেথির উপকারিতা
পোষ্টটি অনেক সুন্দর । ধন্যবাদ এতো সুন্দর তথ্য দেয়ার জন্য । চুলের জন্য মেথির গুরুত্ব অপরিসীম । মেথিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড রয়েছে যা চুলকে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে মজবুত করে। এই পানি প্রতিদিন পান করলে পেটের যাবতীয় পীড়াজনিত ও পরিপাকজনিত সমস্যা দূর হয়।