ঘি না মাখন, কোনটা বেশি উপকারী? ঘি খেলে কী মোটা হয় মানুষ?

0
1589
ঘি না মাখন

ঘি আর মাখন এই দুটোই গরুর দুধ থেকে তৈরি হয়। সাদা চিকন চালের গরম ভাত। ভুর ভুর করে গন্ধ ওঠা ঘি। সঙ্গে আলুসিদ্ধ বা কিংবা মাছ ভাজা। গরম গরম মাখন ভাত ইত্যাদি। রান্না ও ভোজনের ক্ষেত্রে একটির বিকল্প হিসেবে আরেকটিকে ব্যবহার করা যায়। তাই বাড়িতে ঘি না থাকলে অনেকে আবার কাজ সারেন মাখনেই।

মেদবৃদ্ধির কারণে অনেকেই এড়িয়ে চলতে চান ঘি-মাখনযুক্ত খাবার। কেউ বা আবার বুঝে উঠতে পারেন না কোনটাকে বেছে নেওয়া উচিত, কোনটায় বেশি ফ্যাট? মাখন নাকি ঘি— এই বিতর্কে পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকদের ভোট কিন্তু ঘি-এর দিকেই। কেন জানেন?

ব্যাখ্যা দিলেন পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী। ‘‘নানা রকম কম ফ্যাটযুক্ত মাখন বাজারজাত হলেও সব সময়ই মাখনের চেয়ে ভাল ঘি।’’ কিন্তু কেন? অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দিলেন সুমেধা। প্রতি ১০০ গ্রাম ঘিয়ে ৯০০ ক্যালোরি শক্তি থাকে। সেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম মাখনে রয়েছে ৭১৭ ক্যালোরি শক্তি।

কিন্তু ঘি ও মাখন, এই দুই খাবারেই তো ফ্যাট আছে, তা হলে? পুষ্টিবিদদের মতে, কেবল ফ্যাট থাকলেই সে খাবার খারাপ বা ক্ষতিকর এটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। ঘিয়ে যে ফ্যাট রয়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই উপকারী ফ্যাট। শারীরবৃত্তীয় নানা কাজে এ সব উপকারী ফ্যাটের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া ঘি ত্বকের পক্ষেও ভাল। ঘিয়ের দানা ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ‘ই’ও ‘কে’ সরবরাহ করে। ফলে ত্বক হয় আরও উজ্জ্বল।

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, ‘‘আজকাল বেশির ভাগ মাখনই প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি। তাতে দুধের মধ্যে থাকা ফ্যাটের নির্যাস মেশে জলের সঙ্গে। তার সঙ্গে আবার যুক্ত হয় নুন। এই অতিরিক্ত নুন যোগ হওয়া প্রসেসড মাখন তুলনায় ঘিয়ের চেয়ে উপকারী নয়।’’ শুধু তাই-ই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘিয়ে যেখান ৬০ শতাংশ দ্রবণীয় ফ্যাট রয়েছে, সে খানে মাখনে এর পরিমাণ মাত্র ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ শরীরে দ্রবীভূত হয়ে যাওয়া ফ্যাটের পরিমাণ মাখনে কম। তাই চর্বি জমার ক্ষেত্রে মাখনের ভূমিকাই বেশি।

আরও পড়ুনঃ   গুড় না চিনি, কোনটি বেশি উপকারী?

তা ছাড়া ঘি শুধু ভিটামিন ‘ই’ বা ‘কে’-ই জোগায় না, শরীরের প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের কয়েকটিও ঘি থেকেই মেলে। তাই ঘি মাখনের তুলনায় অনেকটাই উপকারী। ডায়েটে মাখন সরিয়ে বরং আনুন খাঁটি ঘি।

সূত্রঃ আনন্দবাজার

মন্তব্যঃ তাই তুলনা করলে দেখা যায়, মাখনের থেকে সামান্য বেশি হলেও ঘিয়ের উপকারিতা বেশি। এবং ঘি বেশি স্বাস্থ্যকর।

তবে এটাও ঠিক যে পরিমিত মাত্রায় তা গ্রহণ করা না হলে মাখন হয়ে উঠতে পারে হৃদরোগ ও রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের অন্যতম কারণ।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মতে, পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করা হলে ঘি ও মাখনের মধ্যে কোনোটিই খুব একটা বিপজ্জনক নয় বলে মনে করছেন তারা।

ঘি খেলে কী মোটা হয় মানুষ?

বেশীরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন যে ঘি খেলে মানুষ মোটা হয়। তাই ওজন কমানোর ডায়েটের কথা এলেই বেশীরভাগ মানুষ তাদের খাদ্যতালিকা থেকে প্রথমেই যে উপাদানটি বাদ দেন তা হচ্ছে ঘি। কিন্তু ঘি খেলে কী আসলেই মানুষ মোটা হয়? এই বিষয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ জেনে নিই চলুন।

ঘি খাওয়া কী ওজন বৃদ্ধির সাথে জড়িত?  

ঘি আসলে আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ নয়। এটা সত্য যে, ঘি এ উচ্চমাত্রার ক্যালোরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। কিন্তু এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার জন্য উপকারী এবং পরিপাক নালীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং ওজন কমতে সাহায্য করে। ঘাস খাওয়া গরু থেকে উৎপন্ন ঘি এ কঞ্জুগেটেড লিনোলেনিক এসিড (CLA) থাকে যা ওজন কমতে সাহায্য করে।

ঘি দিয়ে খাবার রান্না করা কী স্বাস্থ্যসম্মত?

হ্যাঁ, আপনি রান্না করতে পারেন ঘি দিয়ে। তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করুন। ঘি এর স্মোকিং পয়েন্ট অন্য তেলের চেয়ে বেশি। তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল উৎপন্ন করেনাতেল বা চর্বির স্মোকিং পয়েন্ট হচ্ছে তাপমাত্রার সুনির্দিষ্ট অবস্থা যেখানে তেল থেকে ক্রমাগত নীলাভ ধোঁয়া উৎপন্ন হয় যা স্পষ্টত দৃশ্যমান হয়।

আরও পড়ুনঃ   জাফরানের অনেক গুণ

ঘি খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

ঘি খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সবজি রান্নার সময় ঘি ব্যবহার করা। কারণ ঘি এর স্মোকিং পয়েন্ট অনেক বেশি হওয়ায় বিভিন্ন খাবার ভাজার জন্যও ঘি ব্যবহার করতে পারেন। চাপাতি বা রুটির উপর ছড়িয়ে দিয়ে বা ভাতের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন ঘি।

প্রতিদিন কতটুকু ঘি খাওয়া উচিৎ? 

ঘি এর সাথে নির্দিষ্ট কোন স্বাস্থ্য উপকারিতার সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। কিন্তু কিছু আয়ুর্বেদ অনুশীলনকারী বিশ্বাস করেন যে, মাখনের চেয়ে ঘি শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু এর স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও গ্রহণ করতে হবে সীমিত পরিমাণে। এক দিনে ২-৩ চামচের বেশি ঘি খাবেন না।

সবাই কী ঘি খেতে পারবে?

ঘি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক হলেও যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে তাহলে ঘি গ্রহণ করা এড়িয়ে চলা উচিৎ। 

তাহলে এখন বোঝাই যাচ্ছে যে ঘি গ্রহণ করলে আপনি মোটা হবেন না। তাই আর দ্বিধা না করে ঘি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।

সূত্র: দ্যা হেলথ সাইট

জেনে নিন ঘি-এর ২২ উপকারিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + fourteen =